১৯১৯ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর হিটলার রাজনৈতিক পার্টির গতি বিধি নজর রাখার জন্য কাজ হিসেবে জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির একটা মিটিং দেখতে যান। সেখানে বক্তৃতা শুনে আবেগের চোটে নিজেই একটা ঝাড়া ১৫ মিনিট বক্তৃতা দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে দেন। তার বক্তৃতা ছিল জার্মানদের আধিপত্যের পক্ষে, ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে, ভার্সাই চুক্তির বিরুদ্ধে।
ঐ পার্টির নেতা আন্তন ড্রেক্সলার ( Anton Drexler : 1884- 1941)
মুগ্ধ হয়ে তাকে পার্টির কিছু লেখা পড়তে দেন। ঐ লেখাগুলো ছিল হিটলারের মনের কথা, যেমন একটা শ্রমিক শ্রেনীর দ্বারা গঠিত শক্তিশালী জাতিয়তাবাদী সামরিক শক্তি নির্ভর দল।
কিছুদিন পরেই তিনি জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টিতে (Deutsch Arbsiterpartei or DAP) যোগ দেন। যদিও ঐ পার্টির অবস্হা বেশী সুবিধার ছিলনা, অসাধারণ দূরদৃস্টিসম্পন্ন হিটলার ভাবলেন এটাই তাকে সুযোগ করে দিবে।
এমনিতে তিনি অলস হলেও পার্টিতে ঢুকেই প্রচুর উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে কাজ করেন।
প্রথম দিকে পার্টি মিটিংএ বেশী লোক হতনা। পরে ১৬ অক্টোবর ১৯১৯, হিটলার মিউনিখে একটা বিয়ার পাবে মিটিং ডাকলেন এবং বেশ লোক হল, একশ'র বেশী।
সেই মিটিংএ হিটলার জার্মান জাতির পক্ষে ভার্সাই চুক্তির বিরুদ্ধে এক অসাধারণ বক্তৃতা দেন যা সবাইকে মোহাবিষ্ট করে দেয়। মুগ্ধ শ্রোতারা তাৎক্ষনিক পার্টি ফান্ডে সবাই মিলে তিনশত মার্ক চাদা দেন। সেনাবাহিনী থেকেও কিছু বীতশ্রদ্ধ সরকারের প্রতি বিরক্ত সদস্য আসতে শুরু করেন, আর এতে সহায়তা করেন পুর্ব পরিচিত ক্যাপ্টেন আর্নস্ট রম (Capt Ernst Rohm: 1887- 1834)। মিউনিখে তখন অনেক হতাশাগ্রস্হ সৈনিক ছিল যারা
ক্যাপ্টেন আরনস্ট রম
ভার্সাই চুক্তিটা খুব অপছন্দ করত। তারাও আসতে লাগল।
২৪ শে ফেব্রুয়ারী ১৯২০ হিটলার পার্টির একটা বড় সভা ডাকেন যেখানে ছয় হাজারের বেশী লোক হাজার হয়। তাদের মধ্যে কম্যুনিস্টরাও ছিল, যাদের হিটলার ঘৃনা করতেন। সেই সভায় হিটলার পার্টির ২৫ টা প্রধান মেনিফেস্টো চমৎকার ভাবে উপস্হাপন করেন। সেই পয়েন্টগুলি ছিল:
১। সমস্ত খাটি জার্মানরা এক হয়ে একটা বৃহৎ শক্তিশালী জার্মান রাইখ স্হাপন করবে।
২। ভার্সাই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করা হবে।
৩। জার্মানদের জন্য আরো এলাকা দাবী করা হবে।
৪।
খাটি জার্মান হিসেবে তাদের সবাইকে নাগরিকত্ব প্রদান করতে হবে।
৫। ইহুদীদের জার্মান হিসেবেই গন্য করা হবেনা।
৬। কাজ না করে যারা টাকা বানিয়েছে তাদের সব টাকা বাজেয়াপ্ত করা হবে।
৭। শিক্ষাব্যাস্হা আমুল পরিবর্তন করে পুনর্গঠন করতে হবে।
৮। সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে তবে জার্মানদের জাতি বিপদগ্রস্হ হয় এমন কোন ধর্মের প্রচারণা চলবেনা।
৯।
আইন প্রনয়নের জন্য একটা শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করা হবে।
ঝাড়া ৪ ঘন্টা সভা শেষে সবাই মুগ্ধ ---মোহাবিষ্ট!
হিটলার ভাবলেন এই আন্দোলনের জন্য একটা পতাকা বা চিহ্ন থাকা দরকার। ১৯২০ সালের গ্রীষ্মে হিটলার স্বস্তিকা (Swastika) কে পার্টির পতাকার চিহ্ন হিসেবে নির্বাচন করলেন।
এই চিহ্নটা হিটলারের আবিষ্কার ছিলনা। অস্ট্রিয়ায় Benedict Monastery School, Lambach এ পড়ার সময় ঐ স্কুলে বহু জায়গাতে বা কাঠের দরজায় এই চিহ্নটা ছিল।
এটা অনেক প্রাচীন চিহ্ন।
আমেরিকার একটা মোটর কোম্পানীও এটা ব্যাবহার করত!
যখন ঐ চিহ্নটাকে সাদা বৃত্তের মাঝে লাল ব্যাকগ্রাউন্ডে বসানো হয় তখন এর ভিতর থেকে কতৃত্ব ঠিকরে বেরুত, মানুষের মাঝে ভীতির সন্চার করত।
হিটলার বলতেন 'লালের মাঝে আমরা আন্দোলনকে দেখি, সাদা হল আমাদের জাতিয় আদর্শ আর তার মাঝে স্বস্তিকা হল আর্যদের জয় সৃস্টিশীল আদর্শের জয় যা সর্বদাই ইহুদীবাদের বিরুদ্ধে ইহুদীদের বিরুদ্ধে'।
এরপর হিটলার পর্টির নাম পরিবর্তন করার পক্ষে মত দিলেন এবং নতুন নাম রাখলেন Nationalist Socialist German Workers Party (Nationalsozialistische Deutsche Arbeiterpartei or NSDAP) বা সংক্ষেপে Nazi ।
১৯২০ সালের মধ্যে এর সদস্য সংখ্যা দাড়ায় প্রায় তিন হাজার।
১৯২১ সালের মধ্যে বিভিন্ন গুনের জন্য যেমন অসাধারন বক্তৃতা করার ক্ষমতা, মানুষকে সম্মোহিত করার এক আশ্চর্য কারিশমাটিক চারিত্রিক গুন ইত্যাদি তাকে পার্টির প্রধান গুরুত্বপুর্ণ ব্যাক্তিতে পরিনত করে।
হিটলারের বক্তৃতা দেবার বিভিন্ন ভঙ্গি।
অনেক ঘটনার পর ঐ সালেই পার্টির প্রধান নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি হয় এবং হিটলার ৫৪১-১ ভোটে জয়লাভ করেন। ২৯ শে জুলাই ১৯২১ হিটলার নাজী পার্টির প্রধান নির্বাচিত হন এবং তাকে 'ফুয়েরার' সম্বোধন করা হয়।
এই শব্দটা ঐবারই প্রথম তার জন্য ব্যাবহৃত হয় এবং পরবর্তি ২৪ বছরের জন্য চালু থাকে।
১৯২১ এর এপ্রিলে বিজয়ী মিত্রশক্তি বিশেষ করে ফ্রান্স ও বৃটেন ১ম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ভার্সাই চুক্তি মোতাবেক পাওনা আনুমানিক ২২৬ বিলিয়ন ডলার আর রপ্তানী আয়ের ২০% এর কিস্তি দাবী করে, যেটা ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত দেয়ার কথা। এই দাবী প্রকাশ হবার ফলে জার্মানীতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফিতি দেখা দেয়। নীচে তখন জার্মান মার্কের অবমূল্যায়নের নমুনা দেখুন:
১৯২১ এপ্রিল: ৪ মার্ক = ১ ডলার
১৯২১ মে : ৭৫ মার্ক = ১ ডলার
১৯২২ ৪০০ মার্ক = ১ ডলার
১৯২৩ জানু: ১৮০০০ মার্ক = ১ ডলার
১৯২৩ জুলাই: ১৬০,০০০ মার্ক = ১ ডলার
১৯২৩ আগস্ট: ১,০০০,০০০ মার্ক = ১ ডলার
১৯২৩ নভেম্বর: ৪,০০০,০০০,০০০ মার্ক= ১ ডলার
নিরুপায় হয়ে জার্মানী কিছুদিনের জন্য টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়। ব্যাস, ১৯২৩ এর জানুয়ারীতে ফ্রান্স জার্মানীর একটা বিশাল শিল্প এলাকা 'রুর' (Ruhr) দখল করে নেয়।
চারিদিকে হাহাকার, খাদ্যের জন্য দাঙ্গা হল, মার্কের দাম কাগজের চাইতে গাছের পাতার চাইতে কমে গেল, মাসিক বেতনের টাকা দিয়ে একবেলা খাবার জোটেনা... এক মারাত্মক যাচ্ছে তাই অবস্হা।
সরকারের কিছু করারই ক্ষমতা ছিলনা। তখন হিটলার ভাবলেন এখনি সময় ক্ষমতা নেয়ার। তারা ঠিক করলেন বার্লিনের সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা নিবেন, আর সেনাবাহিনীতে তাদের সহায়তা করবেন জেনারেল এরিখ ফ্রেডারিখ উইলহেম লুদেনডর্ফ
(General Erich Frederich Wilhem Lunderdorf: 1865-1937)
জেনারেল লুদেনদর্ফ
৮ই নভেম্বর ১৯২৩ হারম্যান গোয়েরিং সহ সৈন্যরা মিউনিখের একটা বিয়ার সেবনের স্হানে সমবেত কিছু সরকারি অফিসারকে আটক করে আর বার্লিনে কিছু সৈন্য সেখানকার সরকারের মানুষকে আটক করার কথা।
পুরো অভ্যুত্থানটাই ব্যার্থ হয়। কিছু গোলাগুলি হয়।
গোয়েরিংএর উরুতে গুলি লাগে, হিটলারের দেহরক্ষী উলরিখ গ্রাফ নিজের দেহে সমস্ত গুলি নিয়ে নিজের জীবন দিয়ে হিটলারকে রক্ষা করেন। হিটলার প্রানে বেচে যান এবং কোনমতে প্রান নিয়ে দুরে অপেক্ষমান গাড়ীতে চড়ে পালিয়ে যান।
জেনারেল লুদেনডর্ফ সহ অনেকেই গ্রেফতার হন। দুইদিন পর হিটলারও গ্রেফতার হন। ঘোষনা করা হয় তাদের বিদ্রোহের জন্য প্রকাশ্যে বিচার হবে।
সবাই মনে করেছিল হিটলারের ক্যারিয়ার শেষ। বাস্তবে এতে হিটলারেরর আরো লাভ হল, তার প্রচার আরো বেড়ে গেল। তার আদর্শে আরো অনুসারি বাড়ল।
বিচারের জন্য বন্দী বাঁ থেকে জেনারেল লুদেনডর্ফ, হিটলার এং ডানে সম্মুখে জেনারেল আর্নসট রম।
বিচারের জন্য বন্দী হিটলার, বাঁয়ে হারমান ক্রিবেল এবং পিছনে এমিল মরিস।
এরা সবাই নাজী পার্টির সদস্য।
আদালতের প্রধান বিচারক নাজী পার্টির প্রতি বেশ সহানুভুতিশীল ছিলেন। আদালতে হিটলারকে নিজের বক্তব্য যতক্ষন খুশী যেভাবে খুশি বলতে দেয়া হয়।
হিটলার এক চমৎকার দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে আদালতকে ভড়কে দেন। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবী না করে তার এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা সাফল্যের সাথে তুলে ধরেন, রাজনীতিকদের দোষী দাবী করেন এবং জার্মানীর দুরবস্হার জন্য ঐ রাজনীতিক এবং 'নভেম্বর ক্রিমিনাল'দের দায়ী করেন, যারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল।
যাহোক হিটলার সহ সবারই সামান্য সাজা হল, জেনারেল লুদেনডর্ফ খালাস পান, হিটলারকেও পেরোলে মুক্তি দিবার সুযোগ রেখে দেন বিচারক।
১ লা ফেব্রুয়ারী ১৯২৪, হিটলার জার্মানীর ল্যান্ডসবারগ দুর্গের একটা বিশেষ সেলে কয়েদী হিসাবে আসেন। তার জন্য রাজকীয় সব সুবিধা বিদ্যমান ছিল, যেমন তিনি বাইরে থেকে খাবার আনাতে পারতেন, যেকোন সময় তার অতিথি আসতে পারত এমনকি তার একজন ব্যাক্তিগত সহকারীও ছিল, যার নাম ছিল রুডলফ হেস (১৮৯৪- ১৯৮৭), যিনি পরে নাজী পার্টির দ্বিতীয় প্রধান ব্যাক্তি হন।
এই সেলে বসেই তিনি পায়চারী করতেন আর কথাবলতেন, বলতেন তার স্বপ্নের কথা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা ....রুডলফ হেস তা যত্নের সাথে লিখতেন, আর এভাবেই সৃস্টি হল মাইন ক্যামপফ (Mein Camph) এর প্রথম খন্ড।
৯ মাস হালকা জেল খাটার পর ১৯২৪ এর ডিসেম্বরে হিটলার জেল থেকে ছাড়া পান।
এই সময় গোয়েবেলস নামক এক লেখক হিটলারের সংস্পর্শে আসেন এবং নিজ প্রতিভাবলে অনেক উপরের দিকে উঠে আসেন।
জোসেফ গোয়েবলস
২০ শে মে ১৯২৭ জার্মানীর নির্বাচনে নাজীরা ভাল করতে পারেনি। হিটলারের বয়স তখন ৩৯। ভাবলেন এবার একটু বিশ্রাম নিতে হয়, থিতু হতে হয়! তিনি তার সৎ বোন এন্জেলাকে বললেন তার কাছে চলে আসতে। এন্জেলা তার দুই মেয়ে ফ্রাইডেল আর গেলীকে নিয়ে ভিয়েনা থেকে হাজির হল।
এন্জেলা নীচে:
হিটলারের সৎ বোন এন্জেলার মেয়ে ২০ বছর বয়সী গেলী ছিল সুন্দরী আকর্ষনীয়া চৌকশ মেয়ে। ব্যাস হিটলার গেলীর প্রেমে পড়ে গেলেন। নীচে গেলী -- সাথে হিটলার:
গেলী যদিও সম্পর্কে হিটলারের বোনের মেয়ে কিন্তু এই সম্পর্ক নিয়ে সামাজিক কোন বাধা ছিলনা। কারণ এন্জেলা হিটলারের সৎ বোন ছিল। এই সম্পর্কটি বেশী লম্বা হয়নি কারন ঐ মেয়েটি কিছুকাল পরে আত্মহত্যা করে।
কেন, সে এক রহস্য, সেটা পরে বলছি।
২৯ অক্টোবর ১৯২৯ ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার বাজারে ভয়াবহ এক ধস নামে। যার প্রভাব সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দেয়। বহু ব্যাংকে লালবাতি জ্বলে, বিশ্বব্যাপি দেখা দেয় প্রচন্ড মন্দা। জার্মানীতেও অবস্হা তথৈবচ।
হিটলার দেখলেন এই তার সুযোগ ক্ষমতা নেয়ার।
এবার একটি পেছনে যাই।
জেল থেকে বের হয়ে হিটলার ভেবে দেখলেন ঐসব সশস্ত্র বিদ্রোহে কাজ হবেনা, নির্বাচনের মাধ্যমেই আসতে হবে। বিয়ার হলে (Beer Hall) অভ্যুত্থানের ব্যার্থতার পর পার্টিতে কিন্চিৎ বিশৃংখলা দেখা দিয়েছিল। হিটলার বেশ দক্ষতার সাথে সেটা ম্যানেজ করেন।
১৯২৫ এর প্রথম দিকে হিটলার বাভারিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে পার্টির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করিয়ে নেন।
২৭ শে ফেব্রুয়ারী ১৯২৫, হিটলার পার্টির একটা মিটিংএ আবার মার্কসবাদীদের বিরুদ্ধে, ইহুদীদের বিরুদ্ধে কঠিন বক্তৃতা দেন। ব্যাস আবার ২ বছরের জন্য বক্তৃতা নিষিদ্ধ! তখন জার্মানীর প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্রেডারিখ এবারট, সময়কাল ১৯২১- ১৯২৫ পর্যন্ত। ছবি দেখুন:
ইতিমধ্যে জার্মানীর অর্থনীতি ঘুরে দাড়িয়েছে, মানে ভাল হতে চলেছে।
মার্কের মূল্য স্হিতিশীল হচ্ছিল।
মিত্রশক্তির প্রাপ্য ক্ষতিপুরণ দেয়া শুরু হয়েছে।
জার্মান অরতনীতিকে আরো ভাল করার জন্য আমেরিকা, বৃটেন ফ্রান্স সবারই মাথাব্যাথা ছিল। সেই সময় আমেরিকার সুপারিশে জার্মানীর আগ্রহে মার্কিন ব্যাংকার আমেরিকার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট চার্লস জি ডয়িস (১৮৬৫- ১৯৫১) জার্মানীতে আসেন কিছু নতুন অর্থনীতির দাওয়াই নিয়ে যাতে জার্মানীর অর্থনীতিটা আরো ভাল হয়, মানুষ খেতে টেতে পারে।
চার্লস ডয়িস
আমেরিকান ব্যাংকার চার্লস ডয়িসের অপুর্ব সুন্দর দক্ষ পেশাদার পরিকল্পনায় জার্মানীর অর্থনীতি এক নতুন প্রান লাভ কর। শিল্পকারখানায় পুর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু হয়, প্রবৃদ্ধি বাড়তে শুরু করে।
এর মধ্যে ১৯২৫ সালে জার্মানীতে এলেন নতুন প্রেসিডেন্ট, সব সময় ঘুম ঘুম ভাবের বয়স্ক সাবেক জার্মান ফিল্ড মার্শাল পল ফন হিন্ডেনবুর্গ ( Paul Von Hindenburg: 1847- 1934)
এই সময় বীতশ্রদ্ধ কিছু সাবেক সামরিক অফিসাররা রাশিয়ায় প্রশিক্ষন নেন, কিছু কারিগরী দক্ষতা অর্জন করেন। তবে জার্মানরা তখন মোটামুটি সুখী, আড্ডা মারে বারে যায়, আর তাদের মাঝে হিটলারও ছিলেন একজন। লোকে তাকে নিয়ে মশকরা করত তবে হেয় করতনা। চার্লি চ্যাপলিনের সাথে হিটলারের চেহারার এমনকি বডি ল্যাংগুয়েজেও অনেক মিল ছিল।
চার্লি চ্যাপলিন
আগেই বলেছি ২৯ শে অক্টোবর ১৯২৯ এর ভয়াবহ শেয়ার ধসের কারনে সদ্য সুস্হ হয়ে ওঠা জার্মান অর্থনীতি আবার কাত হয়ে পড়ে।
শ্রমিক ছাটাই শুরু হয়, উৎপাদন কমে যায়, জার্মান মার্কের দাম আবার কমতে শুরু করে। সেই সময় জার্মান ব্যাংকের সামনে লাইন দেখুন:
নাজী পার্টিতে সদস্য সংখ্যা তখন মাত্র এক লাখ। চারিদিকে হট্টগোল। এই সময় না সামলাতে পেরে জার্মান চ্যান্সেলর হাইনরিখ ব্রুনিং ( Heinrich Bruning: Chencellor 1930-32) প্রসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গকে বলেন নির্বাচন দেয়ার জন্য। ১৪ ই সেপ্টেম্বর ১৯৩০ তারিখে রাইখস্টাডের (জার্মান পার্লামেন্ট) নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়।
জার্মানরা তখন ক্লান্ত, বিরক্ত, রাজনীতির হানাহানিতে তারা বীতশ্রদ্ধ। তারা নতুন কেউ এমনকি হিটলারের কথাও শুনতে রাজি ছিল। নাজী পার্টির প্রচার প্রচারণা শুরু হল। নীচে দেখুন সব দল মিলে একসাথেই প্রচারের কাজ করত নাকি!
নাজী পার্টি নির্বাচনে অংশ নেয়। প্রচারাভিযানে বক্তৃতায় মেনিফেস্টোতে হিটলার যা বলতেন তা ছিল:
১।
বেকারদের কাজ দিবেন।
২। ব্যার্থ ব্যাবসায়ীদের পুনর্বাসন করবেন।
৩। সব শিল্প কারখানা পুর্গঠন করবেন।
৪। সেনাবাহিনী সম্প্রসারণ করবেন।
৫। জার্মানীর অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবেন।
৬।
ভার্সাই চুক্তি বাতিল করবেন।
৭। মিত্রশক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেয়া বন্ধ করবেন।
৮। দুর্নীতিকে নির্মূল করবেন।
৯। মার্কসবাদ উচ্ছেদ করবেন।
১০। ইহুদীদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করবেন।
১৪ ই সেপ্টেম্বর ১৯৩০ --- নির্বাচনে আশ্চর্যজনকভাবে ১৮% ভোট পেয়ে নাজী পার্টি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করল।
(প্রথম ছিল ডেমোক্রেটিক সোশিয়ালিস্ট পার্টি (Sozialdemokratische Partie Deutschlands or SDP। তখনকার আনন্দ মিছিল দেখুন:
নির্বাচনে জয় পেয়ে উল্লাসে নাজীরা বেশ কিছু ইহুদীদের দোকান পাট ভাংচুর করে।
১৩ ই অক্টোবর ১৯৩০, নাজীরা প্রথম রাইখস্টাডে বা পার্লামেন্টে বসে। রোল কলের সময় তারা Present! Heil Hitler! বলে পার্লামেন্ট কাঁপিয়ে দেয়। নীচে পার্টির সদস্যদের মাঝে ব্রাউন হাউসে ফুয়েরার হিটলার:
এবার একটু ডার্লিং গেলির প্রসংগে আসা যাক! আগে দেখুন হিটলারের ভাগ্নী, সুন্দরী গেলী রবালকে:
ফুয়েরার চাইতেন গেলী যেন তার একার,যেন শুধু তারই সঙ্গ দেয়, তারই সাথে থাকে।
গেলীকে সব সময় তার পুরো আয়ত্বে রাখা চাই।
অন্যদিকে গেলী রবাল ছিলেন একটু ফ্লার্ট টাইপের, সবার সাথে তার ভাব রাখা চাই। তাছাড়া তার দ্বিগুন বয়সী হিটলারের চাইতে তরুনরাই তার কাছে বেশী পছন্দনীয় ছিল। এমনকি তিনি হিটলারের ড্রাইভারের সাথেও মেলামেশা করতেন, পরে সেই ড্রাইভারকে বরখাস্ত করা হয়।
মজার ব্যাপার হল ওদিকে ফুয়েরার এডলফ হিটলারও তার ব্যাক্তিগত ফটোগ্রাফার হাইনরিখ হফম্যানের দোকানের কর্মচারী ১৭ বছর বয়সী সুন্দরী এফা ব্রাউনের সাথে মহা প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন ।
এফা ব্রাউন: নীচে হাইনরিখ হফম্যান (১৮৮৫- ১৯৫৭):
এদিকে হিটলারে হিংসা, সবসময় খবরদারী, যেকোন জায়গায় গেলে সাথে কয়েকজন প্রহরী, চারিদিকে গুপ্তচর ইত্যাদি সব মিলিয়ে গেলী রবাল একেবারে হাপিয়ে উঠছিলেন। অবশেষে সেপ্টেম্বর ১৯৩১ দুপুরে গোয়েবলস ফোন করে হিটলারকে জানান গেলী রবাল নিজ বুকে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন।
অনেকে বলেন হিটলারের নির্দেশেই গেলীকে খুন করা হয়। এই রহস্য কোনদিন জানা সম্ভব হবেনা।
গেলীর আত্মহত্যার পর একবার পর্ক (শুকরের মাংশ) এর একটা ফালি খাবার সময় ওটার দিকে তাকিয়ে হিটলারের কেমন করে জানি গেলীর লাশের কথা মনে আসে।
ব্যাস খাবারটা ফেলে দিলেন।
তারপর থেকে হিটলার আর কোনদিন মাংশ খাননি।
গেলীর আত্মহত্যার তিন সপ্তাহ পর হিটলার জার্মানীর বৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গের সাথে দেখা করেন। তখন জার্মানীর একটু বিশৃংখল অবস্হা আবার ফিরে এসেছে। এদিকে ১৯৩২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবার কথা, কিন্তু হিন্ডেনবুর্গ নির্বাচনে দাড়াবেননা বলে ঘোষনা দিলেন।
১৯৩২ সালের প্রথম দিকে চ্যান্সেলর ব্রুনিং প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য হিটলারকে নিমন্ত্রন করলেন। বিষয় হিন্ডেনবুর্গকে পুনরায় প্রেসিডেন্ট হবার জন্য রাজি করানো। আলোচনায় হিটলার কোন মতামত না দিয়ে শুধু শুনে যান।
এর কিচু পরেই ৮৪ বছর বয়সি হিন্ডেনবুর্গ অনিচ্ছা সত্বেও প্রসিডেন্ট পদে নিজের প্রার্থিতা ঘোষনা করলেন।
আর তখনই হিটলার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনিও প্রসিডেন্ট পদের জন্য লড়বেন।
শুরু হল হিটলারের নির্বাচনী প্রচারণা। প্রখর বুদ্ধির গোয়েবলস নির্বাচনে তার সমস্ত প্রতিভা ব্যাবহার করলেন। প্রতিদিন মিছিল, মিটিং, লাখো পোস্টার ব্যাবহার করা হল।
হিটলারের পোষ্টারিং
অনেক জায়গায় হিটলারের রেকর্ড করা ভাষন প্রচার করলেন। মানে নাজী পার্টি একেবারে উন্মাদ হয়ে গেল আরকি।
সবাই দিবারাত্র পরিশ্রম করল। সে এক এলাহি কারবার!
বক্তৃতায় হিটলার
ওদিকে অন্য প্রার্থী বৃদ্ধ হিন্ডেনবুর্গ তার বিজয় নিয়ে এতটাই নিশ্চিন্ত ছিলেন যে তিনি প্রচার বলতে গেলে করতেনই না। অন্য দিকে গোয়েবলস মনে করতেন হিটলার একটা অঘটন ঘটাবেনই। বাস্তবে বহু হতাশ তরুন তখন হিটলারের পক্ষে মত দিয়ে ফেলেছেন। ষাট লাখ বেকার করবে কি?বার্লিনেও তখন বিশৃংখল অবস্হা, মার্কসবাদের হুমকি, একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ইত্যাদি মানুষকে হিটলারের দিকে টেনে নিয়ে গেছে।
১৩ই মার্চ ১৯৩২। ভোটের ফলাফল বের হল। দেখা গেল হিটলার পেয়েছেন প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখের কিছু বেশি অর্থাৎ মোট ভোটের ৩০% আর হিন্ডেনবুর্গ পেয়েছেন ১ কোটি ৮৬ লাখের কিছু বেশী মানে মোট ভোটের ৪৯%। তার মানে কেউ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি! (৫১% দরকার ছিল)
নিয়ম মোতাবেক আবার ভোট গ্রহনের সময়সুচি নির্ধারণ করা হল, একমাসের কম সময়ের মধ্যে! ১০ ই এপ্রিল!
হিটলারের সমর্থকরা নারাজ হলেন কিন্তু হিটলার দ্রুত প্রচার কাজ শুরু করতে বললেন। এবার আরো জোরে সোরে প্রচার করা হল।
শত শত বক্তৃতায় হিটলার স্হান কাল পাত্র ভেদে বিভিন্ন আশার বানী শোনালেন। হিটলার প্রতিজ্ঞা করলেন পাশ করলে 'থার্ড রাইখের প্রতিটি কুমারী একটা করে স্বামী পাবেন'। রাজনীতিতে কেলেংকারি হবেনা তাতো হয়না! হিটলারের ডান হাত আরনস্ট রম সমকামিতার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তবে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে কিছু পাওয়া যায়নি। আর হিটলারেরও তাকে দরকার ছিল তাই তিনিও সেটা নিয়ে বেশী মাতামাতি করলেননা! আরনস্ট রম ছিলেন Sturmabteilung or SA নামক প্যারা মিলিটারি সংস্হার প্রধান, যার তখনকার সদস্য সংখ্যা ছিল ৪ লাখের বেশী।
'এসএ' র লোগো বা চিহ্ন দেখুন নীচে:
১০ই এপ্রিল ১৯৩২ ভোট শেষ হল। গননা করে দেখা গেল হিটলার পেয়েছেন ১ কোটি ৩৪ লাখের বেশী প্রায় ৩৬% আর হিন্ডেনবুর্গ পেয়েছেন ১ কোটি ৯৩ লাখের কিছু বেশী প্রায় ৫৩%। বৃদ্ধ হিন্ডেনবুর্গ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন, কিন্তু হিটলারের জনপ্রিয়তা বহু বেড়ে গেছে তাতে কারো কোন সন্দেহ ছিল না।
ওদিকে বার্লিনে তখন মহা হট্টগোল, আতংক, অনিশ্চয়তা, গুজব আর শৃংখলার চরম অভাব।
এই সময় উঠে আসলেন এক অতি উচ্চভিলাসী সামরিক অফিসার নাম জেনারেল কুর্ট ফন শ্লেইশার ( Kurt Von Schleicher: 1882- 1934)
কুর্ট শ্লেইশার।
তিনি ভাবলেন তিনিই হবেন জার্মানীর ভবিষ্যৎ শাসক।
এই হট্টগোলের সময় ১৯৩২ এর এপ্রিলে চ্যান্সেলর হাইনরিখ ব্রুনিং
ব্রুনিং
এক ডিক্রির মাধ্যমে হিটলারের এসএ আর এসএস কে নিষিদ্ধ ঘোষনা করলেন। নাজীর সদস্যরা বলল প্রতিশোধ নেয়ার জন্য, কিন্তু হিটলার অপেক্ষা করতে বললেন। এসএস এর লোগো, কি ভয়াবহ!
তখন ক্ষমতাবান শ্লেইশার হিটলারকে ডেকে প্রস্তাব দিলেন যদি নতুন নির্বাচন দিয়ে ব্রুনিংকে সরিয়ে তাকে সরকার গঠনে সহায়তা করা হয় তাহলে ঐ নিষিদ্ধ ঘোষনাটা বাতিল করা হতে পারে। যেটা হবে জাতিয়তাবাদী সরকার।
হিটলার রাজি হলেন।
শ্লেইশার ভালমানুষ ব্রুনিংকে সরাবার প্ল্যান করলেন। ২৯ শে মে ১৯৩২ প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গ ব্রুনিংকে পদত্যাগ করতে বলেন। ব্রুনিং পদত্যাগ করলেন আর সাথে সাথে গনতন্ত্রের কবর রচনা হয়ে গেল। সব কিছুর নিয়ন্ত্রন তখন শ্লেইশারের হাতে।
তখন তিনি এক অজানা সমাজকর্মি ফ্রানয ফন পাপেন কে চ্যান্সেলর বানালেন। পাপেনকে দেখুন:
১৫ ই জুন ১৯৩২ এস এস আর এসএ র উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। শ্লেইশার তার কথা রাখলেন।
ওদিকে পাপেন তার অদক্ষতার জন্য চারিদিকে বিশৃংখলা সৃস্টি করলেন। আবার গন ভোট হয় আর এতে হিটলারের দল দেশের বৃহত্তম দল হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
৫ ই আগস্ট হিটলার শ্লেইশারের কাছে নীচের দাবীগুলি পেশ করেন:
১। হিটলার চ্যান্সেলর হবেন।
২। যে কোন ডিক্রি জারির ক্ষমতা হিটলারের থাকবে।
৩।
নাজী সদস্যদের জন্য তিনটা মন্ত্রীর পদ সংরক্ষিত থাকতে হবে।
৪। একটা প্রচার মন্ত্রনালয় তৈরী করতে হবে।
৫। স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয়ে নাজীদের কতৃত্ব থ্কবে।
৬। প্রশিয়ার নিয়ন্ত্রণ নাজীদের হাতে থাকবে।
৭। শ্লেশিয়ার হবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী!
১৩ আগস্ট শ্লেইশার জানান দু একটা ছাড়া কোন দাবিই মানা সম্ভব নয়।
নীচে পাপেনের কেবিনেট: ডানে সামনে সাদা স্যুট পড়া লোকটি পাপেন
জবাব শুনে হিটলার হিস্টিরিয়াগ্রস্হ রোগীর মত আচরণ শুরু করেন।
পরে শান্ত হয়ে বারখটসগাদেন নামক এক জায়গাতে ছুটিতে চলে যান।
১৯৩২ সালেন সেপ্টেম্বরে পাপেন আবার নির্বাচনের ঘোষনা দেন। পাঠক আপনার মত নাজী বা জার্মানরাও ততদিনে নির্বাচন দেখতে দেখতে বিরক্ত ক্লান্ত হতাশাগ্রস্হ। তবু নাজীরা প্রচার কাজ শুরু করলেন।
এই সময় হিটলারের প্রেমিকা এফা ব্রাউন গুলি করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, আর এতে আগে গেলীর আত্মহত্যার ঘটনায় আতংকিত হিটলার বেশ কাবু হয়ে যান।
যাহোক এফা ব্রাউন প্রানে বেঁচে যান।
হিটলার ও এফা
১৭ই নভেম্বর ১৯৩২ প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গের নির্দেশে চ্যান্সেলর পাপেন পদত্যাগ করেন আর নভেম্বরেই হিটলার হিন্ডেনবুর্গের সাথে দেখা করেন।
হিন্ডেনবুর্গের সাথে মিটিংএ যাবার সময়:
হিন্ডেনবুর্গ তাকে কোয়ালিশন সরকার গঠনের কথা বললে হিটলার অস্বিকার করেন। আবার মিটিং আবার ব্যার্থ!
এবার বড় ব্যাবসায়ীরা প্রেসিডেন্টকে চাপ দেয় হিটলারকে ক্ষমতা দেয়ার জন্য। তাতে তাদের লাভ ছিল।
অনেক ঝামেলার পর হিন্ডেনবুর্গ সেই শ্লেইশারকে চ্যান্সেলর বানলেন।
এর ঠিক ৫৭ দিন পর হিটলার জার্মানীর সর্বেসর্বা হন।
এর মধ্য পাপেন চাইছালেন শ্লেইশারের পতন হোক। বিভিন্ন কারনে শ্লেইশার কাজ করতে পারছিলেন না। হিটলার আর পাপেন তার সব কাজে বাধা সৃস্টি করছিল।
এমনকি হিন্ডেনবুর্গ পর্যন্ত পাপেনের পক্ষে কথা বলছিলেন এবং চাইছিলেন হিটলার পাপেনকে নিয়ে কিছু একটা করুক।
২২ শে জানুয়ারী ১৯৩৩ গোপনে হিটলার, হিন্ডেনবুর্গের ছেলে অসকার, পাপেন আর গোয়েরিং মিলে জনৈক জোয়াশিম ফন রিবেনট্রপ (১৮৯৩- ১৯৪৬) এর বাসায় একটা মিটিং করেন। নীচে তার ছবি:
এই মানুষটি পরে জার্মানীর পররাস্ট্রমন্ত্রী হন এবং ১৯৪৫ পর্যন্ত ঐ পদে ছিলেন। নীচে বিখ্যাত অফিসার গোয়েরিং:
সবাই মিলে রাজি হলেন হিটলারের নাজীদেরকেই ক্ষমতায় বসাতে হবে। ব্যাবসায়ীরাও চাপ দিচ্ছিল হিটলারকে বসাবার জন্য।
২৮ শে জানুয়ারী ১৯৩৩ চ্যান্সেলর শ্লেইশার পদত্যাগ করেন।
পাপেন হিটলার আর অসকার গেলেন হিন্ডেনবুর্গের কাছে সমাধানের জন্য। অবশেষে ৩০ শে জানুয়ারী ১৯৩৩ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কর্পোরাল হিটলার যিনি সার্জেন্ট হতে পারেননি সেই এডলফ হিটলার, ফুয়েরার
হিটলার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে বের হলেন জার্মানীর নতুন চ্যান্সেলর হিসাবে।
যারা আগের পর্বগুলি পড়েননি তারা ইচ্ছে করলে পড়ে দেখতে পারেন।
১ম পর্ব: Click This Link
২য় পর্ব: Click This Link
৩য় পর্ব: Click This Link
৪র্থ পর্ব: Click This Link
৫ম পর্ব: Click This Link
বাকটিুকু আর নাই।
কারন ঐসব যুদ্ধ নিয়ে পৃথিবীতে সবচাইতে বেশী লেখা হয়েছে, ফলে আর কারো পড়া বাকি নেই বলে মনে হয়। ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।