হৃদয়ে থাকুক বসন্ত সাফিয়া বেগমের বাবা মারা গেছে, আজ সকালে। খবর পেয়ে শেষবারের মতো বাবাকে দেখতে ছুটলেন, সাফিয়া। বাস স্টেশনে গিয়ে দেখেন, আজ বাস বন্ধ। বিএনপির কর্মসূচী বানচাল করে দিতে সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। বাবাকে শেষ দেখার ইচ্ছেটাকে কবর দিয়ে ওখানেই কাঁদতে বসলেন, সাফিয়া।
হঠাৎ কি মনে হতে, ছুটে গেলেন দায়িত্বরত র্যাব অফিসারের কাছে। সরাসরি প্রশ্ন করলেন, আমি কি আপরাধ করেছি? র্যাবের সদস্যটি অবাক হলেন। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন, সাফিয়া বেগমের দিকে।
- আজ আমার বাবা মারা গেছেন। তাকে দেখতে যেতে পারছিনা।
শেষবারের মতো বাবাকে দেখতে চাই। দয়া করুন, আমাকে।
সাফিয়া বেগমের আর্তনাদে চোখে জল এলো, র্যাব সদস্যটির। কিন্তু কিছুই করার নেই। জনগণের স্বার্থ রক্ষায় তাকে দায়িত্বে মনোযোগ দিতে হলো।
এক পুলিশ সদস্য এগিয়ে এলেন।
- আপনার বাবা মারা গেছে?
- হ্যা
- আপনার শ্বশুর আছেন?
- না। উনি মারা গেছেন।
- উনার মৃত্যুর সময় দেখতে গেছিলেন?
- হ্যা
- বছর বছর আপনাদের বাবা মরবে, আর সরকারের কাজ হলো, আপনাদের দেখতে যাবার সুযোগ করে দেওয়া? সরকারের কি আর কোনো কাজ নেই? যান, নিজের কাজে যান। যত্তসব!
পুলিশ সদস্যটির কথা শুনে অবাক চোখে তাকালেন, সাফিয়া বেগম।
আরো জোরে কেঁদে উঠলেন। পুলিশ সদস্যটি বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।
সাফিয়া বেগমের আর্তনাদে এক পথচারী ভয়ে ভয়ে এগিয়ে এলেন। সব শুনে বললেন, "আমাদের নেত্রীর বাবার মৃত্যুতে এদেশের জনগণ নাকি কাঁদেনি। উনি সেবার প্রতিশোধ নেবার সংকল্প করেছিলেন।
সেই নেত্রী কি আপনাদের ছেড়ে দিবেন? আপনার বাবা মরেছেতো কি হয়েছে? জাতীয় স্বার্থ বড়। বিরোধী দলকে ঠেকাতেই হবে। আমিও যাই, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। "
পথচারীর কথা শুনে পাশের এক ভিক্ষুক বলে উঠলো, "ক্যান বাজান? দেশে কি মিলিটারি নামছে?"
একপাশের বেঞ্চিতে বসে ছিলেন, এক সাংবাদিক। গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে ল্যাপটপে সার্বিক অবস্থা টাইপ করে পাঠাচ্ছিলেন, সম্পাদক বরাবর।
ভিক্ষুকের এই কথা শুনে, তার খুব হাসি পেলো। এই ভিক্ষুক আসল ব্যাপারটি ধরতে পেরেছেন। লিখে দেবেন নাকি, একটা রিপোর্ট? তার মনে পড়লো, সেবার দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যার্থতা লিখে একটা ফিচার করার পর সরকারের মদদপুষ্ট সম্পাদক তার চাকরি নিয়ে টানাটানি করেছেন। এবার আর সেই ভুল করা যাবেনা। ল্যাপটপে, আজকের পরিস্থিতির শিরোনাম লিখলেন তিনি- " আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রতি জনগণের সন্তোষ প্রকাশ।
"
আর একজন সাফিয়া বেগম কাঁদছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।