আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাংসদরা বোধহয় ভুলে গেছেন তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত...আর সংবাদপত্র জনগণের মুখপত্র.....আপনি কী বলেন?

মুক্তচিন্তার পথিক

গতকাল জাতীয় সংসদে একাধিক মন্ত্রী ও সাংসদ সংবাদপত্রের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, মিডিয়া দেশে তথ্যসন্ত্রাস চালাচ্ছে। একই সঙ্গে সাংবাদিকরা সংসদ ও স্পিকারের অবমাননা করছেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সাংবাদিকদের সংসদে তলব করে কৈফিয়ত চাওয়া উচিত বলেও মত দিয়েছেন কয়েকজন। সাংসদরা প্রায় দুই ঘণ্টা সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটও সংবাদপত্রের 'নেতিবাচক' ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন।

সংবাদপত্রের ভূমিকা নিয়ে সংসদে এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে সমালোচনা হলেও এই প্রথম মূলধারার অনেকগুলো সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে সংসদে বিষোদ্গার করা হলো। আলোচনায় অংশ নিয়ে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সাংসদ বলেন, দেশে তথ্যসন্ত্রাস চলছে। দেশের জন্য এটা গ্গ্নানিকর। ইচ্ছাকৃতভাবে সংবাদপত্রে জনগণের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করে তাদের হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। তারা বলেন, যেসব সাংবাদিক সাংসদদের চরিত্র হনন করে সংবাদ লিখছেন তাদের তলব করে কৈফিয়ত চাওয়া উচিত।

স্পিকার স্বীয় ক্ষমতাবলে তাদের তলব করতে পারেন। কোনো কোনো সাংসদ সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, সংসদ ঠুঁটো জগন্নাথ হতে পারে না। সংসদ অবমাননা হলে বিদ্যমান আইনেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। মঙ্গলবার মাগরিবের বিরতির আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে সরকারদলীয় সদস্য নুরুল ইসলাম সুজন বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ উল্লেখ করে আলোচনার সূত্রপাত করেন। সোমবার মাগরিবের বিরতির সময় বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীনের কাছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে তাদের সুপারিশকে আমলে না নেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ওই বিষয়ে মঙ্গলবারের সংবাদপত্রের প্রতিবেদন সঠিক হয়নি দাবি করে স্পিকারের কাছে প্রতিকার চান সুজন। পৌনে দুই ঘণ্টার আলোচনায় সংসদ সদস্যরা বলেন, গণতন্ত্র যারা নিয়ন্ত্রণ করবেন, গণতন্ত্র যারা রক্ষা করবেন, তাদের ব্যাপারে এত অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না। সংসদ এবং সংসদ সদস্যদের মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রয়োজনে আইন করা উচিত। তারা বলেন, সাংসদদের বিরুদ্ধে লেখার আগে সাংবাদিকরা একবার চিন্তাও করেন না যে, কার বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে। একাধিক সাংসদ বলেন, শত্রুভাবাপন্ন রিপোর্টের মাধ্যমে জনগণের বিপক্ষে গিয়ে সাংবাদিকরা অন্য কোনো তৃতীয় শক্তির কথা চিন্তা করছেন কি-না তা খতিয়ে দেখা দরকার।

দৈনিক সমকাল, প্রথম আলো, আমাদের সময়, ইনকিলাবের বেশ কয়েকটি রিপোর্টের উল্লেখ করে স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটসহ সিনিয়র মন্ত্রী এবং সাংসদরা বক্তৃতা করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন_ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম সুজন, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, জাসদের মাইনউদ্দিন খান বাদল প্রমুখ। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের নাম উল্লেখ করে মন্ত্রী-এমপিরা বক্তৃতা করার সময় পেছন সারি থেকে 'খুনি' 'খুনি' চিৎকার করতে থাকেন বেশ কয়েকজন সাংসদ। স্পিকার বলেন, বানিয়ে বানিয়ে তথ্য লিখে স্পিকার এবং সংসদকে হেয় করার কোনো অধিকার কারও নেই। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হেয় করা মানে জনগণকেই হেয় করা।

এ সময় তিনি বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রের বিভিন্ন রিপোর্টের কাটিং সংসদের সামনে তুলে ধরেন। স্পিকার বলেন, এসব রিপোর্ট কাল্পনিক, পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর মধ্যে কাকে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে সেটি আমি বুঝতে পারি না। এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করে সংসদ সদস্যদের অজনপ্রিয় করার মানে কী? সংসদ না থাকলে কারা ক্ষমতায় আসবে? তারা (সংবাদপত্র) দেশটাকে কোনদিকে নিতে চান? এভাবে চলতে থাকলে গণতন্ত্র টিকবে না। তিনি বলেন, এভাবে এমপিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার কোনো কারণ বুঝতে পারি না।

শুল্কমুক্ত গাড়ি বিষয়ে স্পিকার প্রথম আলোর কার্টুনের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ওই পত্রিকার একটি কার্টুনে যেভাবে সরকার ও বিরোধী দুই দলের লোকদের গাড়ির ওপর উঠিয়েছে তাতে সব এমপিকে হেয় করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টও করা হয়েছে একই উদ্দেশ্যে। এমপিদের এভাবে অজনপ্রিয় করা হলে দেশে আর গণতন্ত্র থাকে না। এমপিদের ট্যাক্সবিহীন বেতন প্রসঙ্গে সংবাদপত্রের সমালোচনার কথা উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, এমপির বেতন সচিবের চেয়ে কম।

সচিবদের ট্যাক্স সরকার দেয়। সচিবের ওপরে থাকার পরও এমপিদের বেতন নিচে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, কতিপয় সংবাদপত্র এবং সাংবাদিককে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আশা করি, তারা আরও দায়িত্বশীল হবেন। তারা গণতন্ত্রের বিপরীতে অন্য কোনো স্বৈরতন্ত্রের কথা ভাবছেন কি-না ভাবতে হবে।

সংসদকে 'অবমাননা' করে কিছু সংবাদপত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সুরঞ্জিত বলেন, কেউ সংসদের অবমাননা করলে বিদ্যমান আইনেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সংসদ নিয়ে যে রিপোর্ট ছাপানো হয়েছে এ রকম আদালত নিয়ে ছাপানো হলে আদালত অবমাননার দায়ে তাদের হাইকোর্টে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। তিনি বলেন, সংসদ ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকতে পারে না।

সংসদকে অবমাননা করে গণতন্ত্র রক্ষা করা যাবে না। গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্রের জন্য সংসদ নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে কি-না তা ভেবে দেখতে হবে। সংবাদপত্রকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যম হবে গণতন্ত্র। অন্য কোনো মাধ্যমের জন্য কেউ ষড়যন্ত্র করলে সে আশা পূরণ হবে না। তিনি আরও বলেন, সংবাদপত্র ও সংসদ অত্যন্ত মর্যাদাকর।

জনগণ হচ্ছে সংসদের অভিভাবক। সংবাদপত্র ও সংসদ একটি অন্যটির বিপরীত অবস্থান নিতে পারে না। কারণ একটি অপরটির পরিপূরক। তিনি বলেন, দেশে সংসদ আছে বলেই গণতন্ত্র আছে। কার্যকর সংসদ চাইলে অকার্যকর এমপি থাকবেন, তা হতে পারে না।

আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সংবাদপত্রের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হলেও এটি একটি পণ্য। পাঠকের কাছে কীভাবে বিক্রি করা যায়, সেটিই লক্ষ্য। তারা পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সংবাদপত্রের মধ্যে এখন জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতির অর্থের বিনিয়োগ এসেছে। তিনি বলেন, তারা মিথ্যাচার করছে না।

তারা বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ পরিবেশন করছে। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। কোনো কোনো বিশেষ সংস্থার অর্থানুকূল্যে কয়েকটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ফলে তারা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করবে না, যাতে সংসদ গৌরবান্বিত হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে তথ্যসন্ত্রাস চলছে তা দেশের জন্য গ্গ্নানিকর।

তিনি বলেন, এ সংসদ কী এতই অসহায় ও দুর্বল সে তার মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে না? স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। একবার পদক্ষেপ নিলে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে। মন্ত্রী প্রশ্ন করেন, আমরা বিদেশে গেলে কথা হয়। তাহলে ওনারা (সাংবাদিকরা) বিদেশে গেলে সেটা কে দেখবে? কার টাকায় ওনারা বিদেশে যান? তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে তথ্যসন্ত্রাস চলছে তা গণতন্ত্রের জন্য গল্গানিকর। এ ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে শুধু দুঃখ প্রকাশ করে লাভ নেই।

আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন করার জন্য যারা উঠেপড়ে লেগেছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর হবো। যারা উল্টাপাল্টা কথা বলছেন তারা সংযত হোন। আপনাদের লাইন্সেস দেওয়া হয়নি। তিনি প্রথম আলো সম্পাদককে সংসদে ডেকে আনার দাবি জানিয়ে বলেন, 'মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা নিন।

তাকে ডাকুন। তাকে বলুন, ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি কী করেছেন? তার কাছে জানতে চান, একতার সম্পাদক হিসেবে শুরু করে তুমি কোথায় এসেছ? তিনি কতবার বিদেশে যান। ' 'আমাদের সময়'কে ইঙ্গিত করে বস্ত্রমন্ত্রী বলেন, এই পত্রিকাটি সাংসদদের উদ্দেশে স্পিকারের বক্তব্যকে 'ছবক' বলছে। এক-এগারোর পর এই সংবাদপত্রের কী ভূমিকা ছিল? কোনো একটি সংস্থার বিশেষ অনুকূল্যে একটি বিশেষ পত্রিকা প্রকাশিত হয় বলে কথিত রয়েছে। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, দেশে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে।

ওয়ান-ইলেভেনের সময় একটি চক্র রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কল্পকাহিনী লিখে ও তাদের হেয়প্রতিপন্ন করে দেশে অগণতান্ত্রিক ওয়ান-ইলেভেন সরকার এনেছিল। এই চক্র তখন সফল হতে না পারলেও এখন আবার চক্রান্ত করছে। তারা নতুনভাবে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি বলেন, নানাভাবে সংবাদপত্রের রিপোর্টের মাধ্যমে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশে গণতন্ত্র রক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ করবেন।

অথচ তাদের বিষয়ে এতটা অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, সংসদের অধিকারকেও ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবর প্রকাশে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের তলব করুন, ব্যবস্থা নিন। সব ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা মানে যা কিছু তাই লেখা নয়।

দায়িত্বজ্ঞানহীন সাংবাদিকতার মাধ্যমে সম্পাদক ও সাংবাদিকরা সংসদের অবমাননা করছেন। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, তাদের চরিত্র অতীতে কী ছিল সেটা দেখা দরকার। টেলিভিশনের টক শোতে বুদ্ধিজীবী সেজে অনেকেই বক্তৃতা করেন। সংসদ এবং সাংসদদের নিয়ে তারা নানা কথা বলেন। সংসদ এবং সরকারকে অবমাননা করার জন্য তাদের বিচার করতে হবে।

১৯৮০ সালের একটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ওই সময় একজন এমপির সঙ্গে এক পুলিশ সদস্যের খারাপ আচরণের কারণে স্পিকার তাকে ডেকে এনেছিলেন। আপনিও (স্পিকার) এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন। তিনি বলেন, ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি সরকারি কর্মচারীরা নিজেদের এবং পরিবারের জন্য ব্যবহার করেন। উপজেলা চেয়ারম্যানরা এবং পৌরসভার মেয়ররা গাড়ি পাচ্ছেন। তাহলে আমরা গাড়ি পেলে সাংবাদিকদের গা-জ্বালা করে কেন? তিনি বলেন, আমাদের ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি দরকার নেই।

এলাকায় বাড়ি দেন, গাড়ি দেন। আমরা কিছুই চাই না। তিনি বলেন, আমাদের বাসায় এক দিনে যে চায়ের বিল খরচ করতে হয় তার হিসাবও সাংবাদিকরা রাখেন। অথচ যারা পত্রপত্রিকায় লেখেন, টক শোতে কথা বলেন তাদের বাসার সামনে একজন ভিক্ষুকও ঢুকতে পারে না। এগুলো মাথায় রেখে রিপোর্ট লেখা উচিত।

পত্রিকার শীর্ষ ব্যক্তিদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যারা আমাদের আজ জ্ঞান দিচ্ছেন তাদের অতীত চরিত্র কী ছিল জনসমক্ষে তা উন্মোচন করতে হবে। তথাকথিত বিবেকবানরা এখন শুধু সরকারের দুর্নীতি খুঁজছে। সরকার ও সংসদকে অবমাননা করতে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.