আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! ঈশিতা ক্লাশ রুমের এক কোনায় বসে ছিল । মাথা নিচু করে । ওর কিছুই ভাল লাগছে না । বারবার কেবল একটা কথাই মনে হচ্ছে ও খুব বড় একটা অন্যায় করে ফেলেছে । ও এই বোধটাকে কিছুতেই সে মন থেকে মুছে ফেলতে পারছে না ।
“কি ভাবছিস এতো” ?
ঈশিতা কোন কথা বলল না । তুহিনের দিকে তাকিয়ে থাকল ।
তুহিন বলল “কালকের রাতের কথা ভাবছিস” ?
“হু” ।
“কালকের রাতের কথা আমিও অনেক ভেবেছি । এখন মনে হচ্ছে কাজটা করা আমাদের উচিত্ হয় নি” ।
পেছন থেকে সজিব বলল “কেন উচিত্ হয় নি ? আমরা সবাই মিলে তো কাল প্লান করলাম ? তখনতো কেউ ভেটো দেয় নি । তাহলে এখন এই কথা কেন আসছে” ?
তুহিন বলল “তবুও কাজটা করার পর মনে হচ্ছে ঠিক হয় নি । যদি আবির সাহেব কোন দিন জানতে পারে তাহলে বুঝতে পারছিস কি হবে ? কি ভাববেন উনি” ?
“আরে এতো টেনশন নিচ্ছিস কেন ? উনি কোন দিন জানতে পারবে না । ঠিক আছে ? তবে ঈশিতা তোকে একটা কথা বলব” ?
“বল” ঈশিতা বলল ।
“তুই আবির মিয়াকে বিয়ে করে ফেল ।
এরকম মানুষ সহজে পাবি না” ।
“হুম” । তুহিনও একমত হল । “সত্যি এরকম মানুষ সাহসী মানুষ পাবি না” ।
“কিন্তু ...” ঈশিতা কিছু বলতে যাচ্ছিল ।
ওকে থামিয়ে দিয়ে সজিব বলল “তুই এতো চিন্তা কেন করছিস ? যা ঘটেছে তা কোন দিন কেউ জানতে পারবে না । তুই চোখ বুঝে বিয়ে করে ফেল” ।
ঈশিতা একটু হাসল । বিয়ের সিদ্ধান্ত ও গতকাল রাতেই নিয়েছে । কিন্তু মনের মধ্যে একটা খচখচানি রয়েই গেছে ।
বারবার ওকে জানান দিচ্ছে যে ঈশিতা তুমি কাজটা ঠিক কর নি । মোটেই ঠিক করনি ।
ঈশিতা চাচ্ছিল না গতরাতের ঘটনাটা মনে করতে । ও ঘটনাটা ভুলে থাকার চেষ্টা করল । ওর মনে হতে লাগল এমন যদি কোন উপায় থাকতো যাতে গত রাতের ঐ ঘটনাটার অস্তিত্ব একেবারে গায়েব করে দেওয়া যেত ! ও মনে করতে না চাইলেও গতরাতের ঘটনা ওর মনে ধ্রুবতারার মতই জ্বলজ্বল করছিল ।
পারিবারিক ভাবেই আবিরের সাথে ঈশিতার বিয়ের কথা বার্তা চলছিল । কথা বার্তা মোটামুটি পাকা । গতকাল বিকালে আবির ওকে নিয়ে বের হয়েছিল । প্লান অবশ্য আগে থেকেই করা ছিল । মুভি টুভি দেখে খেয়ে দেয়ে বাসায় ফেরার সময় হল তখন বেশ রাত হয়ে গেছে ।
আবির যখন বাড়ির দিকে গাড়ি ঘোড়াল ঈশিতা তখন বলল “একটু ইউনিভার্সিটি এলাকার দিকে চলেন” ।
“রাত কিন্তু অনেক হয়েছে” ।
“তো কি হয়েছে ? চলেন না প্লিজ । আমার একটা ফেভারেট জায়গায় আপনাকে নিয়ে যাই । আমি সময় পেলেই এখান টাতে আসি” ।
আবির আর আপত্তি করল না । ইউনিভার্সিটি এলাকার দিকে গাড়ি ঘোড়াল । ওদের গাড়িটা যখন জায়গা মত পৌছাল তখন চারিদিকে সুনসান নিরবতা । এলাকাটা ভার্সিটির একদম একপাশে । দিনের বেলাতেই এখানে ঠিক মত লোক আসে না আর এখন তো বেশ রাত ।
গাড়ি থেকে নেমে আবির চারিদিকটা ভাল করে দেখল । বলল “জায়গাটা সুন্দর । কিন্তু একটু নির্জন । সেফ তো নাকি” ?
“হ্যা একটু নির্জন । এই জন্যই তো আমার বেশি পছন্দের ।
আর এই এলাকা তো সেফই । আর ...” ঈশিতা কথা শেষ করল না ।
“আর” ? আরির জানতে চাইল ।
“আর সেফ না হলেও তো সমস্যা নাই । আপনি আছেন না আমাকে প্রোটেক্ট করার জন্য” ।
আবির কোন কথা বলল না । একটু যেন খুশি হল ।
সামনেই একটা গাছের বেদির মত ছিল । ঈশিতা বলল “আসুন ঐ জায়গায় বসি” ।
ওরা বসতে যাবে ঠিক এমন সময় কোথা থেকে যেন তিনটা ছায়া মূর্তি হাজির হল ।
ওদের সামনে । আবির ঈশিতার হাত ধরে ওকে পিছনে নিয়ে এল । একটু যেন সাবধান ।
“এতো রাতে এইখানে কি করেন” ? তিন জনের একজন বলে উঠল ।
“কিছু না ।
আমরা চলে যাচ্ছি” । আবির ঈশিতাকে নিয়ে চলে যেতে চাইল । বিপদের গন্ধ পেয়েছে খানিকটা ।
“দাড়ান” । অনেক টা অর্ডারের মত শোনাল কথাটা ।
আবির দাড়াল । “কি চান আপনারা ? কোন ঝামেলার দরকার নাই । টাকা পায়সা যা আছে আমি এমনিতেই দিয়ে দিচ্ছি” ।
তিন জনের একজন যেন খানিকটা হেসে উঠল । বলল “আমাদের কি ফকির পাইছেন ? টাকার দরকার নাই ।
বলেন তো আমরাই আপনাকে দিতাছি” ।
“মানে কি” ?
“মানে হল আমরা আপনের গার্লফ্রেন্ড টারে চাই কিছুক্ষনের জন্য । এইখানে চুপচাপ দাড়াইয়া থাকেন । কাম শেষ হইলে দিয়া যামু” ।
একজন খুব জোড়ে হেসে উঠল যেন খুব মজার কথা বলেছে ।
আবির আরো একটু শক্ত করে ঈশিতার হাতটা চেপে ধরল ।
সেই একজনই আবার বলে উঠল “দৌড় দিয়া লাভ নাই । যা বলতাছি করেন । কারো কোন ক্ষতি হবে না । কেউ জানবেও না ।
আর হিরো গিরি করতে যাইয়েন আমার কাছে রিভলবার আছে । আপনার উপর পুরা ম্যাগজিন খালি করলেও কেউ টেরও পাইবো না” ।
“ওকে তাই করেন” । আবির অনেক ক্ষন পর কথা বলল ।
আবিরের গলার স্বরে কিছু একটা ছিল তিন জনই যেন একটু চমকে উঠল ।
ওরা হয়তো ভাবে নি আবির এমন কথা বলবে । আবির আবার বলল “পিস্তল বের করে আমাকে গুলি করেন তারপর একে নিয়ে যান । আমার কোন আপত্তি নাই । কিন্তু আমার গায়ে একবিন্দু শক্তি থাকতে আমি ওকে নিয়ে যেতে দিবো না” ।
ঈশিতা সত্যি অবাক না হয়ে পারল না ।
তিন জনের মধ্যে অন্য একজন বলল “আমরা সংখ্যায় তিনজন । আপনার কি মনে হয় আপনি আমাদের সাথে পারবেন” ?
আবির খানিকটা হাসল । বলল “পারবো না ঠিক আছে । কিন্তু যতক্ষন পারবো ততক্ষন আমি ওকে নিয়ে যেতে দিবো না” ।
“আরে এতো কথার দরকার নাই” ।
প্রথম জন সত্যি সত্যি পিস্তল বের করল । আবিরের দিকে তাক করে বলল “এখন বলেন” !
আবির বলল “আমি বলেছি আমি বেঁচে থাকতে ওকে তোমরা নিয়ে যেতে পারবে না” ।
তারপর ঈশিতাকে ফিসফিস করে বলল “পায়ের হিল টা খুলে ফেল । ওরা যদি গুলি করে তাহলে তুমি পেছন দিয়ে দৌড় মারবে । ঠিক আছে ? একবারও থামবে না” ।
আবিরের দৃঢ়তা দেখে তিনজনই খানিকটা ইতস্তত করতে লাগল । এতোক্ষন যে চুপ করে ছিল সে বলল “বাদ দে ! ঝামেলার দরকার নেই । এখন টাইম ভাল না । চল কেটে পরি” ।
তিনজন যেভাবে এসেছিল সেভাবে গায়েব হয়ে গেল ।
আবির যেন হাপ ছেড়ে বাঁচল ।
গতরাতের এই ঘটনাটাই ঈশিতার মনে বারবার প্রতি ফলিত হচ্ছে । ও কিছুতেই এটা ভুলতে পারছে না । বিশেষ করে ঐ সময় ঐ রকম সাহসীকতা যে কেউ দেখাতে পারে না ।
ভাবনায় ছেদ পড়ল ।
ফোন বাজছে । আবিরই ফোন করেছে ।
“হ্যালো । কি খবর” ? আবিরের কন্ঠ খুব স্বাভাবিক ।
“ভাল” ।
“আমার কথা ভাবছিলে” ?
ঈশিতা মিথ্যা কথা বলল না । স্বীকার করে করল ।
“ হুম । আপনার কথা ভাবছিলাম” ।
“কি ভাবছিলে” ?
“বলা যাবে না” ।
“কেন ? বলা যাবে না কেন” ?
“যাবে না” ।
“আচ্ছা বলতে হবে না । একটা অনুরোধ কি রাখা যাবে” ?
“বলুন” ।
“ আমি তোমার ক্যাম্পাসে এসেছি । আমার সাথে কি দেখা করা যাবে” ?
“আমি বুঝতেই পারছিলাম আপনি এসেছেন ।
ডিপার্টমেন্টের সামনে একটু দাড়ান আমি আসছি” ।
ঈশিতা ওকে গতকালকের ঐ জায়গাটাতেই আবার নিয়ে আসল । কাল যেখানে বসতে চেয়েছিল আজ ঐ বেদির উপরেই বসল দুজন । আবির টুকটাক কথা বলছিল হঠাত্ ঈশিতা বলল “আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো” ?
“কর” ।
“কাল ওরা যদি আপনাকে গুলি করে দিতো ! তাহলে” ?
“দিলে দিতো ।
মরে যেতাম” । আবির হেসে উঠল ।
“ইটস নট ফানি । জিনিসটা এতো সহজ না” ।
আবির হাসি থামাল ।
বলল “জিনিসটা কিন্তু খুব জটিলও না । যদি কাল ওরা তোমাকে নিয়ে যেত তাহলে আমি কি আর কোনদিন তোমার সামনে আসতে পারতাম ? তোমার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারতাম” ?
একটু ক্ষন চুপ করে থেকে আবির আবার বলল “আমি খুব বেশি সাহসী না ঈশিতা । কিন্তু আমি কাপুরুষও না । কাপুরুষ হয়ে বেচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভাল” ।
ঈশিতা চুপ করে আবিরের কথা গুলো শুনল ।
আবার ওর সেই অপরাধ বোধটা বড় প্রবল হতে লাগল । ঈশিতার বারবার মনে হতে লাগল এই রকম মানুষের সাথে এমন বাজে একটা খেলা কিভাবে খেলতে পারল !
ওর কেন জানি খুব কাঁদতে ইচ্ছা হল । ।
“আরে কি হল তোমার চোখে পানি কেন” ?
ঈশিতা চোখের পানি আটকানোর কোন চেষ্টা করল না । বলল “আবির তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ ।
আমি খুব খারাপ একটা কাজ করেছি । তোমাকে ছোট করার চেষ্টা করেছি” ।
“মানে ? কি বলছ এসব ? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না” ।
ঈশিতা বলল “আসলে .... গত রাতের ঘটনাটা সাজানো ছিল” ।
“সাজানো ছিল মানে ? আমি ঠিক বুঝলাম না তোমার কথা” ।
“আসলে গতরাতে যারা এখানে আমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল ওরা আমারই বন্ধু । আমার কথা মতই ওরা কাজটা করেছিল” ।
আবির এই কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল । কিছুক্ষন কোন কথাই বলতে পারল না । ও এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না যে এমন কিছু একটা হতে পারে ।
অনেকক্ষন পর আবির বলল “এমনটা করার কারন টা কি জানতে পারি” ?
“আসলে প্রথমে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাইনি । কিন্তু কোন উছিলায় তোমাকে রিজেক্ট করবো বুঝতে পারছিলাম না । আর আব্বা আমার কোন আপত্তি শুনতো না” ।
আবির বলল “আচ্ছা বুঝতে পেরেছি । তাই তুমি এই রকম একটা খেলা খেলল ।
তুমি ভেবেছিলে আমি তোমাকে ফেলে চলে যাবো আর তুমি তোমার বাবার কাছে গিয়ে বলল যে এরকম কাপুরুষের সাথে আমি বিয়ে করবো না । তাই তো” ?
ঈশিতা কোন কথা বলতে পারল না ।
আবির বলল “আমাকে তুমি একবার বলতে পারতে না যে তুমি বিয়ে করতে চাও না ? একবার বলেই দেখতে ! ওকে ফাইন । তুমি যখন আমাকে বিয়ে করতে চাও না । আমি এ বিয়ে করবো না ।
ঠিক আছে ? তুমি নিশ্চিন্তে বাসায় যাও” ।
“না আবির আমি .... আমি ....” । ঈশিতা কথাটা শেষ করতে পারল না ।
“কি এখন তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও” ? আবির খুব তাচ্ছিল্লের সাথে প্রস্নটা করল ।
ঈশিতা নিরবে মাথা ঝাকাল ।
আবির কিছুক্ষন কোন কথা বলল না । কেবল ওর দিকে তাকিয়ে থাকল ।
“আমি যাই ঈশিতা । তোমার সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না” ।
“আবির প্লিজ যেও না ।
আমি একটা ভুল করেছি । এটার জন্য তুমি যা বলবা আমি তাই করবো । তবুও তুমি যেও না প্লিজ” ।
আবির বলল “একটা কথা কি জানো ঈশিতা ? আমি মিথ্যা কথাটা একদম সহ্য করতে পারি না । কেউ আমার সাথে চিট করেছে এমনটা আমার সহ্যই হয় না ।
আর তুমি যেই কাজটা করেছ আমি কখনও সেটা ভুলতে পারবো না । কখনও না । আমি যাই” !
আবিরের চলে যাওয়াটা ও চুপচাপ দেখলো । আবির একটা বারের জন্যও পিছন ফিরে তাকাল না । ও যখন একেবারে চোখের আড়ালে চলে গেল তখন ঈশিতার খুব কষ্ট হতে লাগল ।
খুব কান্না পেতে লাগল । বারবার মনে মধ্যে একটা কথাই মনে হচ্ছিল যে খুব দামি কিছু ওর কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছ , ওর কাছ থেকে দুরে চলে যাচ্ছে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।