আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নামী দামী মোড়কের আড়ালে প্রতারণাঃ তা হলে কী কাউকেই বিশ্বাস করা যাবেনা!

সামুতে অর্থহীন অশুদ্ধ বাংলা ও বাংলিশ শব্দ পরিহার করি নিম্নমানের পণ্য কিনে অহরহ প্রতারণার শিকার হচ্ছে ক্রেতারা এটা নতুন কিছু নয় তবে নামিদামি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেও যদি সেই একই ধারা অব্যহত থাকে তা হলে আস্থা রাখার যায়গা কী কোথাও নেই? সম্প্রতি কাপড়ের রঙ ও নিম্নমানের ফ্লেভার, আটা, চকপাউডারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদনের অভিযোগে রাজধানীর আইডিয়াল এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস প্রা. লি. এর মালিককে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন- বিএসটিআই। এছাড়া স্বনামধন্য ডিপার্টমেন্টাল স্টোর স্বপ্ন, আগোরা এবং মীনাবাজারে আইডিয়ালের পণ্য বিক্রির অভিযোগে প্রত্যেককে ১ লাখ করে টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিএসটিআই’র ভ্রাম্যমাণ আদালত মগবাজারে এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম হোসেন, বিএসটিআই কর্মকর্তা ও এসপি জাহাঙ্গীর আলমসহ র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা অংশ নেয়। কর্মকর্তারা জানান, আইডিয়াল এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস এর মালিক মো. বারেক নারায়ণগঞ্জের ঠিকানা ব্যবহার করে বিএসটিআই’র সিএম লাইসেন্স না করে নুডুলস, হলুদের গুড়া, মরিচের গুড়া, কারী পাউডারসহ ৭৭ ধরনের খাদ্যপণ্য নিম্নমানের পরিবেশে মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছাড়া বাজারজাত করে আসছিলেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিষ্ঠানের মালিকের ২ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদ-, এক মাসের বিনাশ্রম কারাদ-, কারখানা সিলগালা এবং মালামাল ধ্বংস করে। পরে আইডিয়ালের প্রাপ্ত ওয়ার্ক অডারের ভিত্তিতে স্বপ্ন, আগোরা এবং মীনাবাজারের মগবাজার শাখায় প্রতিষ্ঠানের পণ্য পাওয়া যায়। আদালত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করে। এছাড়া আইডিয়ালের মালামাল জব্দ ও ধ্বংস করা হয়। অপরদিকে রাজধানীর ছোট বড় হেটেল থেকে নামী দামী হোটেল রেস্তোরাঁ এবং বারগুলোতে মরা মুরগি সরবরাহ করে ডেসটিনির মতো অল্প সময়ে ধনী বনে গেছে রাজধানীর হাতেগোনা কয়েকজন মুরগি ব্যবসায়ী।

মরা মুরগি ঢাকার অভিজাত হোটেল, রেস্তোরাঁ, বার এবং রাস্তার পাশের ফুটপাতের খাবার হোটেলগুলোতে সরবরাহ করা হলেও ক্ষুধা নিবারণে ব্যস্ত মানুষেরা এর কারণ খোঁজে না। আর মদের বারে মাতাল অবস্থায় কেউ খোঁজ নেয় না এগুলো মরা, পচা বা গলিত কি না। এ সুযোগে এসব ঘৃন্য ব্যবসায়ীরা মুরগিগুলো না ফেলে ওই সব হোটেল রেস্তোরাঁয় কমমূল্যে সরবরাহ করে থাকে। পুরো ঢাকা শহরে প্রায় অর্ধশতাধিক সরবরাহকারী রয়েছে। র‌্যাব বেশ কিছুদিন ধরে এ ধরনের অপরাধীদের ধরতে তাদের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

গতকাল সকালে এ অপরাধীদের শনাক্ত করে র‌্যাবের মোবাইলকোর্ট তেজগাঁওয়ের কারওয়ানবাজারস্থ রেলওয়ে স্টেশনের মুরগি মার্কেটের ‘নোয়াখালী স্টোরে ’ অভিযান চালায়। এ সময় তারা ওই স্টোরের পেছনে তল্লাশি চালিয়ে ১০২টি মরা মুরগি উদ্ধার করে। গ্রেপ্তার করা হয় দোলোয়ার হোসেন দেলু, রেশমা আক্তারকে। তারা মরা মুরগি বিক্রি ও মজুত রাখার কথা স্বীকার করলে মোবাইলকোর্টের র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম আনোয়ার পাশা দেলুকে ২ বছরের ও রেশমাকে এক বছর ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। দেশের বৃহত্তম কাঁচাবাজার কারওয়ানবাজারের মুরগি ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের মুরগি আড়তে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুশ মুরগি টানাহেঁচড়ায় মারা যায়।

নিয়মানুযায়ী এগুলো পাশের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার কথা। কিন্তু কারওয়ানবাজার মুরগি আড়তের দেলোয়ারের সহযোগীরা মুরগিগুলো না ফেলে কৌশলে চামড়া ফেলে হোটেলে নেয়ার নামে মরা মুরগি বস্তায় ভরে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে সরবরাহ করে থাকে। তবে এ ব্যবসার কথা আড়াল করতে স্থানীয় থানা পুলিশ, বাজারের চিহ্নিত চাঁদাবাজ এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে থাকে দেলোয়ার। তার কয়েকজন সহযোগী রাজধানীর প্রায় ৫০টি স্পটে মরা মুরগি সরবরাহ করে থাকে। এ ব্যবসা করে দেলোয়ার অল্পদিনেই বড় মাপের ব্যবসায়ী বনে যায়।

সাত বছর আগে পেটের দায়ে ফরিদপুর থেকে ঢাকার কারওয়ানবাজারে মুঠে মজুরের কাজ শুরু করলেও এখন সে বিশাল ব্যবসায়ী। কারওয়ানবাজারসহ তেজগাঁও এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা করে থাকেন তিনি। বড় রাজনৈতিক নেতা না হলেও নিজেকে অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে বড় নেতা হিসেবে জাহির করে থাকেন। তাকে এ ব্যবসায় সহায়তা করে থাকে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী পিচ্চি কাশেম, ইয়াবা জাকির ও তার স্ত্রী সুমি এবং স্থানীয় মহিলা লীগের এক নেত্রী। মুরগি আড়তের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, মুরগি সাধারণত রাতে এবং ভোরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীর কাপ্তান বাজার, নিউ মার্কেট, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, যাত্রাবাড়ী, মিরপুরসহ অন্য মার্কেটে আনা হয়।

ট্রাক, পিকআপ ভ্যান বা বাসের ছাদে করে আনার সময় টানাহেঁচড়া এবং ঝাঁকিতে অনেক মুরগি মরে যায়। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা মুরগি ব্যবসায়ীরা মৃত মুরগির দাম নেয় না। কিন্তু এখানের আড়তের কতিপয় ব্যবসায়ী মরা মুরগিগুলো জমা করে রাখে। এরপর তা রাজধানীর বিভিন্ন নামিদামি হোটেল, রেস্তোরাঁ, বার বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে সরবরাহ করে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.