এ শহর ছেড়ে আমি পালাব কোথায়
ভূমিকম্পের কারণে প্রতি বছর বহু মানুষের প্রাণ যায়। ভেঙে পড়ে ঘরবাড়ি। তবে জার্মান বিজ্ঞানীরা এবার এমন এক ওয়ালপেপার আবিষ্কার করেছেন, যেটা বাড়ির দেয়াল ভেঙে পড়া প্রতিহত করতে পারে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘ইন্টেলিজেন্ট কম্পোজিট সিসমিক ওয়ালপেপার’। তবে বিজ্ঞানীরা সহজ করে একে ডাকেন ‘ভূমিকম্প ওয়ালপেপার’ নামে।
গ্লাস ফাইবার দিয়ে তৈরি এই পেপার কোনো বাড়ির দেয়ালে লাগালে সেটা ভূমিকম্পের সময় সহজে ভেঙে পড়বে না। আর পড়লেও ওয়ালপেপারের ভেতরে থাকা বিশেষ প্লাস্টিকের কারণে ইটের টুকরোগুলো সহসাই মানুষের মাথার ওপর পড়বে না। কেননা ওই প্লাস্টিক সেগুলোকে কিছু সময়ের জন্য আটকে রাখতে পারবে। আর ততক্ষণে ঘরের ভেতর থাকা মানুষগুলো বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।
জার্মানির কার্লসরুয়ে ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধীনে থাকা ইনস্টিটিউট অব সলিড কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন মেটেরিয়াল টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা এই ওয়ালপেপার আবিষ্কার করেছেন।
এ বছরই সেটা বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রথম দেখায় আপনার বিশ্বাস হতে চাইবে না যে, কী করে এমন একটা সরু ওয়ালপেপার, যেটা মাত্র এক মিলিমিটার পুরু, এত বড় একটা কাজ করতে পারে।
গবেষকদের একজন মরটিস উরবান এই ওয়ালপেপারের কাজ করার কৌশলটা জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, যে ফাইবার দিয়ে পেপারটা তৈরি সেটা একইসঙ্গে খুব শক্তিশালী এবং স্থিতিস্থাপক। ফলে যখন ভূমিকম্প হয় তখন এই ওয়ালপেপারটা পুরো দেয়ালেই কম্পনের মাত্রাটা ছড়িয়ে দেয়।
তাই দেয়ালের দুর্বল অংশের ওপর আঘাত হানার সুযোগ নেই ভূমিকম্পের। ফলে দেয়াল সহজে ভেঙে পড়বে না।
কিন্তু এরপরও যদি ভাঙনের সৃষ্টি হয় তাহলে আছে ‘স্থিতিস্থাপক পলিপ্রোপিলিন প্লাস্টিক’। ওয়ালপেপারের মাঝে এই প্লাস্টিকের অবস্থান। এর কাজ হচ্ছে ভেঙে যাওয়া টুকরাগুলো আটকে রাখা, যেন সেগুলো মানুষের মাথার ওপর না পড়ে।
অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও এই কাজ সাফল্যের সঙ্গে করতে সক্ষম এই প্লাস্টিক। এই সময়ের মধ্যে মানুষগুলো বাইরে বেরিয়ে যেতে পারবে।
গবেষক লোথার স্টেম্পনিভস্কি বলছেন, অন্যান্য ওয়ালপেপারের মতো ভূমিকম্প ওয়ালপেপারও প্লাস্টার করা দেয়ালে লাগানো যাবে। অবশ্য এ জন্য বিশেষ ধরনের আঠা ব্যবহার করতে হবে। যেটা তৈরি করেছে জার্মান কোম্পানি বায়ার আর্থ সায়েন্স।
এর একজন কর্মকর্তা মিশায়েল এঙ্গেল বলেছেন, সাধারণ ওয়ালপেপার লাগানোর আঠা হয় শক্তিশালী, নয় স্থিতিস্থাপক। কিন্তু ভূমিকম্প ওয়ালপেপারের আঠাকে দুটি গুণেরই অধিকারী হতে হবে বলে জানালেন বায়ার কর্মকর্তা এঙ্গেল।
বায়ারের তৈরি এই আঠাতে যে রাসায়নিক পদার্থগুলো রয়েছে, সেগুলো একে অপরের সঙ্গে হাইড্রোজেন দিয়ে যুক্ত। ভূমিকম্পের কারণে কখনো এই বন্ধন ছুটে গেলে, মুহূর্তের মধ্যেই সেগুলো দেয়ালের অন্য কোনো অংশে গিয়ে সংগঠিত হতে পারে। এভাবেই ওয়ালপেপারটি দেয়ালের সঙ্গে লেগে থাকতে পারে।
বিজ্ঞানী উরবান বলছেন, তারা বাস্তবে একটি ঘর তৈরি করে এই ওয়ালপেপারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখেছেন এবং সফল হয়েছেন। তিনি বলেন, মাঝারি থেকে কম শক্তিশালী ভূমিকম্পে এই ওয়ালপেপার কার্যকরী। তবে এটা শুধুমাত্র ইটের তৈরি বাড়ির জন্য প্রযোজ্য, কংক্রিটের জন্য নয়। কংক্রিটের জন্য আরও শক্তিশালী ফাইবার প্রয়োজন এবং এটা নিয়ে কাজ চলছে বলে জানান উরবান।
বায়ার্ন কর্মকর্তা এঙ্গেল বলছেন, বাজারে ছাড়ার জন্যই ভূমিকম্প ওয়ালপেপার তৈরি।
তিনি বলেন, ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ যেমন জাপান, তুরস্ক অথবা চিলিতে এই ওয়ালপেপার কাজে লাগানো যেতে পারে। ওইসব দেশের সরকার চাইলে হাসপাতালে, বৃদ্ধাশ্রমে বা শিশুদের স্কুল তৈরিতে এই পেপার ব্যবহার করতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ ওয়ালপেপারের চেয়ে ভূমিকঙ্গ ওয়ালপেপারের দামটা একটু বেশিই হবে বলে জানান এঙ্গেল। তবে আস্তে আস্তে সেটা কমে আসবে। সূত্র : ডিডব্লিউ
View this link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।