নিজের সম্পর্কে বলা তো কঠিন কাজ। আমার সম্পর্কে বরং আপনারাই বলুন। শুধু জানি একজন সাধারণ মানুষ আমি। কাজী আরেফ আহমেদ, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যারা নিরন্তর কাজ করে গেছেন চুরান্ত লক্ষ্য পূরণের পথে তাদেরই অন্যতম প্রধান সংগঠক। ষাটের দশকের শুরু থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত গণ মানুষের মুক্তির সংগ্রামে কাজ করে গিয়েছেন কাজী আরেফ আহমেদ ।
দৃঢ় চেতা এই রাজনীতিবিদ এর জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ এপ্রিল ।
ষাটের দশকের শুরুতেই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত গোপন সংগঠন "স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ" (নিউক্লিয়াস) 'র শীর্ষ তিন সদস্যের একজন ছিলেন তিনি । বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রূপকারদের একজন শহীদ কাজী আরেফ আহমেদ বি.এল.এফ বা "মুজিব বাহিনী"র প্রধান ছিলেন। ১৯৭১-এর মার্চের শুরুতেই জাতীয় সংগীত নির্ধারণেও অগ্রণী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব ছেড়ে বিজয়ীর বেশে মুক্তিযুদ্ধ ফেরত এক ঝাঁক উদীয়মান ও তরুণের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর দেশের প্রথম বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠিত হয় ।
যাদের মুল লক্ষ্য ছিল, শ্রেণী বৈষম্যহীন স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন বুকে ধারণ করে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন; সেই স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন। শহীদ কাজী আরেফ আহমেদ ছিলেন সেই স্বপ্নদ্রষ্টাদের মধ্যে প্রথম সারীর একজন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ছিলেন জাতীয় কৃষক লীগ'র সভাপতি। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সাহসিকতার সাথে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণআন্দোলন সংগঠিত ও পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদান করেন কাজী আরেফ আহমেদ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধ ক্ষমতা দখল ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ভাবেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তিনি ৭৫ এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের রাজনৈতিক মূল্যায়ন করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিকে মোকাবেলায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের রাজনৈতিক নীতি-কৌশল প্রণয়ন করেন এবং তার ভিত্তিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে মেরুকরণের উদ্যোগ নেন। তার এ নীতি-কৌশলের ভিত্তিতেই '৭২ থেকে '৭৫ পর্যন্ত বৈরী রাজনৈতিক অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগ ও জাসদ ১৯৮০ সালে ১০ দলীয় ঐক্য মোর্চায় শামিল হয়। তার এ নীতি-কৌশলের ভিত্তিতেই ৮০ দশকে সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য মোর্চা গড়ে ওঠে।
স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আট বছরের লড়াইয়ে রাজপথে যে জোটটি পরিণত হয়ে উঠেছিল আন্দোলন-সংগ্রামের প্রধান চালিকা শক্তি; সেই "পাঁচ দল"র শীর্ষ নেতৃত্ব ছিলেন তিনি।
সেই ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে সংঘটিত ১৯৯০ এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান সাহসী রূপকার ছিলেন এই বিপ্লবী বীর।
নব্বই এর দশকের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল "জাতীয় সমন্বয় কমিটি" গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন দৃঢ় চেতা এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সে সময় ঘাতক-দালাল বিরোধী লড়াইয়ে ব্যাপক সাড়া জাগানো সংগঠন "মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র কমান্ড" গঠনে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন তিনি।
কাজী আরেফ আহমেদ: বাংলাদেশের নিভৃতচারী এক ইতিহাস
১৯৯৯ সালের এ দিনে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুর গ্রামে সন্ত্রাস বিরোধী এক জনসভায় বক্তৃতারত কাজী আরেফ আহমেদকে ঐ এলাকার এক দল সশস্ত্র সন্ত্রাসী গুলি করে হত্যা করে। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশ তথা জাতি হারায় তাঁর শ্রেষ্ঠতম সন্তানদের একজনকে।
সেদিন খুনিদের গুলিবর্ষণে কুষ্টিযা জেলা জাসদের তৎকালীন সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক পর পর দুইবার নির্বাচিত দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এড. ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন এবং তফসের মণ্ডলও নিহত হন। যারা প্রত্যেকেই ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক।
আজীবন প্রচার বিমুখ সব্যসাচী এই রাজনীতিবিদ নেপথ্যে থেকেই নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন জাতির প্রতিটি ক্রান্তি লগ্নে। তাঁর জীবন যাপনে সমাজতন্ত্র ও সেক্যুলার আদর্শের পূর্ণ প্রতিফলন ছিল। ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনের প্রতি তাঁর কোন মোহও ছিল না, প্রচেষ্টাও ছিল না।
তাঁর এ সংগ্রামী জীবন সকল দেশপ্রেমিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
শহীদ কাজী আরেফ সম্পর্কে জানতে এই লিংক দেখুন
সৌজন্যে : শহীদ কাজী আরেফ আহমেদ গ্রুপ পেজ (ফেসবুক)। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।