পেশায় নাবিক নেশায় যাযাবর
অনেক দিন আগে সোমালিয়ান পাইরেটদের নিয়ে একটি সিরিজ শুরু করেছিলাম। তারপরই প্রথম বারের মত সোমালিয়ান পাইরেটদের ধাওয়া খাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ভেবেছিলাম এই তারা খাওয়ার ঘটনা নিয়ে লিখব। কিন্তু দেশে এসে সব কেমন জানি এলো মেলো হয়ে গেল। আর লেখা হল না।
ভাবছি আবার শুরু করব। তাই পাইরেটদের ইতিহাস নিয়ে কিছু জানা অজানা বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
গভীর সমুদ্রে নীল ঢেউয়ের মাঝে হঠাতঁ একটি জাহাজের মাস্তুল দেখা গেল । কিন্তু মাস্তুলের মাথায় নেই কোন দেশের পতাকা। তার বদলে রয়েছে ভয়ঙ্কর মানুষের মাথার খুলির চিহ্ন সম্বলিত একটি পতাকা।
ওয়াচে থাকা নাবিকের মনে ভঁয় আছর করল “জলদস্যু”। কামানকামান- কামান-পিস্তল নিয়ে আক্রমণ করে বসল। অদ্ভুত সব পোশাকে ছুরি চাকু পিস্তল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল জাহাজের উপর। চিৎকার চেচামেচি খুন খারাবি লুট তরাজ। জলদস্যুদের নেই কোন আইন কানুন।
নেই কোন মানবাধিকার। এই সব জলদস্যুদের থাকত একজন অধিনায়ক। তার কথাই এখানে আইন। মোটামোটি এরকমই ছিল প্রাচীন জলদস্যু নিয়ে ছবির শুরু।
বর্তমান বিশ্বে জলদস্যুতা একটি ভীতিকর অবস্থা আছে।
সোমালিয়ান পাইরেটদের কথা শুনলে শিপিং ব্যাবসার সাথে জড়িত সবাই আঁতকে উঠে।
কিন্তু এই জলদস্যুতার ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরাতন। হাজার বছর আগে জলদস্যুরা ভুমধ্য সাগরে ঘুরে বেরাত মুল্যবান মনি মুক্তার সন্ধানে। সেই সময়ে জাহাজে মালামাল পরিবহনের সাথে অনেক মুল্যবান ধন সম্পদ আনানেয়া করত। রোমান ইতিহাস থেকে জানা যায় ১০০০ সালে তারা এক বছর ব্যাপি জলদস্যুদের বিরুধ্বে যুব্ধ করেছে।
ঐ সময় পশ্চিম ইউরপে জলদস্যুরা ব্যাপক আক্রমণ করত। অনেক সময় জাহাজের পাশাপাশি উপকূলের গ্রাম গুলোও আক্রমণ হত।
বিভিন্ন সময়কাল এবং স্থান ভেদে জলদস্যুদের নামকরণ বিভিন্ন রকম হত।
বুকানিয়ার
বুকানিয়ার একটি ফ্রান্সের শব্দ । যার অর্থ হল পোড়া মাংস।
১৫০০সাল থেকে ১৬০০সাল পর্যন্ত একদল জলদস্যু স্পেনের কলোনি এবং আমেরিকার জাহাজ এবং উপকূলীয় শহর গুলো আক্রমণ করত। এরা গবাদি পশু জবাই করে মাংস পোড়াত এবং ঐ পোড়া মাংসের বিনিময়ে গোলা বারূদ, ছুরি, এবং জামাকাপড় নিত। সেই থেকে ওদের নাম হয়ে যায় বুকিনিয়ার। অধিকাংশ বুকিনিয়ার ছিল ইংরেজি, ডাচ, অথবা ফরাসি নাগরিক। মূলত পালিয়া যাওয়া দাগী আসামী , কৃতদাস এবং এডভেঞ্চার প্রিয় লোকদের নিয়ে এই জলদস্যু দল তৈরি হত।
বুকিনিয়ারদের সদর দফতর এবং পালানর জন্য বেছে নিয়ে ছিল হাইতির কাছে “তরতুগা” নামক অতি ক্ষুদ্র ক্যারিবিয়ান দ্বীপ ।
বারবারি জলদস্যু
বারবারি জলদস্যুতার সময় কাল ছিল ১৬০০ সাল থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত। তারা মূলত উত্তর আফ্রিকার “বারবারি” কোস্টে জলদস্যুতা করত। আলজেরিয়া, টিউনিস, এবং ত্রিপোলি উপকূলীয় শহর থেকে এরা আক্রমন পরিচালনা করত। এইজলদস্যুর দল ভঁয় দেখিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে মুক্তিপন আদায় করত।
ঐ দেশের জাহাজ আক্রমণ না করার জন্য মুক্তিপণ না দিয়ে উপায় ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এদেরকে মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হত। অবশেষে প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন ১৮১৫ সালে ঐ অঞ্চলে মার্কিন নৌ জাহাজ পাঠিয়ে বারবারি জলদস্যুদের দমন করে।
প্রাইভেটিয়ার
প্রাচীন কালে যখন বিভিন্ন দেশে নৌবাহিনী শক্তিশালী ছিল না যুদ্ধের সময় জলদস্যুদের ভাড়া করা হত আক্রমণের জন্য। অনেকটা প্রাইভেট নৌবাহিনীর মত।
এরা প্রথম দিকে বিভিন্ন দেশের হয়ে ভাড়ায় কাজ করলেও পরবর্তীতে জলদস্যুদের মত কাজ করা শুরু করে। এরা প্রাভেটিয়ার নামে পরিচিত ছিল। সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাভেটিয়ার ছিল স্যার ফ্রান্সিস পাতিহাঁস। এই ভদ্রলোক কী নিয়ে অল্প কিছু হলেও লিখতে হবে। কারন ইউরোপের মানবাধিকার নিয়ে ন্যাকামি কিছুটা হলেও উম্মোচিত হবে।
চলবে.................................।
জলদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত একটি ব্রিটিশ জাহাজ।
ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জলদস্যু ঘাঁটি আক্রমণ
আক্রমণের পূর্বে জলদস্যুদের মিটিং
জলদস্যুদের আক্রমণ
বন্দীদের নিয়ে রঙ্গ তামাশা
ব্রিটিশদের দ্বারা এক জলদস্যুর ফাঁসি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।