খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... একটা দেশের সরকার ব্যব¯হায় জ¦ালানী খাতের ভূমিকা অপরিসীম। জ্বালানী খাতের উপর র্নিভর করে সরকারের সফলতা র্ব্যথতা। আ্ওয়ামীলীগ সরকার জ্বালানী খাতের উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। ১. প্রথমত নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুতের যোগান দেয়ার লক্ষ্যে পাওয়ার প্ল্যান্ট ¯হাপনে উদ্যোগ গ্রহন করলেও তা খুব একটা সফলতার মুখ দেখেনি। এর মূল কারণ হচ্ছে কয়লা ভিত্তিক পাওয়ার প্লান্টে না গিয়ে র্ফানেস ওয়েল ভিত্তিক প্লান্ট ¯হাপনে মনোযোগ দেয়া।
ফলে বিদ্যুতের উদ্পাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আর বেড়ে যাওয়া বিদ্যুত জনগনের উপর চাপিয়ে দেয়ার ফলে সাধারন মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে জনগন ক্রমশ সরকারের উপর তাদের আ¯হা হারাচ্ছে। বছরে দুই বার তিনবার জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানোর ফলে একদিকে সরকারের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পাচ্ছে। অন্যদিকে সাধারন মানুষের ক্ষোভও দিন দিন বাড়ছে যা ক্ষমতাসীনদের জন্য ভবিষ্যত বুমেরাং হয়ে যেতে পারে।
ছোট ছোট বিদ্যুত উদপাদন কেন্দ্র থেকে খুব বেশি বিদ্যুতের যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা নানান অব্যব¯হাপনার কারনে। ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টের ব্যাপারে সরকার সব সময়ই উদাসীন। আর শিল্পকারখানায় বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগের পরিমান কতো তা গননার বাইরে। বিদ্যুতের অসাধু র্কমর্কতারা শিল্প মালিকদের যোগ সাজশে মিটার রিডিং গড়মিলে এতোবেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে যে সরকার তার ন্যায্য পাওনা থেকে থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এ অনৈতিক কাজে ক্ষমতাশালী শিল্প মালিক, প্রভাবশালী রাজনৈতিকের ছত্র ছায়ায় দেশকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে।
২. বিদ্যুতের চাহিদামোতাবেক সরবরাহ ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলছে। চাহিদা মোকাবেলা করতে গিয়ে সরকার দিশেহারা প্রায়। প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাসের উপরই দাড়িয়ে আছে পুরো বিদ্যুত সেক্টর। কিন্তু গ্যাস ফিল্ডগুলোর অব¯হা খুব একটা সুবিদার নয়। নতুন নতুন কুপ খনন না করা ও পুরাতন গ্যাস কুপগুলোও যথাযথ মেরামতের অভাবে প্রডাকশন কমে আসছে।
৩. সাঙুতে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান প্রচুর পরিমানে গ্যাসের মজুদ পাওয়ার দাবি করলেও তা কবে নাগাদ জাতিয় গ্রীডে আসবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
৪. সরকারি মালিকানায় যেসব গ্যাস ফিল্ডগুলো রয়েছে সেগুলোর চেহারা খুব একটা আশা ব্যাঞ্জক নয়। খুব দ্রুত এসব ফিল্ডগুলোর সংস্কার প্রয়োজন। কোন কোনটি সংস্কার করা হলেও সেগুলো পুনরায় প্রডাকশন উপযোগী হয়ে উঠেনি।
কয়লানীতি প্রসঙ্গে: সরকার দেশের আভ্যন্তরিন কয়লা উঠানোর পক্ষে নয়।
এর মুল কারন হচ্ছে সুশীল সমাজের অনাপত্তি। ভূগর্ভ¯হ পদ্ধতি না উম্মুক্ত পদ্ধতি ঠিক এ জায়গায় আটকে আছে কয়লানীতি। গত দুটি রাজনৈতিক ও একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার তাদের আমলে কয়লানীতি নিয়ে তাদের অব¯হান পরিস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর এ সরকারের জ্বালানী উপদেষ্টাতো পরিস্কার বলেই দিয়েছেন সরকার কয়লা উঠানো নিয়ে চিন্তিত নয়। তার মানে এ আমলে কয়লা নীতিও হচ্ছেনা কয়লার খনির উন্নয়নও হচ্ছেনা।
অতচ আওয়ামীলীগের নির্বাচনী মেনুফেস্টুতে পরিস্কার উল্লেখ ছিল কয়লানীতি প্রনয়ন ও বাস্তবায়নের কথা।
জ্বালানী নীতি প্রসঙ্গে: জ্বালানী নীতিকে পরিপক্ক বলে ধরা হয়। জ¦ালানী নীতিতে স্পষ্ট করা ্আছে দেশের জ্বালানীর রুপরেখা ও বাস্তবায়ন নিয়ে। সেলক্ষে সরকার অনেকদূর এগিয়েছিল। দীর্ঘদিনের জঞ্জাল দূর করে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মান প্রক্রিয়া সহজতর করা হয়েছে।
কিন্তু সরকার যে উদ্দেশ্যে পাওয়ার প্লান্ট নির্মান সহজ করেছে সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে পুরোপুরি সফল হতে পারেনি। এর মুল কারণ হলো সামগ্রিক অব্যব¯হাপনা। সঠিক বিনিয়োগকারীর অভাবে অপেশাদার কোম্পানীর ব্যবসার করার সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। গ্যাস সেক্টরে বিদেশী বিনিয়োগের অভাবে নতুন নতুন ক্ষেত্রের উম্মোচন না হওয়া। সমুদ্র বক্ষে বাংলাদেশের অংশে ১১টি ব্লক নির্ধারন করার পরও অনুসন্ধান কর্মকান্ডে কোম্পানীগুলো যেতে পারেনি।
পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও মায়ানমারের ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশের অংশে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে পারস্পরিক সমঝোতা ব্যর্থ হওয়াতে বিষয়টি জাতিসংঘ পর্যন্ত গড়িয়েছে। ফলশ্রুতিতে সমুদ্র থেকে গ্যাস তোলার সরকারের উদ্যোগ ম্লান হয়ে গেছে। আর জ্বালানী নীতিতে উত্তোলিত গ্যাস তৃতীয় পক্ষের নিকট বিক্রির সুযোগ রাখাতে সরকার সমালোচিত হয়েছে। যা নিয়ে শক্তিশালী একটি গ্রুপ অব্যাহত প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এ সরকার বাপেক্সকে শক্তিশালী করেছে।
আগে বাপেক্স অর্থের অভাবে ঠুঠু জগন্নাথ হয়ে বসেছিল। এখন বাপেক্সের হাতে অনেক কাজ আছে। বাপেক্স‘র ফান্ড নিয়েও কোন সমস্যা নেই। যা এ সরকারের খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। বাপেক্সের তরুন গবেষকরা প্রচলিত গ্যাস ফিল্ডগুলোকে আপডেট করার কাজ করছে।
দ্বিমাত্রিক জরিপ ও কোথাও কোথাও ত্রিমাত্রিক জরিপের কাজও করছে। দেশিয় প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হলে বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর উপর বহুমাত্রিক নির্ভরশীলতা কমে আসবে। তবে জ্বালানী নীতিতে কিছু বিষয় আমাদের জন্য অস¦স্তিকর। সরকার পুরোপুরি বহুজাতিক কোম্পানী নির্ভরশীল না হয়ে যদি বিদেশ থেকে পরামর্শক প্রতিনিধিদল নিয়োগ করে বাপেক্সকে দিয়ে অনশোরে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে তা বেশি ফলপ্রসু হবে। নতুন নতুন জায়গা খুজে বের করার জন্য সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য দেশিয় প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই কাজে লাগানো উচিত।
ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি প্রসঙ্গে: ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বিদ্যুত পৌছে দেয়ার সরকারি কর্ম পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সাময়িক সুবিদা পাওয়া গেলেও দীর্ঘ মেয়াদী অসুবিদা দেখা দিবে। কারন এমন না যে, ভারত বিদ্যুতে স্বালম্বী। তাছাড়া ভারত যে বিদ্যুত দিবে তা আসবে আসাম ত্রিপুরা মিজোরাম স্টেট থেকে এ অঞ্চলগুলো এমনিতেই দরিদ্রতম এলাকা। এসব এলাকাতে বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততা রয়েছে।
একটা সময় দেখা যাবে বাংলাদেশে বিদ্যুত দেয়ার কারনে এসব এলাকার মানুষ আন্দোলন শুরু করছে। তখন বিষয়টা নিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে তিক্ততা বাড়বে। এমনিতে পানি বন্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছেনা। তাছাড়া ভারত নির্ভরশীলতা যতো কমিয়ে আনা যায় ততই আভ্যন্তরীন রাজনীতির জন্য ভালো। কেননা ভারত বিদ্বেষি শক্তিশালী এক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দেশের ভিতরে সক্রিয় রয়েছে তাদেরকে সুযোগ যতো কম দেয়া যায় ততই আওয়ামী রাজনীতির জন্য মঙ্গলজনক।
অর্থমন্ত্রী মহোদয় দ্ব্যর্থ কন্ঠে বার বার বলছেন আগামি দুই বছরের মধ্যে দেশের বিদ্যুত সন্কট থাকবেনা। দেশ বিদ্যুতে স্বাবলম্বী হবে। এমনটা হলেই ভালো। কিন্তু বাস্তবতা হয়তো মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্যকে সার্পোট নাও করতে পারে। আসলেই বিদ্যুত সমস্যা দিন দিন তীব্র হচ্ছে।
আর বিদ্যুতকে জনকল্যাণে নিয়ে আসতে হলে এর উদপাদন খরচ কমিয়ে আনতে হবে। বিদ্যুত খরচ কমাতে হলে আমদানি নির্ভর কাচামালের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে। আর তার জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে দেশীয় কোল ফিল্ডগুলোর উন্নয়নে মনোযোগী হওয়া। সরকার প্রতি বছর বিদুতে যে পরিমানে সাবসিডি বা ভর্তুকি দেয় তা দিয়ে প্রতি বছর একটি করে নতুন কয়লা খনির উন্নয়ন সম্ভব। আর সরকারি মালিকানায় কয়লারখনির উন্নয়ন হলে প্রচলিত প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হবেনা।
কেননা খনি বিরোধি গ্রুপ বা গোষ্ঠি বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে তাদের অব¯হান, সরকারের বিরুদ্ধে নয়। তাই বিদ্যুতে পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে স্বাবলম্বী বিদ্যুত ব্যব¯হাই আগামিতে বাংলাদেশকে তার কাঙ্খিত লক্ষে পৌছাতে সাহায্য করবে।
হাসান কামরুল: ভূতত্ত্ববিদ ও কলাম লেখক।
ংধিঢ়হধধ০০৭@ুধযড়ড়.পড়স
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।