আজ থেকে প্রায় ৩ বছর আগের কথা। মালয়শিয়া আসার পর থেকেই নানান রকম অসুখ লেগেই আছে, এখান কার আবহাওয়া আমি মানিয়ে নিতে পারিনি। দেশে কনকনে শীত রেখে এসেছি আর এখানে গ্রীস্মের গরম। প্রায় প্রতি দিন বৃষ্টি হচ্ছে একটু একটু করে। এভাবে ৬মাস কাটিয়ে দিলাম এখন কিছুটা মানিয়ে নিয়েছি।
তবে বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বর এসে যায়,যা দেশে কখনই হতনা। এমনই বৃষ্টি ভেজা জ্বর নিয়ে ক্লিনিকে গিয়েছি ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার কিছু পরিক্ষা করে আমাকে হাসপিটালে পাঠিয় দিলেন। আমি ডেঙ্গু ক্রান্ত। বাংলাদেশের সাথে মালয়েশীয়ার এই একটা জিনিসে ভিশন মিল, দুই দেশেই মশার চাষ হয়
মালয়েশিয়া সেন্ট্রাল হসপিটাল আমাকে ভর্তি করা হল।
তবে এখাকার ডেঙ্গু চিকিৎসা মনে হয় উন্নত ধরনের। উন্নত বলছি কারন আমাকে সুস্থ করতে তাদের মাত্র তিন দিন সময় লেগেছে।
এই তিন দিনে আমার শরীরে ৫০০ এম এল এর ৩০ টা স্যালাইন (আনুমানিক) চালানু হয়েছে।
একটা নার্স প্রতিদিন দুই বার কখনও তারও বেশি পরিক্ষার জন্য রক্ত নিয়ে যেত। হাসপাতালের নার্স সাধারনত রোবট টাইপের হয় (বাংলাদেশে দেখেছি)।
এই মেয়েটে তেমন না। সবার সাথেই হাসি খুশি।
একদিন সেই নার্সকে সিসটার বলে ডেকেছিলাম। (আমাদের দেশে নার্স বললে তাদের অপমান করাহয় শুনেছিলাম। ) সিসটার ডাকার অপরাধে সারাদিন তাদের মুখটিপে টিপে হাসতে দেখেছি।
আমার পাশের বেডে একজন মালয়েশিয়ান ভদ্রলোক ছিলেন। একই অসুখ ছিল আমাদের, আমার চাইতে তার অবস্থা খারাপ ছিল। সারা দিন আঃ ওঃ করতেন। ভর্তি হবার পরথেকে তার পাশে সবসময় এক ১৮/১৯ বছরের মেয়েকে বসে থাকতে দেখতাম। মেয়েটার সাথে চোখা চোখি হত মাঝে মাঝে।
দ্বীতিয় দিন অবাক হয়ে লক্ষ করলাম মেয়েটি চোখে চোখ পড়তেই ফিক করে হেসে দিচ্ছে। খারাপ লক্ষন, নিজেকে মনে মনে সাবধান করে দিলাম। কে শুনে কার কথা, এত রুপশী একটা মেয়েকে পাত্তা দেবনা এতটা গাধা আমি হতে পারব না। তৃতীয় দিন আমার বিদায়ের পালা, হাসপাতালের ফরমালিটি শেষ করে লিফটের কাছে গিয়ে মেয়েটার সাথে আমার দেখা। আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল হয়ত।
লিফটে নামতে নামতে এই প্রথম বার মেয়েটার সাথে আমার কথা হয়। ইংলিশ আর মালাই মিসিয়ে আমাদের মাঝে যে কথা গুলু হল।
চলে যাচ্ছেন?
হুম।
আপনার নাম কি?
সাগর আহমেদ।
পাকিস্তানি?
না।
বাংলাদেশি।
আমি জাকিয়া?
ওআচ্ছা।
কোথায় থাকেন?
আমি আমার জায়গার নাম বললাম।
চলুন আপনাকে পৌছেদেই।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আমি টেক্সি করে যেতেপারব।
মেয়েটার কথা আর কাজে মুগ্ধ হয়ে যওয়ার কথা। কিন্তু আমি হলাম না।
আসলে হলাম না বললে ভুল হবে, মুগ্ধ নাহবার ভান করলাম।
এরপিছনে একটা কারন আছে।
২০০৭ সালে যখন আমি মালয়েশিয়া আসি তখন থেকেই একটা বিষয় লক্ষকরছি, মালয়েশিয়ানরা আমাদের তেমন ভাল ভাবেনা। কাজের দিকে ভাল বলে আর কম বেতনে কাজকরি বলেই বাংগালিরা এখনও টিকে আছি।
পোরাতন যারা আছে তদের অনেকেই এখন ইন্দোনেশিয়ান,মায়েনমার,ফিলিপাইন অথবা কম্বডিয়ার সাথে লিভটুগেডার করছে। অনেকেই হয়ত বলবেন এতে আপনার সমস্যা কি? ভালবাসায় সবকিছুই চলে। তাদেরকে বলছি দেশে স্ত্রী ছেলে মেয়ে রেখে টাকা রোজগার করতে এসে এমন করাটাকে আমি ভালবাসা বলতে পারছি না।
প্রায় বছর খানেক আগে মালয়াশিয়ায় এক বাংগালি খুন হয়। তাকে খুন করে কিছু ইন্ডিয়ান বংশভূত মালয়েশিয়ান। আর তদের এই কাজ করার জন্য ভারা করেছিল এক বাংগালি। খুনটা হয়েছে একটা চাইনিজ মেয়ে কার সাথে থাকবে এই নিয়ে। অনেকে ছিল যারা মালাই মেয়েদের বিয়ে করেছিল।
এখন তরা দেশে ফিরে আদর্শ শ্বামি,পিতা এবং সন্তানে ভূমিকায় আছে। তাদের ফেলে রাখা পাপের বুঝা এখন আমরা বইছি। তারা এখন মালয়াশিয়া প্রবাশিদের নামে নানান রকম কু্ৎশা রটিয়ে বেরায়। মেয়ে নিয়ে মালয়েশিয়ায় বাংগালিদের যে বদনাম আছে পৃথিবির আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নাই।
একটা ঘটনা বলি(লিখি)।
কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু ৫ বছর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ছুটিতে যায়। অনেক দিন পর দেশে এসেছে বাড়ির লোকেরা ভাবল বিয়েটা করিয়ে দেই। যেই ভাবা সেই কাজ মেয়ে দেখা শুরু হয়ে গেল। কয়েকটা মেয়ে পছন্দও হল। কিন্তু কিছু দিন পর বিয়ে ভেংগে যাচ্ছে।
বাড়ির মাঝে কানা ঘুসা চলতে লাগল, কিন্তু আমার সেই বন্ধুকে মেয়ে পক্ষ ফিরিয়ে দিয়েছে এ কথা টুকুই জানানো হত। কেন ফিরিয়ে দিয়েছে সেই কথা খুলাখুলি কেউ বলত না। এমনই একদিন আমার সেই বন্ধু ঘটকের ফোনের লাউড স্পিকার অন করে তাদের কথা শুনল। নানান ভনিতার পর যে কারনটা স্পষ্ট হল তা হল ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসি।
অবশ্য এখন অনেক কাঠ খর পুরিয়ে একটা বিয়ে করেছে শুনেছি।
(চলবে)
বিঃদ্রঃ এখানে কমেন্ট করার আগে আমার প্রফাইল লেখাটা দয়াকরে পড়ে নিবেন। ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।