দুনিয়াতে শুধু দুই প্রকার মানুষ আছে। একদল ভাল, একদল খারাপ। এর বাইরে আর কোন বিভেদ নাই। ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল নুরুল ইসলাম বুলবুলের সাথে আমার পরিচয় শৈশবে। তিনি সেসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছাত্রশিবিরের তুখোড় নেতা! চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন! হালকা ছোট ছোট করে ছাটা চাপ দাড়ি।
কথাও বলেন বেশ গুছিয়ে, সুন্দরভাবে। চেহারায় একটা নূরানী ভাব রাখার চেষ্টা করতেন। পোশাকে আতর লাগিয়ে ঘর থেকে বের হতেন। ধর্মভিরু মানুষের কাছে এই নূরানী লুকটা খুব ইফেক্টিভ ভূমিকা রাখে! সাধারণ মানুষকে আকর্ষন করে। তিনি আমাদের এলাকাতেই থাকতেন।
জামায়াত-শিবিরের এলাকায় খুব দাপট ছিল!
রোজার মাসে পাড়ার ধর্মভিরু তরুন-যুবকদের ইফতারি খাওয়ার দাওয়াত দিতেন তিনি। ইফতারি খেয়ে তারা বুলবুল ভাইয়ের খুব প্রশংসা করত! আমরা খুব ছোট ছিলাম, তাই দাওয়াত পেতাম না। দাওয়াতে কি কি হয়েছে, আগ্রহ নিয়ে শুনতাম। কলেজে বেশ বড়সড় আয়োজন করে ছাত্রশিবিরের খাইদাই কর্মকান্ড চলত। প্রশংসা শুনে নুরুল ইসলাম বুলবুলকে আমারও খুব ভাল লাগত!
তারপর হঠাৎ করে একদিন জানতে পারলাম, স্থানীয় জাসদ নেতা ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন হত্যার পেছনেঁ তার বড় একটা অবদান রয়েছে।
তিনি আত্নগোপনে চলে গেছেন বলেও খবর পেলাম। মাঝে অনেকদিন দেখা হয়নি। মামলা শান্ত হলে তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। এরপর শিবির আয়োজিত ক্বুরআন দিবসের এক কর্মসূচীতে তার সাথে আবারও দেখা হয়। আমি তখন স্কুলে পড়ি।
তিনি আমার বন্ধুদের শিবিরের পতাকাতলে এসে ইসলামের দাওয়াত গ্রহনের আহ্বান জানালেন। আমরা ধর্মভিরু নাদান শিশুরা তার আহ্বানে শিবিরের কর্মসূচীতে যেতাম। আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের আশায় শিবিরকে সমর্থন করতাম।
এরপর এলাকায় অনেক দিন আমি ছিলাম না। দেখাও হয়নি।
ঢাকায় এসে হঠাৎ করেই একদিন খবর পেলাম তিনি ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী নির্বাচিত হয়েছেন। আজ দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে খবর পেলাম, তার গোপন ফোন রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। টেলিফোন রেকর্ডটা শুনলাম। সেই ভরাট কন্ঠ। রেকর্ডে স্পষ্ট হয়েছে যে, হেফাজতকে নির্দেশনা দিয়ে চালাচ্ছে জামায়াত, হেফাজতের যাবতীয় কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রন করছে এই ধর্মব্যবসায়ী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী দলটি।
রাতারাতি কোন দল এত দ্রুত সংগঠিত হতে পরে না। সংগঠিত হতে সময় লাগে, ব্যকআপ লাগে। রাতারাতি জেলায় জেলায় কমিটি করা সম্ভব নয়। হেফাজত যে জামায়াতেরই সৃষ্টি, সেটা ফোনালাপের রেকর্ড থেকে এখন স্পষ্ট। একদল মানুষ, যারা জানে না, ব্লগ কি, ব্লগার কি।
অথচ হুজুর আহ্বান জানিয়েছে বলে ইসলামের জন্য তারা নিজের জীবন দিতে প্রস্তুত! মূলত বাঙালি গণমানুষের ধর্মভিরুতাকে কাজে লাগিয়েই তারা রাজনৈতিক ফায়দা লোটার পরিকল্পনায় রয়েছে। অথচ সাধারণ মানুষ কিছুই বুঝছে না।
যদি এক কথায় বলি, তাহলে হেফাজতের ১৬ দফা আসলে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান-পাকিস্তানে পরিণত করার একটা পরিকল্পনা। হেফাজতের দাবি অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্য, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাবাশ বাংলাদেশ সহ দেশের সকল ভাস্কর্য ভেঙে ফেলতে হবে। যে ভাস্কর্যগুলো যুগ যুগ ধরে আমাদের প্রেরণা জাগিয়েছে, তা এখন হেফাজতে জামায়াতের কথায় ভেঙে ফেলতে হবে? কি গভীর ষড়যন্ত্র! মানুষের পবিত্র অনুভুতিকে এভাবে ব্যবহার করবে ওরা, কল্পনাতেও ভাবিনি।
ধর্মীয় বিভক্তির কারনে ভারত-পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল, বাংলাদেশ নয়। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে। তাই বাংলাদেশ কখনই এসব মৌলবাদী গোষ্ঠীর কাছে মাথানত করতে পারে না। রাষ্ট্রীয় সরকার যদি এটা করে, তাহলে তা হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বেঈমানী। সময় থাকতেই এদের মূলোৎপাটন করা জরুরী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।