এইখানে শায়িত আছেন বাংলা ব্লগ ইতিহাসের কলঙ্ক...
আগের পর্ব (২য় পর্ব: রাখাল বালকের অপেক্ষা): View this link
১ম পর্ব (B-3/A-7)View this link
পুরো সকাল গেল দৌড়োদৌড়িতে। কিন্তু এতোকিছুর পরও এখন এই মুহূর্তে রক্ত-ধমনী গরম করা তরুণীর পাশে বসে, তারই বাসাতে, তারই মায়ের রান্না করা খাবার দিয়ে দুপুরের খাওয়াটা সারতে অসাধারণ - মানে কেমন যেন লাগছিল! আস্ত একটা সকালের প্রচেষ্টায় তরুণীর বাসার ডিশ কানেকশন, নেট কানেকশনসহ অন্যান্য প্রায় সব সমস্যা মোটামুটি ঠিক করা গেছে। যে আমি নিজের বাসায়ও এইসব কাজে কোনদিন হাত দেই নাই, সেই আমি কিনা অন্য একজনের জন্য জীবন হাস-ফাঁস করা শ্রম দিলাম – খুব জানি কেমন কেমন লাগছিল। তার ওপর গতরাতে ঘুম হয়নি একটুও। হবে কিভাবে? কাল রাতে শুধু ছাদেই না, চিন্তা-ভাবনার প্রায় পুরোটা জুড়েও ছিলো শুধুই এক তরুণী।
ইচ্ছে ছিল পুরো রাতটা ছাদেই কাটাবো- যদিও জানতাম সম্ভব নয়। ইশশ, কি খুশিই না হয়েছিলাম যখন তরুণী ফোন করে জানায় সে ছাদেই আছে! আহা! যেন প্রেমরাজ স্বয়ং স্বর্গ থেকে নেমে এলেন আমাদের গিঁট বাঁধতে। ছাদে গিয়ে ফ্ল্যাটের আমেরিকা ফেরত সেই আঙ্কেলকে দেখে একটু দমে গেলেও পরক্ষণেই তার দ্রুত প্রস্থান ধমনীতে রক্ত প্রবাহ আরো বাড়িয়ে দিলো। নিজেকে কেমন যুবরাজ-যুবরাজ মনে হচ্ছিলো, আর সামনে দাঁড়ানো তরুণীকে রাজকন্যা।
যেহেতু রাজবংশীয় লোকজন, তাই শখটাও আকাশছোঁয়া।
কেন জানি হঠাৎই একটু উঁচুতে উঠার শখ হলো দু’জনেরই, তাও প্রায় একই সাথে। তরুণীর চোখ পড়লো এই ছাদে আমার সব থেকে প্রিয় ও ভয়ের জায়গায় - পানির ট্যাংকের ওপরে। নাছোড়বান্দা তরুণী ওঠার ইচ্ছেটা আমাকে জানালো। আমার কোন সমস্যাই তো নেইই, উল্টো বরং খুশি।
কেন জানি হঠাৎ করেই ‘মার্ডার’ ছবিতে ইমরান হাশমি আর মল্লিকা শেরাওয়াতের পানির ট্যাংকের ওপরের সেই সিনটার কথা মনে পড়ে গেল।
যদিও বিষয়টা এমন না যে এই সিনটা আমার বিশেষ পছন্দের। কিন্তু কেন জানি এখন মনে পড়াতে আমি ফিক করে হেসে দিলাম। হাসি দেখে তরুণীর প্রশ্নবাণ:
- “হাসছো কেন?”
- “না না, এমনিই। চলো ওপরে উঠি। ”
- “ওপরে উঠবা মানে..!! কি বলো এইসব??”
- “উফফ! কথা ধরো ক্যান? আমি আগে উঠে, তারপর তোমাকে হাত দিচ্ছি...”
- “হাত দিবা মানে? এসব কি?”
- “হাত না দিলে উঠবা কিভাবে?”
- “উঠতে হলে কি হাত দিতে হয় নাকি?”
- “হ্যাঁ...”
- “কোন দরকার নেই, আমি নিজে নিজেই উঠতে পারি...”
একচোট হাসলাম দু’জনেই।
সেই সাথে গভীর একটা সত্য আবারও উপলব্ধি করলাম। তবে চিন্তায় ছেদ পড়ে...
- “বললা না? তখন হাসলা কেন?”
- “আরে, কিছু না এমনি...”
- “আমি Guess করি?”
- “করো। ”
- “তোমার কি কোন ম্যুভি সিনের কথা মনে পড়েছে?”
মুখ হা করে ওর দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই আবার একটু হেসে স্বাভাবিক হয়ে যাই। নাহ্! এখন আর এতোটা অবাক হওয়া মানায় না। রিলেশনের প্রথম ক’দিন এমন অবাক তরুণী আমাকে অসংখ্যবার করেছে।
যদিও এখনও ১৫ দিনও হয়নি, তবু ব্যাপারটা কেমন জানি স্বাভাবিক বলেই মনে হয়।
শেষমেষ কসরত করে ট্যাংকের ওপরে ওঠা হলো। আমার আর তরুণীকে ‘ওঠানো’র প্রয়োজন পড়েনি। তরুণীই নিজ দায়িত্বে কসরত করে উঠে গেলো:
“চলো ওই দিকটায় পা ঝুলিয়ে বসি...” – ছাদের সবচেয়ে দুর্গম ও রেলিংহীন জায়গাটি দেখালো তরুণী। আমি পারতপক্ষে ওদিকটাতে যাই না, বসা তো দূরে থাক।
আমি উচ্চতা ভয় পাই, ঠিক তা না। কিন্তু ভয়টা খোলা যায়গা দিয়ে নিচে দেখতে। তরুণীকে সে কথাটা জানাতেই সে কুটিকুটি, As if আমার এমন ভয় পাওয়াটা খুবই হাস্যকর।
- “এ কি অবস্থা তোমার! পা ঝুলিয়েই বসতেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে? তুমি করবা প্রেম? হি হি হি... আচ্ছা শোন, আমি তোমার হাত ধরে রাখবো... OK?
তরুণীর তাচ্ছিল্যেই হোক, খিলখিল অপমাণজনক হাসিতেই হোক বা হাত ধরার নিমন্ত্রণেই হোক- একটু আগের ভয়টা কোথায় যেন উবে গেলো। তরুণীর সাথে পা ঝুলিয়ে বসে গেলাম ছাদের ভয়ংকরতম স্থানটিতে।
ভেবেছিলাম তরুণীর মুখ দেখেই কাটিয়ে দেবো, নিচে আর তাকাবো না। কিন্তু তা-কি আর হয়। তাকালেই মাথা ঘুরে, এরপর মুখ ঘুরিয়ে আবার তরুণীর দিকে তাকাই। আশপাশের বাড়ির জানালা দিয়ে আসা আলো আর রাস্তা দিয়ে দ্রুত চলে যাওয়া গাড়ির হেডলাইটের আলোর ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা দেখি তরুণীর গালে, অসাবধানী কান-ঢাকা চুলে। ও নিশ্চয়ই খেয়াল করছে আমার বারবার এমন আড়চোখে তাকানো।
যদিও ভাবটা এমন যেন খুব মনযোগ দিয়ে দূরে কিছু একটা দেখছে। ঘাড়ের ওপর কানের নিচে যে যায়গাটায় এসে চুল শেষ হয়, সেখানে হাতটা খুব রাখতে ইচ্ছে করছে। জানি, হাতটা রাখলে তরুণী আমায় হয়তো কিছু বলবে না। কিন্তু আমি আসলে ঠিক সেই মুহূর্তটার অপেক্ষায় – যখন আলাদা করে মনে এই চিন্তাটাও আসবে না, বরং হাতটা আপনিই চলে যাবে। সেই অসাবধানী মুহূর্তটার অপেক্ষায় আমি।
মুঠোবদ্ধ আমার হাতটাকে হঠাৎই আরো শক্ত করে ধরে ফেলে তরুণী এবং একটা অচিন্তনীয় প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে – “আচ্ছা, ধরো আমি এখন এখান থেকে নিচে পড়ে গেলাম... তুমি কি করবে?” আমি বললাম – “পড়বা ভালো কথা, কিন্তু পড়ার আগে আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ো.... আমাকে নিয়ে পড়তে চাও নাকি? By the way, আর কতো নিচে নামবা?”
তরুণী মনে হয় একটু হতাশ হলো। এই মুহূর্তে ঠিক এই উত্তরটা হয়তো সে আশা করেনি, আরেকটু প্রেমময় কিছু Expect করছিলো। শিট! কি করলাম আমি? এমন একটা নিখুঁত মুহূর্ত এভাবে ভেস্তে দিলাম? না জানি কি একটা ভয় ঢুকে গেলো মনে। মনে হচ্ছিলো শরীরের সব রক্ত ওপর থেকে নিচে বয়ে কোথাও চলে যাচ্ছে। তরুণীর হতাশার পরিমাণটা যে একটু না, বরং অনেক – সেটা বুঝলাম হাতটা ছেড়ে হঠাৎই উঠে সে পনির ট্যাংকের অন্য এক কর্নারে চলে যাওয়ায়।
বুকে দু’ হাত জড়িয়ে ওর দাঁড়ানো দেখে মনে হলো যেন গভীর রাতে নদীর বুক ভেঙে চলা কোন লঞ্চের ডেক এটা। আর আমার তরুণী সেই লঞ্চের একমাত্র জেগে থাকা যাত্রী।
আমি বসা থেকে উঠলাম। অবিচলিত তরুণীর পাশে দাঁড়াতে গিয়েও থামলাম। হঠাৎ কি মনে হলো - পেছন থেকে হাত দু’টো সামনে এনে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
মুখটা সামনে এনে চিবুক তরুণীর কাঁধে রাখলাম। বুঝলাম তরুণী মোটেও অবাক হয়নি। বরং অনেকটা নিশ্চিন্ত চিত্তে আমার মাথার পেছনে ওর একটা হাত রেখে মুখটা ঘুরানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না – বাধা হয়ে দাঁড়ালো আমার নাক। নাহ্! এবার আর আলাদা করে কিছু চিন্তা্ও করা লাগলো না।
বাকিটা বললো - অসাবধানী ঠোঁট আর প্রায় ২০ সেকেন্ড আটকে রাখা নিঃশ্বাস।
বলা হয় কিছু কিছু বিশেষ সময়ে নাকি মানুষের সময় জ্ঞান লোপ পায়। দীর্ঘ সময়কেও অল্প বলে মনে হয়, অল্প সময়ও অনেক বেশি বলে জ্ঞাত হয়। তবে ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ বলে, আরেকটা জিনিসও হয় - কাল বা Tense জ্ঞান লোপ পায়। অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যত সব মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।
“এই মুহূর্তে আমি তরুণীকে Kiss করছি” - ভাষাবিদরা হয়তো বলবেন, “বৎস, ইহা Present Continuous Tense – উরফে ঘটমান বর্তমান। সম্পূর্ণ ঠিক! আমি একমত তাদের সাথে। ‘প্রেজেন্ট’ই বটেই, মধুময় এক ‘উপহার’। কিন্তু জানেন কি, “এই মুহূর্তে আমি তরুণীকে Kiss করছি” – এটি Future Perfect Tense-ও বটে। কি করে? বসন্তের অবাধ্য বাতাস, শরীরের জ্বর-জ্বর ভাব, উষ্ণ আলিঙ্গনে জড়ানো তরুণী আর চোখ বন্ধ করে তার শেষ নির্যাসটুকুও শুষে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা – সব মিলিয়ে নিজেরদের Future-টা যে বড্ড Perfect লাগছে আমার।
“উহ্..”
না, উত্তেজনার বশে তরুণী বা আমার করা কোন মিহি চিৎকার নয়। তরুণীর বাসার খাবার টেবিলে বসে, গত রাতের কথা ভাবতে ভাবতে রুই মাছের লম্বা একটা কাঁটা দাঁতের গোড়ায় খোঁচা দিলো। মনে করিয়ে দিলো, “Accidents do happen...। ” যখন বিপদ আসে তখন Future Perfect এর স্বপ্ন দেখানো Present Continuous গুলোও খুব সহজেই Present Indefinite হয়ে যায়। তরুণী টেবিলের নিচে পা দিয়ে খোঁচাচ্ছেন।
কিন্তু তার ভাবখানা দেখে বোঝার উপায় নেই, অনেক বেশি নিষ্পাপ ওই চেহারাটা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।