দেশের অন্যতম ব্যস্ত যমুনাসেতু-ঢাকা মহাসড়ক এবং টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মারাত্মক দু’টি ঝুঁকিপুর্ন সেতুর উপর দিয়েই চলাচল করছে দিনে প্রায় ২০ হাজার যানবাহন। মেয়াদোত্তীর্ন পুরাতন সেতু দুটির গার্ডারে ফাটল ছাড়াও ভেঙ্গে গেছে সেতুর অনেক ডেস্ক স্লাব গুলো। সেতুর উপর দাঁড়ালে ভুমিকম্পের মত কেঁপে উঠে। ফলে সেতু দুটি যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে। আর সেতু দুটি ভেঙ্গে পড়লে ব্যাপক প্রানহানি ছাড়াও উত্তরবঙ্গ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের অন্তত ২১ টি জেলার যানচলাচল বন্ধ হওয়ার আশংকা করছে খোদ সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
এদিকে জাইকার অর্থায়নে পৌলি ও হামিদপুর সেতু সহ জেলার ঝুঁকিপূর্ণ সাতটি সেতুর নির্মান কাজের প্রকল্প আইনী জটিলতার কারনে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যমুনাসেতু-ঢাকা মহাসড়কে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় পৌলি নদীর উপর পৌলি সেতু নির্মান করা হয় ১৯৬৪ সালের দিকে। সে সময় যান চলাচল ছিল হাতে গোনা। পরবর্তীতে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে যানবাহনের সংখ্যা। ১৯৯৯ সালে যমুনাসেতু চালু হওয়ার পর যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যায় বহুগুন।
বর্তমানে প্রতিদিন পৌলি সেতুর উপর দিয়ে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহের ২১ জেলার অন্তত ২০ হাজার হালকা ও ভারী যান চলাচল করছে । অতিরিক্ত চাপে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে পৌলি সেতু। সেতুর গার্ডারের অ্যাবাটমেন্টের কয়েকটি স্থানে গত প্রায় ৬/৭ বছর আগেই ফাটল ধরা পড়ে। সেতুর উত্তর পাশে ডেস্ক স্লাব ভেঙ্গে রড বেড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় সুরুজ মিয়া জানান, আমরা সব সময় ভয়ে থাকি এই বুঝি সেতুটি ভেঙ্গে পড়লো।
সেতুর উপর দাঁড়ালে ভূমিকম্পের মত মনে হয়। সিরাজ উদ্দিন জানান , দুই বছর আগে সেতুর রেলিং ভেঙ্গে উত্তর বঙ্গের একটি যাত্রীবাহী বাস নদীতে পড়ে যায়। এতে বেশ কয়েকজন মারা যান এবং আহত হন অর্থশত যাত্রী। বিধ্বস্ত এ সেতুর কারনেই মাঝে মধ্যেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মাইলের পর মাইল যানজটে দূর্ভোগ পোহাতে হয় দুরপাল্লার যাত্রীদের।
বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বিধ্বস্ত পৌলি সেতুর মাঝখানের স্লাব ভেঙ্গে উত্তরবঙ্গের ও ময়মনসিংহের সাথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় সেতুটি মেরামত করে কোনো রকমে চলাচলের উপযোগী করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে মেরামত করা হয় এটি।
ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর উপর অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ কমাতে ২০১১ সালে সেতুর পশ্চিম পাশে প্রায় দুই কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যায়ে একটি বিকল্প বেইলি সেতু নির্মান কাজ শুরু করা হয়। প্রায় ৭০ ভাগ কাজ শেষ হলেও অর্থ বরাদ্দ না থাকায় সে বছরের ১৫ জুলাই নির্মান কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মহাসড়কের মেরামত কাজ পরিদর্শনে এসে পৌলি সেতু দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি এক মাসের মধ্যেই পাশের বিকল্প বেইলি সেতু নির্মান শেষ করার নির্দেশ দেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ কে। এ নির্দেশনার প্রায় দেড় মাস পর তিনি গত ১৭ ফেব্র“য়ারী বিকল্প সেতুর উদ্ভোধন করেন। যদিও এখোনো পর্যন্ত বিকল্প সেতুটি চলাচলের পুরোপুরি উপযোগী হয়ে উঠেনি।
এদিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঝিনাই নদীর উপর ষাট দশকের গোড়ার দিকে নির্মান করা হয় হামিদপুর সেতুটি।
মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুর রেলিং ভেঙ্গে পড়েছে নদীতে। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না সেতুটি কতটা বিপদজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। সেতুর স্লাবসহ বিভিন্ন অংশই মাঝে মধ্যে খসে পড়ছে। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এর উপর দিয়েই প্রতিদিন বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলার শত শত যানবাহন চলাচল করছে। অথচ সেতুটি মেরামত করার কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেনা।
মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ন এ দু’টি সেতুর বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শওকত আলী আমার দেশকে জানান, মেয়াদোত্তীর্ন সেতু দুটি মারাত্মক ঝুঁপিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তিনি জানান, জাইকার অর্থায়নে ইষ্টার্ণ বাংলাদেশ ব্রীজ প্রজেক্টের আওতায় পৌলি ও হামিদপুর সেতু সহ জেলায় সাতটি সেতু নির্মানের জন্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শীঘ্রই নির্মান কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, জাইকার অর্থায়নে ইষ্টার্ণ বাংলাদেশ ব্রীজ প্রজেক্টের আওতায় প্রকল্পের কাজ বিদেশী একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারে বাংলাদেশের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পেয়েছিল। কিন্তু কাজ পাবার পর বিদেশী ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক দেওলিয়াত্বের বিষয়টি জানার পর প্রকল্প কাজের প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।
ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে মহাসড়কের দুটি মেয়াদোত্তীর্ন সেতুসহ জেলার সাতটি ঝুঁকিপুর্ণসেতু নির্মান প্রকল্পের ভবিষ্যত। তবে এ বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।