আমার চক্ষু কেন সৌন্দর্য খুঁজে পায় না জ্যোৎস্না রাতে, কেন অপার সৌন্দর্যে অভিভূত দেখা পাইলে একথালা ভাতের !!! [আলহামদুলিল্লাহ] হাসিমুখে নি:সঙ্কোচে সমালোচনা করুন, কারণ বোকামন অতি নগণ্য সাধারণ । । ।
--------------------------------------------------------------------
স্পয়লার এলার্ট; রেটিং ৫/১০
--------------------------------------------------------------------
“কাস্ট এওয়ে” খ্যাত আমেরিকান পরিচালক রবার্ট যেমেকিস এর প্রথম লাইভ-এ্যাকশান ফিল্ম “ফ্লাইট(Flight). তবে আমি মুভিটি কে পরিচয় করিয়ে দিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবো এভাবে- ডেনজেল ওয়াশিংটন অভিনীত, ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হলিউড মুভি “ফ্লাইট” একটু নড়ে-চড়ে বসলেন তো ! আপাদ-মস্তক একজন শক্তিমান খাটি অভিনেতা ডেনজেল ওয়াশিংটন মুভিটির হুইপ হুইটেকার চরিত্রটি অলংকৃত করেছেন। সাথে ছিলেন শার্লক হোমস মুভিতে ম্যারি চরিত্রে রুপদানকারী কেলী রাইলী, ডন চ্যাডেল, জন গুডম্যান।
মুভির নাম দেখে অনেকে হয় মনে করছেন এটি ফ্লাইং থিমড যেমন এয়ার ফোরস ওয়ান, ডাই হার্ড টু টাইপ মুভি হবে। আমিও প্রথমে তাই মনে করেছিলাম(পোস্টার দেখে) মদ-কোকেনের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা একজন এলকোহলিক ব্যক্তির জীবনকাহিনী (কাল্পনিক) “ফ্লাইট” মুভিটি। পরিচালক রবার্ট যেমেকিস ১৯৯৯ সালে “The Pursuit of Happiness: Smoking, Drinking and Drugging in the 20th Century” নামে একটি ডকুমেন্টারি করেন। তারই ধারাবাহিকতা হয়তো এই মুভিটি। মুভির মূল বিষয়বস্তু, প্লট একটি চরিত্র কে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে।
এবং এ ধরনের চলচ্চিত্রে অর্থাৎ ওয়ান ম্যান শোতে; ম্যান অন ফায়ার ডেনজেল ওয়াশিংটনের দুর্দান্ত গ্রিপড পারফরমেন্স নি:সন্দেহে অন্যমাত্রা দিয়েছে। এবং চরিত্রটির জন্য ডেনজেল ওয়াশিংটনকে মনোনীত করা; পরিচালকের মেধার স্মারক বহন করছে।
ডেনজেল বা হুইপ হুইটেকার সুদক্ষ অভিজ্ঞ একজন বৈমানিক। যিনি একটি দিনও ড্রিংকস(মদ) ছাড়া অতিবাহিত করতে সম্পূর্ণ অক্ষম। তার এই বদভ্যাস বা অসুস্থতার কারণে স্ত্রী, একমাত্র ছেলে সন্তান এবং নিকট বন্ধু, পরিবার পরিজন কারো সাথেই আর সুসম্পর্ক নেই।
সারারাত ড্রাগস এবং সেক্সে রঞ্জিত হওয়া হুইপের কিছুটা দেরীতে ঘুম ভাঙে। খুব দ্রুত তৈরি হয়ে এয়ারপোর্টে ছুটে যান, উদ্দেশ্য তার পরবর্তী ফ্লাইট পরিচালনা(পাইলট)করা। টেক অফ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই খারাপ আবহাওয়ার দরুন বিমান নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়ে। সকল যাত্রী, ক্রু এবং সদ্য-নিয়োগপ্রাপ্ত কো-পাইলট স্বাভাবিকভাবেই বেশ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু হুইপ হুইটেকার অত্যন্ত সাহসিকতা এবং দক্ষতার সাথে বিমানের নিয়ন্ত্রণ বাগে আনতে সক্ষম হোন।
ককপিট ছেড়ে হইপ যাত্রীদের আশ্বস্ত করতে আসেন; সবকিছু ঠিক আছে, ভয়ের আর কোন কারণ নেই। ককপিটে ফিরে যাওয়ার আগে ভদকা এবং কমলার জুস মিশিয়ে হুইপ আরেকবার গলা ভিজিয়ে নেন।
সারারাত মদ্যপানের ঘোর না কাটতেই নতুন যোগান হুইপকে আরো কিছুটা নেশাগ্রস্ত করে তোলে। কো-পাইলট বিষয়টি আঁচ করতে পারলেও সিনিয়র পাইলট কে কিছুই বলার দু:সাহস দেখাতে পারেনি। এরই মধ্যে বিমানে যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দেয়।
বিমান নোসডাইব হয়ে সোজা নিচের দিকে পড়তে থাকে। নিশ্চিতভাবে বিমানটি মাটিতে ভূপাতিত হবে। কিন্তু নাহ্ ! আবারো হুইপ হুইটেকার তার মেধা এবং দক্ষতার কারিশমা দেখান। রানওয়েতে ল্যান্ডিং করা সম্ভব না হলেও, হুইপের তাৎক্ষনিক বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তের কারণে বিমানটিকে বিশাল মাঠে ফোরসড ল্যান্ডিং করাতে সক্ষম হোন। বিমানে থাকা ১০২ জনের মধ্যে ৯৬ জনের প্রাণ বেঁচে যায়।
নিহত হোন ৪ জন যাত্রী ও ২ জন ক্রু মেম্বার। আহত অবস্থায় হুইপ নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করেন। মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজ- হুইপ হুইটেকার একজন ট্রু হিরো। হুইপ নিজেও বিশ্বাস করেন, তার ভাষায়- “Nobody could've landed that plane like I did.”
কিন্তু আসলেই কী তাই ? ইনভেস্টিগেশন টিম হুইপের টক্সিকোলজি রিপোর্টে আভাস পেয়ে যায় তিনি এ্যালকোহলিক। উপরন্তু বিমানে পাওয়া ভোদকার খালি বোতল ইনভেস্টিগেশন টিমের সন্দেহ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
অপরাধ প্রমাণিত হলে দীর্ঘ সময়ের জন্য হুইপকে কারাবরণ করতে হবে। হুইপকে বাঁচাতে মুভি পর্দায় উপস্থিত হোন আইনজীবী হিউ ল্যাং(ডন চ্যাডেল) অত:পর ফুল সাসপেন্স ড্রামাটিক জার্নিতে চড়ে দর্শক দেখতে পাবে হুইপের সংগ্রাম বা যুদ্ধ, প্রতিপক্ষ মদ/এলকোহলিজম। আইনি লড়াইয়ে হিউ ল্যাং প্রতি-ধাপে সফল হতে থাকলেও হুইপ বারবার হেরে যাচ্ছিলেন নিজের কাছেই। সহযোদ্ধা হিসেবে নিকোল ম্যাগান(কেলী রাইলী) চরিত্রটিকেও দারুণভাবেই চিত্রায়ন করেছেন পরিচালক। হুইপের মাত্রাতিরিক্ত মাদক নির্ভরশীলতার মাত্রা বেড়েই চলছিল অপরদিকে নিকোলের মাদকাসক্তি থেকে নিজেকে নিরাময়ের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা।
স্ক্রিণরাইটার জন গাটনেস সতর্কতার সহিত তার ফ্লাইটের যাত্রীদের(দর্শক) উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং ঠিক সময়মত বাস্তবতার মাটিতে ল্যান্ড করিয়ে দর্শককে হাজির করেন নির্মোহ বাস্তবতার সামনে। যতটা সহজে এ্যালকোহলিক হওয়া যায়, তার চাইতেও অনেক অনেক কঠিন ঐ জগত থেকে নিজেকে বের করে আনা। হুইপের মাদকাসক্তি তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় আপনজন, সুন্দর পৃথিবীর সবটুকু সৌন্দর্য, সফল ক্যারিয়ার এবং সর্বোপরি তার নিজেকেই। এলকোহলিজম উই পোকার মত কুরে কুরে হুইপের সর্বাংশ শেষ করে দিলেও নীতিবোধ বা বিবেক ধ্বংস করে দিতে পারেনি। ফিল্মের শেষ অংশের টুইস্ট হুইপের মধ্যে থাকা ভালো মানুষটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে।
যারা আমার এই লেখাটি পড়লেন, তাদের নিকট অনুরোধ করবো- প্লিজ! সিনেমাটি একবার হলেও দেখবেন। আশাকরি আপনাদের মূল্যবান সময়ের অবমূল্যায়ন হবে না। ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রায় অধিকাংশ মুভি(আলোচিত) ইতিমধ্যে আমার দেখা হয়েছে। ২০১২-র আমার দেখা মুভিগুলোর মধ্যে, বেস্ট অফ বেষ্ট মুভির একটি “ফ্লাইট” যদিও পর্যাপ্ত প্রোমোশনের অভাবে মুভিটি ততটা আলোচিত হয়নি। অস্কারে শেষ পর্যন্ত মুভিটি একটি ক্যাটাগরিতেও পুরস্কৃত হয়নি!! হতাশ হয়েছিলাম।
এছাড়া বিমানের ক্রাশ ল্যান্ডিং দৃশ্যটি চিত্রায়ন করতে ইমেজ মুবারস্(ভিএফএক্স) –এর নিখুঁত কাজ আপনাকে শিহরিত করবে। নি:সন্দেহে ডেনজেল ওয়াশিংটনের ক্যারিয়ারের অন্যতম সফল সিনেমা হিসেবে “ফ্লাইট” মুভিটির নাম উপরের দিকেই থাকবে।
[মুভির প্রথম ৩:৩৩ মিনিট স্কিপ করার পরামর্শ থাকলো]
✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿✿
--------------------------------------------------------------------
স্পয়লার এলার্ট; রেটিং ৭/১০
--------------------------------------------------------------------
আমি বলিউড সিনেমার নিয়মিত দর্শক নই। এ্যালার্জি থেকে নয়, অধিকাংশ সিনেমার প্রায় একই প্লট, দাবাং নায়ক( একাই একশ ঠিক আছে, তবে একাই একহাজার !!), ইদানীং সময়ের বিরক্তিকর আইটেম সং, যৌন সুড়সুড়িমুলক গান, অযথা ফিগার শো-অফ ইত্যাদি; সবমিলিয়ে মশলাদার চলচ্চিত্রে ভরপুর ইন্ডিয়ান সিনেমা। শত বৎসর পার করা ইন্ডিয়ান সিনেমা ইন্ড্রাষ্টি বিশ্ব সিনেমা বাজারের বড় অংশজুড়ে রাজত্ব করছে।
বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার সিনেমা দেখা হয় তাই বলিউড বাদ যাবে কেন!? রজনীকান্তের রোবট, আমিরখানের থ্রি ইডিয়টস -এর মত ওয়ার্ল্ড-ক্লাস মুভি সাম্প্রতিক সময়ে বলিউড উপহার দিয়েছে বিশ্বব্যাপী সিনেমা-প্রেমীদের। ফুল এইচডি টেলিভিশন রঙে রঙে বর্ণিল করতে চাইলে বলিউড সিনেমার বিকল্প নেই।
কালারস অফ ইন্ডিয়ান সিনেমা জাস্ট ইনক্রিডিবল!!!
মাঝে মাঝে দু-একটা ভালো ফিল্মের খবর পেলে দেখার চেষ্টা করি।
ভারতের প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ মুভি মশলাদার হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ইন্ডিয়ান দর্শক। ব্যাখ্যা করলে বিশাল আয়তনের পোস্ট হবে।
তাই বিষয়টা সময় পেলে অন্যকোন পোস্টে আলোচনা করবো।
একশো কোটির ক্লাবে সদ্য জয়েন করা মুভি “আশিকী ২”
নতুন নায়ক-নায়িকা কাস্টিং করেও কিভাবে মুভিটি ব্লক-বাস্টার করলেন মুহিত সুরী তাই জানতে মুভিটি দেখার ইচ্ছে করলাম। ইচ্ছে ছিল, ১৪০ মিনিটের সিনেমা ১৪ মিনিটে শেষ করার (কারণ আগেই বলেছি)
স্টোরি রাইটার সাগুফতা রফিক এমনটা করতে দিলেন না। গানের দৃশ্যগুলোই শুধু কিছুটা স্কিপ করার প্রয়োজন পড়েছে। প্রযোজক এবং পরিচালক নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে সমাজের উচ্চবিত্তের উঠতি তরুণ সমাজকে টার্গেটে রেখেই সিনেমা তৈরি করেছেন বলে আমার ধারনা।
তারপরও বলতে হবে মশলাদার মুভির তুলনায় কিছুটা অফ-ট্রাকের মুভি “আশিকী ২” অন্তত দাবাং টাইপ হাবাং নয় মুভিটি, নেই চটকদার আইটেম সং।
৯ কোটি রুপি বাজেটে সিনেমাটোগ্রাফী, শব্দগ্রহন, মিউজিক, সেট ডিজাইন, লোকেশন চোখে পড়ার মতই। কেপ টাউনে শত শত চাইনিজ ফানুশ উড়ানোর ফটোগ্রাফি আনন্দদায়ক। মুভির প্লাস পয়েন্ট। আমার জানা মতে, মুভিটি হিট হওয়ার পিছনে মুভির গানগুলোর বিরাট অবদান রয়েছে।
গান হিট মুভি হিট! আদিত্য রয় কাপুর এবং শ্রদ্ধা কাপুরের অভিনয় নতুন হিসেবে খারাপ না। যদিও আমি এর আগে কখনোই এদের অভিনীত কোন সিনেমা দেখিনি। ইমোশনাল সিন সিকোয়েন্সগুলো বেশ উইক ছিল, পরিচালক চাইলে আরো কিছুটা যত্ন করে প্রোট্রেইট করতে পারতেন। বলিউডে কাপুরদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। নাম শুনেছি কিন্তু কে কোন কাপুর তা জানি না।
দু একটা গান মেলোডিয়াস হলেও আমার কাছে গানগুলোর কথা/মিনিং খুব একটা ভালো লাগেনি প্লাস-মাইনাস পয়েন্ট। মুভির শুরু থেকে শেষ, নায়ক মদের সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকে। একজন বিখ্যাত গায়ক বা রকস্টার কেন নিজেকে নেশার জালে জড়িয়েছেন। কেনই-বা এতটা অবসাদ তাকে ভর করে রেখেছে! সুনির্দিষ্ট কারণ মুভিতে চিত্রায়ন করা না হলেও বিনোদন জগত-নেশা-মদ ইত্যাদি বাস্তবতার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল। ছাপোষা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা আরোহীর(নায়িকা) তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্ন অনেক বড় শিল্পী/প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হওয়া।
কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করার মত কোন মাধ্যম না পেয়ে বারে(মদ বিক্রয় ও সেবন) সামান্য টাকার বিনিময়ে গান গাওয়া এবং গানের-চর্চা চালিয়ে যেতে থাকে। ছোটখাটো পাড়ার বারের লোভী মালিকের কাছে গানের কদর নেই, নেই শিল্পীর। রাহুলের(নায়ক) সাথে আরোহীর আকস্মিক সাক্ষাৎ এবং পরিচয় ঘটে। আরোহী রাহুলের গান রাহুলের চাইতেও ভালো গায়;অনুধাবন করা, লতা মঙ্গেসকারকে গানের জগতের চাঁদ বলে আখ্যায়িত করা ইত্যাদি শিল্পবোধের মাধ্যমে স্টোরি রাইটার বোঝাতে চেয়েছেন রাহুল সত্যিকার অর্থেই একজন উঁচুমানের সঙ্গীত শিল্পী এবং অনেষ্ট ইয়ং-ম্যান। গুরুদের শ্রদ্ধা এবং সম্মানের ক্ষেত্রে বর্তমান তরুণ শিল্পীদের অবহেলা পরিলক্ষিত হচ্ছে তাই বিষয়টিকে আমি সিনেমার প্লাস পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই।
সংগ্রাম ! আরোহীকে তার স্বপ্নের মনজিলে পৌছে দিতে রাহুলের সংগ্রাম, রাহুল কে তার যোগ্যস্থানে ফিরিয়ে আনতে আরোহীর প্রাণান্তকর চেষ্টা।
মুভি দেখতে দেখতে মনে পড়ে গিয়েছিলো- কলকাতার মাস্টারপিস মুভি অঞ্জন দত্তের “রঞ্জনা আমি আর আসবো না” এই মুভিটিকে আমি ওয়ার্ল্ড ক্লাস মুভি বলে থাকি। অঞ্জন দত্তের তুখোড়, বেপরোয়া, অসাধারণ অভিনয় (অসাধারণ বললেও কম বলা হয়) খাটি সিনেমা-প্রেমীদের(যারা সিনেমা বানায়, দেখে এবং খায়) টপ লিস্টে জায়গা করে নিবে। “আশিকী ২” এবং “রঞ্জনা আমি আর আসবো না” সিনেমা দুটির শিল্পমানে বিস্তর ফারাক থাকলেও রঞ্জনা মেইন প্লট এবং আশিকী ২ এর সাব-প্লটে বেশ মিল রয়েছে। সিনেমাটি দেখে থাকলে আমার সাথে আশাকরি একমত হবেন।
“আশিকী ২” মুভির প্রসঙ্গে ফিরে আসি। যথারীতি আরোহীর স্বপ্ন সত্যি হল। রাহুলের অবদান থাকলেও আরোহী তার নিজগুণেই প্রতিষ্ঠিত হল সঙ্গীত জগতে। নারী চরিত্রটির নিজস্বতার জন্য সিনেমা কে প্লাস-পয়েন্ট দিবো। রাহুল এবং আরোহীর সম্পর্কের টানাপোড়নের মাধ্যমে রাইটার আরেকবার সেলিব্রেটিদের পার্সোনাল লাইফের প্রকৃত বাস্তবতা-কে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করলেন।
রাহূল কে সুস্থ করতে আরোহীর ভালোবাসার জোর প্রয়োজন ছিল। আরোহী কমতি রাখেনি। সমাজ নামের প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিকতা অস্বীকার করে আরোহীর রাহুলকে সঙ্গ দেয়া। পরিচালক বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন নাকি ঘুণে ধরা সমাজকে অকপটেই অস্বীকার করতে চেয়েছেন, আমার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি। রাহুলের গ্রেটনেস আরোহীর কাছ থেকে নিজেকে বারবার সরিয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করে।
এটা কেমন ধরনের মহত্ত !! ভালোবাসার অতি প্রিয় আপনজনের চাইতেও প্রিয় নেশার জগত ? প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। নেশার জগতে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সবচাইতে আপনজন হল মাদকদ্রব্য। রাহুল সেই জগত থেকে বের হতে পারিনি। হতে পারে রাহুলের নিজের ব্যর্থতা অথবা সমাজের। এই পর্যন্ত আমি মুভিটিকে কয়েকবার প্লাস পয়েন্ট দিয়েছি।
তবে মুভির শেষ অংশে রাহুলের আত্মহত্যা!! মাইনাস পয়েন্ট! মাইনাস পয়েন্ট! স্টোরি রাইটার তার মোটামুটি সাজানো-গোছানো স্টোরিকে কিভাবে ভণ্ডুল করতে পারলেন! নাকি প্রযোজক-পরিচালক শুধুমাত্র সিনেমার ব্যবসায়িক সাফল্যের কথা চিন্তা করতে গিয়ে আত্মহত্যার টুইস্টটি আলাদা করে স্ক্রিপ্টে যোগ করেছিলেন ? মুভির মূল অডিয়েন্স টিন-এজ এবং তরুণ সমাজ। যারা বিভিন্ন সামাজিক অবক্ষয়, অভিভাবকদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, বেকারত্ব, নেশার মরণ ছোবল ইত্যাদি নানাবিধ কারণে নেগেটিভ ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে, কী ম্যাসেজ পেল তারা? নায়কের কাপুরুষ-শোচিত আত্মহত্যার কী প্রয়োজন ছিল! ট্রিগার চেপে সিনেমায় বুঁদ হতে থাকা দর্শকদের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত না করলেই কী হতো না ! আমাদের তরুণ সমাজ যদি দেখতে পেত, মাদকাসক্তি/এ্যালকোহলিজম থেকে থেকে মুক্তি পেতে নায়কের অবিরাম প্রাণপণ লড়াই, প্রিয় মানুষদের ভালোবাসাকে মূল্য দিতে নিজের সব্বোর্চ্চ প্রচেষ্টা, অত:পর সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন। মুভি শেষ করে তরুণ-তরুণীদের চোখে হয়ত অশ্রু থাকতো না, তবে প্রশান্তির হাসি তো থাকতো !
ওহ্! আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম, পুঁজিবাদী বিশ্ব সভ্যতায় বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের প্রধান ভোক্তা/ক্রেতা এখন আমাদের তরুণ সমাজ। শুধুমাত্র মুনাফার লোভে ভালোবাসা-মায়া-মমতা সবকিছুকেই প্যাকেজ ভোগ্যপণ্য হিসেবে তরুণদের নিকট বিক্রয় করা হচ্ছে।
যাইহোক, জীবন তার নিজ গতিতে চলবেই এবং জীবন-যুদ্ধে সংগ্রাম করে এগিয়ে যাওয়ার নামই বেঁচে থাকা; সিনেমার নায়িকা আরোহীর এই বোধোদয়টুকু শেষ অবধি সিনেমার মুল প্লাস পয়েন্ট হয়ে রইলো।
আরোহীরা নিজেকে উদ্দেশ্যে করে গেয়ে উঠুক- “আব তুম বি হো, মেরে জিন্দেগী, মেরে আশীকি,আব তুম বি হো”
নিজেকে পরিপূর্ণ ভালোবাসতে পারলেই, অন্যকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসা যায়।
সর্বোপরি টিপ্যিকাল হিন্দি সিনেমার চাইতে ব্যতিক্রম “আশিকী ২” কিন্তু শেষতক অপরিপক্ব ফিনিশিং এর কারণে মুভিটি বারবার দেখার মত কোন মুভি হতে পারলোনা। বক্স অফিস বড়জোর কয়েকমাস মাতিয়ে হারিয়ে যাবে হাজারো হিন্দি সিনেমার ভীরে।
সিনেমায় নায়কের সিক্সপ্যাক বডি-নায়িকার চামড়ার উজ্জলতা, প্রেম-রসায়ন অথবা গানের মোহিনীয় সুর আজকাল আমাদের যতটা আলোড়িত করে ঠিক ততটাই আড়ালে রয়ে যায় সিনেমার অন্তর্নিহিত বার্তাটি…..
পাল্টা যুক্তি আসতে পারে, আমি ভুল বলছি কারণ-
এন্টারটেইনমেন্ট, এন্টারটেইনমেন্ট এবং এন্টারটেইনমেন্ট ….
✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘✘
সম্মানিত প্রিয় পাঠক, হয়তো বুঝে গেছেন-কেন একই সাথে মুভি দুটি নিয়ে লিখলাম। জানি আমার মুভি আলোচনা বা রিভিউ যাই বলেন না কেন চটকদার হয়নি।
আপনাদের হাসাতে অথবা কাঁদাতে পারলাম না। সে চেষ্টাও আমি করি নাই। আমার এই পোস্টখানা কান্না-হাসির পন্য নয়, বোকামন ভাষায় একান্তই বোকমন ভাবনার প্রকাশ। হা হা হাহ হা .......।
ফ্লাইট, আশিকী ২ এবং রন্জনা আমি আর আসবোনা তিনটি মুভির ভিলেন হল- মদ/এ্যালকোহলিজম/মাদকাসক্তি।
মুভিগুলোতে নিজের জীবন-প্রিয়জন-ক্যারিয়ার-সম্পদ সকলকিছুই ধ্বংস এবং বিচ্ছিন্ন করেছে ভিলেন রুপী নেশাগ্রস্ত নিজ অস্তিত্বটি। আর এভাবেই পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ভিলেন হয়ে উঠছে। সম্প্রতি বৃটেনের মাদক বিষয়ক স্বতন্ত্র বিজ্ঞান কমিটি ইন্ডিপেনডেন্ট সায়েন্টিফিক কমিটি অন ড্রাগ বা ‘আইএসসিডি’ এ চালানো জরিরে তথ্যানুযায়ী- মাদক কোকেন বা হেরোইনের চেয়েও মদের ক্ষতি বেশি হয়ে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জীবনের সৌন্দর্য সর্বনাশা নেশার অসৌন্দর্যে নষ্ট করা হচ্ছে;আফসোস !!
আমির খানের “সাতয়ামেব জয়তো”-র একটি বিশেষ এপিসোড ছিল এ্যালকোহলিকদের নিয়ে।
আমাদের বিশ্ব, আমাদের রাষ্ট্র, আমাদের সমাজেরও ভিলেন মাদকাসক্তি।
বিশেষ করে যুব সমাজ আজ মাদকজাতদ্রব্যের ভয়ংকর ছোবলে পুরোপুরি হুমকির সম্মুখীন। তরুণ সমাজের স্মার্টনেস এবং নেশার প্রতি আসক্তি-কে এক করে ফেলা হচ্ছে। দু:খজনক, লজ্জার এবং পরিতাপের বিষয়।
কাপুরুষরা-ই এমনটা ভাবতে পারে।
উইলিয়াম শেক্সপিয়রের উক্তিটি নিশ্চয়ই মনে আছে-
“Cowards die many times before their deaths; the valiant never taste of death but once.”
পরিত্রাণের পথ আমাদের জানা, সময় ফুঁড়িয়ে যাওয়ার আগেই আমাদের উচিত হবে, সেই পথের পথিক হওয়া।
বিটিভির বহুল প্রচারিত একটি গানের কয়েকটি লাইন দিয়ে পোস্টের সমাপ্তি টানছি-
“সিগারেট থেকে শুরু…
শেষ কালে হিরোইন...
মাঝখানে মাদকের রাজত্ব প্রতিদিন...
শুধু যন্ত্রণা…
বাচাও এ জীবন খানা
এ জীবনের অধিকার সকলের সবার….”
©বোকামন ভাবনা
ছবি সূত্র: ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।