আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পেট্রোডলারের লোভে পড়ে মুসলমানদের ঈমান আমল ও ঐতিহ্যের ক্ষতি করবেন না

“ওয়াল ফিতনাতু আশাদ্দু মিনাল কতল” (২:১৯১)। ফিতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ। ” ফিতনা শব্দটির বিভিন্ন অর্থ রয়েছে। তার মধ্যে ইবাদত বন্দেগীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা অন্যতম। জাসসাস কুরতুবী প্রমুখের মতে ‘ফিতনা শব্দটির দ্বারা কুফর, শিরক এবং মুসলমানদের ইবাদতে বিঘœ সৃষ্টি করাকেই বুঝানো হয়েছে।

’ ‘ইবাদতের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা অতি গুরুতর ও কঠিন অপরাধ’। (তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন)। উগ্র সালাফিমতবাদের উত্থান ও ব্যাপক রক্তপাতের মধ্য দিয়ে সউদী আরবে ওই মতবাদ প্রতিষ্ঠার বয়স নেহাত কম নয়। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে এর খুব একটা প্রভাব পড়েনি। তার এও একটা বড় কারণ যে, সেই মতবাদ প্রচার ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এজেন্ট তৈরি করার জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তেল সম্পদের আবিষ্কার উত্তোলন ও তার বিপুল রয়ালটির অর্থ হস্তগত হওয়ার পূর্বে তেমন অর্থ তাদের ছিল না।

বরং তাদের অর্থ সংকট ছিল তীব্র। আল্লাহর মেহেরবানীতে সে সংকটের অবসান হয়েছে। দুনিয়ার সেরা ধনীর দেশ এখন সউদী আরব। সেই সুবাদে সালাফী ইজম বিভিন্ন মুসলিম দেশে রফতানিরও চলছে ব্যাপক তৎপরতা। আর ওই পেট্রোডলার হাসিলের প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে উৎকটভাবে।

বিশেষ করে আমাদের দেশের এক শ্রেণীর আলেমের মধ্যে। মাত্র কিছু দিন আগেও যারা ছিলেন মুকাল্লিদ, (ফিকহী মাজহাব ও ইমামের অনুসারী)। পাক্কা হানাফী, হঠাৎ তারা বনে গেলেন গায়েব মুকাল্লিদ। কিছুদিন আগেও যাদের দেখা যেত হানাফী মাজহাবের বিভিন্ন মাসআলার ক্ষুরধার যুক্তি ও সৌন্দর্য বর্ণনায় পঞ্চমুখ। হঠাৎ পাল্টেগেল তাদের ভোল ও বোল।

কিছুদিন আগেও যারা নফল ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনায় ছিলেন উচ্চাবাক্য। হঠাৎ তার অনেক হয়ে গেলেন উল্টো মুখী। তাদের বয়ানে ঐ সকল হয়ে গেল বেআসল এমন কি তার অধিকাংশই হয়ে গেল শিরক কিংবা বিদআত। ওই যে কবি বলেছেন, ‘বাবু যাহা বলে পারিষদ দলে বলে তার শতগুণ। ’ তাতো বলতেই হবে! নইলে বাবুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্বার্থ হাসিল করা যাবে কীভাবে।

এর নজীর দেয়া যাবে ভূরি ভূরি। যেমন পবিত্র মক্কা মুযাজ্জামা ও মদীনা মুনওয়ারায় রমজানুল মোবারকে ২০ রাকাত, তারাবির নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা হয়। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে সারা দুনিয়ার মানুষের সাথে আমাদের দেশের মুসলমানগণ অতিআগ্রহের সাথে তা দেখেন এবং অনেকে তাদের দোয়ার সময় এখানে বসে হাত তুলে মুনাজাত করেন ও আমীন আমীন বলেন। অথচ সেই সালাফী ইমামদের চেয়েও বড় সালাফী সেজে আমাদের এ দেশী হঠাৎ সালাফীরা প্রচারণা চালিয়ে যান ২০ রাকাত তারাবী পড়া বিদআত, গুনাহর কাজ। এমন কি গত বছর কোন কোন অতিউৎসাহী এজেন্টকে বলতে শুনা গেছে তারাবীহ বলতে কোন নামাজই নেই।

একেই বোধ হয় বলে সূর্যের চেয়ে বালির তাপ বেশী। অবস্থাটা আমাদের দেশে এমন দাঁড়িয়েছে যে, সালাফিয়াতের প্রধান হিসাবে প্রথিতযশা সেকালের ইমাম ইবনে তাইমিয়া এবং একালের শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানীকে ও তারা ছাড়িয়েও এগিয়ে গেছেন বহু ধাপ। ইমামদ্বয় যে সব হাদীসকে সহীহ ও হাসান মর্যাদার বলে তাদের কিতাবে উল্লেখ করে গেছেন। সেসব হাদীসকেও-এর মওধু বানোয়াট বলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন অবলীলাক্রমে এবং এভাবে তারা এ দেশের শান্ত স্নিগ্ধ পবিত্র ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে উদ্ভব ঘটাচ্ছেন এক মারাত্মক ঝগড়া ফ্যাসাদের কলহ কোন্দলের এক আত্মঘাতী মারাত্মক ফিৎনার। ভূমি ব্যবস্থা বিচার ব্যবস্থা, অর্থ ব্যবস্থায় যেখানে ইমাম আবু হানিফা এবং ফিকাহ হানাফীকে গুরুত্ব দেয়া হয় খোদ সউদী আরবেও, ওআইসি ফিকহ একাডেমীতেও সেখানে তথাকথিত এদেশী অতিউৎসাহী কোন কোন সালাফী নামধারী ব্যক্তি পুস্তিকা প্রণয়ন করে প্রচার করেছে, ‘নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক’ তিনি ছিলেন অবৈধ সন্তান।

এর চেয়ে বড় ফিৎনা আর কী হতে পারে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।