আমি একজন ছাত্র এবং দেশের একজন সচেতন নাগরিক.। । দেশের ও দশের মঙ্গল ই আমার কাম্য তিস্তার মূল প্রবাহের মতো এর শাখা নদীগুলোর বুকেও জমেছে বিস্তীর্ণ বালুচর। এঁকেবেঁকে বয়ে চলা চিকলি, ঘাঘট, যমুনেশ্বরীসহ তিস্তার শাখা নদীগুলোর বুকে এখন পানির বদলে বালুর দেখাই বেশি মেলে। অনেক স্থানে শুকিয়ে যাওয়া নদীতে তামাক, ধান ও ভুট্টার চাষ হতে দেখা গেছে।
উজান থেকে আসা বালু, পাথর ও কাঁকর তিস্তা সেচ প্রকল্পের মূল ও শাখা গেটগুলো ভরাট করে দিচ্ছে। এতে তিস্তা প্রকল্পের পানি নিয়ন্ত্রণ দরজাগুলো ঠিকমতো খোলা ও বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রতিবছরই বালু-পাথর আসার পরিমাণ বেড়ে প্রকল্পের অবকাঠামোগুলো অকার্যকর করে দিচ্ছে।
তিস্তা প্রকল্পের মূল গেটের কাছে বিশাল বালুচর জেগেছে। পানি সংরক্ষণাগার হিসেবে তৈরি করা এই স্থানটি শুরুতে বিশাল জলাশয় ছিল।
১৯৮৯ সালে প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকে ওই পানি সংরক্ষণাগারের বালু অপসারণ করা হয়নি। ফলে চরের দৈর্ঘ্য দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে।
একদিকে উজানের সিকিম থেকে পানি আসার পরিমাণ কমে যাওয়ায় বালুর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে, অন্যদিকে তিস্তা ব্যারাজের পলি অপসারণ না করাসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে প্রকল্পটির অবকাঠামোগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
তিস্তা অববাহিকায় ভারত সরকার মোট আটটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। এর মধ্যে পাঁচটি কেন্দ্র স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের শুষ্ক এলাকাগুলোতে সেচের পানি পৌঁছাতে ভারত আরও ৫০টি বাঁধ নির্মাণ করছে ,
আশির দশকে তিস্তা অববাহিকায় পাঁচটি ব্যারাজ নির্মাণ করেছিল ভারত। এ কারণে ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে পানির প্রবাহ কমে এসেছে বলে পানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আর নতুন করে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ও বাঁধ নির্মাণ করায় তিস্তার পানি বর্তমান প্রবাহের চেয়েও কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কমে আসবে। তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় উত্তরাঞ্চলে নয় লাখ ৬০ হাজার টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু ভারতের জলবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হয়ে পড়বে।
তিস্তা নদীর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানে অনেক দুর্লভ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। তিস্তাপারের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ করত এই মাছ। কিন্তু নদীটি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ মারা যাচ্ছে। এ জন্য ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এমনভাবে চুক্তি করা উচিত, যাতে ভাটিতে যথেষ্ট পানি আসে ও নদীর জন্য কমপক্ষে ২০ শতাংশ পানি রাখা যায়।
বছরে ৬০ লাখ টন পলি: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তিস্তা নদীবিষয়ক কমিশনের প্রধান কল্যাণ রুদ্র তাঁর বাংলার নদনদী বইতে লিখেছেন, পাহাড়ি বন উজাড়, কৃষিকাজের বিস্তার, বসতি ও রাস্তা নির্মাণের ফলে সিকিম পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূমিধস বেড়ে গেছে।
তিস্তার উজান থেকে ভাটির দিকে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ৬০ লাখ টন পলি, কাঁকর ও পাথর ভেসে আসে। এতে ভাটিতে অবস্থিত বাঁধ বা জলাধারের স্থায়িত্বকাল বড়জোর ৫০ বছর হয়ে থাকে।
তিস্তা অববাহিকা এলাকার বেশির ভাগ মাটি বালু দিয়ে গঠিত। উজান থেকে যে পানি আসে তা সরাসরি নদীর মূল অববাহিকা ও শাখা নদীগুলো দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলে যায়। নদীর বুকে পানি জমে থাকে না।
দ্রুত তা চুইয়ে মাটির নিচে চলে যায়।
তিস্তা নদীতে একের পর এক অবকাঠামো নির্মাণের ফলে নদীটিকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের অন্যতম উৎস এই নদীতে কী পরিমাণ পানি আছে, তা একটি সমীক্ষার মাধ্যমে দেখা উচিত। তারপর কতটুকু পানি ব্যবহার করলে নদীটির স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হবে না, সেই লক্ষ্যে দুই দেশকে একত্রে কাজ করতে হবে।
তিস্তাপারের দুঃখ: তিস্তা ব্যারাজের মূল গেটের সামনে বালুরাশির ওপর দিয়ে ক্ষীণ ধারায় পানি বয়ে যেতে দেখা যায়।
গেটের পাশে চারটি জেলে নৌকা। জেলেদের বাড়ি লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার গোয়ানি গ্রামে। একসময় এখানে বিশাল জেলে নৌকায় করে স্থানীয় লোকজন মাছ ধরত। মণকে মণ মাছ ধরা পড়ত। এখন খেয়া নৌকায় সারা দিন ঘুরে এক থেকে দুই কেজির বেশি মাছ ধরা পড়ে না।
জেলে নৌকা ছাড়িয়ে কিছুদূর এগোতেই তিস্তার বুক থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু অপসারণের দৃশ্য চোখে পড়ে। তিস্তা প্রকল্প নির্মাণের পর এ বছরই প্রথম এখান থেকে বালু অপসারণ করা হচ্ছে। এই ২০ বছরে মূল প্রবাহ থেকে শুরু করে শাখা নদী—কোনো স্থান থেকে বালু অপসারণ করা হয়নি।
তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের হিসাবে প্রতিবছর এক থেকে দুই ফুট উচ্চতায় পলি এসে তিস্তায় জমা হয়। চার বছর ধরে পানিপ্রবাহ কমে আসায় পলি জমার পরিমাণও বেড়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।