পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
( কে যেন জানতে চেয়েছিলো , এখন আব্বু আগের চেয়ে অনেক অনেক ভালো আছে । পুরো সুস্থ হইতে সময় লাগবে । আমার বন্ধুদের কৃতজ্ঞতা । যদিও খারাপ খবর আছে শত শত । তবু চোখ বন্ধ করে অন্ধ হয়ে আছি , অন্তত এই ব্লগে !)
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে
সই গো , বসন্ত বাতাসে !
"সফলতার চুড়ান্ত শিখরে পৌঁছে যাওয়ার একটা দারুন নির্মমতা আছে রে , জানিস সেটা ?" এইচ এস বি সি ব্যাংকের ডাকসাইটে কর্মকর্তা কুলফি ( একেবারেই ঠান্ডা একটা ছেলে) যখন বলে ওঠে , আমরা সকলেই একটু নড়ে চড়ে বসি।
মাথাটাকে সুবোধ শিষ্যের মত দুপাশে দুলিয়ে নিয়ে উৎকর্ণ হই। আহা , না জানি কি জ্ঞান বর্ষিত হইবে রে!
কুলফি বাহু দুটো বুকের উপর ভাঁজ করে রাখে যেন সোয়ান ফোম । ঘাড়টাকে ৩৫ ডিগ্রী পশ্চিমে তাক করে ১৫ ডিগ্রী ঈষানে হেলিয়ে নেয় । তারপর সেই অমোঘ বানী আছড়ে পড়ে আমাদের ক্ষুধিত কর্ণে ,
" বড় একা লাগে রে , বড় একা লাগে । ইট ইজ , মাই ফ্রেন্ড , সো লোনলি এ্যাট দা টপ! "
পরক্ষণেই ঠিক কি হয় ভালো বুঝি না।
অনেকটা সিডরের বেগে আমাদের খাস ঢাকাইয়া দুস্ত আলম বীর ( এই আলমে ওর মত রসনা বীর আর দুইটা নাই) এর মুখ নিঃসৃত এক সাইক্লোন শব্দ বয়ে যায় আমাদের সকলের উপর দিয়ে । ইংরেজি , হিন্দী , উর্দু , জার্মান ( আমি জার্মান বুঝি না । ঐটা স্প্যানিশ কিংবা ফ্রেঞ্চ , মায় সংস্কৃত ও হতে পারে , তবে খটমট লাগে বলে ওটাকে জার্মান ভাবতেই পছন্দ করি ) মিশিয়ে যা বলে কুলফিকে উদ্দেশ্য করে , তার বিধেয় বুকে কোঁচের ( মাছ ধরার এক রকম যন্ত্র । বর্শার মত লম্বা লাঠির আগায় চোখা চোখা শলার কাঠির মত চিকন চিকন ফলা লাগানো থাকে । দেখে মনে হবে ঝুল ঝাড়নির ঝাড়ু ।
ভয়াবহ জিনিস । মাছ থেকে মানুষ , সব কিছু গেঁথে ফেলা যায়) মত বিঁধতে বাধ্য । সবচেয়ে ভদ্র বাংলা অনুবাদ করলে যা দাঁড়ায় , তা হলো ,
" ঐ ্ময়লা চাদর, ঐ খালি কাগজের ঠোঙ্গা , ঐ শয়তানের দাঁতের ময়লা ---- তোরে উলাইয়া ---------- যদি না দিছি তো ---------- "
টাইগার ( আলমের আরেক নাম হালুম ওরফে টাইগার ) এর কষ্টটা আমাদের মধ্যেও সংক্রামিত হয় । ব্যাটা কুলফি মাত্র ২৩ বছর বয়সে পড়ালেখা শেষ করে এই ঢাকা শহরেই ২৫ হাজার টাকা বেতনের চাকুরী দিয়ে জীবন শুরু করেছে । এখন কত পায় , সেই হিসাব ভুলেও করি না ।
তারপর ঘরে প্রেমময়ী আইরন , বাবা মা এখনো সুস্থ সমর্থ , ছোট বোন বুয়েটের সুন্দরী মেধাবী কন্যা । বাড়ি কিনেছে ঘোল শানে । মাঝেই মাঝেই আমাদের পান্তায় নুন ঘষতে তার এই ন্যাক্কারজনক প্রচেষ্টাকে আমরা বড়ই না পসন্দ করি। টাইগার নিজে অবশ্য এখন বড় সড় ডাক্তার । তাহার আইরন ও প্রথম শ্রেনীর ঘাধু ডাক্তার ( মেডিকেলে ফার্স্ট হওয়ায় প্রথম শ্রেনীর কিন্তু টাইগারকে পসন্দ করে বিয়ে করায় ঘাধু ) ।
এদিকে আমি আর মই মই প্রমাদ গুনি । গিট্টুর বউ আমাদের সার্কেলের কেউ না । এরেঞ্জড ম্যারেজ । সে ঘুনাক্ষরেও জানতে পারে নাই আমাদের বন্ধু মহল কতটা ডিরেঞ্জড । গিট্টুর সংসার রক্ষার্থে আমরা তার বউ চিত্র পরিচালিকা "মউটা কমই " কে রান্না ঘরের কাবাব, কালিয়া , কোফতার দিকে আকর্ষিত করি ।
কাচ্চি বিরানীর মত চিবিয়ে চিবিয়ে মৈ বিষোদগার করে । " থাতলানো কলার খোসার মত গর্দভ, টাইগু'টার আর মনুষ্যত্ব লাভ হইলো না । "
অনেক দিন পরে একসাথে হয়েছি । মৈ এর বর্বর গেছে সুইডেন , কি এক পেপার প্রেজেন্টেশনে । সেই থেকে মৈ টেনশনে ।
সোয়ামী তার বড়ই সোহাগী , মাইয়ারা তাকে দেখলেই ডাকিয়া বলে , আয় ভাগি । সেই চিন্তায় মৈ হইয়া বৈরাগী , তাহার মন আমার মতই বিবাগী । সরকারী বিজ্ঞানী নানা পাটেকর এর সালাদ নিয়ে আসার কথা । আমরা কিছুক্ষণ হাসাহাসি করি , নান্র বর্বর বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার লাইফ পার্টনার মনে হয় নতুন কোন টমেটো, গাজর, শশা কাটার মেশিন আবিষ্কারে ব্যস্ত । নাইলে এত সময় লাগে! এদিকে জানে তামান্না আসতে পারে নাই ।
তবে স্ম্যাশড পটেটো পাঠিয়ে দিয়েছে । আমরাও গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি । সাথে শিল্পা ও বি নম্র শেঠী । দরকার হলে তুলে নিয়ে আসবে ।
এই সব বসন্ত দিন ! আহা ! খাওয়ার টেবিলে , কাচ্চি , বোরহানী , কালিয়া , কোফতা , জালি কাবাব , মাছের টকঝাল , মুরগীর প্যাপারিকা সিজলার আর আচারের বয়াম নিয়ে বসে শুরু হইলো স্মৃতিচারন ।
কয়েকটা আইটেম আমার করা । আমি তাই একটু বেশি ওয়াজ বয়ান শুরু করলাম । হাসাহাসির চোটে যদি মনযোগ অন্যদিকে থাকে । বাসন খালি হওয়ার গতিতে মনে হইলো খাওন খারাপ হয় নাই ।
আহারে ! কি সব দিন ছিলো ! মেডিকেলে পড়ার সময় আমার বন্ধু বান্ধবদের দশা বড়ই করুন ছিলো ।
এখনো আছে । প্রত্যেকেই পড়া লেখায় খুবই সিরিয়াস বিধায় পয়লা বসন্ত প্রথম কয়টা আইলো আর গেলো । কিছুই করা হইলো না । ফাইনাল ইয়ারে , প্রফেসররে কইলাম , স্যার , পয়লা বসন্ত । আগামী বছর বিয়া করতে ইরাদা রাখি, এট্টু তো দয়া করেন ।
মু হা হা হা হা করে ভিলেইনের ভায়োলিন হাসির সুরে প্রফেসি দিলেন সেই ভয়াল প্রফেসর ,
" মু হা হা হা হা হা হা । রে পামর! শুনে রাখ । যারা ডাক্তারীতে বেশি ভালো করতে চায় , তাদের জীবনে জলবসন্ত ছাড়া আর কোন বসন্তই থাকে না। কালকে ঠিক সাতটায় চলে আসবি ওয়ার্ডে । "
আমরা "টু" ওর্ড টি না করে চলে এলুম।
মনে বসন্তের কুর কুরানি । দিলকা মুরগী বোলে কুক কুক কুক কুউউউউউ । কি আর করা । ছুটি যখন দিলো না । সবাই মিলে ঠিক করা হইলো , বাসন্তী রঙে রাঙিতে হইবে ।
মেয়েরা শাড়ি অথবা ছালুয়ার । ছেলেরা , সামর্থে যা আছে যার ।
পরের দিন ওয়ার্ডে দাঁড়ানো প্রতিটি মেয়ের বসনে বসন্ত । রঙের বাহার বাড়ন্ত । দেখিয়া ইন্টার্নদের সিনা'মে দিল ছুটন্ত ।
এমন কি , অনাহারী ( অনারারী ) ডাক্তার গুলারও জুল জুলে চক্ষু বারে বারে আমাদের তরে , আহা একি রঙ্গ , পোড়ে পতঙ্গ ডার্লিং এর জ্বরে !
শুধু ছেলে গুলো । আখাম্বা ছেলে গুলো একটাও বাসন্তী রঙের কিছুই পরে নাই । কোন মতে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করি । প্রফেসরের প্রফেসির বিরুদ্ধে আমাদের রঙিন অনশন এই ভাবে ভন্ডুল করে দেওয়ায় "খাইসি তরে " মুডে সকলে ডিউটি শেষ করি । তারপর ,
আক্র অ অ অ অ অ ম অ অ অ অ অ ন
প্রথম লুটিয়ে পরে চিলমচি ।
কেঁদে কেটে ওর বস্ত্র হরন করে দেখায় ঘন নীল বেদনার ফুল স্লিভের নিচে পড়ে থাকা এক অবহেলিত বসন্ত । কোথাও ক্ষত , কোথায় ঝাঝরা । আমাদের জিজ্ঞাসু নেত্রের সামনে বেত্রের ভয়ে কাপ্তে কাঁপতে বলে , দোকানীরে বুঝাইতেই পারলাম না , বাসন্তী কালারের শার্ট ! শেষে , আসলাম এর ( ওদের কাজের ছোকরা ) পুরানো কমলা রঙের গেঞ্জিটাই------ বলতে বলতে ওরা গলা ধরে আসে । অ্যাপ্রনের খুটে চোখ মুছে লুকায় এক ফোটা ফান্টা । চিলমচির গলা ছেড়ে এবার কাছিমের (নাসিম) ন্যাজ ।
নাসিম অতি ভদ্র ছেলে । নিয়মিত খায় মিল্ক ভিটা । খাতার একটা পাতা বের করে দেখায় । পড়ার চাপে বেচারা দোকান পর্যন্তই পৌঁছায় নাই । তাই বাসন্তী রঙের মার্কার দিয়ে একটা পুরো সাদা পাতা ঘষে কপাল রঙিন করার চেষ্টা করেছে ।
ওর সঙিন অবস্থা দেখে মাফ করে দেই । এর পর বলদ । আমরা কিছু বলার আগেই সে চোখ , জিহবা এবং অ্যাপ্রন উলটে দেখিয়ে দেয় ,
" বাসন্তী টাসন্তী বুঝি না । সকালে অ্যাপ্রনে হলুদ ঝোল ফালাইসি , এইটাই আমার বসন্ত । "
বলদ থাকে হোস্টেলে ।
নতুন অ্যাপ্রন কিনার পয়সা দেওয়ার ভয়ে ওরেও ছেড়ে দেওয়া হইলো । এতক্ষনে প্রফেসরের রুম থেকে বাহির হইলো আমাদের ফার্স্ট বয় - " আঁতেল গণি " । আসিয়াই হুঙ্কার ,
"তোমরা তোমরা প্রোগ্রাম করো , আমারে জানাও লাস্টে । আমি খেলুম না । তয় কমলা রঙের একটা স্কেল ব্যাগে রাখসি আর সকালে কমলা খাইসি ।
তোদের জন্য ও আনছি । এখন ক, কি করবি ? "
ঘুষ পেয়ে কারোরই দেখি গণির কপালে শনি লাগানির উৎসাহ দেখা গেলো না । সব রাগ গিয়া পড়লো এইবার ইয়া হাবিবির উপর । এমনেতেই পোলা অকল্পনীয় সুন্দর দেখতে । সারাক্ষন ডেটিং করে ও কেমনে দুর্দান্ত রেজাল্ট করে আল্লাহ মালুম ।
তার উপরে আমাদের কোন একটা প্রোগ্রামে ওরে কখনোই ঠিক মত পাওয়া যায় না । ভয়াবহ দুষ্টু । ক্লাসে খুজলে দেখা যাবে বাং মারতেসে । বাগানে খুজলে দেখা যাবে ঘুমাইতেসে । নালিশ করার জন্য বাসায় খুজলে দেখা যাবে , মায়ের মাথায় নারিকেল তেল লাগিয়ে দেওয়ায় খালাম্মা ওর জন্য পোলাও রেঁধে খাওয়াইতেসেন ।
দুনিয়ার বিখাউজ পোলা । সবার পাওনা মাইরটা ওরেই দিবো বলে যখন লিঞ্চ মব ওর দিকে এগিয়ে চলেছি , ধীরে অতি ধীরে , তখনই চিল চিৎকার -
" থাম , থাম । তোরা আমাকে কখনোই বিশ্বাস করলি না , খেলায় নিলি না । দ্যাখ , আমিও স্বীকার করছি , তোদের সব কথা সব সময় শুনি না । কিন্তু ( এই টুক বলে ঘর্মাক্ত গা থেকে সাদা অ্যাপ্রন খুলে ) এই একবার , মাত্র এই একবার ( উত্তেজনায় লেমন ইয়েলো শার্টের নিচে ওর ৪২ ইঞ্চি ছাতি গর্বে ফুলে ওঠে ) আমি কথা রেখেছি ।
( ডেনিমের ডিজাইনার্স জিন্সের কোমরে হাত রেখে হাবিবি পোজ মেরে দাঁড়ায়) আমি ঠিকই তোদের কথা মত বাসন্তী রঙ পরে এসেছি । ( যুদ্ধ জয়ের খুশিতে নাইকির স্পোর্টস সু টাকেই বুটের মত ঘট করে মেরে দেয় হাবিবি)
আমরা ওর ঝোলের লাঞ্ছনাবিহীন সাদা অ্যাপ্রন দেখি ।
লেমন ইয়েলো পিয়েরে কারডিন শার্ট দেখি ।
ডেনিমের নীল জিন্স দেখি ।
নাইকির ফুরফুরা জুতা দেখি ।
পাশ থেকে মৈ হিস হিস করে " হি ইজ মাইন ,মাইন , অল মাইন " । আমি তাকিয়ে দেখি সব কয়টা মেয়ের চোখে খুনের নেশা । রক্তের বদলা , থুক্কু, রঙের বদলা তারা নেবেই । হুম হুম হুম হা হা হা হা হা হা হা ।
কিন্তু একি! হঠাৎই হাবিবি টান মেরে শার্ট বের করে ফেলে ৩০ ইঞ্চি কোমরের জেলখানা থেকে ।
মুখে ফেরেশ্তার হাসি । যেন আবে জম জমের পানিতে স্নাত কোন এক মক্কা বাসীর শ্রীমুখ জান্নাতে ফেরদোউসের আলোয় ঝলমল করছে - এমন হাসি দেখে শুধু মায়া লাগে , প্রেম জাগে না । কিন্তু আমরা জানি , সাপের চামড়া যতই সুন্দর হোক , তাকে যেমন কোন দিনই দুধ কলা দিয়ে পোষ মানানো যায় না , তেমনই হাবিবির হাসির আড়ালেও থাকে কোন ভয়ংকর ষড়যন্ত্র।
হাবিব মায়াবী ছায়া ঘেরা চুলের আড়াল থেকে তার কপাল্টাকে বের করে আনে ডান হাতের আঙুলের অভ্যস্ত দক্ষতায় । বাঁকা চাঁদের মত ব্যাংগলস গুলোকে পেছনে ঠেলে দিতে দিতে বাম হাতটাকে আরেকটু নামিয়ে আনে ।
গ্রীক দেবতা জিউসের মত ছলনা ভরা চোখে এক অপার্থিব জাদু খেলা করে । আজ তক ছাপ্পানের দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলারের মত নির্বিকার ভঙ্গী তার মাপা অঙ্গে । "ফুলো কি তারহা লাব" খুলে যায় অকস্মাৎ , অসতর্ক কিন্তু সাবধানী কয়েক জন বিভ্রান্ত কিন্তু আশাবাদী বান্ধবীর কর্ন কুহরে ভেসে আসে এক অচেনা মন্ত্র ---
" কিছু মনে করিস না দোস্তরা , পরেই আছি ( গ্লুটিয়াল মাসলের উপরে হাত রাখে হাবিবি ) কিন্তু --------- দেখাতে পারছি না। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।