আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাগ্নের জন্য দিনটা



২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম সারাদিন ভাগ্নের সাথে কাটাব। রাত বারোটায় ভাগ্নের মোবাইলে ফোন করে দেখি মোবাইল বন্ধ। ওর মায়ের নাম্বারে ফোন করলাম। ধরল না। মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে।

ভারী মুশকিল হল তো, এতগুলো মানুষের শুভেচ্ছা পৌঁছানোর দায়িত্ব নিয়েছি, পালন করতে পারলাম না। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেল। কি করব, ঈদের আমেজ যে কাটেনি তখনও। উঠেই ভাগ্নের কাছে যাবার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম। টারজান অবাক হয়ে বলল, কই যাও? (ন্যাকা সাজে, আসলে সবই জানে।

) বললাম, ভাগ্নের জন্মদিনে যাই, তুমিও চলো সাথে। বলল, আমি বরং আমার কাজে যাই, তুমি চলে যাও, সন্ধ্যার দিকে সময় পেলে যাবো ওদিকে, তার আগে নিশ্চয়ই কেক কাটা হবে না। আমার কিছু কেনাকাটা ছিল। আগে 'স্বপ্ন'তে গেলাম। কেনাকাটা সেরে বিশাল বস্তা নিয়ে গেলাম ভাগ্নের বাড়ি।

যেতেই ভাগ্নে বলল, তুমি কি এই খেলাটা পারো? দেখলাম মনোপলির বাক্স নিয়ে মুখ কালো করে বসে আছে। বললাম, হ্যাঁ পারি। সবগুলো দন্ত বিকশিত করে নাচতে নাচতে বলল, তাহলে আমাকে শিখিয়ে দাও। বললাম, দিব, আগে বল কালকে বারোটার সময় ফোন করে পাইনি কেন তোমাকে, ঘুমিয়ে গেছিলে নাকি? ভাগ্নে বলল, কিন্তু আমি তো রাত একটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম, চলো এখন মনোপলি খেলি। আমি বললাম, আচ্ছা তাহলে এবার কী কী গিফট পেলে দেখাও।

অতি আগ্রহে সব গিফট দেখিয়ে বলল, তাহলে এবার মনোপলি শুরু করি। বললাম, দাঁড়াও আগে একটু রেস্ট নিয়ে নিই। কিন্তু আর ভাগ্নের তর সইছে না। শিখিয়ে দিলাম খেলা, দারুণ মজা পেয়ে গেল। খুশীতে লাফাতে থাকল আমাকে খেলায় হারিয়ে দিয়ে।

বিকালে আমি আর ভাগ্নের মা বের হলাম কেক কিনতে। এদিকে বাসায় ভাগ্নের অন্য খালারা বসে বসে প্ল্যান করল এর মধ্যে যদি টারজান চলে আসে তাহলে তারা টারজানকে ভড়কে দিবে, ঘরে ঢুকার সাথে সাথে টারজানকে জিজ্ঞেস করবে, কি ব্যাপার আপনার বউ কই, সে আসল না? সুইস এ গেলাম কেক কিনতে। গিয়ে তো দেখি ভয়াবহ অবস্থা। ঢাকা শহরের সবার জন্মদিন মনে হয় আজকেই হচ্ছে। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কেকের সামনে।

আর সবাই "হ্যাপি বার্থডে" লেখাচ্ছে। বহু কষ্টে ঠেলেঠুলে সামনে গিয়ে একটা কেক দখল করলাম। এর মধ্যেই আরও তিনজন সেইটার অর্ডার করল। আমি বললাম, আমি কিন্তু আগে বলেছি। পেছনের কয়েকজন বলে উঠল, না আমি আগে এসেছি, আমি আগে।

লোকটা একটু তাকিয়ে আমাকে দেখিয়ে বলল, এই আপা আগে আসছে, আপনারা দশ মিনিট অপেক্ষা করেন, ভেতর থেকে আরও কেক আসছে। ভাগ্নের নাম দিয়ে "হ্যাপি বার্থডে" লিখিয়ে বের হলাম। ভাগ্নের মা ততক্ষণে বার্গার আর স্যান্ডউইচ নিয়ে নিয়েছে। বের হয়েই দেখি একটা পিচ্চি মেয়ে, ভাগ্নের বয়সীই হবে, এক হাতে কতগুলি সূতা দিয়ে ঝোলানো আপেলাকৃতি বেলুন আরেক হাতে মুঠি করে একটা দশ টাকার নোট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ভাগ্নের মা বলল, কত করে বেলুন? পিচ্চি বলল, দুই টাকা।

আচ্ছা পাঁচটা দাও বলে বিশ টাকার একটা নোট বের করল ভাগ্নের মা। পিচ্চি বেশ কষ্ট করে পাঁচটা বেলুন আলাদা করল, দেখলাম ছয়টা এসে গেছে। পিচ্চিকে বললাম, একটা বেশী এসে গেছে কিন্তু। পিচ্চি হাতের দশ টাকার নোটটা দিয়ে বলল, থাক আপা নিয়া যান। বলে বিশ টাকার নোটটা হাতে মুঠি করে ধরে দাঁড়িয়ে রইল আরও বিক্রির আশায়।

বাসায় এসে দেখি তখনও টারজান আসে নি, ভাগ্নের খালারা আফসোস করতে থাকল ওদের প্ল্যান কাজে লাগাতে পারল না বলে। একটু পর টারজান আসলে তার কাছেও আফসোসের বর্ণনা দিল। টারজান বলল, ওরকম বললেও আমি ঠিকই বুঝতাম যে তোমরা দুষ্টুমি করছ। এরপর শুরু হল আসল পর্ব। কেক রাখা হল টেবিলে, মোমবাতি জ্বালানো হয়নি কারণ খুব গরম পড়েছিল, ফ্যান বন্ধ করার মত অবস্থা ছিল না।

যা হোক, ঐতিহাসিক ছুরি (ছুরির ইতিহাসে পরে আসছি) দিয়ে ভাগ্নে কেক কাটল, সবাই হাততালি দিল। ভাগ্নে বলল, কেউ গান গায় না কেন? সবাই জন্মদিনের গান গাইলাম। কেকটা খুবই মজা হয়েছে। তবে জন্মদিনের কেক মাখানোর নিয়ম আর কেউ না মানলেও ভাগ্নের ছোট ভাই ঠিকই মানল, সে নিজের সারামুখে কেক মাখিয়ে মাখিয়ে খেল। এবার টারজানকে ছুরির ইতিহাস সবিস্তারে বর্ণনা করা হল।

এই ছুরি কেনা হয়েছিল ৩৬ বছর আগে, ভাগ্নের মায়ের প্রথম জন্মদিনে। তারপর থেকে এই বাড়ির প্রতিটা জন্মদিনে বের করা হয় এই ঐতিহাসিক ছুরি। শুধু জন্মদিনের কেক কাটার জন্যই এটা বের করা হয় যা এখনও নতুনের মত ঝকঝকে। রাতের খাবারটাও জম্পেশ হল। যে ভাগ্নের খাবারের প্রতি এত অনীহা, সেও খুব মজা করে পেট ভরে খেল।

ভাগ্নের দিন বলে কথা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।