*****
ইমান বা বিশ্বাসের তিনটি মূল শর্ত: সত্যবাদিতা, বৈধ উপার্জন এবং আমানতদারিতা। এ তিনটির কোনো একটি যদি আমার মধ্যে না-থাকে, তাহলে আমি অবিশ্বাসী, অর্থাৎ আরবিতে কাফির হিসেবে আমি তালিকাভুক্ত।
একজন অবিশ্বাসী অর্থাৎ কাফিরের কোনো আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডকেই ধর্মে দাসত্ব (ইবাদত) হিসেবে গ্রহণ করা হয় না। পবিত্র ক্বূরআনে --‘ওহে কাফেরগণ, তোমাদের জন্য ---ফরজ করা হলো, --যেমন ফরজ করা হয়েছে পূর্ববর্তী অবিশ্বাসীদের (কাফেরদের) জন্যে..’ --কোথাও এভাবে বলা হয়নি, বরং যেখানেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে-কেউ তার নিজের ভাষায় পবিত্র ক্বূরআন পড়লেই দেখবেন, -- ‘ওহে, তোমরা যারা বিশ্বাস করো’ অথবা ‘হে আমার বিশ্বাসীগণ’ অথবা ( ইয়া আইয়্যুহাল্লাজ্বীনা আ’মানু) ওহে, তোমরা যারা বিশ্বাস এনেছো, --তোমাদের জন্যে .......... (ইত্যাদি ইত্যাদি)..অবশ্যকরণীয় (ফরজ) করা হলো, --যেমন ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তী বিশ্বাসীদের (মুমিনদের) জন্যে..। --’ এভাবেই বলা হয়েছে।
ধর্মে যে পাঁচটি স্তম্ভ দেওয়া হয়েছে তার প্রথমটি ইমান (সুনির্দিষ্ট কিছু বিশ্বাস)।
এর পর ইবাদত, অর্থাৎ দ্বিতীয়টি ছালাত {প্রার্থনার মাধ্যমে চাওয়া বা ইবাদত (দাসত্ব)}, তৃতীয়টি সিয়াম {বৈধ কাজেতেই (অবৈধ বা হারাম সর্বদাই পরিত্যাজ্য) সাময়িক সংযম (বিরতি)}।
চতুর্থ এবং পঞ্চম শর্তদ্বয় সুনির্দিষ্ট পরিমানের অতিরিক্ত জমানো হালাল (বৈধ অর্থাৎ যাহা নিষিদ্ধ পন্থায় অর্জিত নয় এমন) সম্পদের উপস্থিতি সাপেক্ষে, --যাকাত এবং হজ্জ্ব।
এলোমেলোভাবে কিছু করাকে স্বেচ্ছাচারীর বিশৃঙখল বেহিসেবি কীর্তি বলা যেতে পারে, কখনোই তা ধার্মিকের ধর্মপালন নয়। প্রথমটাই অর্থাৎ বিশ্বাসটাই যদি আমার না-থাকে তো, ধর্মপালনের শর্ত হিসেবে আমাকে সর্বাগ্রে সেটাকেই ঠিক করে নিতে হবে।
কোনো অবিশ্বাসী বা কোনো প্রতারকের (মুনাফিকের) কোনো উপাসনা বা ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব, যাদের বিশ্বাসটাই ঠিক নাই, --(ইমান বা বিশ্বাসের তিনটি মূল শর্ত: সত্যবাদিতা, বৈধ উপার্জন এবং আমানতদারিতা। )...
..আসুন আমরা নরক বা জাহান্নাম বা দোজখ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে, শুরু থেকেই শুরু করার চেষ্টা করি। সর্বপ্রথমে বিশ্বাসটাই স্থাপন করা জরুরি, --নয় কি? --প্রথমে যেন আমরা নিজেরা বিশ্বাসী হওয়ার চেষ্টা চালাই এবং নিজেরা রক্ষা পাই, এরপর পরিবারকে রক্ষা করার চেষ্টা চালাই, পরিবার ঠিক হয়ে গেলে পরে প্রতিবেশীর প্রতি মনোযোগী হবার চেষ্টা করি এবং সদোপদেশ দিতে থাকি নিকটাত্মীয়দেরকে, -নিকট থেকে ধাপে ধাপে দূরের আত্মীয়কে, এভাবে প্রত্যেকটি মানবসন্তানের কাছে পৌঁছে যাই।
নিজেই বিশ্বাসী হতে পারিনি যতক্ষণ, নিজেই যা’ করি না অন্যকে যদি তা’ করতে বলি বা উপদেশ দিতে থাকি, এই ‘অবিশ্বাসী (কাফির) আমি’-টাই যে তখন পবিত্র ক্বূরআনের ভাষায় মুনাফিক (প্রতারক) হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাই, যার চিরস্থায়ী অবস্থান নরকের (জাহান্নামের) গভীরতম স্তরে, এটা যেন আমরা ভুলে না যাই।
{যেকোনো প্রতারক (মুনাফিক) নিজেকে বিশ্বাসী বলে প্রকাশ্যে দাবি করতেই পারে, এবং করেও। নিজেকে ঢেকে রাখার লক্ষ্যে বেশি বেশি ধর্মের বুলি বা নীতিকথা আওড়াতে গিয়ে প্রতারকেরা ইথারে পাথারে কোথাও ক্লান্তি প্রদর্শন করে না, নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যায়। মুনাফেকির চক্রে মুনাফিকেরা নিজেরাই ঘুরতে থাকে আর স্থির বিশ্বাসী যারা তাদেরকেই প্রতারকেরা (মুনাফিকেরা) অবিশ্বাসী, নরকগামী পাপী ভাবতে থাকে। নিজের চক্র থেকে কোনো প্রতারক (মুনাফিক) সহজে বের হয়ে আসতে পারে না, এমনকী অন্য কেউ তাকে বের করে আনতে গেলে, সে তার উদ্ধারকারীকে বিশ্বাস করতে পারে না, এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিশ্বাসী ধার্মিককেও ঐ প্রতারক প্রকাশ্যে বিধর্মী, ফাসেক (সত্যত্যাগী), কাফের (অবিশ্বাসী), ম্লেচ্ছ, জালেম (অত্যাচারী), ইবলিস (রাহু বা শয়তান), --ইত্যাদি ইত্যাদি ঘৃণ্য পাপিষ্ঠের উপাধি দিয়ে তার জন্যে অনন্ত নরকবাস প্রার্থনা করে।
সত্যবাদিতা, বৈধ উপার্জন এবং আমানতদারিতা, --এই তিনটি যার মধ্যে আছে, সেই ব্যক্তির জন্যে অবিশ্বাসী কিম্বা প্রতারক হিসেবে পরিচিতি লাভ করা প্রায় অসম্ভব, --এমনকী ‘আমি অবিশ্বাসী, আমি মুনাফিক’ বলে বলে সে যদি প্রচার করে এবং নিজেও নিজেকে প্রতারক (মুনাফিক) হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করে, তার চেষ্টা বিফলে যাবে।
কেবল মুখে মুখে উচ্চারণ করলেই যেমন কেউ বিশ্বাসী (ইমানদার) হয় না, তেমনি কেবল মৌখিক উচ্চারণের মাধ্যমে মুনাফিক (প্রতারক) হওয়া যায় না। }
কোনো প্রতারক যদি সত্যটাও প্রচার করে, ধর্মে তা’ মিথ্যে হিসেবেই গণ্য। আমরা যেন সতর্ক থাকি আর নিত্য স্মরণে রাখি, --ধার্মিক সাজতে গিয়ে প্রতারক (মুনাফিক) হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই।
নিশ্চয়ই সাবধানিদেরকে বিধাতা ভালোবাসেন।
কোথাও ধর্মোপদেশ বিতরণ করতে গেলে, কেউ যেন আমাকে অপদস্থ করার জন্যে বলতে না-পারে, --‘ওহে পূণ্যবান ব্যক্তি, আমাকে ধার্মিক বানাতে এসেছো, এজন্যে তোমার মঙ্গল কামনা করি, তবে জানতে চাই, তোমার পরিবারেরই সকলেই জাহান্নামের জ্বালানীতে পরিণত হওয়া থেকে মুক্ত আছে তো? কেমন রেখেছো তোমার প্রতিবেশীকে? ডানে-বামে-পিছনে-সামনে সবদিকে চল্লিশ ঘর প্রতিবেশীর সকলের খোঁজখবর নিয়ে তবেই আমার কাছে এসেছো নিশ্চয়ই? –ক্যামোন আছে তোমার প্রতিবেশী?’ --এবং, আমরা যেন সবখানেই সন্তোষজনক জবাব দিয়ে ফিরে আসতে পারি।
রঙ্গপুর : ১৩/০৩/২০১২
করণিক : আখতার ২৩৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।