আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দল নির্বাচনে বোর্ড সভাপতির নগ্ন হস্তক্ষেপ, বাংলাদেশের ক্রিকেট কোন পথে?

ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন এশিয়া কাপ ক্রিকেটের জন্য বাংলাদেশ দল ঘোষণা নিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ নাটক আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যতকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। মিডিয়া ও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল নির্বাচকদের মনোনীত দল বদলে দিয়েছেন। এটি আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে এক বিরাট লজ্জা। চরম অব্যবস্থাপনা ও ভুলে ভরা বিপিএল ও পাকিস্তান সফরে ঝুকি নিয়ে বাংলাদেশ দলকে পাঠানো ইত্যাদি নানা বিষয়ে বোর্ড সভাপতি চরম প্রশ্নবিদ্ধ। নতুন করে এ ঘটনা উনার চরম স্বেচ্ছাচারিতারই বহি:প্রকাশ।

কোন দেশের নির্বাচকদের উপর এ রকম বার বার হস্তক্ষেপের ঘটনা ক্রিকেট বিশ্বে বিরল। দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার যেহেতু এতই ইচ্ছা তাহলে সভাপতি নির্বাচক কমিটিকে বাদ দিয়ে নিজেই নির্বাচকের বাড়তি ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাতে অন্তত এ জাতীয় পরিস্থতির সৃষ্টি হত না! টেকনিক্যাল কমিটির ঘোষিত দলে ১৫ জন খেলোয়াড় ছিলেন কিন্তু মূল দলে ১৪ জন। একজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেই খেলোয়াড়টির নাম তামিম ইকবাল, দলের ফিজিও কর্তৃক ঘোষিত ফিট! নির্বাচক কমিটির প্রধান জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান সরাসরি ক্ষোভের সাথে জানিয়ে দিলেন যে, নির্বাচকরা তামিমের ফিটনেসের ব্যাপারে সবুজ সংকেত পেয়ে দলে নিয়েছিলেন।

আর ঐদিকে বোর্ড সভাপতি বিদেশ থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এবার এক নজরে ঘোষিত দলটির দিকে তাকাই। বাংলাদেশ দল: মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, ইমরুল কায়েস, নাজিমউদ্দিন, জহুরুল ইসলাম, নাসির হোসেন, মাশরাফি বিন মুর্তজা, আবদুর রাজ্জাক, ইলিয়াস সানি, নাজমুল হোসেন, শফিউল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন ও আনামুল হক। স্ট্যান্ডবাই: তামিম ইকবাল, শুভাগত হোম, ফরহাদ রেজা, এনামুল হক, মমিনুল হক ও আবুল হাসান। সর্বশেষ সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েছেন ছয়জন! তামিম ইকবাল,ফরহাদ রেজা, নাঈম ইসলাম, অলক কাপালি, শাহরিয়ার নাফীস ও রুবেল হোসেন।

পেসার রুবেল ইনজুরির কারণেই স্বাভাবিকভাবে দলের বাইরে। দল ফিরেছেন শাহাদাত হোসেন,মাশরাফি বিন মুর্তজা,জহুরুল ইসলাম ও নাজিম উদ্দিন। একেবারে নতুন মুখ আনামুল হক। কেন এ ব্যাপক পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে। দলে মুশফিকুর রহিমসহ ২ জন উইকেটরক্ষক, ৫ জন ব্যাটসম্যান (ইমরুল,নাজিম,জহুরুল,নাসির ও মাহমুদ), ১ জন অলরাউণ্ডার (সাকিব), ৪ জন পেসার (মাশরাফি,নাজমুল,শফিউল,শাহাদাত) এবং ২ জন স্পিনার (রাজ্জাক,ইলিয়াস)।

হোম কণ্ডিশনে ৪ জন পেসার দলে নেওয়া ঠিক কতটুকু যুক্তিযুক্ত সংশ্লিষ্টরাই ভাল জানেন। এবারের বিপিএলে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স বিচার করলে দেখা যায় ১১ ইনিংসে সাকিব ৪০ গড়ে ২৮৬ রান, আশরাফুল ১১ ইনিংসে ২৮.৬৬ গড়ে ২৫৮ রান, জুনায়েদ সিদ্দিকী ১১ ইনিংসে ২৬.৪৪ গড়ে ২৩৮ রান, মুশফিক ৯ ইনিংসে ৩৯ গড়ে ২৩৪ রান, নাসির ৭ ইনিংসে ৩০.৩৩ গড়ে ১৮২ রান, মাহমুদউল্লাহ ৯ ইনিংসে ২৫.৭১ গড়ে ১৮০ রান, নবাগত আনামুল হক ১০ ইনিংসে ২৫.১৪ গড়ে ১৭৬ রান, জহুরুল ইসলাম ১০ ইনিংসে ১৪.৪০ গড়ে ১৪৪ রান, অলক ৮ ইনিংসে ২০.৬৬ গড়ে ১২৪ রান, ইমরুল ৭ ইনিংসে ২৩ গড়ে ১০২ রান, নাঈম ইসলাম ৬ ইনিংসে ২৫.২৫ গড়ে ১০১ রান, নাজিম উদ্দিন ৪ ইনিংসে ১৫.২৫ গড়ে ৬১ রান, নাফীস ৩ ইনিংসে ১৯ গড়ে ৩৮ রান এবং তামিম ২ ইনিংসে ৪ গড়ে ৮ রান করেন। আর জাতীয় দলের হয়ে ২০১১ সালে সাকিব ৫৬৪ রান, মুশফিক ৫২৭ রান, তামিম ৪৭৫ রান, ইমরুল ৪২১ রান ও রিয়াদ ৩০৪ রান করে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫ জন রান সংগ্রাহক ছিলেন। অপরদিকে বিপিএলে বোলারদের মধ্যে ইলিয়াস সানি টুর্ণামেন্টের সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট, সাকিব ১৫ টি, এনামুল হক জুনিয়র ১৩ টি, আবদুর রাজ্জাক ১১ টি, মাশরাফি ১০টি, নাজমুল ৭ টি, শফিউল ৫ টি, রিয়াদ ও নাসির ৪ টি করে, শাহাদাত, অলক, ফরহাদ রেজা ৩ টি করে উইকেট লাভ করেন। আর জাতীয় দলের হয়ে ২০১১ সালে সাকিব ২৫ টি, রুবেল ২৩ টি, শফিউল ১৮ টি, রাজ্জাক ১৭ টি ও রিয়াদ ১২ টি উইকেট লাভ করে সেরা ৫ উইকেটশিকারী ছিলেন।

পরিসংখ্যান, অভিজ্ঞতা সব দিক বিচার করলে দলে নাজিমউদ্দিন, জহুরুল ইসলাম কিভাবে জায়গা পান তা নিয়ে বিস্ময় জাগে। শাহাদাতের পরিবর্তে একজন বাড়তি স্পিনার নেওয়া যেত কিংবা উদীয়মান কোন পেসারকে সুযোগ দেওয়া যেত। এবারের বিপিএলে ধারাবাহিক ভাল খেলেও উপেক্ষিত দেশের অন্যতম প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল। তামিমের উপর যেহেতু বোর্ড সভাপতির এতই ক্ষোভ নাজিমের পরিবর্তে জুনায়েদকে নেওয়া উচিত ছিল। উল্লেখ্য তামিম ফিটনেস সমস্যা ও চট্টগ্রাম কিংসের টিম ম্যানেজম্যান্টের সাথে ভুল বুঝাবুঝির জেরধরে বিপিএলে বেশি ম্যাচ খেলতে পারেন নি।

আবার শোনা যাচ্ছে বিপিএলের ব্যবস্থাপনার অনিয়ম নিয়ে মুখ খোলায় মুশফিককে অধিনায়ক থেকে বাদ দেওয়ার চিন্তাভাবনা থেকে দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয় নি। এর আগে মুশফিককে ঐ বিষয়ে শোকজ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশী ক্রিকেটে রাজনীতির দুষ্ট আছড় পড়েছে। এ জাতীয় ঘটনাগুলো নিশ্চয়ই জাতীয় ক্রিকেটের জন্য সুখকর নয়। এখন দেখার অপেক্ষায় শেষ পর্যন্ত পরিস্থতি কোন দিকে যায়... আমার এ লেখাটি যখন পড়বেন হয়তো ততক্ষণে আরো বেশকিছু ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আমাদের দেশে সবই সম্ভব। বোর্ড সভাপতি শুধুমাত্র একজন সভাপতি নন তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য। ক্রিকেটের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার পথে। এর শেষ কোথায়? নোট: পরিসংখ্যানগুলো ইএসপিএন ক্রিকইনফো থেকে নেওয়া। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।