আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাড়াটে প্রেমিকা! (২য় পর্ব: রাখাল বালকের অপেক্ষা)

এইখানে শায়িত আছেন বাংলা ব্লগ ইতিহাসের কলঙ্ক... ১ম পর্ব না পড়ে এটি পড়লে হয়তো কিছুই বোঝা যাবে না। ১ম পর্বের লিংক: View this link সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো। আমার ঘুম মানে হলো সর্বোচ্চ ২-৩ ঘণ্টা। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে যে কথাটা মনে পড়ে সেটা হলো - কতো কম ঘুমাই আমি। কোন এক অদ্ভূত কারণে এটা নিয়ে আমার প্রচণ্ড গর্ব।

কিন্তু আজ আর এ কথাটা মনে হলো না। তার আগেই দিনটার বিশেষত্ব মনে পড়ে গেলো। আমার অফিস আজ ছুটি, কিন্তু তার চাইতেও বড় কথা- আজ যে তরুণীর এ বাসায় ভাড়াটিয়া হয়ে ওঠার কথা। ঘড়িতে ১০.২০। কাল রাতের পরিকল্পনায় খুব বড় কোন পরিবর্তন না এলে এখন ওদের মালপত্র গাড়িতে তোলার কথা।

কল দেয়ার জন্য মোবাইলটা হাতে নিতেই ঘচাং করে শব্দ। তরুণী ফোন দিয়েছে। কেটে দিলাম। এই অভ্যেসটা অনেকদিনের। পরিচিত মানুষগুলোর কল কেটে ব্যাক করতে এখন অবস্থা এমন যে সেদিন নিজের বাবার কলটাও কেটে দিয়েছিলাম।

“টুট... টুট... টুট...” - গালি না... রিং হয়... - ফোন ধরতেই রিপোর্টিংয়িও ভঙ্গিতে বললাম- “হ্যালো। ” - “হেলেই তো আছি। ” - “কি ভয়ংকর কথা, কোন দিকে?” - “বেডে...” - “মানে? তোমরা এখনও বের হও নাই?” - “পিকআপে মালপত্র তোলা হইসে। আব্বু জানি কই গেছে। এলেই বের হবো।

” - “আরে! তাড়াতাড়ি আসো!” - “কেন তাড়াতাড়ি এলে কি করবা?” - “এতো শর্ট নোটিশে কি আর কিছু করা যায় বলো? করতে হলে সময় লাগে। ” - “ওই! চোপ! আমাকে রেডি হতে দাও! আর শুনো, নতুন বাসায় উঠে ১ সপ্তাহ দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ থাকবে। ” - “কেন??” - “এমনি...” - “এমনি মানে কি? বলো কেন?” - “গরম কড়াইয়ে পানি ঢালার আওয়াজ শুনসো কখনও?” - “হ্যাঁ... কেন?” - “তোমার ‘কেন’-শুনে ঠিক ওইরকম মনে হচ্ছে। ” - “মজা নেও না? উঠো আগে বাসায়, বুঝবা ঠেলা কাকে বলে...” - “ঠেলা...??? কে দিবে? তুমি?” - “ধুরো! যাও রেডি হও! বাই!” - “বাই...” তরুণের জীবনের এরপরের ৪টি ঘণ্টা দারুণ অস্থিরতায় কাটে। যতোবার বাসার কলিং বেলটা বেজে উঠেছে, ততোবারই দৌড়ে গেছে দরজা খুলতে।

বাবা-মা ভেবেই পাচ্ছে না- যে ছেলে এক গ্লাস পানি ঢেলে খেতে সহজে ঘরের অপর প্রান্তে যায় না, সে কেন বারবার দরজা খুলে দিচ্ছে। কেনই বা একটু পর পর আপাতদৃষ্টিতে কোন কারণ ছাড়াই সে ডাইনিং হলে হাঁটাহাঁটি করছে এবং শেষ পর্যন্ত বিচরণের কারণ দেখানোয় ব্যর্থ হয়ে ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে খাচ্ছে। তরুণী মাঝে বাবাসহ এসে ফ্ল্যাট দেখে গিয়েছিলো। সেদিন আমাদের বাসায়ও এসেছিলো। বাকি কথা হয়েছে অবশ্য ফ্ল্যাট মালিকদের সাথেই।

এ বাসায় ওঠার সিদ্ধান্ত ফাইনাল হওয়া আর কথা ঠিকঠাকে কেটে যাওয়া মাঝের এই সময়গুলো তরুণের আজকের দিনের চাইতেও বেশি অস্থির কেটেছে। তবে সে অস্থিরতায় উৎকণ্ঠা আর “কি হয়... কি হয়...” টাইপের একটা অনুভূতি ছিলো। আজকের অস্থিরতাটা কিছুটা অনেক দিন ধরে চাওয়া কোন গিফট হঠাৎই পেয়ে যাওয়ার মতো। পেলে কি করবো সেই সব বুদ্ধি আঁটতে-আঁটতে অনেকটা সময় চলে গিয়েছে। এখন যখন সত্যিই কিছু ঘটার সময় এসছে- কিছু আর মাথায় আসছে না।

শেষ পর্যন্ত যখন বিকেল সাড়ে ৩টায় যখন শেষমেষ তরুণীর আগমনী বার্তায় কলিং বেল বেজে উঠলো ততোক্ষণে বার বার দরজা খুলে ধরা খাওয়ার আমার অবস্থা ওই রাখাল বালকের ‘বাঘ আইলো’গল্পের মতোই। দরজা খুলে দিয়েছেন মা। নিজের ঘর থেকে চিরচেনা মিষ্টি গলায় কথোপকথনের টুকরো শুনতে পাচ্ছিলাম- “জ্বী, আন্টি... আমরা আজকেই পুরোপুরি উঠে যাবো...”... “আব্বু-আম্মু ওপরে, অনেক টায়ার্ড”...“অনিন্দ্য কি ঘুমাচ্ছে...?”... ঘুমানোর কথা শুনেতো ভেতরের সিংহ জেগে উঠলো! নাহ্! আর বসে থাকা যায় না। নিজের ঘর থেকে ড্রয়িং রুমটা পেরিয়ে বাসার দরজার দিকে তাকালাম। তরুণী এদিকেই আসছে।

এখনও দেখেনি আমাকে। নিজের ঘরে ঢুকে অপেক্ষা করবো নাকি? আমার ঘরে ঢোকার সাহসটা সে দেখাবে কি? কিন্তু না, ব্যাটে বলেতো হলোই না- উল্টো ওয়াইডে চার! কিন্তু নিজ ঘরের দোরাগোড়ায় আমাকে দাঁড়ানো দেখার পর তার বেশ সাবধানী ব্যাটিং। ড্রয়িংরুমের সোফার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে সেখানেই আপাতত ঠাঁই নিলো। কি আর করা? সিংহ মশাইকেই তার গুহা ছেড়ে বের হতে হলো। - জিজ্ঞেস করলাম: “কি খবর? আসলা কিভাবে?” - “কি মনে হয়? রকেটে!” - “খুব মজায় আছো মনে হয়?” কারেন্টটা চলে গেলো।

ক্রিম কালারের পর্দা ভেদ করে বাইরে থেকে যে আলোটা আসে সেটাকে সোনালিই বলা যায়। খুব বুঝতে পারছি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমে একটা অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে আসবে। তা অবশ্য হলো না। তার আগেই ওর ফোন বেজে উঠলো- - “হ্যাঁ, আব্বু?... এইতো অনিন্দ্যদের বাসায়... ওকে... ওকে... আমি আসছি...” ফোন রেখে তরুণী আমার দিকে ঘুরে একটু হাসলো- - “যেতে হবে...” - “ওকে যাও... ফোন দিও... অনলাইনে এসো...” বিকেলে শেষ আলোর সাথে তরুণীও বিদায় নিলো। বিকেল বেলা খুব একটা বাসায় থাকা হয় না।

আগে যখন ভার্সিটির ক্লাস থাকতো তখন টানা এক বছর শুধু বিকেলে অফিস করেছি। আর তাই বিকেল দেখতে কেমন বা বিকেলে ঘুম জিনিসটা কি তা প্রায় ভুলতে বসেছিলাম। আজ কেন জানি বিকেলের ঘুমটা বেশ পাচ্ছে। বিছানায় শুয়ে বুঝতে পারলাম- সবকিছুই খুব অনুকূল। ঘুম একটা না দেয়া খুবই অন্যায় হবে... ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।

উঠে দেখি ঘড়িতে ৯.৫০! খুব ভালো ঘুম হওয়ার কিছু লক্ষণ আছে। এর মধ্যে একটি হলো দিবাভাগ সম্পর্কে ধারণা লোপ পাওয়া। আমারও পেয়েছিলো। তাই জোনালা ফাঁক করে বাইরে একবার দেখে নিয়ে নিশ্চিত হলাম এটা রাত ৯টা ৫০, সকাল নয়। আর তার ঠিক পরপরই মনে হলো তরুণী কি করছে এখন? নতুন বাসায় নিশ্চয়ই কিছুটা Bore হচ্ছে।

মা খেতে ডাকছে। সারা না দিয়ে উপায় নেই। ডিনার শেষ করে এলাম। অনলাইনে গেলাম কিন্তু ওকে পেলাম না। এরপর যেটা হলো সেটা এর আগেও অনেকবার ঘটেছে, তাই এখন দেখে আর অবাক হই না।

ঠিক যখন ফোনটা হাতে নিলাম কল দেবো বলে- ওর কলটা এলো। সাধারণত রিসিভ না করলেও এই কলটা রিসিভ করলাম- শোঁ শোঁ বাতাসের আওয়াজ, একটু থেমে থেমে! বেশ কয়েক সেকেন্ড পর ভেসে এলো ঠাণ্ডা ভয়েস- - “হ্যালো!” - “হুমমম... বলো!” - “কি করো?” - “ডিনার করলাম। ” - “আমি কোথায় বলতো?” - “কোথায়? বারান্দায়?” - “উঁহু! ছাদে...” - “তাই? দাঁড়াও, আমি আসি...” ওপাশ থেকে জবাব আসার আগেই আমি কল কেটে স্যান্ডেল পায়ে চাপিয়ে ২৫ সেকেন্ডের মধ্যে সোজা লিফটে। এইটথ ফ্লোর পর্যন্ত গিয়ে বাকিটা হেঁটে উঠলাম। অন্ধকার ছাদ... বুক ধুকপুক... নিঃশ্বাসের অভাব।

তবে সেটা ঠিক তাড়াহুড়ো করে দৌড়ে আসায় নয়, হয়তো অন্য কোন কারণে। উঠে দেখি একদম ডান দিকের রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে এদিকেই তাকিয়ে তরুণী। আমার আসা দেখে যে হাসিটা দিলো তাকে স্বস্তির হাসি বলা যেতে পারে। আমিও মুখে লাজুক একটা হাসি নিয়ে কাছে গেলাম- - “এ্যাই! দূরে থাকো! বেশি কাছে এসো না। ” - “কেন?” - “ওই যে দেখো...” তরুণী আঙ্গুল দিয়ে দেখানোয় এতোক্ষণে আমার ছাদের অন্য প্রান্তে চোখ গেলো।

A-3 এর এক বিরক্তিকর আমেরিকা ফেরত আঙ্কেল দাঁড়িয়ে। মনে আছে, প্রথম যেদিন রাতে এ বাসার ছাদে উঠেছিলাম সেদিন আমার হাতে বাইনোকুলার দেখে দারুণ শঙ্কা প্রকাশ করে জিজ্ঞেস করেছিলেন- “ওইটা নাইটভিশন নাকি? রাতে দেখা যায়?... সাবধান উল্টাপাল্টা কিছু কোরো না... অন্য বিল্ডিংয়ের মানুষরা দেখলে কি ভাববে?... ফ্ল্যাটের মানসম্মানের বিষয়...!” - ফাউল একটা লোক...! আমি তরুণীর দিকে মুখ আমসে করা একটা Look দিলাম। ও বেশ বুঝতে পারলো সেটার অর্থ। দেখে নিজেও বিজ্ঞের মতো চওড়া একটা হাসি দিলো। যেন মনে মনে বলছে- “আহারে! বেচারা! চুক চুক চুক...!” ওই মুহূর্তে দরকার ছিলো একটা Miracle এর! হলোও তেমন একটা কিছুই।

জানি না কোন এক অদ্ভূত কারণে বিরক্তিকর আঙ্কেল ছাদের অর্ধেকটা এসে দরজা দিয়ে নিচে চলে গেলেন। আমি পেছন পেছন খানিকটা গিয়ে শিওর হলাম উনি লিফটে উঠেছেন কিনা। বীরের হাসি নিয়ে ফিরে এলাম। বুঝলাম প্রেমেশ্বর আজ পূর্ণরূপে বিরাজমান! ('চলবে' মানে? 'দৌড়াবে') আগের পর্ব (১ম পর্ব: B-3/A-7): View this link পরের পর্ব (৩য় পর্ব: রুই মাছের কাঁটা):  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।