আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষক রাজনীতি-আন্দোলন-হিন্দি সিরিয়াল-তরমুজ-যুবায়ের-সেশনজট

পিনপতন নিস্তধ্বতা সাম্প্রতিক কালে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবীতে শিক্ষক সমাজের আন্দোলনের নামে যে নতুন হিন্দি সিরিয়াল শুরু হয়েছে তার উপর আমি খুবই ত্যক্ত বিরক্ত। তার মানে এই না যে আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ বা আমি উপাচার্যপন্থী। আমি সাধারণ এবং বৈধ ছাত্র। প্রথম কথা হচ্ছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির ৩ বছর ধরে ভিসি প্যানেলের নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আছেন। এইটা এখন অন্যদের সহ্য হচ্ছে না।

তিনি একা কেন ৩ বছর থাকবেন? ঐ চেয়ারের উপর তো সব রাজনৈতিক শিক্ষকের হক আছে। সবার ‘এইম ইন লাইফ’ ঐ চেয়ারে বসা। মানলাম, ভিসি ৩ বছর ধরে আছেন। মানলাম, অবৈধভাবেই আছেন। তারপরও উনি একটা ছেলেদের হল নির্মাণ করছেন, শহীদ রফিক জব্বার হল।

মেয়েদের একটা হলের কাজ চলছে, শেখ হাসিনা হল। উনি এসেই একটা সমাবর্তন করেছেন, আরেকটা করার উদ্যোগ নিছিলেন কিন্তু যুবায়ের হত্যাকান্ডের পর আমরা সাধারণ ছাত্ররাই ফেসবুক, ব্লগ, পত্রিকায় ঐ সমাবর্তন বর্জন করেছি। ফলে উপায়ান্তর না দেখে তা স্থগিত করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন প্রধান ফটক বলতে জরাজীর্ণ একটা ফটক ছিলো, যা দেখে বোঝার কোন উপায় ছিলো না, এটা দেশের অন্যতম প্রধান একটি বিশ্ববিদ্যালয়। শরীফ এনামুল কবির সেখানে দেখার মতো একটা ফটক নির্মাণ করেছেন।

সবগুলো কাজই হয়েছে কল্পনার চেয়েও কম সময়ে। বিভাগ বেড়েছে, অনুষদ বেড়েছে, ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বদলানো হয়েছে, একদিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে তবে তিনি ছাত্রদের ওপর অতিরিক্ত গার্ডিয়ান গিরি ফলিয়েছেন। আমার মনে হয় এখানে ওনার চেয়ে মাথা মোটা দুই সাবেক প্রক্টর এবং বর্তমানে সামনে পিছনে দুই হলের দুই প্রভোস্টের ভূমিকাই বেশি ছিলো। সান্ধ্য আইন, রাত এগারোটায় দোকান বন্ধ করা, ছেলেদের হলে রুমে রুমে গিয়ে অ্যাটেনডেন্স নেয়া, এইসব মাজাভাঙ্গা কাজও হয়েছে এটা সবাই জানি। শিক্ষক নিয়োগের নামে ভোটার তালিকা হাল নাগাদ হয়েছে এটাও সত্য! সবচেয়ে বাজে কাজ ছাত্ররাজনীতিতে নগ্ন হস্তক্ষেপ।

এই হস্তক্ষেপের ফলে গত ৩ বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচে বেশি বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। গিনিজ বুকেও এই রেকর্ডের ঘটনা ঠাঁই পেতে পারে। অনেক ছাত্রনেতা, ছাত্রের শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেছে। কেউ সার্টিফিকেট পায়নি, কেউ জেল খেটেছে। সর্বশেষ যুবায়ের হত্যাকান্ড কিংবা শিক্ষক সমিতির সভাপতির লাঞ্চনার দায় এড়াতে পারেন না উপাচার্য।

আর ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য তাকে তো কাঠগড়ায় প্রতিবছরই দাঁড়াতে হয়। তবে যে কারণে শিক্ষক সমাজের আজকের এতো পাকাপোক্ত অবস্থান তার সূচনা হয়েছিলো শিক্ষক সমিতির গত নির্বাচনে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদটি উপাচার্যের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায়। রাজনীতিতে ভুল করলে মাশুল তো গুনতেই হবে। এখন সেই মাশুলই গুনতে হচ্ছে উপাচার্যকে। শিক্ষক সমিতি তার বিরুদ্ধে কথা বলছে।

শিক্ষক সমাজের ব্যানারে আন্দোলন হচ্ছে, যাতে সামনের সারিতে থাকছেন বুদ্ধিজীবী, বামপন্থী শিক্ষকবৃন্দ। কিন্তু আসল খেলাটা পেছন থেকে খেলছেন বিএনপি পন্থী শিক্ষকরা। আমার দেখা ক্যাম্পাসের ৫ বছরের শিক্ষক রাজনীতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা অনেক বেশি পরিপক্ক এবং বুদ্ধিমান। সেটা তাদের দোষ নয়, মেধা এবং গুন। বামপন্থীরা সবসময়ই রাজপথে, প্রাসাদে তাদের ঠাঁই হয়না, মানায় না।

বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগের সাথে মিলে তারা থাকেন বিএনপির বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি’র সাথে মিলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। যুবায়ের হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধেই যদি শিক্ষক সমাজের আন্দোলন হয়, তারা যদি যুবায়েরকে এতোই ভালোবাসেন, তাহলে আক্রান্ত ছেলেটাকে বাঁচাতে তারা তখন এগিয়ে আসেন নি কেন? যুবায়ের কে তো তার বিভাগের সামনে থেকেই নিয়ে যাওয়া হয়। উপাচার্য কোথায় কার সাথে মিটিং করছেন সে খবর ঠিকই তাদের কাছে থাকে, একটা ছাত্র চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে, সে খবরটা থাকে না? নাকি ছেলেটা মরলে আন্দোলনটা জমানো যাবে সেই অপেক্ষায় ছিলেন? যুবায়েরকে ভেঙে আন্দোলন করছেন, যুবায়েরের জন্য কি করেছেন? যুবায়েরের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কোন প্রস্তাব করেছেন? হিন্দি সিরিয়ালের গ্লিসারিন দেয়া কান্না কাঁদতে আসবেন না প্লিজ। এখন ধরলাম কোন না কোন ভাবে শিক্ষক সমাজের হিন্দি সিরিয়াল বা তথাকথিত উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন সফল হলো।

শরীফ স্যার পদত্যাগ করলেন। কিন্তু তারপর কি হবে? আমাদের কি কোন উপকার তাতে হবে? যুবায়ের ফিরে এসে স্নাতকোত্তর শ্রেনীর ক্লাস করবে? শেখ হাসিনা হলের কাজ সময় মত শেষ হবে? যেসব ছাত্রের ছাত্রজীবন ঝড়ে গেছে তারা আবার নতুন করে শুরু করতে পারবে? ক্যাম্পাসের যে কটা গাছ কাটা হয়েছে, নতুন উপাচার্য এসে কি সেখানে নতুন গাছ লাগাবেন? ২৪ ঘন্টা বিদ্যুতের ব্যবস্থা করবেন? নাকি গননিয়োগ বন্ধ করবেন? কিছুই হবে না, রাজা যাবে রাজা আসবে, রানীরাও আসা যাওয়া করবে। মাঝখানে শিক্ষক সমাজের ক্লাস, পরীক্ষা ফাঁকি এবং তরমুজ উৎসবের সিরিয়ালে আমরা কয়েকটা বাড়তি দিন সেশনজটের উছিলায় ক্যাম্পাসে কাটাবো, আর আমাদের বাবা-মা অপেক্ষা করবে, ‘খোকা/ খুকী তার কবে পাশ করবে’?  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.