উচ্চ শিক্ষায় নিজেকে নিযুক্ত করার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত কখনো অস্তিত্বহীনতা বা অস্তিত্ব সংকট ব্যপারটি মাথায় আসেনি। আসার কথাও না। কেননা জীবনের ঐ সময়টুকু অনেকটা ঘোরের মধ্যেই কেটে যায়। যেন ভাবনার কোন অবকাশ নেই! বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর মস্তিষ্কের গভীর চিন্তা-চেতনা গুলো ধীরে ধীরে ডানা মেলতে শুরু করে। চিন্তা-চেতনায় পরতে থাকে প্রাপ্ত বয়স্কতার ছাপ।
ফলে চারিদিকে মনুষ্যজাতির বেশীর ভাগ কমকান্ডই অর্থহীন মনে হতে লাগল। এমনকি নিজেরটাও। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্লাস শেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে যখন আমার সহপাঠি বাড়িতে ফোন করে বলত যে, পরীক্ষা-ক্লাস ও পড়ালেখার চাপে দম ফেলার ফুসরত নেই তখন আমার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠত। কারন, তথাকথিত এই পরীক্ষা-ক্লাস আর পড়াশুনা কে কোন কজের মধ্যে ফেলা আমার বোধগম্য নয়, যেখানে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে প্রকৃত জ্ঞানের আদান-প্রদান খুবই কম।
সাধারনত আমরা কোন কিছু করাকেই কাজ বলি।
কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায়, কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে যখন বস্তুটির সরন ঘটে তখনই তাকে কাজ বলে, অন্যথায় নয়। অর্থাৎ, কোন একজন ব্যক্তি যদি একটা দেয়ালকে সারাদিন ধাক্কাতে থাকে তাতে দেয়ালটি বিন্দু পরিমাণ নড়বে না মানে দেয়ালটির সরন ঘটবে না। বিজ্ঞান তাকে কাজ বলে না। অথচ ধাক্কা দিতে দিতে বেচারা লোকটি ঘেমে-নেয়ে একাকার! তেমনিভাবে আমারা যা কিছুই করি না কেন, তার যদি প্রকৃত ফলাফল বেরিয়ে না আসে তবে তা অর্থহীন কর্মকান্ড ছাড়া কিছু নয়। যা আপাত দৃষ্টিতে কাজের কাজই মনে হবে।
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা এস.এস.সি তে এ প্লাস পেয়েই দু'আন্ঙুলে ভিক্টোরি চিহ্ন ও মুখে কেলানো বিজয়ের হাসি দিয়ে ফটো ক্যাপশন দেয়। যেন সাফল্যের চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেছে! অথচ তার এই এ প্লাস জীবনের কতটুকু সরন ঘটাতে পারে সে ব্যাপারে সে পুরোপুরিই অজ্ঞ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিস বোর্ডে প্রকাশিত পরীক্ষার ফলাফলে যখন নিজের রেজাল্ট সর্বোচ্চ স্থানে দেখি তখন বিন্দুমাত্র পুলকিত হই না। কারন আমি জানি, আমিসহ বেশীরভাগ ছাত্ররা নির্দিস্ট কিছু পাঠ্য-পুস্তক গলধ:করন করে পরীক্ষার খাতায় বমি করার ফলাফলই নোটিশ বোর্ডে প্রকাশিত হয়েছে যেখানে নিজের সৃষ্টিশীলতা বলে কিছু নেই।
এভাবে সকল কর্মকান্ডের অর্থ খুজতে গিয়ে মৌনতা আর একাকিত্ব আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলে।
সহপাঠিদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরি। অস্তিত্ব সংকট ধীরে ধীরে প্রকট আকার ধারন করে। নিজেকে অদৃশ্য মেন হতে থাকে। যেন আমার গুরুত্বের ছাপ আমি কারও উপরই ফেলতে পারছিনা।
তবে কি আমি নেই? অথবা আছি অস্তিত্বহীন অপদার্থের মত!
'অপদার্থ' এমন একটি শব্দ যা একমাত্র মানব সন্তানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য,যার দ্বারা কোন কল্যাণ সাধিত হয় না।
কেননা অন্য সকল কিছুই পদার্থ।
মহা চিন্তার বিষয়!
যাইহোক, মহান দার্শনিক ডেকার্থ সাহেবের সেই বিখ্যাত লাইনটার কথা মনে পড়লে আমার আত্মায় পানির সঞ্চার হয়। তিনি বলেছেন,"I doubt,therefore I think,therefore I am". অর্থাৎ আমার জীবন সম্পর্কিত গভীর চিন্তা-ভাবনাই আমার অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে। যে চিন্তা সৃষ্টিশীল।
ডেকার্থ সাহেবের কথাটি আজও আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
তবে একটু অন্যভাবে। আমার এক শিক্ষক বিষয়টি এভাবে বলেছিলেন, "I doubt,therefore I shop/consume, therefore I am!" অর্থাৎ আমি যত বেশী/দামি পন্য ভোগ করি ততই আমার অস্তত্ব দৃশ্যমান হয়! যেখানে চিন্তাশীলতার কোন প্রশ্নই আসেনা। বিষয়টা অদ্ভুত সত্য!
আমাদের চারপাশে সবকিছুই এতো সহজলভ্য যেন হাত বাড়ালেই সবকিছু পাওয়া যায়। কোন কিছুর জন্যই মগজ খরচ করতে হয়না। ফলস্বরূপ, আমরা নিশ্চিন্ত মনে কালের স্রোতে গা ভাসিয়ে ছুটে চলছি প্রতিনয়ত।
মগজ হয়ে যাচ্ছে অন্ত:সার শূন্য, আমরা হয়ে পরছি অস্তিত্বহীন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।