কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! একদিন ক্যান্টিনে বসে একা একা চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ আমার ক্লাসমেট পল্টু এসে আমার সামনে ধপ করে বসে পড়ল। বলল, কি করিস?
মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল আমার। শালা দেখতে পাচ্ছে চা খাচ্ছি, তাও আবার প্রশ্ন করছে কি করিস। ক্যান ভাই? চোখে দেখতে পাস না?
কিছু একটা উত্তর দিতে যাব, কিন্তু কিছু বলার আগেই ও বলল, নতুন গল্প টল্পের প্লট ভাবছিস নাকি? এত গম্ভীর কেন?
কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের কথা শোনার চেয়ে নিজের কথা বলতেই আগ্রহী বেশী।
বাংলাদেশে যদি সেরকম একটা জরিপ হত তাহলে পল্টুর নাম সেই লিস্টের প্রথম দিকে দেখা যেত। ওর সাথে কথা বলার সহজ পদ্ধতি হচ্ছে চুপ থাকা অথবা হু হা করা। চুপ থেকে মাথা নাড়িয়ে গেলেও চলে।
ওর আগের প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর আমি দেই নি। কিন্তু পল্টু সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে একের পর এক প্রশ্নে আমাকে বিদ্ধ করতে লাগল।
এবং আমি স্বভাবতই হা হু করতে করতে চায়ের কাপ খালি করতে লাগলাম।
চায়ের দাম দিয়ে উঠতে যাব, এমন সময় পল্টু দুম করে প্রশ্ন করে বসল, আচ্ছা, তুই কি সবসময় কল্পনা থেকে লিখিস? নাকি গল্পে রিয়েল লাইফের টাচ রাখিস?
প্রথমে ভেবেছিলাম উত্তর দেব না। কিন্তু কি ভেবে উত্তর দিলাম। বললাম, বলতে পারিস রিয়েল লাইফটাই কল্পনার মাধ্যমে ফুটে ওঠে। রিয়েল লাইফের বাইরে যাওয়া কোন লেখকের পক্ষেই সম্ভব না।
পল্টু হাসল। বলল, তার মানে তুই একটা ভালো রিয়েল লাইফ স্টোরি পেলেই লিখে ফেলিস?
বলতে পারিস।
নিজের ভাষায়?
অবশ্যই।
আচ্ছা, মুখটা হঠাৎ সামনে বাড়িয়ে পল্টু বলল, আমার নিজের লাইফের একটা স্টোরি আছে। শুনবি?
প্রথমে ভেবেছিলাম, শুনব না।
কে জানে কি বলবে। হয়তো একটা ম্যান্দামারা প্রেমের কাহিনী, বা ওরকম কিছু। ধুত, কি হবে ওর বকবকানি শুনে?
কিন্তু পরক্ষণেই মত পাল্টাতে হল। একটা রিয়েল লাইফ স্টোরি পাবার এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। যদি অনবদ্য সুন্দর একটা কাহিনী পেয়ে যাই? সেটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে পারলেই তো কেল্লাফতে! আগে থেকে কিছুই বলা যায় না।
কি স্টোরি বল।
পল্টু একটু আশ্চর্য হবার মুখভঙ্গি করে বলল, তুই সত্যিই শুনবি? আমার কথা তো কেউ শোনে না। আমি নাকি বড্ড বেশী কথা বলি।
আসলেই যে মানুষটা বড্ড বেশী কথা বলে, তার মুখে এমন কথা শুনলে আসলে আর তাকে প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব হয় না। আমি মনে মনে বললাম, আসলেই তুই একটু বেশী কথা বলিস।
কিন্তু মুখে বলতেই হল, হ্যাঁ শুনব। বল।
এই সময় পল্টুর মোবাইলে কার যেন কল আসল। পল্টু মোবাইল বের করে দেখল। দেখে আস্তে আস্তে ওর মুখটা অস্বাভাবিক রকম শক্ত হয়ে উঠল।
ও ফোনটা ধরল না। রিংটোন বেজে বেজে একসময় কল শেষ হয়ে গেল। আর কল এল না।
আমি ভাবলাম হয়তো কোন এক্স বান্ধবীর কল ছিল ওটা। জিজ্ঞেস করলাম, কে রে?
পল্টু বলল, বাপ।
অবাক হলাম। তাহলে...ফোন ধরলি না কেন?
আমি আব্বার সাথে কথা বলি না।
আরেকটু অবাক হলাম। কেন?
শুনবি? অ্যাকচুয়ালি আমি তোকে আমার আব্বার গল্পই শোনাতে চেয়েছিলাম।
অবশ্যই শুনব।
বল।
তাহলে শোন। এই বলে পল্টু একটা সিগারেট ধরিয়ে তার গল্প শুরু করল।
পল্টুর গল্প, পল্টুর নিজের ভাষায়
আমি একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান।
আমার কোন ভাইবোন নেই।
আব্বা ব্যবসায়ী, আম্মা গৃহিণী। তিনজনের ছোট সংসার আমাদের।
আমার পরিবারে যে খুব একটা অভাব ছিল তা আমি বলব না। আসলে আমার নানার ফ্যামিলিটা খুব ধনী। উনারা আব্বা আম্মার বিয়ের সময় টিভি ফ্রিজ ইত্যাদি যা দেয়া লাগে দিয়ে ঘর ভর্তি করে ফেলেছিলেন।
সেদিক থেকে দাদার ফ্যামিলি ছিল একেবারেই গরীব ধাঁচের। দেয়ার মত তাদের কিছুই ছিল না।
সাধারণত গরীব ফ্যামিলির সাথে ধনী ফ্যামিলির বিয়ে এত সহজে হয় না। কিন্তু আব্বার সাথে আম্মার ঠিকই বিয়ে হয়েছিল, কারণ আমার আম্মার বাঁ চোখে Squint ছিল। সহজ বাংলায় বলতে গেলে, আম্মার বাঁ চোখ ছিল ট্যারা।
উনি যখন সামনে তাকাতেন তখন মনে হত দূরে অন্য কারও দিকে তাকিয়ে আছেন। এই একটা বৈশিষ্ট্যই বিয়ের বাজারে তার দাম অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে দিয়েছিল।
ওদিকে আব্বা সারাজীবনই দুঃখ কষ্টে মানুষ। তার সামান্য আয়ে পরিবারের ছেলেবুড়ো সবার দিন চলে। সবার মুখে আহার জোগাতে গিয়ে নিজের পড়ালেখাটাও চালিয়ে যেতে পারেন নি তিনি।
অনার্সে দুই বছর পড়ে বইগুলো বেঁচে দিয়ে চলে এসেছিলেন গ্রামে। তারপর শুরু করেছিলেন ব্যবসা।
আম্মার বাড়ি থেকেই প্রথম প্রস্তাবটা আসে। বিয়ের প্রস্তাব। আব্বা মেয়ের বাপের বাড়ির অবস্থা শুনেই রাজি হয়ে যান।
যাক, এখন যদি অভাব একটু কাটে।
তো এভাবেই আব্বা আম্মার বিয়ে হয়। আমি হই। এগিয়ে চলে দিন। এগিয়ে চলে আমাদের ছোট্ট সংসার।
প্রত্যেক মানুষের জীবনে একজন আদর্শ থাকে। একজন হিরো থাকে। আমার হিরো ছিলেন আমার আব্বা।
আব্বা আমাকে ছোটবেলা থেকেই কড়া শাসনে মানুষ করেছেন। উনার অভিধানে ক্ষমা বলে কোন শব্দ ছিল না।
মিথ্যা কথা বলে যে কয়বারই ধরা খেয়েছি সে কবারই উনার হাতের মার খেয়ে পিঠে দাগ হয়ে গেছে আমার। মারার সময় উনি কোন কিছু বিচার করতেন না। শুওরের মত মারতেন। আর বলতেন, হারামজাদা মিথ্যা বলা শিখেছে। আমার পোলা মিথ্যা বলা শিখেছে।
আমি একাধিকবার বাসা থেকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রতিবারই ফিরে আসতে হয়েছে আম্মার টানে। আমাকে একদিন না দেখলেই আম্মা অস্থির হয়ে যেতেন। পাগলের মত আচরণ করতেন। আম্মা ঐরকম উদ্ভট আচরণ করছেন এটা কল্পনা করলেই মাথা আমার ঝিমঝিম করে উঠত।
আম্মার বিলাপ যেন আমি অনেক দূর থেকেও শুনতে পারতাম। সে কান্নার শব্দ আমি সইতে পারতাম না। আমাকে ফিরে আসতেই হত।
আব্বা ছিলেন প্রবল নীতিবান একজন মানুষ। যেখানে নানার কাছে হাত পাতলেই অসংখ্য বিলাস ব্যসনে ভরে যেতে পারত আমাদের ঘর, হাসি ফুটতে পারত আমার ও আম্মার মুখে, সেখানে উনি আত্মাভিমানে কখনই আমাদের জন্য নানার কাছে হাত পাতেন নি।
যা নিয়েছেন সবই তার বৃদ্ধ বাবা, মা আর ছোট ভাইবোনদের জন্য। নিজের জন্য নেন নি একটা পয়সাও।
নানা তাকে অনেক বড় বড় ব্যবসা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। প্রচুর মূলধন দেবার অপ্রতিরোধ্য লোভ দেখিয়েছিলেন একমাত্র জামাইকে। কিন্তু শ্বশুরের কথায় কান দেন নি আব্বা।
তার কাছে নানার ব্যবসাগুলোকে ঠিক সৎ বলে মনে হত না। আব্বার কানে খবর এসেছিল যে নানার ব্যবসা হচ্ছে সুদের ব্যবসা। তাছাড়া অন্যের কাছে হাত পাতা বা অন্যের সাহায্য গ্রহণ করার ব্যাপারটা আব্বার কাছে আত্মহত্যার চেয়েও বড় পাপ হিসেবে গণ্য হত। যদিও পাঠক জানেন, আমার দাদার ফ্যামিলির জন্য আব্বাকে নানার সাহায্য নিতেই হয়েছিল। তখন উনার এত আদর্শের দম্ভ কোথায় গিয়েছিল জানি না।
তো এভাবে আনন্দ আর কষ্টের মাঝামাঝি থেকেই আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠলাম আমি। হয়তো আব্বার শাসনেই তেমন একটা বখে গেলাম না। এলাকার ছেলেরা যখন গার্লস স্কুলের সামনে বসে বুকের লোম বের করে সিগারেট ফুঁকত, আমি তখন প্রতিদিন দৈবক্রমে কোন মেয়ের দিকে একবার তাকিয়েই খালাস। পড়াশুনা করতে বেশ লাগত, খেলাধুলাও করতাম অনেক। খারাপ বইপত্র পড়তাম না, বাজে জিনিসও দেখতাম না খুব একটা।
আব্বার কাছে ধরা খাবার ভয় তো আছেই, সেই সাথে এমন একজন মানুষের পুত্র হিসেবে এসব কাজ করতে আমার বুকের মধ্যে কোথায় যেন বাঁধত।
আমি ঢাকায় আসি এস এস সির পর। সেই আমার প্রথম আব্বা আম্মাকে ছাড়া থাকা। উনাদের ছেড়ে আসার দিনটা আমার আজও চোখের সামনে ভাসে। আব্বা গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছেন, মনে হয় চোখের পানি আটকানোর একটা অমানুষিক চেষ্টা করছেন।
আম্মার মধ্যে কোন অভিনয় নেই, তিনি তার জ্ঞানের মধ্যে সমস্ত শব্দ ব্যবহার করে নিজের আহাজারিকে আরও শক্তিশালী করছেন। আব্বার চোখের পানির বাঁধ ছিল, উনার ছিল না। উনাকে দেখে মনে হচ্ছিল এই মাত্র উনি আমার মৃত্যু সংবাদ পেলেন।
উনাদের সান্ত্বনা দেবার চেষ্টাও করি নি আমি। জানতাম তাতে নাটকের এই অঙ্কটা দীর্ঘায়িত হবে।
দরকার কি? কোনমতে চোখের পানি আটকে চলে এসেছিলাম। আব্বা আম্মাকে ছেড়ে আমার প্রথম যাত্রা।
এইচ এস সি টা ভালোয় ভালোয় উতরে যাই আমি। এবার নিজের ক্যারিয়ার গড়ার পালা। আব্বা বললেন, তুই ডাক্তারিতে পরীক্ষা দে।
আমাকে পেয়ে বসল নানা রকম চিন্তায়। ডাক্তারি? এটা তো খুবই ঝামেলার একটা ব্যাপার। চান্স পাওয়া যেমন কঠিন, মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা করাও তেমন কঠিন। তাছাড়া বাকি জীবনে কোন রেস্ট নাই। শুধু পড়াশুনা।
শুধুই পড়াশুনা। আমাকে দিয়ে কি ওগুলো হবে?
তাছাড়া ডাক্তারিতে পড়লে নিজে ইনকাম করতে করতে সাত আট বছর লেগে যাবে। এত বছর বইয়ের খরচ, খাওয়ার খরচ। আরও তো কত হাবিজাবি খরচ আছে। এগুলো কি আব্বা দিতে পারবেন নিয়মিত? নাকি হাত পাততে হবে নানার কাছে?
ঠিক তখনই আমার মনে হয়েছিল, ওর চেয়ে পড়াশুনা করে ঢাকা ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিই।
ভালো সাবজেক্টে ঢুকে গেলে তো ব্যস, কেল্লা ফতে। সারাদিনে দু তিনটা ক্লাস, বাকি সময় টিউশনি করব, চার পাঁচ বছর পর পাস করে একটা ভালো জায়গায় ঢুকে যাব। আমাকে আর কে আটকায়? তাছাড়া নিজের জন্যও সময় পাওয়া যাবে প্রচুর।
আব্বাকে ফোন করে এ কথাটাই বললাম। অথবা, বলার চেষ্টা করলাম।
তখনও জানতাম না আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে সামনে।
আব্বা আমার কথা শুনে অনেকক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, টাকার কথা তোর চিন্তা করা লাগবে না। তুই ডাক্তারিতেই পরীক্ষা দে।
আমি এ কথার কোন জবাব দিতে পারলাম না।
খুব বলতে ইচ্ছা করল, তাহলে কি আপনি নানার কাছ থেকেই টাকা নেবেন? কিন্তু বলতে পারলাম না। হাজার হোক, আব্বার রক্তই তো আমার শরীরে বইছে। আব্বার ইচ্ছাকে অসম্মান করা মানে নিজেকে অসম্মান করা। আব্বার মর্যাদায় আঘাত করা মানে নিজেকে আঘাত করা।
যাহোক, পড়াশুনা করলাম।
অনেক পড়াশুনা করলাম। মেডিকেল পরীক্ষা চলে আসল।
শেষবারের মত বাড়ি গিয়ে আব্বা আম্মার দোয়া নিয়ে আসলাম। আব্বার চোখে অন্যরকম একটা দীপ্তি দেখে এলাম, যেটা কিনা আমি কখনও অন্য কোথাও দেখতে পাই নি।
আল্লাহ আল্লাহ করে পরীক্ষার হলে ঢুকলাম।
অনেক খুঁজে নিজের সিট বের করে বসলাম। উত্তরপত্র পেয়ে বৃত্ত ভরাট করতে শুরু করলাম। দশটা বাজতেই প্রশ্নপত্র হাতে চলে এল।
প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে আমি প্রথম থেকে পড়া শুরু করলাম। প্রথম প্রশ্ন ফিজিক্সের অঙ্কের উপর।
ধরেও দেখলাম না।
দ্বিতীয় প্রশ্ন আলোর উপর। কোন বই থেকে দিয়েছে মনে পড়ল না। চারটা উত্তর দেখে মনে হল দুইটাও উত্তর হতে পারে, তিনটাও হতে পারে। আবার একটাও হতে পারে।
ছেড়ে দিলাম।
তৃতীয় প্রশ্নেও কি একটা কারণে বেঁধে যাবার সাথে সাথে আমার মনে হল, বক্ষপিঞ্জরের মধ্যে আমার হৃদপিণ্ডটা পাগলের মত লাফাতে শুরু করেছে। হাত পা কেমন যেন গরম হয়ে যাচ্ছে। কান গরম হয়ে যাচ্ছে।
আমি প্রথম উত্তর দিলাম সতের নাম্বার প্রশ্নের।
সেটাও ভুল হয়েছে কি ঠিক হয়েছে মনে নেই। এভাবে আস্তে আস্তে প্রশ্ন দাগাতে দাগাতে একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে টের পেলাম, পঁয়ত্রিশ মিনিট এরই মধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে। তখন মনে হয় ত্রিশটা মত দাগানো হয়েছে।
আমার মাথা খারাপের মত হয়ে গেল। এরপর থেকে চোখের সামনে যে প্রশ্নই আসে উত্তর ভরাট করতে শুরু করলাম।
ভরাট করার পর মনে হল এই রে ভুল হয়েছে। কিন্তু তখন আর কিছুই করার নেই। নেক্সট প্রশ্নে চলে গেলাম। এভাবে পাগলের মত দাগাতে লাগলাম একের পর এক প্রশ্নের উত্তর।
সম্বিত ফিরে পেতে দেখি, সবাই খাতা জমা দিচ্ছে।
আমি আর কিছু হিসাব করলাম না। ওভাবেই খাতা জমা দিয়ে দিলাম।
বেরিয়ে এসে আব্বাকে ফোন করার কথা ছিল। করলাম না। বাসায় যাবারও কোন ইচ্ছা ছিল না।
ঢাকায় একটা মেসে থাকতাম, ঐ মেসেই ফিরে গেলাম। তারপর মোবাইল বন্ধ করে শুয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ। ঘুম এল না মোটেও।
বিকালের দিকে বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যখন উঠলাম তখন টের পেলাম গায়ে ভীষণ জ্বর।
দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই মাথাটা কেমন ঘুরে উঠল। বাথরুমে গিয়ে হড়হড় করে বমি করে দিলাম আমি। ঠিক তখনই কোন প্রিয়জনের মমতাময় আদরের একটা প্রবল আকাঙ্ক্ষা নিজের মধ্যে টের পেলাম। আহ, এখন যদি আম্মার কোলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে পারতাম! ইস, আম্মা যদি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। ইস, তখন কোন দুঃখবোধ থাকত না...
জ্বরের ঘরে মানুষের অনুভূতিগুলো প্রখর হয় কি না জানি না।
কিন্তু আমার হল। আম্মাকে আমি প্রবলভাবে মিস করতে শুরু করলাম। আমার মনে হল এই মুহূর্তে আম্মাকে না দেখলে আমি মরেই যাব।
বাথরুমের দরজা খুলে টলতে টলতে আগাতে গিয়ে আমি একটা মানুষের সাথে ধাক্কা খেলাম। তার মুখের দিকে তাকালাম।
দেখি, আব্বা।
আমি আব্বার কাঁধে মাথা রেখে অচেতন হয়ে গেলাম।
আমাকে কোনভাবে বাসায় নিয়ে যাওয়া হল। তিনদিন পর রেজাল্ট দিল। জানতাম কি হবে।
চল্লিশ হাজারের মধ্যে আমার সিরিয়াল এল সাতাশ হাজার পাঁচশ তিন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।