প্রায় ৩৬ বছরের পথ পাড়ি দিয়ে সৌরজগতের এক প্রান্তসীমায় অবস্থান করছে ভয়েজার ১। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার গবেষকেরা জানিয়েছেন, মানুষের তৈরি কোনো বস্তু প্রথমবারের মতো এ সৌরজগতের সীমা অতিক্রম করতে যাচ্ছে। ফোর্বস অনলাইনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গবেষকেরা ধারণা করছেন, সৌরমণ্ডলের একেবারে প্রান্তসীমার এমন একটি স্তরে ভয়েজার ১ অবস্থান করছে যা চার্জ হওয়া বা আবেশিত কণার বিশেষ স্তরযুক্ত। সৌর-বাতাসের তোড়ে এখানকার আবেশিত কণাগুলো সব সময় ছুটে চলেছে।
এটিই সৌরমণ্ডলের প্রান্তিক সীমা। এরপরই মহাজগতে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে শুরু করবে মানুষের তৈরি বিশেষ নভোযানটি।
সৌরমায়া কাটিয়ে যাচ্ছে ভয়েজার ১
মহাকাশের রহস্যের জাল ভেদ করতে এতদিন সৌরজগতের অভ্যন্তরেই কেন্দ্রীভূত ছিল মহাকাশ-বিজ্ঞানীদের অভিযান। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো সৌরজগতের বাইরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বিজ্ঞানীরা। আর এ ক্ষেত্রে তাঁরা সফল হওয়ার পথে বলেও দাবি করছেন।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, সৌরজগতের প্রান্তসীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে ৩৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার উৎক্ষেপণ করা নভোযান ভয়েজার ১। তাঁরা বলছেন, যেকোনো দিন বা বড়জোর আরও কয়েক বছর লাগতে পারে। এরপরই সৌরজগতের সীমা অতিক্রম করে যাবে মানুষের তৈরি কোনো মহাকাশযান।
ঠিক কবে নাগাদ ভয়েজার সৌরজগতের সীমা ছাড়াবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও গবেষক এড স্টোন জানিয়েছেন, সে মাহেন্দ্রক্ষণ খুব নিকটেই। এখন সৌরজগতের এক প্রান্তসীমায় অবস্থান করছে ভয়েজার ১।
সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বর্তমানে পৃথিবী থেকে ১৮ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করছে এ নভোযানটি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সৌরজগতের বাইরে গিয়ে মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিকের উন্মোচন ঘটাতে দীর্ঘ অপেক্ষা শিগগিরই শেষ হবে।
চুম্বকীয় রাজপথ
এর আগে ২০১২ সালে এড স্টোন জানিয়েছিলেন, মহাকাশযানটি সৌরজগতের শেষ সীমায় অবস্থান করছে। সেসময় আবেশিত কণার এক বিশেষ অঞ্চলে ভয়েজার ১ অবস্থান করছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। তিনি সে সময় বলেছিলেন, সূর্য-নিঃসৃত কণিকার প্রবাহ বর্হিমুখী না হয়ে বরং পার্শ্বমুখী হচ্ছে।
এর মাধ্যমে বোঝা যায়, ভয়েজার-১ নক্ষত্র-রাজির মধ্যকার মহাশূন্যের প্রায় কাছাকাছি অবস্থান করছে। সম্প্রতি গবেষক জানিয়েছেন, বিশেষ এ অঞ্চলটির পার করে আরেকটি হালকা কণার বিশেষ স্তরে প্রবেশ করেছে ভয়েজার ১। এ অঞ্চলটি বিশেষ চৌম্বক স্তরের। এ স্তরটিকে ‘ম্যাগনেটিক হাইওয়ে’ নাম দিয়েছেন তাঁরা। গবেষকেরা ধারণা করছেন, এ বিশেষ স্তরটিই হচ্ছে সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে বাইরের স্তর।
তবে এ অঞ্চলটির বিস্তৃতি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই তাঁদের।
বিজ্ঞানী এড স্টোন বলেন, ‘দিন, মাস, বছর পেরিয়ে ভয়েজার-১ অবশেষে কোনো একসময় পৌঁছে যাচ্ছে মহাশূন্যের নতুন কোনো স্থানে। পৃথিবীর কোনো বস্তুর সৌরজগতের সীমানা অতিক্রমের বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিহাসের নতুন এক মাইলফলক হতে হতে চলেছে।
অজানার পথে পাড়ি
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ভয়েজার-১ পৃথিবী থেকে উেক্ষপণ করা হয়। টানা পঁয়ত্রিশ বছর ধরে সৌরজগতের অজানা রহস্যের সন্ধান দিয়ে যাচ্ছে মহাকাশযানটি।
এ নভোযানটি ২০২০ সাল পর্যন্ত সংকেত পাঠাতে সক্ষম হবে। এরপর অজানার পথে পাড়ি দেবে। ধারণা করা হচ্ছে, এসি+৭৯৩৮৮ নামক নক্ষত্রের দিকে ছুটতে থাকবে এ নভোযানটি। কোনো দুর্ঘটনা ছাড়া ৪০ হাজার বছর বছরের পথ পাড়ি দিয়ে দুই আলোকবর্ষ দূরের এ নক্ষত্রটির দিকে ছুটে যাবে মানুষের তৈরি এ নভোযান।
মহাবিশ্বের অজানা রহস্য
আমাদের এই মহাবিশ্ব কি একটাই? নাকি অনেক বিশ্বের ভিড়ে আমাদের এ বিশ্ব নিতান্তই ক্ষুদ্র এক গণ্ডি? আদতে অতি সহজ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ৪০০ বছর ধরে বিরামহীন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকেরা।
১৬ শতকের জ্যোতির্বিদ জোহান কেপলার থেকে শুরু করে এ যুগের স্টিফেন হকিং পর্যন্ত মহাবিশ্বের রহস্য উদ্ধারে বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। তবে কসমোলজি বা বিশ্ব সৃষ্টির রহস্য উদঘাটনে গবেষকদের সাম্প্রতিক গবেষণার ফল বলছে, এই মহাবিশ্বে কোটি কোটি বিশ্বের সঙ্গী আমাদের এই বিশ্ব। অর্থাত্ কোটি কোটি বিশ্ব নিয়ে তৈরি এই অনন্ত-বিশ্ব বা মাল্টিভার্স। আর এ মাল্টিভার্সের কোথাও না কোথাও রয়েছে বুদ্ধিমান কোনো প্রাণী বা এলিয়েন। সেই এলিয়েনদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে নানা গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে।
এমনই কিছু তথ্যভাণ্ডার রয়েছে ভয়েজার ১-এ।
ভয়েজার ১ এ রয়েছে মানুষ ও পৃথিবী সম্পর্কিত তথ্য। গবেষকেরা বিশ্বাস করেন, কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী হয়তো একদিন এ তথ্য সংগ্রহ করতেও পারে!
মহাজাগতিক সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া বোতল-বার্তা
ভয়েজার উেক্ষপনের সময় তত্কালীন গবেষকেরা পৃথিবী বিভিন্ন সভ্যতার নির্দশন, ছবি আর শুভেচ্ছা বার্তা সংযুক্ত করে দিয়েছেন। বিজ্ঞানী কার্ল সাগান আশা প্রকাশ করেন মহাজাগতিক সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া বোতল সদৃশ ভয়েজার ১ যদি বুদ্ধিমান কোনো প্রাণী একদিন খুঁজে পাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।