যাদের হাতে দলীল প্রমাণ কম তারা গালি দেয় বেশি
তাবলীগ জামাতে ইমান এক্কীন ও এর হ্রাস বৃদ্ধি নিয়ে বেশ কিছু ভুল মতবাদ চালু হয়ে গেছে । এগুলোর বিপরীতে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্কীদা এবং দেড় হাজার বছরের ওলামাদের প্রতিষ্ঠিত মতগুলোর বিশ্লষণ দেওয়া হল :
নেক আমলের দ্বারা এর শক্তি বা নুর বৃদ্ধি পায়
আক্কীদার কিতাবসমুহে এ বিষয়টি খুব স্পষ্টভাবে বলা আছে, যে সমস্ত বিষয় বিশ্বাসের দ্বারা মানুষ কুফুর থেকে ইসলামে প্রবেশ করে, তাতে কম বেশী করার সুযোগ নেই, তবে নেক আমলের দ্বারা ইমানের শক্তি বা নূর বাড়ে । কুরাণ - হাদীসের অসংখ্য বর্ণনা দ্বারা বিষয়টা প্রমাণিত নেক আমলের দ্বারা এর শক্তি বা নুর বৃদ্ধি পায় এবং গোনাহ করার দ্বারা ইমান ক্ষতিগ্রস্হ হয়, অর্থাৎ ইমানের শক্তি বা নুর কমে যায় । আর গুনাহ যদি কুফর ও শিরকের পর্যায়ে হয় তবে ইমান একেবারেই নষ্ট হয়ে যায় । কবীরা গুনাহর করলে মানুষ বেইমান হয়ে যায় না, বরং তওবা না করা পর্যন্ত ফাসেক থাকে।
ফাসেক চিরদীন জাহান্নামে থাকবে না। আক্কাইদ, হাদীস ও ফিকাহর ইমামরা এ বিষয়ে একমত ।
আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্যের দ্বারাই ইমান পুর্ণতা পায় ইমানের মূল বিষয়-ই হচ্ছে আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য। এর দ্বারাই ইমান বাস্তবতা পায় । আর ইমানের দ্বারাই নেক আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
হে ইমানদ্বারগন ! তোমরা আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য কর, এবং তোমাদের আমলকে বাতিল কর না । (সুরা মুহাম্মাদ ৪৭: ৩৩ )
আরবরা বলে আমরা ইমান এনেছি, আপনি বলেন তোমরা বিশ্বাস স্হাপন করনি বরং মেনে নিয়েছ । ইমান এখনও তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করে নি। যদি তোমরা আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য কর তবে আল্লাহ তোমাদের কোন আমলকে বাতিল করবেন না। ( হুজরাত ৪৯ :১৪ ) ।
উপরের আয়াত দুটিতে দেখা যাচ্ছে আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য করলে কোন আমল বাতিল হবে না, আর আনুগত্য না করলে আমল বাতিল হয়ে যাবে ।
কোন কোন মুসলমান ভাই না জানার কারণে ইমানকে কোন বিশেষ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট করেন। অথচ বিষয়টা এরূপ নয় । আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্যের উপায় হচ্ছে সমস্ত নেক কাজ করা এবং গুনাহ ত্যাগ করা । তাই যে কোন নেক আমলের দ্বারাই ইমানের শক্তি বা নুর বৃদ্ধি পায়, যে কোন গুনাহর দ্বারাই এর শক্তি কমে যায় ।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল নামাজ, ইমান বৃদ্ধিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল নামাজ ।
নামাজের বিষয়ে পবিত্র কোরাণ শরীফে এসেছে নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, অর্থাৎ গুনাহ থেকে দূরে রাখে ! যে জিনিষ মানুষকে গুনাহ থেকে দূরে রাখছে - এটাকে আপনি ইমান বা ইমানের বৃদ্ধি বলবেন না ? আর কোন আমলের ক্ষেত্রে, দাওয়াত বা জেহাদের ক্ষেত্রে এরূপ বলা নেই । ফাজায়েলে নামাজে বর্নিত আছে, যাকে নিয়মিত মসজিদে যাতায়াতে অভ্যস্ত দেখ তার ইমানদারীর সাক্ষী দাও । এরূপ কোন ফজীলত কি জিহাদ, তাবলীগ বা অন্য কোন আমল সম্পর্কে আছে ?
তাবলীগ জামাতের ভাইয়েরা অনেক সময় ইমানের বৃদ্ধিকে শুধু মাত্র দাওয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট করেন, যেটা ঠিক না । আমাদের ধর্মে নামাজের গুরুত্ব দাওয়াত-তাবলীগ বা জিহাদ বা অন্য কোন দ্বীনি কাজ থেকে অনেক বেশী ।
তাই ইমান বৃদ্ধিতে নামাজের ভুমিকা এগুলোর চেয়ে অনেক বেশী। এমনকি পবিত্র কোরাণে সরাসরি ' ইমান' শব্দটি নামাজের বুঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে ! ইমাম বুখারী ' আস সলাতু মিনাল ইমান ' শিরনামে সেই আয়াত এনেছেন।
নামাজের দ্বারা ইমানের পরওয়ানা :
ফাজায়েলে নামাজে আরো আছে , যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত আল্লাহর ওয়াস্তে প্রথম তকবীরের সাথে নামাজ পড়বে সে দুটি পরওয়ানা পাবে । এক জাহান্নাম থেকে মুক্তি, দুই মুনাফিকি থেকে মুক্তি । আর কোন আমলে কি এরূপ নিশ্চয়তা আছে? তাহলে কি নামাজ ইমানকে নিশ্চতভাবে শক্তিশালী ও নিরাপদ করার উপায় না ?
কোরাণ-হাদীসের অসংখ্য বর্নণা থেকে দেখা যায় নামজের সাথে ইমানের যে সম্পর্ক তা অন্য কোন আমলে নেই ।
হযরত ইলিয়াস (রহ : ) অমর বাণী:
তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইলিয়াস (রহ : ) অমর বাণীতে দেখা যায় নামাজকেই তিনি দ্বীনের মূল বিষয় বলছেন ।
মালফুজাত ১৫৩। ( তিনি আরোও বলেন) ছাত্রদিগকে সম্বোধন করিয়া তিন বলেন-
নামাজ কায়েম করা সমস্ত জেন্দেগী দুরস্তকারী কাজ। কিন্তু তখনই নামাজ কায়েম করা পূর্ণ হইবে যখন নামাজ সম্বন্ধে যে সব গুণের কথা কোরআন হাদীছে বলা হইয়াছে নামাজীর মধ্যে তাহা পয়দা হইবে।
মালফুজাত ১৯৪।
তিনি বলেন- নামাজকে হাদীছে ----- “দ্বীনের খুটি” বলা হইয়াছে। ইহার মতলব এই যে, নামাজের উপর অবশিষ্ট দ্বীন নির্ভর করে ও নামাজ হইতেই দ্বীন পাওয়া যায়। নামাজের মধ্যে দ্বীনের বুঝও পাওয়া যায়। আমলের তওফীকও দেওয়া হয়। আবার যাহার নামাজ যেইরূপ হইবে সেইরূপ তাহার জন্য তওফীকও দেওয়া হইবে।
এই জন্য নামাজের দাওয়াত দেওয়া ও অন্যের নামাজে “খুশুখুজু” (নম্রতা) পয়দা করিবার জন্য কোশেশ করা পরোক্ষভাবে পূর্ণ দ্বীনের জন্য কোশেশ করা।
রোজা ইমান বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকর একটি আমল :
আর নামজের পর রোজাও ইমান বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকর । যেমন রোজার বিষয়ে-ই কোরাণ শরীফে এরশাদ হচ্ছে, তোমাদের উপর রোজা নির্ধারইত করা হয়েছে যেন তোমরা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করতে পার !
রোজার দ্বারা খোদা ভীতি অর্জন হয়, আর কোন আমলের ব্যাপারে কি এরূপ আছে ?
ইমান বৃদ্ধির বিশেষ আমল কোরাণ তেলওয়াত
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آَيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
.... যখন তাদের সামনে কোরাণের আয়াত তেলওয়াত করা হয় তখন তাদের ইমান বেড়ে যায় ..
মুফতী মোহাম্মদ শফী সাহেব তার বিষ্ময়কর তাফসীর গ্রন্থ মারেফুল কুরাণে লিখেছেন সমস্ত ওলামারা এ বিষয়ে একমত ইমানের বৃদ্ধি মানে ইমানের শক্তি বা নূর বৃদ্ধি। ওলামা-এ কেরাম কোরাণ তেলওয়াতের ৩ টি বিশেষ ফায়দার কথা বলেন :
অন্তরের মরিচা দূর হয়।
আল্লাহর মহব্বত হাসিল হয়
প্রতিটি হরফে কমপক্ষে ১০ নেকী হাসিল হয় ।
না বুঝে কোরাণ পড়লেও এই ফায়দা সমুহ হাসিল হবে । যে ব্যক্তি বলে না বুঝে পড়লে কোন ফায়দা নেই সে বদ্দ্বীন জাহেল বা উভয়টাই। এখানে লক্ষনীয় প্রথম দুটি ফায়দা 'অন্তরের মরিচা দূর ' এবং ' আল্লাহর মহব্বত হাসিল' সরাসরি ইমান বৃদ্ধি ।
নফল এবাদতের মধ্যে আর কোন কিছুতে এত স্পষ্ট ভাবে ইমান বৃ্দ্ধির কথা বলা নেই ।
ইমান বৃদ্ধির উপায় আল্লাহর জিকির :
বুখারী শরীফে হযরত মুয়াজ রা: এর একটি উক্তি কিতাবুল ইমানে এসেছে , ' ইজলিস - নু'মিনু সায়াতান ' : বস, কিছু সময় ইমান আনি ।
হযরত মুয়াজ রা: কামেল ইমানদার ছিলেন । তিনি কিছু সময় আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে ইমানের নুর বাড়ানোর কথা বলেন।
বুখারী শরীফের সুপ্রসিদ্ধ ও প্রাচীন ব্যাক্ষা গ্রন্থ 'উমদাতুল ক্কারী ' এবং 'ফতথুল বারী' অথবা হালের ' নসরুল বারী ' সব জায়গায় -ই 'নু'মিনু ' এর মানে 'যিকরুল্লাহ' দ্বারা করা হয়েছে । আর আল্লাহর জিকিরের মাঝে তাসবীহ , তাহমিদ, তাকবির , তাজকেরায়ে আখেরাত সবই শামিল । 'উমদাতুল ক্কারী ' তে হযরত মুয়াজের উক্তিকে মুসান্নিফে ইবনে আবী শায়বা থেকে দুটি সুত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে রাবী নিজেই বলছেন ' ইয়ানী -যিকরুল্লাহ' , অর্থ্যাৎ আল্লাহর জিকির ।
' আল্লাহ থেকে হয় ' , 'আল্লাহ পালেন ' - এ জাতীয় আলোচনাও আল্লাহর জিকিরের অন্তর্ভুক্ত বিধায় এর দ্বারাও ইমানের শক্তি বাড়বে। তবে কেউ যদি ইমানের বৃদ্ধিকে শুধু এ জাতীয় আলোচনার মাঝেই সীমাবদ্ধ করেন, তবে সেটা মন গড়া কথা। কেননা হাদীসের কোন ব্যক্ষা গ্রন্থে -ই এ জাতীয় 'খাস বা ' সীমাবদ্ধ' কথা পাওয়া যায় না, বরং মুতলাক বা আ'মভাবে যিকরুল্লাহ - তাহমীদ এসব কথা এসেছে যার অর্থ ও প্রয়োগ 'মুতলাক' বা ব্যপক।
আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও ইমান বৃদ্ধির জন্য নফল এবাদতের চেয়ে ফরজ এবাদত অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ:
ফাজায়েলে নামাজ কিতাবে একজন কমবয়সী সাহাবার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে । তিনি কম বয়সের কারণে রসুলের হাদীস সম্পর্কে বেশী অবগত ছিলেন না ।
হজরত ওমর রা: একদিন ফজরের নামাজে ওনাকে না পেয়ে তার বাড়িতে হাজির হন । ঐ সাহাবীর মা জানান যে সে সারা রাত নফলে ব্যস্ত ছিল, তাই ফজরে জামাতে হাজির হয়নি । হযরত ওমর রা: বললেন আমার নিকট সারা রাত নফল থেকে ফজরেরে জামাত বেশী গুরুত্বপূর্ন ।
বুখারী শরীফের একটি হাদীসে আছে, ফরমাবরদার বান্দা নফল এবাদতের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করে। ( এখানে 'ফরমাবরদার' কথাটা লক্ষনীয়, অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্ধারিত বিষয়গুলো আদায় করে ও নিষিদ্ধ বিষয় ত্যাগ করে, শুধু সে-ই নফল এবাদত করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে ।
নির্ধারিত বিষয় বাড দিয়ে নফল কাজের দ্বারা নৈকট্য হাসিল হবে না । ) এমনকি আমি তার হাত হয়ে যাই যার দ্বারা সে ধরে, পা হয়ে যাই যার দ্বারা সে চলে .... ( অর্থাৎ তার সব কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি মত হয় । )
উপর হাদীস দ্বারাও প্রমান হয় আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রথম ও প্রধান উপার ফরজ কাজগুলো। এরপর নফল । তাই নামাজ - রোজা - হজ -জাকাত এসবের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য যতটুকু হাসিল হবে দাওয়াত- তাবলীগ - জেহাদ ইত্যাদীর দ্বারা ততটুকু হবে না , কেননা এগুলো সবসময় ফরজ না।
তাবলীগ জামাতের সমালোচনা ওতার জবাব কিতাবে শায়খ জাকারিয়া খুব স্পষ্ট ভাবে বলেছেন, নিয়মিত নামাজ আদায় জেহাদ থেকে উত্তম। হজরত শায়খ আল্লামা শামীর হাওয়ালাও দিয়েছেন এতে।
ইমান কমার বিষয়টা মূলত গুনাহর সাথে সম্পর্ক যুক্ত ।
শরীয়তে ইমান কমার বিষয়টা প্রথমত গুনাহর সাথে সম্পর্ক যুক্ত । কোন বান্দা যখন কোন গুনাহ করে, তখন অন্তরে একটি কাল দাগ পরে ।
তওবা করলে সেটি আবার দূর হয়ে যায়। আর তওবা না করলে সেই দাগ থেকে যায় । এমতবস্হায় আবার গুনাহ করলে আবার কাল দাগ পরে। এভাবে গুলাহ করতে থাকলে (তওবা ছাড়া) অন্তর একেবারে কালো হয়ে যায় ।
এরূপ অন্তরে ইমানের শক্তি একদম কমে যায় ।
ভাল কথা - কাজ তখন অন্তর গ্রহণ করে না। এটাই ইমানহীনতা বা ইমানের শক্তিহীনতার অবস্হা।
ইমানের নুর কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ গাফলত
হজরত মুয়াজ রা: এর উক্তি 'নু'মিনু সায়াতান' - এর ব্যাক্ষায় বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যক্ষা গ্রন্হ ' নসরুল বারী' তে উল্লেখ আছে, হযরত মুয়াজ রা: পরিপূর্ণ ইমানদ্বার ছিলেন । তবে কোন ব্যস্ততার কারণে হয়ত গাফলত এসেছিল তাই তিনি জিকরুল্লাহ দ্বারা সে গাফলত দূর করে ইমানের নূর বাড়াতে চাইছিলেন।
এ থেকে বুঝা যায় গাফলতের দ্বারা ইমানের নূর কমে যায়, সেটা আবার আল্লাহর জিকিরের দ্বারা ঠিক করা যায়, একেই সাহাবী ইমান আনা - বলছেন ।
দাওয়াত না দিলে ইমান কমে যাবে ?
অনেক বলেন দাওয়াত না দিলে ইমান কমে যাবে । যে সব ক্ষেত্রে সৎ কাজের আদেশ - অসৎ কাজের নিষেধ বাধ্যতা মুলক, সে সব ক্ষেত্রে তা না করলে ইমানের বিশেষ ক্ষতি হবে । যেমন কারো সামনে অন্যায় কাজ হলে তার যদি বাধা দানের সামর্থ থাকে, আর সে বাধা না দেয়, তার ইমানের বিশেষ ক্ষতি হবে । আর সামর্থ না থাকলে ঘৃণা করতে হবে, যেটা ইমানের শেষ দরজা! সুতরাং যে সব স্হানে 'সৎ কাজের আদেশ - অসৎ কাজের নিষেধ বধ্যতামুলক নয়' সেখানে দাওয়াত না দিলে ইমান কমে যাবে তা বলা যায় না ।
শায়খ জাকারিয়া চাচা হজরত ইলিয়াস রহ: এর কাছে পড়তেন।
তিনি চাচার একটা কথা নকল করেন, জাকারিয়া ! তুই ৬ সপ্তাহ কথা বন্ধ কর, আমি তোকে ওলী বানিয়ে দিব ! এই ঘটনায় ওলী হওয়ার উপায় দাওয়াত না বরং চুপ থাকা ! দাওয়াত না দিলে যদি ইমান কমেই যায়, তবে ৬ সপ্তাহ চুপ থেকে তো কারো পক্ষে ওলী হওয়া সম্ভব না! ( হায়াতে শয়খুল হাদীস জাকারিয়্যা রহ: ) - আবুল হাসান আলী নদভী, অধ্যায় : শায়েখের শিক্ষা জীবন ।
দাওয়াত না দিলে যদি ইমান কমে যেতো তবে তো ৬ সপ্তাহ চুপ থাকার দ্বারা বেলায়েত হাসিল করিয়ে দেওয়ার কথা হযরত ইলিয়াস রহ: বলতেন না!
ইমান বিষয়ক একটি প্রচলিত ভুল : হিজরত ছাড়া, ইমান পূর্ণ হয় না, ইয়াক্কীন তৈরী হয়না।
হিজরত খুবই গুরুত্ব পূর্ন একটি আমল । যদি কোন স্হানে ইমান - ইসলাম নিয়ে বাচা সম্ভব না হয় তবে সে স্হান ত্যাগ করে মুসলমানী জীবন জাপন করা সহজ সেখানে চলে যাওয়া জরূরী । একে হিজরত বলে।
হিজরত ফরজ হয়ে গেলে, ফরজ হিজরত না করলে ইমান ত্রুটিযুক্ত হবে। হিজরত নির্দিষ্ট ভাবে ফরজ না হলে, কাউকে একথা বলা যাবে না যেহেতু সে হিজরত করে নি সুতরাং তার ইমান পূর্ণ না !
ইসলামের শুরু যামানায় মক্কা শরীফে রসুল ও সাহাবাদের ইসলাম মানা এমনকি বেচে থাকা অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল, তখন হিজরতের নির্দেশ আসে । মুসলমানদের জন্য তখন হিজরত করা ফরজ ছিল । এই নির্দেশ মক্কা বিজয় পর্যন্ত ছিল, মক্কা বিজয়ের পর হিজরতের এই নির্দেশ রহিত হয়ে যায় ।
হিজরত ছাড়া যদি ইমান পূর্ন না হয় তবে প্রশ্ন আসে, মক্কা বিজয়ের পরে যারা ইমান কবুল করেন তাদের ইমান কি পূর্ণ হয় নি ? আনসার সাহাবাদের ইমান কি পূর্ণ ছিল না ? হযরত খাদীজা রা: , হযরত সুমাইয়া রা: ওনাদের মত মহিয়ষী নারী রা তো হিজরতের আগেই এন্তেকাল করেছেন, ওনাদের ইমান কি পূর্ন ছিল না ? হযরত আবু বকর - ওমর - আলী রা: ওনাদের ইমান কি মদীনা শরীফে হিজরতের আগে পূর্ন হয় নি ? এক্কীন তৈরী হয় নি ?
কেবলমাত্র ফরজ হিজরত কেউ বিনা ওজরে না করলেই তার ইমান ত্রুটিযুক্ত হবে, অন্যথায় ঢালাওভাবে ' হিজরত না করলে ইমান - এক্কীন পূর্ণ হবে না '- এ কথা বলা ঠিক হবে না ।
বিশেষ ভাবে ইমান বৃদ্ধির উপায় হচ্ছে, গুনাহ থেকে ফিরে আসা । গুনাহ ত্যাগ করা ।
গুনাহ ত্যাগের দ্বারা যেরকম ইমান বাড়বে তা আর কোন কিছুতেই পাওয়া যায় না! মেশকাত শরীফে কিতাবুন নিকাহতে একটি হাদীসে আছে, যে নজরের হেফাজত করবে আল্লাহতায়ালা তাকে এমন ইমান দান করবেন যে সে তার মিষ্টতা অন্তরে অনুভব করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।