আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খেলায় হারলেও বাংলাদেশের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি)য় অর্জন

পৃথিবী থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য হ্রাসের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগে গত ২০০০ সালে বিশ্বের ১৯২টি দেশের সরকারপ্রধানরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে আটটি উন্নয়ন লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। ২০১৫ সালের মধ্যে (১) ক্ষুধা ও দারিদ্র্য (২) সর্বজনীন শিক্ষা (৩) মাতৃস্বাস্থ্য (৪) শিশুমৃত্যুর হার কমানো (৫) লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন (৬) সংক্রামক রোগ (৭) বৈশ্বিক সহযোগিতা এবং (৮) টেকসই পরিবেশ- এ আটটি বিষয়ে লক্ষ্য অর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) কিছু লক্ষ্য বাংলাদেশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আবার কিছু লক্ষ্য অর্জনে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কিছু লক্ষ্য অর্জন করতে পারা নিয়ে আশঙ্কাও রয়েছে।

আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে এসব অর্জন সম্ভব না-ও হতে পারে। ২০১১ সাল পর্যন্ত এমডিজির অগ্রগতি প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। অর্জন: @ বাংলাদেশে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে বেশ ভালো অগ্রগতি হয়েছে। ভিত্তি বছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬.৬ শতাংশ। ২০১১ সালে এসে দারিদ্র্যের হার ৩১.৫০ শতাংশে নেমেছে।

চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা আনয়নে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। @ প্রাথমিক শিক্ষায় নিট ভর্তির হারের লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ভিত্তি বছরে নিট ভর্তির হার ছিল শতকরা ৬০.৫০ ভাগ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪.৯০ শতাংশে। @ এইডস, ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য রোগব্যাধি দমনে বাংলাদেশের অর্জন ভালো।

বাংলাদেশে এইডসের প্রাদুর্ভাব শতকরা ০.১ ভাগের কম রয়েছে। এ ছাড়া ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ খুব ভালো করছে। @ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। ভিত্তি বছরে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার ছিল এক হাজারে ১৪৬ জন। আগামী ২০১৫ সালের লক্ষ্য হচ্ছে হাজারে ৫০ জন।

বর্তমান অর্জন প্রতি হাজারে ৪৮ জন। আশন্কা: মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তকরণ বর্তমান ধারায় চলতে থাকলে বাংলাদেশের পক্ষে নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ২০১৫ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জন না-ও হতে পারে। এ ছাড়া নারী-পুরুষ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন, টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা ও বৈশ্বিক সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এসব লক্ষ্য নির্ধারিত সময়ে অর্জন হওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। গত ২২ মার্চ,২০১২ রাজধানীর শেরে বাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে 'সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন : অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০১১' আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।

আগামী তিন বছরে এসব লক্ষ্য অর্জনে আরো মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জিইডি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমডিজি অর্জনে প্রতিশ্রুত বৈদেশিক ঋণ আশানুরূপ পাওয়া যাচ্ছে না। এমডিজি অর্জনে প্রতিবছর ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। অথচ বছরে গড়ে বৈদেশিক ঋণ পাওয়া যাচ্ছে ১.৫৪ বিলিয়ন, যা খুবই হতাশাজনক। ২০১৫ সালের মধ্যে সবকটি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ৭৮.২০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।

এ ক্ষেত্রে এ অর্থ পেতে উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে বেশ ভালো অগ্রগতি হয়েছে। ভিত্তি বছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬.৬ শতাংশ। ২০১১ সালে এসে দারিদ্র্যের হার ৩১.৫০ শতাংশে নেমেছে। ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার শতকরা ২৯ ভাগে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

বাকি তিন বছরে এ লক্ষ্য অর্জনে কৃষি উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব, শস্যের বৈচিত্র্যকরণ, ভূমি ব্যবস্থাপনা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সঠিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, জ্বালানি সংকট নিরসন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া উচ্চ শিক্ষায় মেয়েরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমানে উচ্চ শিক্ষায় ছেলে ৬১ শতাংশ এবং মাত্র ৩৯ শতাংশ মেয়ে অধ্যয়ন করছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নারী-পুরুষ সমতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে বালক-বালিকা সমান অনুপাতে রয়েছে।

তবে কৃষি ছাড়া অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার কমে যাচ্ছে। ২০১৫ সাল নাগাদ নারীর কর্মসংস্থান ৫০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও ২০১১ সালে তা ১৯.৭১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় সংসদে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এবং সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৯.৭১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ সাল নাগাদ তা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করার কথা। এগুলো অর্জনে চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

দেশের সুশাসন আর সঠিক নেতৃত্ব আগামীতে বাংলাদেশের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করবে-এটাই সকলের প্রত্যাশা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.