লাবণী বাড়িতে বসে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করতে চান। সে বন্ধুর কাছ থেকে একটি পিটিসি (পেইড টু ক্লিক) সাইটের নাম জানতে পারেন। জানতে পারেন, সেখানে অ্যাকাউন্ট খুললে তাঁর অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু বিজ্ঞাপন আসবে। সেগুলোতে ক্লিক করলেই তাঁর অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা হতে থাকবে। অ্যাকাউন্ট খুলতে কোনো অর্থের প্রয়োজন পড়বে না।
লাবণী উত্সাহী হয়ে অ্যাকাউন্ট খুললেন এবং দিন-রাত বিজ্ঞাপনে ক্লিক করতে থাকলেন। মাস শেষে তিনি দেখলেন তাঁর অ্যাকাউন্টে ৩০ ডলার জমা হয়েছে। লাবণী টাকা তোলার প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইলেন। কিন্তু ওয়েবসাইটটি থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো, তাঁর অ্যাকাউন্ট মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাই তিনি কোনো অর্থ পাবেন না।
তাঁকে আবারও নতুন করে পরবর্তী মাসের জন্য শুরু করতে হবে। এক মাসের সময় ও শ্রম দুটো খরচ করেও প্রতারিত হলেন লাবণী রায়।
এভাবে পিটিসি সাইটগুলো অনলাইনে চটকদার প্রচারণার ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আয় করছে অর্থ। এ ক্ষেত্রে পিটিসি সাইট নির্মাতা বিজ্ঞাপন ও সাইট ভিজিটর দেখিয়ে গুগলের অ্যাডসেন্স থেকে আয় করছে। পিটিসির সাইটগুলোতে কাজ করতে হলে আগে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়।
আর অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য দাবি করা হয় পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ অ্যাকাউন্ট খোলার পর নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে দিনের হিসেবে দেওয়া হয় বিজ্ঞাপন। সে বিজ্ঞাপনগুলোতে ক্লিক করা হলে সাইটটির পক্ষ থেকে লোভনীয় অর্থের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি সাইটটিতে নতুন কারও নিবন্ধন করিয়ে দিলে নির্দিষ্ট কমিশন দেওয়ার কথাও বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে বলা হয়, যে যত বেশি জনকে নিবন্ধিত করতে পারবে তাদের সবার কাছ থেকে কমিশন যাবে তাঁর অ্যাকাউন্টে।
এভাবেই পিটিসি সাইটগুলোসহ বিভিন্ন মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম সাইট প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
পিটিসি সাইটগুলোর প্রচারণায় ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক, টুইটার, বিভিন্ন ব্লগ ও অনলাইন ফোরাম। অনেক ক্ষেত্রে লোভনীয় অংকের অর্থ ও আউটসোর্সিংয়ের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন লিংকে ক্লিক করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ঢাকা, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন অনলাইন এমএলএম প্রতারণার ফাঁদ পাতা। প্রতারণা করছে এমন অভিযোগ উঠেছে ডোল্যান্সার, অনলাইন অ্যাড ক্লিক, বিডিএসক্লিক সেন্টার, অনলাইননেট টু ওয়ার্ক, বিডি অ্যাড ক্লিক, পেইড টু ক্লিক, স্কাইল্যান্সার, পিটিসি ফর বিডি, অ্যাড সোর্সিং, ডুল্যান্সার ক্লিক টু পেইডসহ আরও বেশ কিছু সাইটের বিরুদ্ধে।
এই ওয়েবসাইটগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে অনলাইন এমএলএম ব্যবসা নিয়ে বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছে। এসব সাইটগুলোর রেফারেন্স বিভিন্ন অনলাইন লিংক ও বন্ধুদের কাছ থেকে পেয়ে অনেকেই প্রথমে উত্সাহী হচ্ছেন। কিন্তু কিছুদিন পরে অর্থ না পেয়ে সাইটগুলোর ব্যবহার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে লগ্নি করা অর্থ ও শ্রম দুটোই বৃথা যাচ্ছে। আর প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সাইটগুলো।
অনেক ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে অ্যাকাউন্ট খুলেও প্রতারিত হয়েছেন অনেকেই।
কম সময় ও পরিশ্রমে বেশি অর্থের লোভ দেখিয়ে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) এখন অনলাইনেও প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে। ‘মেক মিলিয়নস নাউ, নো ম্যানেজার’ বা ‘ওয়ার্ক ইয়োর ওউন স্টার্ট ফিফটিন থাউজেন্ড ডলার পার উইক’—এ রকম অনেক চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেওয়া হচ্ছে। আবার এমএলএম-সম্পর্কিত মেইলও বিভিন্ন উত্স থেকে ইনবক্সেও এসে জমা হচ্ছে। অনেক সময় পরিচিত কারও উপদেশ বা পরামর্শেও এমএলএম ব্যবসা করে এমন ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলছেন অনেকে।
কিন্তু প্রতারক চক্রের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন নতুনরা। অনলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনলাইন এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতারণা করছে। কারণ, এমএলএম প্রোগ্রাম চালু পর শতকরা ৯৮ শতাংশ দ্রুতই ঝরে পড়ে অর্থাত্ প্রোগ্রামটি আর চালিয়ে যেতে চায় না। তাঁরা দ্রুত সেখান থেকে অর্থ তুলে নিতে চান। অর্থাত্ মাত্র দুই শতাংশ প্রোগ্রামটি চালিয়ে যান।
এই দুই শতাংশ ধারণা করেন অনলাইন এমএলএম করে তাঁরা শিগগিরই হয়তো লভ্যাংশ পাবেন। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে তাঁরা অর্থের মুখ দেখে হতাশ হয়ে পড়েন এবং প্রোগ্রামটি ছেড়ে দেন। তখন প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণার আশ্রয় নেয়। কারণ, প্রতিষ্ঠানটি আগেভাগেই তাঁদের প্রোগ্রামটির সফলতার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকে! এমএলএম প্রতারণার আরেকটি কারণ হচ্ছে, যেকোনো উপায়ে দ্রুত অর্থ পেতে চাওয়ার বিষয়টি। প্রোগ্রামটির প্রথম ব্যক্তি তাঁর পরে যারা শুরু করেন তাঁদের সবাইকেই প্রতারিত করে দ্রুত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
মাল্টি লেভেল মার্কেটিং ব্যবসার মাধ্যমে সাধারণত ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য বিক্রি করে ও গ্রাহক বাড়ায়। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকেন তাঁরা অল্প পরিমাণ লভ্যাংশ পান। তাঁদের উদ্দেশ্য থাকে পণ্যটি জনপ্রিয় করে তোলার, যাতে ব্যবসার প্রসার ঘটে। কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য বিক্রি নিয়ে বসে নেই। তাদের লক্ষ্য নতুন গ্রাহককে তাদের প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত করা।
গ্রাহককে তাদের পণ্য কিনতে বাধ্য করা ও পণ্যটি অন্যের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করা। শেষে সবার কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে নির্মাতারা তাদের প্রোগ্রামটি বন্ধ করে দেয়।
অনলাইনে যেসব এমএলএম পণ্য বিক্রি করা হয় বাস্তবে সেগুলোর দাম পণ্যটির দামের তুলনায় অবিশ্বাস্য কম। পাশাপাশি অনলাইনে এমএলএম প্রচারণায় বিভিন্ন ক্ষেত্রের সেলিব্রেটি বা তারকাদের নামও ব্যবহার করা হয়। এমএলএমের প্রচারণায় বিজ্ঞাপন হিসেবে বিভিন্ন তারকার নাম ব্যবহার করে বলা হয়, তিনি এমএলএমে যোগ দিয়েছেন এবং প্রচুর আয় করছেন।
এমনকি এমন কাউকে উদাহরণ হিসেবে টেনে এনে বলা হয় যে, তিনি সফল হয়েছেন। এমন চটকদার বিজ্ঞাপনের সঙ্গে আদতে ওই তারকার বা ব্যক্তির কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকে না। এমএলএম প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় যে তাঁকে পরবর্তী সময় প্রোগ্রাম বিক্রির জন্য কাজ করতে হবে। তবে, এ প্রোগ্রামে যুক্ত হতে হলে আগে কিনতে হবে এমএলএম প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রোগ্রাম। তাই অনলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রোগ্রামটির যদি কোনো অর্থমূল্য না থাকে এবং তার জন্য যদি অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয় তবে সেটি প্রতারণা। যদি কোনো বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থ পরিশোধ করা হয়, তবে তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। অনেক ক্ষেত্রে নমুনা বা স্যাম্পল বিজ্ঞাপন দেখতেও অর্থ দাবি করে অনেক সাইট। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, একটি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বিক্রি করবে, কিন্তু তার পণ্যের বিজ্ঞাপন কেনার জন্য আগে অর্থ ছাড় করতে বলবে কেন? যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন কেনার জন্য অর্থ দাবি করে বা তাদের বিজ্ঞাপনী প্রচারণার জন্য অর্থ দাবি করে, তবে তারা স্রেফ প্রতারণাই করছে।
এমএলএম প্রতিষ্ঠানটির দাবি থাকে, তাদের অবশ্যই ডিস্ট্রিবিউটরকে বিশ্বাস করতে হবে।
আর এ শর্তটিই তাদের প্রতারণার হাতিয়ার। বিশেষজ্ঞেরা বলেন, যদি দুই শতাংশ গ্রাহকও তাদের বিশ্বাস করে প্রোগ্রাম বিক্রি করতে শুরু করে ও অন্যদের এ কাজে উত্সাহ দেয় তবে সেটা এমএলএম কোম্পানিটির জন্য বিশাল সাফল্য। কিন্তু ৯৮ শতাংশ গ্রাহক এই সাইটটি থেকে সরে যাওয়ার কারণে এ দুই শতাংশ কখনো সফলতা পায় না। তারাও প্রতারণার শিকার হয়। যদি কেউ সফল হওয়ার দাবি করে, সে ক্ষেত্রে এটা মানতেই হবে যে, অন্যদের সঙ্গে প্রতারণা করে তবেই তার সাফল্য এসেছে।
আউটসোর্সিংয়ের সঙ্গে অনলাইনে এমএলএম এর পার্থক্য রয়েছে। তাই অনলাইন এমএলএম সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তবেই সেখানে বিনিয়োগ করার ভাবনা ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতাটাই সবার আগে জরুরি। কাজেই চটকদার বিজ্ঞাপন বা লোভনীয় অংকের টাকায় বিভ্রান্ত না হয়ে অনলাইনে এমএলএম প্রতারণার ফাঁদ এড়াতে সচেতন হন ও প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে তথ্য জেনে তবেই সেখানে যুক্ত হবার কথা ভাবুন।
পোর্টার রিপোর্টি আরেকটু সহজ করে বিস্তারিত লিখতে পারতেন বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতারক dolancer.com নিয়ে।
তারা বাংলাদেশের outsourcing খাতকে কলংকিত করছে। তাদের ওয়েবসাইটে কোথাও PTC বা MLM এর কথা উল্লেখ নাই। অথচ তথ্য গোপন করে outsourcing এর নামে তারা এই অপকর্মগুলো করে যাচ্ছে । google adsense এ যাদের অভিজ্ঞতা আছে তারা ভালো করেই জানেন google এর Engine এবং নীতিমালা কতটা কঠিন । google গুগল যদি কোনভাবে বুঝতে পারে তাদের ad এ একই আই.পি থেকে কেউ ইনটেনশনালী ক্লিক করার চেষ্টা করছে তাহলে সেই একান্ট চিরতরে ব্লককরে দেওয়া হয় ।
তাছাড়া adsense এ পেজ ক্লিক ও ইম্প্রেশন সব মিলিয়ে ভাল কোন ব্লগ কিংবা কন্টেন্ট সাইট না হলে সেখান থেকে ইনকাম অত সহজ নয় ।
তাছাড়া dolancer যদি এড ক্লিকের বিনিময়ে টাকা দিবে তাহলে রেজিষ্ট্রেশন করতে তাদেরকে টাকা দিতে হবে কেন ? তাছাড়া প্রথমআলোর নিকট অনুরোধ ডেস্টিনি না হয় টাকা সংগ্রহ করেছে তাদের কথিত মাল্টিপারপাস এ নাম দিয়ে কিন্তু dolancer করতেছে কি ধরনের লাইসেন্স এর বিনিময়ে ?? dolancer ইতোমধ্যে তাদের হিসেবে প্রায় ৩ লক্ষ গ্রাহক জোগাড় করে ফেলেছে যার আর্থিক ভ্যালু হিসেব করলে ৩০কোটি টাকার কাছাকাছি দাড়ায়, তাই এখনই সময় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার ।
ভয়ংকর কথা হচ্ছে Freelancing বিষয় টাকে তারা এই দেশে বিতর্কিত করে তুলছে যে খাতে বাংলাদেশের রয়েছে অবারিত ভবিষ্যত । অনেকেই ফোন করে জানতে চায় ভাই Freelancing জিনিস টা কি, যারা dolancer এর এড ক্লিক করে তারা নাকি মানুষের কাছে বলে তারা Freelancing করেন !!!! এতে করে মানুষের উতসাহ আরো বেড়ে যায় এবং ধোকা দিতে সহজ হয় । বিষয়টা অত্যন্ত দু:খজনক ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।