এইখানে শায়িত আছেন বাংলা ব্লগ ইতিহাসের কলঙ্ক...
যেদিন বিকেল ৪টা থেকে অফিস, সেদিন দুপুর ১টা থেকে ২টার মাঝের সময়টায় খুবই বিরক্ত লাগে। না মন দিয়ে কোন কাজ করা যায়, না কোন কিছু নিয়ে ভাববার সময় থাকে। তার উপর একটু পর বাসা থেকে বের হয়ে বাস ধরে একরাশ জ্যাম পারি দিয়ে অফিসে যেতে হবে - এ ভাবনাটার চাইতে বেশি আর কোন কিছু আমাকে ভাবায় না। এই একই জ্যামজনিত কারণে, যেদিন সকালে শুরু হয়ে বিকেলে অফিস শেষ হয় সেদিন আর বাসায় যেতে ইচ্ছে করে না। কতো মানুষ ফাজলামো করে বলে... "ইশশ! যদি একটা হেলিকপ্টার থাকতো... উড়ে উড়ে অফিস আসা যাওয়া করতাম..."।
ব্যাপারটা ভেবে মুচকি মুচকি হাসি পেলো। বর্তমান ঢাকার যে অবস্থা তাতে এক মুঠো জমি পাওয়ার চেয়ে অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে বিয়ের স্বপ্ন দেখা সহজ; একের পর এক প্রাইভেট ভার্সিটির ক্যাম্পাস গড়ে উঠছে ধানক্ষেত-কাশবনের ভেতর। আর সেই শহরে আমি আস্ত একটা হেলিকপ্টার ল্যান্ড করানোর যায়গা খুঁজছি। হাস্যকর!
ভাবতে ভাবতে ৩টা বাজে। মাঝে একটা সুখবর পেলাম।
আজ আর বাস নয়, আব্বাজানের কল্যাণে বাসার গাড়িটা জুটছে। সুতরাং, দৌড়ে-দৌড়ে বাসে ওঠা থেকে রেহাই। তবে জ্যাম কি আর পিছু ছাড়ে। একদম জেঁকে বসলো মৌচাকের মোড় থেকে। গাড়িতে বসে ভুরু কুঁচকে অর্ধঘর্ম অবস্থায় রাস্তার পাশের দোকানগুলোর ব্যানার পড়তে ব্যস্ত- এমন সময়ই ঘচাং করে ফোনটা বেজে উঠলো।
পরিচিত রক্তধমনী কাঁপানো এক তরুণীর ফোন, ইদানিং চিন্তা-চেতনায় যাকে বেশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। কলটা ধরে আমার স্বভাবসুলভ 'রিপোর্টিংয়িও' ভঙ্গিতে বললাম-
- "হ্যালো..."
- "কোন দিকে হেলবো?"
- "ডিপেন্ড করে..."
দু' পক্ষ থেকেই হাসি। পুরনো ব্যক্তিগত জোক। তবে এখনও প্রতিবার কার্যকর।
- বললাম, "কই তুমি...?"
- "কই আর থাকবো? বাসায়! তুমি তো এখনও ঘরে তুললা না..."
- "ঘরে তোলার প্রশ্ন আসছে কেন? যে চাকরী করি এবং তাতে যে পরিমাণ সময় দিতে হয়, তাতে তোমাকে তুললে আমার অফিসেই তোলা দরকার।
ঘরে তুলে টাইমে পোষাবে না। "
- "ফাইজলামি বাদ... সিরিয়াস কথা..."
- "বাপরে! বলো..."
- "আমাকে একটা বাসা খুঁজে দাও!"
- "মানে কি? বাপেরবাড়ি-শশুরবাড়ি ছেড়ে এ আবার কোন বাড়ি?"
- "আরে ধুর! বাপেরবাড়িই। তবে শিফট হচ্ছে। তোমাদের ওইদিকে একটা ভাড়া বাসা খুঁজে দাও। ৩ বেড, ড্রয়িং-ডাইনিং, ২৫ হাজারের মধ্যে।
"
- "বাড়ি ভাড়া এবং এ সংক্রান্ত কোন বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র কোন ধারণা নাই। জিজ্ঞেস করার জন্য এর চাইতে জঘন্য কোন লোক পাওয়া সম্ভব ছিলো না তোমার জন্য। তবে পাশে নতুন একটা ফ্ল্যাট উঠেছে। ওইটায় এখনও লোকজন উঠছে। কিছু ফ্লোর খালি থাকলেও থাকতে পারে।
By the way, ওই বিল্ডিং যখন হয়- তখন আগুন লেগে Almost আমাদের নিয়া পুড়তে বসছিলো। তুমি ঐ ফ্ল্যাটে উঠলে জীবনে নতুন কোন কিয়ামত নেমে আসবে কে জানে..."
- "ওই ফ্ল্যাটে নিশ্চয়ই কোন সুন্দরী মেয়ে নাই? আরে সে অভাব পূরণ করতেই আসেতেসি। তুমি খালি দেখোইনা। এর আগে চুলার আগুনে জ্বলছে, এইবার জ্বলবে আমার রূপের আগুনে..."
- হাহ! "Don't flatter yourself... যাই হোক এইসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না। নিজ দায়িত্বে এসে খোঁজ খবর নিয়ে যেও।
"
পাশ থেকে আমার উৎসুক ড্রাইভার এতোক্ষণ ধরে কিছু একটা বলতে চাইছিলো। ছোট্ট একটা কাশি দিয়ে এবার বলে ফেললো - "মামা আপনাগো বিল্ডিংয়ে ৭ তলাই তো খালি আছে। এই ১ তারিখ খালি হইলো। "
ব্যাটা কয় কি? নিজের মান-সম্মান যাওয়ার মতো অবস্থা প্রায়। নিজের বিল্ডিংয়ের খবর আমার আগে ড্রাইভার জানে, যে কিনা এখানে থাকেও না।
অবশ্য বাবার মতে আগামীকাল ভূমিকম্প হলে ড্রাইভার আর বুয়ারা নাকি সেটাও জানবে। ডিজিএফআইও ফেইল, এমনই ভয়ংকর চিজ এরা! যাই হোক, আমার এমন তথ্যগত অক্ষমতার জন্য, ওপাশে তরুণীর কাছে জবাবদিহির আগেই ড্রাইভার জানালো ফ্ল্যাটটা তরুণীর মনের মতোই- ৩ বেড, ড্রয়িং-ডাইনিংয়েরই। ভাড়াও পারফেক্ট - ২৫ হাজার।
- আমি তরুণীকে বললাম, "এতো দেখি সেইরকম ব্যাপার! বাপেরবাড়ি-শশুরবাড়ি মিলে-মিশে Merge হয়ে যাবে দেখছি। "
- "তাইতো দেখছি।
ভয়ংকর! এভাবে মিলে কি করে? আচ্ছা, তুমি আরেকটু খোঁজ-খবর নিয়ে দাওনা। আমি কিন্তু সিরিয়াস। তেমন হলে আব্বুকে আজ রাতেই বলবো। এসে দেখেও যেতে পারি একদিন......"
ফোনের ওইপাশে তরুণী বলে যাচ্ছিলো। আর এইপাশে আমি... বুক ঢিপঢিপ... ঢিপঢিপ... অজানা সব সম্ভাবনা আর সুযোগ মনে লাফালাফি করছে।
- বললাম, "তুমি বুঝতেসো ব্যাপারটা কি হবে? ধরো তোমার-আমার রিলেশনের কোনদিন পজেটিভ কিছু হলো। আমাদের বাপ-মা'র কনভারসেশনটা একবার চিন্তা করো শুধু... জ্বী বেয়াই সাহেব, মানে ওরাতো একজন আরেকজনকে পছন্দ করেই। তাই বলছিলাম আমাদের প্রতিবেশীর সম্পর্কটাকে আসুন এবার আত্মীয়তা রূপ দেই। আসছে শুক্রবার আমাদের মেয়ে আর আপনাদের ছেলে... 'প্যাঁ-প্যাঁ-প্যাঁ-প্যাঁ-প্যাঁ--প্যাঁ--প্যাঁ' শানাইয়ের আওয়াজ।
- "আহাহা....সুখ! সুখের ঠেলায়তো বাঁচতেসো না! মানে...."
- “চুপ থাকো! বিয়ের কতো খরচ বাঁচায় দিতেসি বুঝতেসো? বউ গাড়ি করে না, বাড়িতে আসবে লিফটে করে।
"সুহাগ রাত হ্যায়, ঘুঙ্ঘাট উঠা রাহা হুঁ ম্যায়...!"
গানটায় খানিকটা সুর মিলিয়ে আপনা হেসেই বলতে লাগলো তরুণী...
- "আর আমিতো এই বাসায়ও এমনিতেই সময়ে-অসময়ে ছাদে পড়ে থাকি। নতুন বাসায় উঠে রোজকার কাজ হবে রাতে খাওয়ার পরে ছাদে হাঁটা। বুঝতেসো ব্যাপারটা?”
- "আমিও বাসায় বলবো। অনুসন্ধিৎসু চক্রে যোগ দিচ্ছি। তাই রোজ রাতে ছাদে উঠবো তারা দেখতে।
হেঁ হেঁ হেঁ..."
- "দারুণ!!"
- "দেখসো! বলছিলা বাসায় তুলি না কেন? এখন তুমি তো তুমি, তোমার পুরা ফ্যামিলি শুদ্ধা তুলতেসি! আর যেহেতু আমি থার্ড ফ্লোরের B-তে আর তুমি সেভেন্থ ফ্লোরের A-তে, সুতরাং বলতে পারো মাথায় তুলেই রাখবো। "
- "ওই! অফিস নাই? কাজ-কাম নাই? কাঁঠালের দিন আসতে এখনও অনেক বাকি! গোঁফে তেলটা পরে লাগালেও চলবে। "
- "গোঁফই নাই, তার আবার তেল। অন্য কোথাও!"
- "উফফফফ! বাই!!"
- "ওকে বাই!"
ফোনটা রাখলাম। ততোক্ষণে মাথা ভর্তি নতুন এক পোস্টের আইডিয়া।
নাম হবে: "B- 3 আর A-7 এর প্রেম"। শুনতে কেমন জানি সায়েন্স ফিকশন-ফিকশন মনে হচ্ছে। যেন কোন দুই রোবটের নাম!
যাক! মগবাজার ওভারব্রিজ পার, অফিস পৌঁছাতে আর মাত্র ১০ মিনিট।
('চলবে' মানে? 'দৌড়াবে')
পরের পর্ব (২য় পর্ব: রাখাল বালকের অপেক্ষা): View this link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।