আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আঙুল হারানো জুঁই আজ বসছে এইচএসসি পরীক্ষার টেবিলে......তার জন্য শুভ কামনা

পৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছুই নও, কিন্তু কারও কাছে তুমিই তার পৃথিবী" স্বামীর চাপাতির কোপে ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুল হারালেও মনোবল হারায়নি সে। স্বামী ভেবেছিল আঙুল কেটে নিলেই সে আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে না। কিন্তু কী এক দৃপ্ত প্রত্যয়ে ঠিকই পড়াশোনা করেছে সে। আজ রবিবার থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় সবার সঙ্গে অংশ নিচ্ছে নরসিংদীর সেই লড়াকু জুঁই। জুঁই গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, নিজের হাতে লিখতে পারবো না তাতে কী হয়েছে।

পরীক্ষা আমি ঠিকই দিবো। আমার জন্য দোয়া করবেন, ভালো ফল যেন করতে পারি। ঐ ঘটনার পর দেশের ও দেশের বাইরে থেকে যারা আমাকে উত্সাহ ও সাহস যুগিয়েছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এই উত্সাহই আমাকে মনোবল হারাতে দেয়নি। কথা বলার সময় হঠাত্ জুঁই তার ডান হাতের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেললো।

আজ জুঁইয়ের বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা। কেন্দ পড়েছে নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজে। জুঁইয়ের এক আত্মীয় সাদিয়া সুলতানা আজ পরীক্ষার সময় তাকে সাহায্য করবে। প্রশ্নগুলোর উত্তর মুখে বলবে জুঁই, আর তার হয়ে লিখবে সাদিয়া। নরসিংদী সরকারি কলেজের মানবিক শাখার মেধাবী ছাত্রী হাওয়া আক্তার জুঁই।

পূর্ব ভেলানগর গ্রামের ইউনুস মিয়ার মেয়ে জুঁইয়ের ২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নবীনগর উপজেলার নূরজাহানপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর রফিকুল জুঁইকে তার বাবার বাড়ি ভেলানগরে রেখে দুবাই চলে যায়। বিদেশ যাওয়ার আগে রফিকুল জুঁইকে সাফ জানিয়ে দেয় লেখাপড়া করা চলবে না। স্বামীর এই কথা মানতে পারেনি জুঁই। বাবাকে চাপ দিতে থাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার জন্য।

মেয়ের পড়াশোনার প্রতি এই আগ্রহ দেখে জামাইয়ের নিষেধ সত্ত্বেও জুঁইকে নরসিংদী সরকারি কলেজে ভর্তি করে দেন ইউনুস মিয়া। স্ত্রী কলেজে ভর্তি হয়েছে- এ খবর জানতে পেরে রফিক দেশে চলে আসে। জুঁইকে উপহার সামগ্রী দেয়ার কথা বলে কৌশলে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় রফিকের ভগ্নীপতির বাসায় নিয়ে আসে। গয়না পরানোর কথা বলে জুঁইকে হাত বাড়িয়ে দিতে বলেই গত বছরের ৪ ডিসেম্বর সকালে চাপাতি দিয়ে এক কোপে পাঁচ আঙুল কেটে নেয় রফিক। খবর পেয়ে জুঁইয়ের বাবা-মা দ্রুত ছুটে যায় ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়।

পরদিন ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয় রফিকুলের বিরুদ্ধে। এর পরদিন গ্রেফতার হয়ে এখনো জেলহাজতে রয়েছে রফিকুল। এই ঘটনায় নরসিংদীসহ সারা দেশে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। জুঁইয়ের প্রতি সহানুভূতি জানাতে ছুটে আসে মানবাধিকার কমিশন, নরসিংদীর মাদারস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এমডিএস), সিআরপি, জাতীয় মহিলা সংস্থা, জাতীয় মহিলা পরিষদ, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম, নরসিংদীর জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকবৃন্দসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠান। জুঁই জানায়, পরীক্ষার জন্য তার কলেজের শিক্ষকরা তাকে ব্যাপক সহযোগিতা করেন।

পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৬ ঘন্টা করে লেখাপড়া করেছে সে। ক্লাসও করেছে নিয়মিত। জুঁইয়ের পরিবার জানায়, আঙ্গুল হারানোর পরও এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করে জুঁই । তার এই সিদ্ধান্তে গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়ায় পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দথেরাপি বিভাগের প্রধান মাহফুজুর রহমান জানান, জুঁইয়ের পরীক্ষার অংশগ্রহণের স্বার্থে তার ডান হাতের জন্য অর্থোটিকস এন্ড প্রস্থেটিক ইউনিটে গ্লাভসের অর্ডার দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালেই কোন এক বিরতির দিন গ্লাভসের মাধ্যমে ডান হাতের কৃত্রিম আঙ্গুল সংযোজন করা হবে।

নরসিংদীর কলেজের অধ্যক্ষ আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, জুঁইকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোঃ ওবায়দুল আজম বলেন, জুঁইয়ের পরীক্ষার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.