সাদা-সিধে একজন মানুষ ছোটবেলায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম আর খেলার জন্য একগাদা ফুল, লতা-পাতা যোগাড় করতাম। এইসব যোগাড় করতে করতেই অর্ধেক দিন শেষ হয়ে যেতো আর যখন খেলা শুরু করতাম তার কিছুক্ষণের মধ্যেই আম্মু ডাকতে শুরু করতো। খেলা পজ রেখেই বাড়ি ফিরতে হতো। সায়েম মুনের বুনো ফুল চিনবার পোস্ট দেখে সেইসব খেলার কথা মনে পড়ে গেল। আমিতো এসব ফুল আর গাছের নামই জানতাম না।
এখনও সবগুলোর নাম জানি না। খেলার সময় আমরা নিজেরাই কিছু নাম দিয়ে নিয়েছিলাম। এখনও সেই নামেই জানি।
১. পিঠা গাছঃ একটা গাছ ছিল, পাতাগুলো নরম নরম। একটু বড় পাতাগুলো নিয়ে তার মধ্যে চিকন শলার কাঠি দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে বিভিন্ন নকশা আঁকতাম।
যেমন আমাদের মুগ-পাক্কন পিঠায় থাকে। তারপর সেগুলো প্লেটে সাজিয়ে মেহমানকে দেয়া হতো। এই হল আমাদের পিঠা পাতা।
অনেক পরে অবশ্য বাচ্চাদের বিজ্ঞান বই পড়ে জানলাম যে ওই গাছের নাম প্যাপেরোমিয়া। যদিও আমি সেই গাছকে কখনোই প্যাপেরোমিয়া ডাকবো না।
পিঠা গাছই ভাল নাম।
২. মালা পাতাঃ এক রকম গাছ ছিল পাতাগুলো একটা সরু ডালের দুইপাশে ছিল। অনেকটা কৃষ্ণচূড়ার পাতার মত। একদম মাথার দুইটা পাতা পাশাপাশি। আমরা ঘুরে ঘুরে ঐ গাছের মাথার জোড়া পাতাটা যোগাড় করতাম।
তারপর জোড়াপাতার একটা একটু ভাজ করে মাঝামাঝিতে একটা ফুটো করে নিতাম। তারপরে আরেকটা জোড়াপাতার ফুটো ছাড়া পাতাটা ঐ ফুটোর মধ্যে ঢুকিয়ে নিতাম। এমনি করে একটার পর একটা জোড় দিয়ে লম্বা শিকল হতো। সেইসব শিকল দিয়ে মালা, ব্রেসলেট, নূপুর কত কি যে বানাতাম!
৩. আকন্দঃ আকন্দ খুব বেশি পাওয়া যেতো না। তবে যখন পেতাম ওই ফুলগুলো তরকারি হিসেবে ব্যবহার করতাম।
৪. ঢোল কলমিঃ ঢোল কলমির ফুলগুলো কানের পাশে গুজে দিতাম সাজগোজের জন্য। কি সুন্দরই না লাগতো একেকজনকে!
৫. কাঁটা বেগুনঃ এই ফুলগুলোও তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে এগুলো আমি আনতে যেতাম না। গেলেই কাঁটার খোঁচা খাওয়া লাগতো এক গাদা।
৬. তিতবেগুনঃ ছোট্ট ছোট্ট টমেটোর মত ফলগুলো তরকারি হিসেবে ব্যবহার করতাম।
৭. লজ্জাবতীঃ বেচারী লজ্জাবতী গাছগুলোকে যদি কখনো কোথাও খুঁজে পাওয়া যেতো তাহলেতো তাদের একেবারে দফা রফা। আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে সবগুলো পাতা বুজিয়ে দিতে পারলেই শান্তি। আর ফুলগুলোও নিয়ে আসতাম ছিঁড়ে। দু'আঙুলের মাঝে রেখে চাপ দিয়ে ধরে রাখতাম। ব্যস হয়ে যেতো সুন্দর গোলাপী রঙের একটা আঙটি।
৮. মারহাটিটিগাঃ এই ছোট্ট ছোট্ট সুন্দর হলুদ ফুলগুলো দিয়ে ডাল রাঁধতাম!
৯. দলকলসঃ একটা সাদা পাঁপড়িতেই একটা ফুল। তুলে তুলে পেছন দিকটা টেনে নিলেই পাওয়া যায় মিষ্টি একটা স্বাদ। ফুলগুলোর আশেপাশে সবসময় ফড়িঙ আর প্রজাপতি উড়াউড়ি করতো। কিন্তু আমরা নিষ্ঠুরের মত তাদের খাবারে ভাগ বসাতাম।
১০. লতানো ঘাসঃ ঘাসগুলোর এই লম্বা লম্বা লতা।
একটা লম্বা লতা ছিঁড়ে নিয়ে আগার দুই একটা ছোট পাতা ছাড়া বাকিগুলো ফেলে দিতাম। তারপরে আঙুলের মাপ নিয়ে একটার পর একটা প্যাঁচ দিতাম আর মাথার পাতাগুলো রাখতাম একদম উপরে। তারপরে বসে থাকতাম সেই আঙটিটা পরে আর মনে মনে ভাবতাম 'আহা, কবে পাবো এমনি একটা হীরের আঙটি!'
আর যখনই যে ফুল পেতাম তাই নিয়ে কানের পাশে গুজে দিতাম। সেসব আলাদা করে না বললেও চলে
বি.দ্রঃ বেশিরভাগ গাছের নাম এবং কিছু ছবি সায়েম মুনের বুনো ফুলের পোস্ট থেকে পাওয়া। অসংখ্য ধন্যবাদ সায়েম মুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।