আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইমানের হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে তাবলীগ জামাতের পরচলিত ধারণা ও সাইবার অভিযাত্রীর অনুসন্ধান

যাদের হাতে দলীল প্রমাণ কম তারা গালি দেয় বেশি

ইমান ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । নেক আমলের দ্বারা এর শক্তি বা নুর বৃদ্ধি পায় । গোনাহ করার দ্বারা ইমান কমে যায় অর্থাৎ ইমানের শক্তি বা নুর কমে যায় । কুরাণ - হাদীসের অসংখ্য বর্ণনা দ্বারা বিষয়টা প্রমাণিত , হাদীস ও ফিকাহর ইমামরা এ বিষয়ে একমত । কোন কোন মুসলমান ভাই না জানার কারণে ইমানকে কোন বিশেষ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট করেন।

অথচ বিষয়টা এরূপ নয় । যে কোন নেক আমলের দ্বারাই ইমানের শক্তি বা নুর বৃদ্ধি পায়, যে কোন গুনাহর দ্বারাই এর শক্তি কমে যায় । তাবলীগ জামাতের ভাইয়েরা অনেক সময় ইমানের বৃদ্ধকে শুধু মাত্র দাওয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট করেন, যেটা ঠিক না । আমাদের ধর্মে নামাজের গুরুত্ব দাওয়াত-তাবলীগ বা জিহাদ বা অন্য কোন দ্বীনি কাজ থেকে অনেক বেশী । তাই ইমান বৃদ্ধিতে নামাজের ভুমিকা এগুলোর চেয়ে অনেক বেশী।

নামাজের বিষয়ে পবিত্র কোরাণ শরীফে এসেছে নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, অর্থাৎ গুনাহ থেকে দূরে রাখে ! যে জিনিষ মানুষকে গুনাহ থেকে দূরে রাখছে - এটাকে আপনি ইমান বা ইমানের বৃদ্ধি বলবেন না ? আর কোন আমলের ক্ষেত্রে, দাওয়াত বা জেহাদের ক্ষেত্রে এরূপ বলা নেই । ফাজায়েলে নামাজে বর্নিত আছে, যাকে নিয়মিত মসজিদে যাতায়াতে অভ্যস্ত দেখ তার ইমানদারীর সাক্ষী দাও । এরূপ কোন ফজীলত কি জিহাদ, তাবলীগ বা অন্য কোন আমল সম্পর্কে আছে ? ফাজায়েলে নামাজে আরো আছে , যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত আল্লাহর ওয়াস্তে প্রথম তকবীরের সাথে নামাজ পড়বে সে দুটি পরওয়ানা পাবে । এক জাহান্নাম থেকে মুক্তি, দুই মুনাফিকি থেকে মুক্তি । আর কোন আমলে কি এরূপ নিশ্চয়তা আছে? তাহলে কি নামাজ ইমানকে নিশ্চতভাবে শক্তিশালী ও নিরাপদ করার উপায় না ? কোরাণ-হাদীসের অসংখ বর্নণা থেকে দেখা যায় নামজের সাথে ইমানের যে সম্পর্ক তা অন্য কোন আমলে নেই ।

আর নামজের পর রোজাও ইমান বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকর । যেমন রোজার বিষয়ে-ই কোরাণ শরীফে এরশাদ হচ্ছে, তোমাদের উপর রোজা নির্ধারইত করা হয়েছে যেন তোমরা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করতে পার ! রোজার দ্বারা খোদা ভীতি অর্জন হয়, আর কোন আমলের ব্যাপারে কি এরূপ আছে ? তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইলিয়াস (রহ : ) অমর বাণীতে দেখা যায় নামাজকেই তিনি দ্বীনের মূল বিষয় বলছেন । ১৫৩। ( তিনি আরোও বলেন) ছাত্রদিগকে সম্বোধন করিয়া তিন বলেন- নামাজ কায়েম করা সমস্ত জেন্দেগী দুরস্তকারী কাজ। কিন্তু তখনই নামাজ কায়েম করা পূর্ণ হইবে যখন নামাজ সম্বন্ধে যে সব গুণের কথা কোরআন হাদীছে বলা হইয়াছে নামাজীর মধ্যে তাহা পয়দা হইবে।

১৯৪। তিনি বলেন- নামাজকে হাদীছে ----- “দ্বীনের খুটি” বলা হইয়াছে। ইহার মতলব এই যে, নামাজের উপর অবশিষ্ট দ্বীন নির্ভর করে ও নামাজ হইতেই দ্বীন পাওয়া যায়। নামাজের মধ্যে দ্বীনের বুঝও পাওয়া যায়। আমলের তওফীকও দেওয়া হয়।

আবার যাহার নামাজ যেইরূপ হইবে সেইরূপ তাহার জন্য তওফীকও দেওয়া হইবে। এই জন্য নামাজের দাওয়াত দেওয়া ও অন্যের নামাজে “খুশুখুজু” (নম্রতা) পয়দা করিবার জন্য কোশেশ করা পরোক্ষভাবে পূর্ণ দ্বীনের জন্য কোশেশ করা। তাবলীগী ভাইয়েরা অনেক সময় দাওয়াতের জজবায় বলে ফেলেন যত বেশী দাওয়াত দিবেন, তত ইমান বাড়বে, আর দাওয়াত না দিলে ইমান কমা শুরু হবে। শরীয়তে ইমান কমার বিষয়টা প্রথমত গুনাহর সাথে সম্পর্ক যুক্ত । কোন বান্দা যখন কোন গুনাহ করে, তখন অন্তরে একটি কাল দাগ পরে ।

তওবা করলে সেটি আবার দূর হয়ে যায়। আর তওবা না করলে সেই ডাগ থেকে যায় । এমতবস্হায় আবার গুনাহ করলে আবার লাকো দাগ পরে। এভাবে গুলাহ করতে থাকলে (তওবা ছাড়া) অন্তর একেবারে কালো হয়ে যায় । এরূপ অন্তরে ইমানের শক্তি একদম কমে যায় ।

ভাল কথা - কাজ তখন অন্তর গ্রহণ করে না। এটাই ইমানহীনতা বা ইমানের শক্তিহীনতার অবস্হা। তাই দাওয়াত না দিলে ইমান কমে যাবে এ কথা পাইকারী ভাবে বলা যাবে না । তবে যে সব ক্ষেত্রে সৎ কাজের আদেশ - অসৎ কাজের নিষেধ বাদ্যতা মুলক, সে সব ক্ষেত্রে তা না করলে ইমানের বিশেষ ক্ষতি হবে । যেমন কারো সামনে অন্যায় কাজ হলে তার যদি বাধা দানের সামর্থ থাকে, আর সে বাধা না দেয়, তার ইমানের বিশেষ ক্ষতি হবে ।

আর সামর্থ না থাকলে ঘৃণা করতে হবে, যেটা ইমানের শেষ দরজা! মাজার বিষয় 'ইমানের শেষ দরজা' বলে যে ধমকি এসেছে সেটা নেহী আনিল মুনকার বা অসৎ কাজের নিষেধ সম্পর্কে, যেটার বিষয়ে অধিকাংশ তাবলীগী ভাইরাই উদাসীন। এ থেকে আরো একটা বিষয় পরিষ্কার হয়, তাবলীগী ভাইরা দাওয়াত বলতে সাধারণত: যে ইমানী আলোচনা, অথবা নেক কাজে তরগীব বা উৎসাহ প্রদান করেন, সেটা না করলে ইমান কমে যাবে এমন মনে করার খুব ভাল কোন কারণ খুজে পাওয়া যায় না । শায়খ জাকারিয়া চাচা হজরত ইলিয়াস রহ: এর কাছে পড়তেন। তিনি চাচার একটা কথা নকল করেন, জাকারিয়া ! তুই ৬ সপ্তাহ কথা বন্ধ কর, আমি তোকে ওলী বানিয়ে দিব ! এই ঘটনায় ওলী হওয়ার উপায় দাওয়াত না বরং চুপ থাকা ! দাওয়াত না দিলে যদি ইমান কমেই যায়, তবে ৬ সপ্তাহ চুপ থেকে তো কারো পক্ষে ওলী হওয়া সম্ভব না! প্রসংগত আরো একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই না, তা হচ্ছে বিশেষ ভাবে ইমান বৃদ্ধির উপায় হচ্ছে, গুনাহ থেকে ফিরে আসা । গুনাহ ত্যাগ করা ।

এর দ্বারা যেরকম ইমান বাড়বে তা আর কোন কিছুতেই পাওয়া যায় না! মেশকাত শরীফে কিতাবুন নিকাহতে আছে, যে নজরের হেফাজত করবে আল্লাহতায়ালা তাকে এমন ইমান দান করবেন যে সে তার মিষ্টতা অন্তরে অনুভব করবে। বলতে চাইছিলাম, তাবলীগ জামাতের কর্মীদের একটি ভ্রান্তি : ইমান বৃদ্ধির উপায় শুধু দাওয়াত । কোন কোন ভাই এরূপ না বললেও ইমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দাওয়াতের সমকক্ষ কোন কিছুকেই তারা মানতে চান না! অথচ কোরাণ হাদীসের এমন কোন স্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায় না যে দাওয়াত দিলে ইমান বাড়ে । অথবা তোমরা দাওয়াত দাও ইমান বাড়বে, বা ইমান বৃদ্ধির জন্য দাওয়াত দাও এমন কিছুও পাওয়া যায় না। সব মুফাস্সির, ফকীহ, মুহাদ্দিসরা যেহেতু এ বিষয়ে একমত যে নেক আমলের দ্বারা ইমানের শক্তি, নুর ইত্যাদী বাড়ে, আর দাওয়াত -ও যেহেতু একটি নেক আমল, তাই দাওয়াতের দ্বারাও ইমান বাড়বে ।

এতে কো আপত্তি নেই । কিন্তু দাওয়াত দিলে ইমান বেশী বারবে, নামাজ পড়লে সেরূপ বাড়বে না, এটার দললিল কি ? বুখরী শরীফের একটি হাদীসে আছে, ফরমাবরদার বান্দা নফল এবাদতের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করে। ( এখানে 'ফরমাবরদার' কথাটা লক্ষনীয়, অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্ধারিত বিষয়গুলো আদায় করে ও নিষিদ্ধ বিষয় ত্যাগ করে, শুধু সে-ই নফল এবাদত করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে । নির্ধারিত বিষয় বাড দিয়ে নফল কাজের দ্বারা নৈকট্য হাসিল হবে না । ) এমনকি আমি তার হাত হয়ে যাই যার দ্বারা সে ধরে, পা হয়ে যাই যার দ্বারা সে চলে .... ( অর্থাৎ তার সব কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি মত হয় ।

) উপর হাদীস দ্বারাও প্রমান হয় আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রথম ও প্রধান উপার ফরজ কাজগুলো। এরপর নফল । তাই নামাজ - রোজা - হজ -জাকাত এসবের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য যতটুকু হাসিল হবে দাওয়াত- তাবলীগ - জেহাদ ইত্যাদীর দ্বারা ততটুকু হবে না , কেননা এগুলো সবসময় ফরজ না। তাবলীগ জামাতের সমালোচনা ওতার জবাব কিতাবে শায়খ জাকারিয়া খুব স্পষ্ট ভাবে বলেছেন, নিয়মিত নামাজ আদায় জেহাদ থেকে উত্তম। হজরত শায়খ আল্লামা শামীর হাওয়ালাও দিয়েছেন এতে।

আর একথা তো খুবই সত্য ইমানের শক্তি বাড়লেই আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হেব, বা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল ইমানের শক্তি বাড়ার মাধ্যমেই হবে । তাই নামাজ রোজা ইত্যাদী পালনে ইমানের বৃদ্ধি দাওয়াত -তাবলীগ এসবের চেয়ে বেশী হবে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।