আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফুটন্ত প্রেমের ঝরে পরা

আজ থেকে কয়েক বছর আগের কথা । আমরা তখন সদ্য শৈশব পেরেনো কিশোর । নতুন ক্লাশে উঠেছি তাই আনন্দটা একটু বেশিই । নিজেদের মাঝে একটা বড় বড় ভাব চলে এসেছে । তখনও তেমনভাবে আমাদের মাঝে মোবাইল ফোনের প্রচলন হয়নি ।

যে সব ছেলে মেসে থাকতো তাদের বাবা মা তাদের খোঁজ নিতে মোবাইল কিনে দিয়েছিল । তেমনি একজন আমাদের বন্ধু সজীব । কুড়িগ্রাম থেকে রংপুরে এসে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল । প্রথম প্রথম তেমন একটা পাত্তা না দিলেও পরে সে আমাদের ভালো বন্ধু হয়েছিল । সজীব প্রথম দিন ক্লাসে এসেই নতুন মেয়ে জিনিয়ার প্রেমে পরে যায় ।

অনেক অনুরোধ তার জিনিয়ার সাথে যেন কথা বলিয়ে দেই । বাবার কলিগের মেয়ে হওয়ায় জিনিয়াকে আগে থেকেই চিনতাম । নতুন বন্ধু সজীবের অনুরোধ রক্ষার্থে একদিন জিনিয়ার টিএন্ডটি নম্বর দিলাম । এরপর তাদের মাঝে নিয়মিত কথা চলতে থাকল । এরপর কয়েকদিন জিনিয়া স্কুলে না আসায় একদিন সজীবকে বললাম ,"কী খবর জিনিয়া কই?" ।

সে ভাব নিয়ে বলল ,দাঁড়াও ফোন দেই । নকিয়া ১৬০০ ফোনের লাউড স্পিকার ওপেন করে অনেকটা হিরোর ভাব নিয়ে সজীব জিনিয়ার নম্বরে ডায়াল করল । অপর প্রান্তে নারী কন্ঠ রিসিভ করল । আমরা অতি উত্‍সাহী কয়েকজন বন্ধু তখন সজীব ও জিনিয়ার কথোপকথন শোনার অপেক্ষায় । নারী কন্ঠ হ্যাঁলো বলার পর ,সজীব বলল "কেমন আছ "? অনেকটা বিরক্তির ভাব নিয়ে অপর প্রান্তের উত্তর "যেমন রেখেছ "।

আমরা কিছুটা রোমান্টিকতার আভাস পেয়ে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি ,সজীব তখন কলার উচিয়ে বলল "কী করো"? নারী কন্ঠ :রুটি বানাই । সজীব :তুমি কেন বানাও ? নারী কন্ঠ : তুমি খাবা তাই ! সজীব : আমি খাবো মানে !! ? নারী কন্ঠের উত্তর "তুমিই না বানাইতে কইলা ! সজীব কিছুটা চমকিত হল । এমন সময় শুনতে পেলাম জিনিয়ার ভাই বলছে "আম্মু , আব্বু মোবাইলে ফোন দিছে "। নারী কন্ঠটি যে জিনিয়া ছিল না তা তখন সবাই বুঝতে পেলাম । সজীব বেঁচারা এতটাই ভরকে গিয়েছিল যে তখনও ফোনের লাইন কাটার কথা ভুলে গিয়েছিল ।

জিনিয়ার মা অপর প্রান্ত থেকে ধমকের সুরে বললেন "এই ছেলে তুমি কে "? সজীব ভয়ে সবকিছু বলে দিলো । জিনিয়ার মা অনেকটা শাসিয়ে বললেন এরপর এই নম্বরে ফোন দিলে স্কুল থেকে বের করার ব্যবস্হা করব ! সজীবের মুখের দিকে তাকিয়ে আমরা বন্ধুরা এই পরিস্হিতিতে হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না । এরপর এস.এস.সি পাশ করে কলেজে একই সাথে পড়লেও জিনিয়া-সজীবের আর কখনও কথা হয়নি । একটি ফুটন্ত প্রেম এভাবে মোবাইলে কন্ঠ না চেনার কারনে ঝরে যাবার ঘটনায় আমরা বন্ধুরা সজীবের দুঃখে সমব্যাথিত । [ ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।