আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বসন্ত অবরোধ এবং

'খুব ছোট ঘটনা' ঘটেছে গতকাল প্রগতি স্বরণীতে । যখন লিখাটি শুরু করেছিলাম তখনও রাস্তা অবরুদ্ধ। রাস্তায় নেমে এসেছে এলাকাবাসী। কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ নয়। নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত মানুষের বিক্ষোভ।

রাস্তা অবরোধের সূত্রপাত কিভাবে তা পাঠকদের সাথে শেয়ার করাটা প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছি। ঢাকার অন্যান্য এলাকার মতোই গরমের এই কয়েকমাসে প্রগতি স্বরণী বা বসুন্ধরা এলাকায় লোডশেডিং নৈমিত্তিক। এ বছরে গ্রীষ্ম শুরুর আগেই যেন ব্যাপারটা অসহনীয় মাত্রায় পৌছে গেছে। গরম আর ইলেকট্রিসিটি না থাকার পাশাপাশি আরেক উপসর্গ পানি সংকট। না প্রগতি স্বরণী এলাকায় হঠাৎ করে পানির স্তর নিচে নেমে যায়নি বরং লোডশেডিংয়ের ভয়াবহতায় এলাকাবাসী পাম্প চালিয়ে ট্যাংকে পানি তুলতে পারছেন না।

গত সপ্তাহ দুয়েকের এই অসহনীয়তা আজ এলাকাবাসীর সম্মিলিত প্রতিবাদে উদ্যোগী করে। পানির নানা ধরনের পাত্র নিয়ে বিভিন্ন বয়সী শ'খানেক মানুষ যানবাহন থামিয়ে পানির দাবীতে স্লোগান দিতে থাকে। ঘটনা এ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলে ব্লগে এ বিষয়ে লিখতাম না। তাহলে আসি মূল প্রসঙ্গে। বিকেল চারটা বেজে চল্লিশ।

রাস্তা অবরোধের মিনিট দশেকের মধ্যে যানজট এদিকে বিশ্বরোড আর অপরদিকে নদ্দা পর্যন্ত প্রলম্বিত হলো। অপ্রত্যাশিত এই দূর্ভোগে যাত্রীরা তখনও ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছিলো। আরও মিনিট পনেরো কাটলো এভাবেই। হঠাৎ বসুন্ধরার দিক থেকে লাঠি হাতে দশ বারো জন 'সোনার বাংলার দামাল ছেলেরা' অতর্কিত আক্রমনে পানি সংকটে জড়ো হওয়া মানুষদের ছত্রভঙ্গ করে যান চলাচল স্বাভাবিকীকরণের মহান দায়িত্বে ব্রত হয়। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে জনতা তাদেরকে পাল্টা ধাওয়া দিলে দামাল ছেলেরা তাদের দায়িত্ব অসমাপ্ত রেখেই পালিয়ে যায়।

জানা গেলো তারা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সূর্যসন্তান। অনেকটা সিনেমার মতোই অকুস্থলে আগমন ঘটে পুলিশের। আরব বসন্ত বলতে আমরা আরব অঞ্চলের ঋতু নির্দেশ না করে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনকে বুঝি। সাম্প্রতিক সময়ে আরব বিশ্বে অগনতান্ত্রিক শাসককূলের পতন সুশাসনের সাথে সরকারের স্থায়িত্বের সম্পর্ক এই সত্যটিকে আমাদের সামনে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করেছে। সুশাসন বা কুশাসন হউক কোনো রাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন রাজনৈতিক সত্য।

তা নাহলে পশ্চিমা দেশগুলোতে সরকার পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা তৈরী হতো না। আর তাইতো বারাক ওবামার রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ মিট রোমনি নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় ওঠে। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার দলীয় রাজনীতিবিদরা সরকার পরিবর্তনের এই শিক্ষার ব্যতিক্রম। তারা পরিবর্তনের অস্তিত্ব বিনাশে বদ্ধপরিকর। বসন্তকে অবরুদ্ধ করে ।

কিছুদিন আগে বিরোধী দলের ঢাকা সমাবেশ অসফল করার কুৎসিত রাজনীতির প্রদর্শনী আমরা নীরবে সয়েছি। সেদিন আমাদের অনেকটা বাধ্য হয়েই উপভোগ করতে হয়েছিলো এই ছাত্রসংগঠনের কর্মীদের বেআইনী কিন্তু দাম্ভিক শক্তি প্রদর্শন। তাও পুলিশ বাহিনীর নির্লজ্ব উপস্থিতিতে। রাষ্ট্রযন্ত্রের শক্তিমত্তার ছত্রছায়ায় দেশের জনগণের আন্দোলনের টুঁটি চেপে ধরা যায় সহজেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে জনতা কি কেবল অসহায়ভাবে এই দু্ঃশাসন মেনে নেবে।

উত্তরটা যে কতটাই নেতিবাচক তা প্রগতি স্বরণীতে আজ মঞ্চস্থ হলো। যতক্ষণ দেখছিলাম কোনো মিডিয়া তৎপরতা চোখে পড়েনি তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই মোবাইলে ছবি তুলছিলেন বা ভিডিও করছিলেন। হয়তো এলাকাবাসীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এই গণদাবীর সমাবেশ মিডিয়া কাভারেজ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের গণবিমুখী নানা তৎপরতার প্রদর্শনীর কাছে পরাজয় স্বীকার করবে। হয়তো নাগরিক সমাবেশের এই স্বতস্ফূর্ততা আন্দোলনের দূর্বার রূপ পেতে মিডিয়া দারুণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে কিন্তু আন্দোলনের সফলতা কখনই মিডিয়ার মুখাপেক্ষী নয়। এই সহজ সত্যটা আমাদের সবাইকেই আত্মস্থ করতে হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।