৫ই এপ্রিল, ২০১২।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হল। আজকে হাসপাতালে ২৪ ঘন্টার ডিউটি। রাতে ঘুমাতে একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল। ফেসবুকে সবার শুভেচ্ছার জবাব দিতে দিতে।
গতকাল সকালে হাসপাতালে যাওয়ার তাড়া ছিল না, দেরী করেই উঠতাম, কিন্তু খুব সকালে আম্মা ফোন করে ঘুম ভাঙিয়ে দিলেন। ঘুম ঘুম জড়ানো গলায় হ্যালো বলতেই শুনলাম, কি রে ঘুমাস না কি এখনও, (এবার গান) হ্যাপি বার্থডে টু ইউ......। মাঝপথেই থামিয়ে দিয়ে বললাম, আরে করেন করেন কি, আজকে না তো, আগামীকাল। আম্মা বিরক্ত হয়ে বলে উঠলেন, দেখছিস, আমি আগেই জানতাম, ওরাই তো আমাকে ভুল করিয়ে দিল। (ওরা মানে মনে হয় বোনরা, কিন্তু ওদের তো ভুল করার কথা না।
) যা হোক আম্মা, ঠিক আছে ঘুমা, বলে ফোন কেটে দিলেন।
বিকালে আম্মা আবারও ফোন দিলেন। হ্যালো বলতেই আম্মা খুব অবাক হলেন। যেন অন্য কারও সাথে কথা বলছেন, এভাবে বললেন আমাকে ডেকে দিতে। আমি বললাম, কী বলেন আম্মা এগুলা।
আম্মা বললেন, ও তুই-ই না কি, আমি তো ভাবলাম কোন এক পিচ্চি মেয়ে হ্যালো বলল। কইছে আপনেরে। আম্মা হাসতে হাসতে বললেন, আচ্ছা শোন, আমি কাল আসছি তোর ওখানে। রাগ ভুলে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি চলে এল নিজের অজান্তেই।
যা হোক, সকালে উঠে তো হাসপাতালে চলে গেলাম।
পিচ্চিদের কিছু বলতে চাই না, কিন্তু খাওয়ানোর কথা ভাবছিলাম কয়েকদিন আগে থেকেই। ছুতো খুঁজছিলাম খাওয়ানোর। হঠাৎ কয়েক পিচ্চি আমার আরেক কলিগকে ধরল খাওয়ানোর জন্য। আমি ভাবছি, আরে আমাকে বললেই তো হত। আমার মনের কথা আরেক পিচ্চি কিভাবে যেন জেনে গেল, আর বলল, আপু আপনিও তো খাওয়াতে পারেন।
আমি লাফিয়ে উঠে, অবশ্যই পারি, আজকেই খাওয়াবো। এক পিচ্চিকে পাঠিয়ে দিলাম খাবার আনার জন্য।
সবার জন্য খাবার এসে গেল। আরেক হাফ পিচ্চি পরিবেশনের দায়িত্ব নিল। নিজে আবার ডায়েটিং-এ আছে, তাই কিছুই খেল না।
খেতে খেতে সবার একই প্রশ্ন, আচ্ছা এই খাওয়ার উপলক্ষ্য কী? আমি বলি, উপলক্ষ্য খোঁজার দরকারটা কী, তোমরা চাইলে তাই খাওয়ালাম, এখন চুপচাপ খাও। কতগুলো পন্ডিত পিচ্চি বিজ্ঞের মত মাথা দুলিয়ে বলল, হুমম, বুঝছি, উপলক্ষ্য নিশ্চয়ই আছে, আপু বলবে না।
একটু পর এক কলিগের ডোরেমন-ভক্ত পিচ্চি বাবু এল হাসপাতালে বেড়াতে। লাফ-ঝাঁপ আর সবার সাথে মারামারি-ডোরেমনের ভাষায় তর্কাতর্কি-দোস্তি পাতানোর পর আস্তে করে এসে আমার কানে কানে বলল, জানো আন্টি, আমার বাড্ডে না ৯ই এপ্রিল, আর বেশি দূরে নাই। ওওওওও আচ্ছা তাই বুঝি, জানো, আজকে কিন্তু আরও একজনের বাড্ডে আছে।
পিচ্চি লাফিয়ে উঠে বলল, তাই? কার বাড্ডে? আমি মিটি মিটি হেসে বলি, বলবোওওওও না। পিচ্চির মা এসে বলল, চল মামনি বাসায় যাই। পিচ্চি বলে উঠল, মামনি আজকে তো একজনের বাড্ডে আছে, চল বাড্ডেতে যাই। মামনি কিছু বুঝতে না পেরে দিল এক ধমক, বলেছে তোমাকে, চল এখন বাসায়, খালি বেড়ানোর ধান্দা। পিচ্চি যেতে যেতে মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমনে ঝুট বোলা।
এর মধ্যে আম্মাকে ফোন করে জেনে নিয়েছি কতদূর পৌঁছালেন। দুপুরে বাসায় এসেই শুয়ে পড়লাম। একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার হাসপাতালে ছুটতে হবে। মনে হয় একটু চোখ লেগে গিয়েছিল। হঠাৎ ধড়মড় করে উঠে পড়লাম, দরজায় কি টোকা দিল কেউ? চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলে দেখি আম্মা, এক ভাইয়া আর তার মেয়ে।
ভাইয়া বললেন, এই দেখেন, এটা তো ঘুমাচ্ছিল। লজ্জা পেয়ে গেলাম। সবাইকে ঘরে বসালাম। বসালাম বললে ভুল হবে। কেউ বসছিল না বার বার বলার পরেও।
আম্মা তাড়া দিলেন, নে নে তাড়াতাড়ি খাবারগুলো গুছিয়ে নে, তোর তো আবার হাসপাতালে যেতে হবে। দেখি আম্মার আর ভাইয়ার হাতে এত্ত এত্ত খাবার। ভাইয়া একটা প্যাকেট দিয়ে বললেন, নাও কেক কাটো। ওরে কপাল, এখনও কি আমি সেই পিচ্চি আছি? ভাইয়া নাকি নিজেই আসার সময় কেকটা নিয়ে এসেছে। তবে তাড়াহুড়ায় আমার নাম লিখাতে পারেনি।
আর অটোরিক্সার ঝাঁকুনিতে এক কোণা চ্যাপ্টাও হয়ে গিয়েছে।
যা হোক, সবার জোরাজুরিতে ছুরি নিয়ে এসে কাটতেই হল কেক। মোমবাতির কথা আর কারুর মনেও পড়েনি। অবশ্য মনে পড়লেও লাভ হত না। এত গরমে ফ্যান বন্ধ করে মোমবাতি আমিই জ্বালাতে দিতাম না।
কেকে ছুরি বসানোর সাথে সাথে আম্মা, ভাইয়া আর ভাতিজী শুরু করল সেই চিরচেনা গান। আমি বলি, কি যে শুরু করলেন আপনারা।
আম্মাকে কেক খাইয়ে দিলাম, আম্মাও আমাকে খাইয়ে দিলেন। ভাইয়া আর ভাতিজিকেও দিলাম। তারপর আম্মা খাবারের ঝুলি সামনে ধরলেন।
খালার রান্না করা সব। কত কত যে খাবার। এই তার কিছু নমুনা।
পোলাও ছিল বেরেস্তা দেয়া।
আর মুরগীর ভুনা তরকারী।
ঝাল কম।
একটু অন্যরকম আইটেমও ছিল, ঢেঁড়স দিয়ে মাছের তরকারী। ইয়ে মানে, এইটা যেন কী মাছ? টাটকিনি হতে পারে। আমি আবার মাছ চিনি না।
আরও ছিল পিঠা।
আমার প্রিয় ভাজা পুলি, আর গরম গরম চিতই পিঠা।
আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে বলে সবাই তাড়াহুড়া করে চলে গেল। আমি ভাইয়ার বাসার পিচ্চি ভাতিজা-ভাতিজির জন্য কেকের অর্ধেকটাই দিয়ে দিলাম।
তারপর আর কি, হাসপাতালে আর সব দিনের মতই কেটে গেল বাকী দিনটা। অবশ্য বাসায় ফিরে সামু আর ফেসবুকে ঢুকতেই হয়েছে।
এত শুভেচ্ছা কি না নিয়ে থাকা যায়!
সবার জন্য নিজের রান্না নিয়ে এলাম। আমার স্বল্প রন্ধনবিদ্যায় যা ধরে। চার রকম ভর্তা দিয়ে ভাত, সাথে করলা ভাজি আর মুরগী ভুনা। ভর্তার মধ্যে আছে ডাল ভর্তা, আলু ভর্তা, ডিম ভর্তা আর বেগুন ভর্তা। মেঘলা দিনে খারাপ লাগবে না আশা করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।