অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!
আমেরিকা যখনও ১৩টি কলোনীর সমষ্ঠি তখনও সেখানে মুদ্রিত বই খুব সহজলভ্য ছিল। বলা ভাল বই ছিল দুর্লভ। বই পড়ার ব্যাপারটা বলতে গেলে ছিলই না। এক অল্প বয়সী তরুন কিন্তু ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনি।
তার বিশ্বাস ছিল বইএর মাধ্যমে সাক্ষরতা ছড়িয়ে পড়বে এবং একমাত্র জ্ঞানের বিকাশই একটি সমাজকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। ১৫ বছর বয়সে সে যখন তার ভাইয়ের প্রেসে কাজ করে তখন সে তার ভাবনাগুলো স্থানীয় সংবাদপত্রে চিঠিপত্র কলামে লিখে পাঠায়। কিন্ত তার কোন চিঠি ছাপা না হওয়ায় সে একটি ভিন্ন পথ ধরে। এরপর একজন বিধবা নারীর ছদ্মাবরণে সে একই চিঠি আবার লিখতে শুরু করে। এবার চিঠিগুলো ছাপা হলে সেখানে আলোড়ন উঠে এবং স্থানীয়ভাবে বিদ্যাভাসের পক্ষে জনমত তৈরি হতে শুরু হয়।
কিন্তু অচিরে তার পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং বেচারা তার চাকরি এবং শহর দুটো থেকেই বিতাড়িত হয়!
ফিলাডেলফিয়া শহরে চলে যাবার পরও তার মনে এই প্রত্যয় দৃঢ় হয় যে, বিদ্যাভাস না হলে কোন জাতি এগোবে না। জাতির বিকাশের জন্য শিক্ষা, বই পড়া এবং জ্ঞানভিত্তিক কর্মকাণ্ডের বিকাশ জরুরী। কিন্তু সে বুঝতে পারে এ নিয়ে বড় কিছু করা কঠিন। এক ধাপ পেছনে এস সে ভাবতে শুরু করে তার প্রথম কাজ হবে সাক্ষরতার হার বাড়ানো, বই প্রেমিকের সংখ্যা বাড়ানো এবং জ্ঞানভিত্তিক কাজকর্মকে উদ্দীপ্ত করা। একটা বড় কিছু করার প্রত্যয়ে ১৭২৭ সালে, ২খন তার বয়স ২১ বছর, সে কয়েকজন সমমনাকে নিয়ে জুন্টো গঠন করে।
জুন্টো মানে হল কমন উদ্দেশ্যে মিলিত হওয়া সমমনাদের দল। তার জুন্টোর উদ্দেশ্য হল আত্মউন্নয়ন, জনগণের ভালর হন্য কাজ করা এবং জ্ঞানভিত্তিক কাজকর্মকে উৎসাহিত করা। তারা বই কিনতে শুরু করেন আর চালু করেন বই ধার দেয় এমন লাইব্রেরী বা পাঠাগার আমেরিকার প্রথম। বই কেনা হতো সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানে যে বইটির পক্ষে বেশি সদস্য মত দিতো সেই বইটি কেনা হতো। অচিরে এই পাঠাগারকে ঘিরে একটি নতুন উদ্দীপনা শুরু হয়।
অচিরে প্রতিষ্ঠিত হয় লাইব্রেরি কোম্পানি অব ফিলাডেলফিয়া যা এখনও সক্রিয়। শুধু তাই নয়, এই সংগের সদস্যরা ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকার সব্রত্র, নিয়ে যায় তাদের চিন্তা ও দর্শন। কাজে আমাদের গল্পের যুাক প্রতিষ্ঠা করে ফেলে আমেরিকান দর্শন সমিতি (http://www.amphilsoc.org)।
এখন মনে হয় অনেকেই এই লোকটিকে চিনে ফেলেছন। আমেরিকার স্বাধীনতা সনদের স্বাক্ষরদানকারী, লেখক, প্রকাশক, উদ্ভাবক, বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক নেতা, দার্শনিক এবং সম্ভবত আমরেকিার প্রথম “রেনেঁসা মানব” বেঞ্জাজামিন ফ্র্যাংকলিন!!! তাঁর নানান উদ্ভাবনের জন্য তাঁকে প্রকৃতির অকৃত্রিম সন্তান বলা যায়।
বজ্রপাত নিরোধী দন্ড, হারমোনিকা, ফ্র্যাংকলিনের চুলা, বাইফোকাল চশমা এবই তার আবিস্কার। শহরের রাস্তায় যে বাতি থাকে সেটির ধারণাকে বিকশিত করার কৃতিত্বটাও তাঁকে দিতে হয়। তিনি লিখেছেন তার সব কর্মকাণ্ডের পেছনে থাকে মানবের উন্নয়ন! শিক্ষার ব্যাপারটা তিনি খুবই উপলব্ধি করেছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ারও তিনি প্রতিষ্ঠাতা।
বেঞ্জামিন ফ্যাংকলিনের জীবনী নয় এই লেখা।
আমি পড়তে শুরু করেছি প্রাজকিয়ার আর নোয়াকের নতুন বই সোসাল এন্টারপ্রিনিয়রশীপ - থিউরি এন্ড প্র্যাকটিস । এটি এই অক্টোবরে কেমব্রিজ থেকে বের হয়েছে। বই এর উদ্দেশ্য হলো সামাজিক উদ্যোক্তাদের অন্তর্নিহিত শক্তি খুজে বের করা। কীসে তারা প্রেরণা পান (বলা ভাল কিসে তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়), কেন তারা সফল হোন এবং কীভাবে তারা এগোন এগুলো বোঝা এবং নানান প্রপঞ্চ থেকে তত্ত্ব দাড় করানো।
লেখকদ্বয় উদাহরণ খোঁজার জন্য সারা পৃথিবী খুজে বেড়িয়েছে এবং সে কারণে প্রাজকিয়ার বাংলাদেশে এসেছিলেন আমার সঙ্গে কথা বলতেন।
বই প্রকাশের পর এখন দেখছি সেখানে আমার একটি ছবিও ছাপা হয়েছে!!!
তা সেই বইএর ভূমিকাতে ফ্র্যাংকলিনের কথা এসেছে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটিও এসেছে। সেটি হলো যে কোন সফল উদ্যোক্তা যা বিশ্বাস করেন, সেটি তিনি আকড়ে ধরে রাখেন। তিনি এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যান কিন্ত তার চিন্তা, জেতনা জুড়ে তার বিশ্বাস থাকে। এবং সেটিকে তিনি নানানভাবে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
আমাদের দেশে এমন সামাজিক উদ্যোক্তা কম নেই বা কম ছিল না। এখনকার পলান সরকার বা আগেকার মির্জাপুরের রণদা প্রসাদ অনেক উদাহরনই আছে। আর একটু পেছালে আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মানুষদেরও পাবো। আমার নানা এবং দাদা দুজনই এমন ধারার মানুষ ছিলেন।
কিন্তু আমি অবাক হয়ে দেখি আমাদের গবেষকরা আমাদের সামাজিক বা ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কোন বই লেখেন না।
কেন লেখেন না কে জানে। (আমার নিজের একটা ইচ্ছে আছে ১২ জন সফল ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাকে নিয়ে “বিজনেস মহারাজ” এর মতো একটা বই লেখা। তবে, আমাদের দেশে এগুলো লেখার একটা ভিন্ন দিকও আছে। আপনি যদি এমন একটা বই লেখার জন্য সফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাহলে তারা ভাববে আপনি চাদাবাজির নতুন কোন পন্থা আবিস্কার করেছেন। সেজন্য আমার লিস্ট ধরে কারো কাছে যাচ্ছি না!)
কিন্ত যদি একটি সমাজকে এগোতে হয় তাহলে তার সফল উদাহরণগুলো কিন্তু সমাজে অনেক বেশি আলোচিত হতে হবে।
বিদ্যাসাগর আর ফ্র্যাংকলিনের কথা যখন আসলো তখন মনে হচ্ছে দেশে পাঠাভ্যাসের ব্যাপারটা মনে হয় হঠাৎ করে কমে গেছে। একটা সময় ছিল যখন পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার ছিল। এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো উঠে গেছে। এর কারণ এই নয় যে কম্পিউটার সেগুলোকে বিতাড়িত করেছে। বরং কম্পিউটার বই পড়াকে সহজ করেছে।
আমরা কীভাবে সেটা কাজ লাগাবো সেটা জরুরী।
আমি জানি না কেউ ভাবছে কীনা দেশজুড়ে স্টাডি সার্কেল করার কথা, জ্ঞানভিত্তিক আড্ডার সংখ্যা বাড়ানোর কথা। কিন্তু মনে হচ্ছে সে কাজগুলোএ জরুরী। বিশেষ করে, হাজারো চ্যানেলের চাকচিক্যের মধ্যে গভীর জ্ঞানানুশীলন না হলে শাদাকালোর পার্থক্য করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
যাহোক এটি একটি পাঠ্যপুস্তক টাইপের বই।
কাজে আমার মনে হয় পড়ের অংশগুলো নিয়ে সবার সমান আগ্রহ থাকবে না। আমি বরং আমার ফেলে রাখা ইসরাইলী উদ্যোক্তাদের গল্প েষ করে গুগলে ফেরৎ যাবো।
সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।