পথচারীদের নিরাপত্তায় স্কুলসহ ঢাকার সর্বত্র
ফুটওভার ব্রিজ নয়, জেব্রা ক্রসিং ও সিগন্যালিং ব্যবস্থা চাই-শোক সমাবেশে বক্তারা
ঢাকা শহরে গড়ে প্রতিদিন প্রায় একজন পথচারী সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন, অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেন। যার ৪১ শতাংশই সড়ক পার হতে গিয়ে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন। গত ১ ফেব্র“য়ারী বুধবার ঢাকার মিরপুর এলাকায় শিশু শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা পালোমা মায়ের সঙ্গে সড়ক পার হওয়ার সময় বেপরোয়া গতিতে চলতে থাকা বাসের চাপায় নিহত হয়। সড়ক পার হতে গিয়ে আর কাউকে যেন অকালে প্রাণ না দিতে হয় এজন্য অবিলম্বে প্রতিটি স্কুলসহ ঢাকার সর্বত্র জেব্রা ক্রসিং, সিগন্যালিং ব্যবস্থা, সাইনবোর্ড, জেব্রা ক্রসিংয়ের পূর্বে গাড়ি থামানোসহ সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। ০৬ ফেব্রুয়ারি ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে ৯টি সংগঠনের সম্মিলিত আয়োজনে শোক সমাবেশে বক্তারা এই দাবি জানান।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, নিরাপদে সড়ক পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস করার পর দূর্ঘটনায় পথচারীদের মৃত্যূহার আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। একসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) এর গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৮৬-৮৭ সালে পথচারীদের আক্রান্তের হার ছিল ৪৩ শতাংশ, যা ২০০৮-০৯ এ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ শতাংশ। অথচ এই সময়ের মধ্যেই যত ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। যা প্রমাণ করে এসকল অবকাঠামো পথচারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং ফুটওভার ব্রিজের কারণে গাড়ি চালকেরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এছাড়া ফুটওভার ব্রিজ নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ, প্রতিবন্ধি এবং মালামাল নিয়ে চলাচলকারী পথচারীদের জন্য ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্টকর এবং এদের অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, পথচারীদের প্রাধান্য দিয়ে ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উড়াল সড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেওয়ে) এবং মেট্রোরেলের মত উচ্চবিলাসী প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, অথচ শহরের বেশিরভাগ মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করলেও নিরাপদে সড়ক পারপারে জেব্রা ক্রসিংয়ের জন্য বরাদ্দ থাকে না কেন। তিনি অবিলম্বে প্রতিটি স্কুলসহ ঢাকার সর্বত্র জেব্রা ক্রসিং, সিগন্যাল, সাইনবোর্ড স্থাপনের জোর দাবি জানান।
বিশিষ্ট অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা প্রদান করা সরকারের অন্যতম দয়িত্ব।
প্রতিদিন সড়কে পার হতে গিয়ে মৃত্যূর মিছিল লম্বা হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। ঢাকায় জেব্রা ক্রসিং অঙ্কন একটি নিয়মিত কাজ। এজন্য সিটি কর্পোরেশনের বাজেটে বরাদ্দ থাকে, তাহলে কেন আজ ঢাকার রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং নেই। তিনি বলেন, সকলে কর প্রদান করলেও প্রয়োজনে আমরা দেড়কোটি ঢাকাবাসী দশ টাকা করে চাঁদা দিব, তবুও অবিলম্বে ঢাকার সর্বত্র জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করা হোক।
শোক সমাবেশে থেকে আরো যে সমস্ত সুপারিশ করা হয়-প্রতিটি স্কুলসহ ঢাকার সর্বত্র জেব্রা ক্রসিয়ের ব্যবস্থা করা; সর্বোচ্চ ২০০ মিটার পর পর জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করা; জেব্রা ক্রসিংয়ে উচু হাঁটাপথ তৈরি করা; জেব্রা ক্রসিংয়ে সিগন্যাল লাইট ও সাইন বোর্ড স্থাপন করা; জেব্রা ক্রসিংয়ের পূর্বে গাড়ি থামানোর জন্য কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা; নিয়মিত জেব্রা ক্রসিং রং করার জন্য বাজেট রাখা; শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ক্রসিং গার্ড এর ব্যবস্থা করা যাতে শিশুরা একটি নির্দ্দিষ্ট জায়গায় একত্রিত হলে তাদের সড়ক পারাপারে সহায়তা করে এবং পথচারীদের জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এর সভাপতিত্বে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসী মারুফ রহমান শোক সমাবশ পরিচালনা করেন। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, প্রবীণ সংগঠক এ কে এম সিরাজুল ইসলাম, নাসফ এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এর সদস্য ড. আব্দুল হাই মজুমদার, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, প্রত্যাশা এর সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ মাহবুব হাসান, মডার্ন ক্লাব এর সভাপতি আবুল হাসনাত এবং ক্যাম্পেইন ফর ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান রুবেল। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।