আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইম্ফল ফ্রি প্রেসের সম্পাদকীয়- টিপাই নিয়ে বাংলাদেশের শেষ কথা বলে কিছুই নেই

Click This Link টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুতে বাংলাদেশের কিছুই বলার নেই- এ মন্তব্য করেছে মণিপুরের অনলাইন ইম্ফল ফ্রি প্রেস। এতে গত মঙ্গলবার একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। এর শিরোনাম- ‘বাংলাদেশ হ্যাজ নো ফাইনাল সে’। এতে বলা হয়, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, অবশেষে ভারতের ক্ষমতাসীন ইউপিএ সরকার বহুমাত্রিক টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুতে বাংলাদেশকে বুঝিয়ে রাজি করাতে পেরেছে। বাংলাদেশের বিরোধীদল ও পরিবেশবাদীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার তার নয়া দিল্লিতে নিয়োজিত হাইকমিশনার তারিক আহমেদ করিমের মাধ্যমে প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধে তার সমর্থন প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী সমপ্রতি নয়া দিল্লি সফর করেছেন। তারই ফল এটা। সফরকালে গওহর রিজভীর সহকর্মী ড. মশিউর রহমান এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক আহমেদ করিম ভারতের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে নয়া দিল্লিতে সাক্ষাৎ করেন। তারা সাক্ষাৎ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিদ্যুৎমন্ত্রী, গ্রাম উন্নয়নমন্ত্রী, পানি সম্পদমন্ত্রী ও জাতীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে। ভারত সরকার আশ্বাস দিয়েছে, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে পানির প্রবাহ হ্রাস পাবে না।

বাঁধ নির্মিত হলে তাতে পরিবেশের বা জীব বৈচিত্র্যের ওপর কোন প্রভাব পড়বে না। বর্ষা মওসুমে আকস্মিক বন্যা হবে না। এরপরও বাংলাদেশ সরকার বাঁধ এলাকা পরিদর্শনের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। ওই দলটি বাঁধ এলাকাটি এবং বাঁধের বৈশিষ্ট্যগুলো খতিয়ে দেখবে। বাঁধের কারণে সুরমা, কুশিয়ারার পানি প্রবাহের কোন প্রভাব পড়বে কিনা তা পরীক্ষা করবে।

তবে একটি বিষয় মনে রাখা উচিত- টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের যে সম্মতি তা সর্বজনস্বীকৃত নয়। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশাল এই বাঁধের ফলে বাংলাদেশে নদীতে যে মওসুমি প্রবাহ থাকে তা বিঘ্নিত হবে। ফলে বাংলাদেশের কৃষি ও মৎস্য চাষ খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলের বক্তব্যকে আমলে না নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল।

তারা বিরোধীদের যুক্তিকে গোঁড়ামি, একগুয়েমি, অসার ও দর্শক মাতানো খেলা বলে বানচাল করে দিচ্ছে। ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, দলীয় রাজনীতি ও প্রচারণার কাছে অনেক ভাষ্যকারের সত্য অনুসন্ধান ঢাকা পড়ে গেছে। এখানে মজার ব্যাপার হলো- ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশকে টিপাইমুখ প্রকল্পে সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করার ও বিদ্যুতের ভাগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ মনে করে, চূড়ান্ত আলোচনার টেবিলে এ বিষয়টিতে তাদের নিশ্চয়তা দেয়া হবে। একই সঙ্গে যে কোন অবস্থায় এই প্রকল্প পর্যবেক্ষণের সামর্থ্য থাকবে বাংলাদেশের।

এখানেই মূল কথা নিহিত। মণিপুরে বরাক নদীতে টিপাইমুখ ড্যাম হলো একটি প্রস্তাবিত বাঁধ। এই বাঁধের উদ্দেশ্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা এবং পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন করা। এই প্রকল্পের ফলে পানির অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিতর্কের সূত্রপাত। একই রকম বিতর্ক শুরু হয়েছে মণিপুরে এই পানির আধারের ফলে যেসব মানুষ বাস্তুচ্যুত হবেন তাদের নিয়ে।

বরাক নদীতে এই বাঁধের দৈর্ঘ্য হবে ৩৯০ মিটার ও উচ্চতা হবে ১৬২.৮ মিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর চূড়ার উচ্চতা হবে ১৮০ মিটার। আর এই জলাধারে ১৭৮ মিটার পর্যন্ত পানি জমা থাকবে। এই বাঁধটি প্রাথমিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল বরাকের নিম্ন উপত্যকায় বন্যার পানি ধরে রাখার জন্য। কিন্তু পরে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি এ প্রকল্পে অঙ্গীভূত হয়েছে।

এ প্রকল্পটি ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য স্থাপন উপযোগী। ৬টি ২৫০ মেগাওয়াট ফ্রাঁসিস টার্বাইন জেনারেটরের সাহায্যে তা সরবরাহ করা হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, টিপাইমুখ বাঁধের বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থনের অর্থ এই নয় যে, সকল বাধা দূর হয়েছে। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, শুধু ওই সব আন্দোলনকারীরাই নন, এই বাঁধের বিরুদ্ধে রয়েছে মণিপুরের জনমত। এটা একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হওয়া ছাড়াও এই প্রস্তাবিত বাঁধের জলাধারের কারণে এ অঞ্চলে উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের মারাত্মক ক্ষতি হবে।

এই বাঁধের জন্য অনেককে বাস্তুচ্যুত হতে হবে। কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদেরকে অন্যত্র পুনর্বাসন করা হবে। কিন্তু এর পুরোটাই মানবিক যুক্তির বিরোধী। এতে আরও বলা হয়, ভূমির সঙ্গে মানুষের যে সম্পর্ক তা বিবেচনায় নিতে হবে। মানুষ যে স্থানে জন্মে সেখানকার সঙ্গে তার যে টান তা বিবেচনায় নিতে হবে।

কেউ চাইলেই বসতি স্থাপনকারী মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে পারে না। হ্যাঁ, মণিপুরের বিদ্যুতের দরকার আছে। কিন্তু তা উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের বিনাশ ও ভূমির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে উপেক্ষা করে নয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।