ভালবাসি
পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার কেনার বাধ্যবাধকতা কার্যকর করার জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। তারা ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগকে তাগিদ দিয়েছে। তাদের দাবি, সরকার এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করলে শেয়ারবাজার আবার অস্থির ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। তখন আত্মাহুতিসহ বড় ধরনের আন্দোলনের ঘটনা ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারের উন্নতির লক্ষ্যে এসইসির ২০১১ সালের ২২ নভেম্বরের প্রজ্ঞাপন থেকে কোনো প্রকার বিচ্যুতি শেয়ারবাজারকে আবার অস্থির ও অস্থিতিশীল করে তুলবে। চিঠিতে আরো বলা হয়, শেয়ারবাজার সংকটের কারণে এ পর্যন্ত দুইজন বিনিয়োগকারী আত্মাহুতি দিয়েছেন। আরো বহু বিনিয়োগকারীর মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য পুঁজিবাজারের উন্নতির লক্ষ্যে এসইসির প্রজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নসহ আরো নতুন পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে লেখা চিঠিতে বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গুজব চলছে, কোম্পানি পরিচালকরা সরকারকে প্রভাবিত করছেন পরিচালকপ্রতি কোম্পানির শেয়ার ২ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ করার জন্য।
এসব পরিচালকের প্ররোচনায় সরকার যদি ১ শতাংশ শেয়ার নির্ধারণের নির্দেশনা জারি করে, তাহলে পুঁজিবাজারের অবস্থা আরো নাজুক হয়ে পড়বে, যা সরকারের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। এসইসি সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে বর্তমানে ১২০০ পরিচালক রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২৩ জন পরিচালক ২ শতাংশ শেয়ার কেনার জন্য ক্রেতা হিসেবে বাজারে অবস্থান করছেন। ১৫ থেকে ১৮ জন পরিচালক তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বিধিমতে শেয়ার ট্রান্সফার করে ২ শতাংশ শেয়ারের মালিক হয়েছেন। প্রায় ৯৭ শতাংশ পরিচালকের শেয়ার এখনো ২ শতাংশের নিচে রয়েছে।
তাই এসইসি মনে করে, শেয়ারবাজারের দ্রুত উন্নতির লক্ষ্যে এসইসির ২২ নভেম্বরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নিবন্ধিত কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে মোট শেয়ার ৩০ শতাংশ এবং পরিচালকপ্রতি ২ শতাংশ শেয়ারের বাধ্যবাধকতার আদেশ কার্যকর করা একান্ত জরুরি। এ ব্যাপারে এসইসির সুপারিশ হচ্ছে, এসইসির ২২ নভেম্বরের প্রজ্ঞাপন দ্রুত কার্যকর করা। সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া এবং অধিক ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পর্যায়ক্রমে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা। এ ব্যাপারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সতিপতি মৈত্র জানান, বিশ্বের সব দেশেই পরিচালকদের নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার আছে। কারণ, পরের ধনে পোদ্দারি করা চলবে না।
কোম্পানিতে নিজের বিনিয়োগ থাকলে পরিচালকরা তা ভালোভাবে চালাবেন, নয় তো চালাবেন না। তাই পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার উদ্যোগ ভালো, যা আরো আগেই করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, এখন যদি তারা এই পরিমাণ থেকে কম শেয়ার ধারণ করার জন্য তদবির করেন, সরকারের তা শোনা উচিত হবে না। সরকার যদি পরিচালকদের কথা শোনে, তাহলে এসইসি যে আশঙ্কা করছে, সেক্ষেত্রে তা-ই হতে পারে।
ডিএসই-সিএসইও অনড় এদিকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কেনার সময় বাড়ানোর পক্ষে নয় তারা।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী গলফ ক্লাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, ন্যূনতম শেয়ার ধারণের জন্য আগামী ২২ মে পর্যন্ত উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কেনার যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, তা থেকে সরে আসার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। এজন্য সময়ও বাড়ানো হবে না। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলে নেয়া পরিচালকদের কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে আবার শেয়ার কিনতে হবে। রকিব বলেন, এই 'প্রণোদনার' সঠিক ও সফল বাস্তবায়ন করতে হবে বলে ডিএসই জোরালোভাবে মনে করে। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা যেসব পরিচালকের ওপর আস্থা রেখে শেয়ার কিনেছিলেন, তারাই বাজার ভালো দেখে নিজের এবং পরিবারের শেয়ার বিক্রি করে দেন।
এভাবে তারা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে। রকিব বলেন, প্রতিষ্ঠানের বাইরে কোনো বিনিয়োগকারী ৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক হলে এবং ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো পদ খালি থাকলে তিনি ইচ্ছা করলে শূন্য পদটি নিতে পারবেন। যদি কেউ এসইসির অনুমতি ছাড়া শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলে নেয়, তাহলে বুঝতে হবে, তারা আইনের আওতায় নেই। এজন্য এসইসির কাছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করা হবে। বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এক অস্থিতিশীল অবস্থা বাজার অতিক্রম করছে।
এই বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সভাপতি আল-মারুফ খান ছাড়াও ডিএসইর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী, পরিচালক শরীফ আতাউর রহমান, সিএসইর সহ-সভাপতি মির্জা সালমান ইস্পাহানী, পরিচালক বিজন চক্রবর্তী প্রমুখ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।