কি যেন ভেবে লিখতে বসলাম। এখন আর গোছাতে পারছি না। যাক গে, অত গোছগাছের কী আছে, যা মনে আসে লিখে যাই। আব্বাকে নিয়ে লিখেছিলাম অনেক আগে একবার, এছাড়া মাঝে মাঝে ছোটবেলার যত স্মৃতিকথা লিখেছি, প্রায় প্রতিটাতেই আব্বার কথা এসেছে। যেমন একটা ছিল ছবি আঁকা নিয়ে।
অনেক দিন ধরে বাড়ি থেকে দূরে আছি। অনেক দিন বাড়ির সবাই মিলে আড্ডা দেয়া হয় না। একটা সময় ছিল যখন বিকালবেলা নাস্তার সময় সবাই একসাথে বসে হৈ-হুল্লোড় করে গল্প করতাম। এই আড্ডায় ভাই-বোনরা তো থাকতামই, আব্বা-আম্মাও থাকত। আব্বার কাজ ছিল আমাদের পচানো।
মাঝে মাঝে এমনভাবে পচাতেন যে রাগে গজগজ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকত না।
একবার এরকম আমরা সবাই গল্প করছি। রাস্তায় ফেরিওয়ালা বাদাম-বুট বলে ডাক দিতে দিতে যাচ্ছিল। মেজপা বুটভাজা খেতে চাইল। আব্বা বললেন, বুটভাজা খেতে চাইলে খা, তবে মনে রাখিস, এখন খাওয়ার সময় তো আওয়াজ হবে, পরে আর আওয়াজ হবে না, শুধু গন্ধটা নাকে লাগবে।
আমরা হি হি হি করে গড়িয়ে পড়লাম, আর মেজপা লাল-নীল-বেগুনি হয়ে গেল। কিছু বলতে তো পারল না, শুধু রাগ প্রকাশ করতে আব্বার পিঠে ঘুষি মেরে দিল।
আর যদি কেউ কোন প্রসঙ্গে 'কী হয়েছে' জিজ্ঞেস করত, তো আব্বার মুখস্থ উত্তর ছিল, কিছু হলে তো কান্নার আওয়াজই শোনা যেত। ঘুম থেকে উঠতে সেই ছোটবেলা থেকেই আলসেমী লাগে। আম্মা বকা-ঝকা দিয়ে উঠাতেন, তাও পারতেন না সব সময়।
আর আব্বা বকতেন না, ডাকতেনও না। সোজা দুই পা ধরে টেনে নামানো শুরু করতেন। না উঠে আর উপায়ই নেই।
আব্বার একটা বিশেষ আদর ছিল, সেটা শুধু আমাকেই করতেন। কখনও হয়তো পা ছড়িয়ে বসে গল্প করছি বা টিভি দেখছি, আব্বা নিজের কোলে আমার দুই পা তুলে নিতেন, অথবা পাশে বসে এক হাত দিয়ে আমার পা দুটো জড়িয়ে ধরতেন।
এরপর আরেক হাত দিয়ে একটা একটা করে আমার পায়ের আঙুল টেনে মট মট করে ফুটাতেন। একটা করে আঙুল মটকাতেন আর মুচকি হেসে বলতেন, ফুটছে।
ঐ আদরটা খুব মিস করি। আর কখনও কেউ এভাবে আদর করবে না। কেউ এভাবে পচাবেও না।
ঘুম থেকে টেনে তুলবেও না।
শেষের দিনগুলোতে আব্বা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই সাথে মনমরাও হয়ে গিয়েছিলেন। সারাক্ষণ মৃত্যুর কথাই ভাবতেন তখন। আব্বা চলে যাওয়ার প্রায় একমাস পর আব্বাকে স্বপ্নে দেখেছিলাম।
দেখেছি আব্বা একেবারেই সুস্থ আর হাসিখুশী। ঘুম ভাঙার পর মনে হচ্ছিল, কেন যে আরেকটু ঘুম হল না। এখনও স্পষ্ট মনে পড়ছে কী কী দেখেছিলাম। কিন্তু এই স্বপ্নটা আমি ডাইরীতে লিখিনি। লেখার চেষ্টাও করিনি।
থাকুক না ওটা মনের খাতায়ই লেখা।
হঠাৎ আজ কেন যে এসব কথা লিখতে গেলাম। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।