আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা অভিযোগ করেছেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার নেপথ্যে খালেদা জিয়ার কালো হাত জড়িত ছিল। সরকার উৎখাতে এ ঘৃণ্য নীলনক্সা ও ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলেও খালেদা জিয়ার ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত এখনও বন্ধ হয়নি। দেশবাসী জানতে চায়, বিডিআর বিদ্রোহের কিছু আগে কালো কাচের গাড়িতে করে ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে খালেদা জিয়া কেন একটি দূতাবাসে গিয়ে আশ্রয় নিলেন? সব দল ও মানুষ ওই ভয়াল দুর্যোগময় মুহূর্তে সাহায্যে এগিয়ে এলেও বিএনপি-জামায়াতের কেউ কেন আসেনি? খালেদা জিয়ার কাছেই এ হত্যাযজ্ঞের মূল রহস্য জানা যাবে। দেশের জনগণও একদিন তাঁর (খালেদা জিয়া) কাছ থেকে জবাব চাইবে।
শনিবার বিকেলে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের স্মরণে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
বক্তারা দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদেই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার বিচার সম্পন্ন এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়। বিরোধী দলকে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলেন, আগামী নির্বাচন প্রশ্নে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বা অন্য কোথাও সেøাগান দিয়ে লাভ নেই। কার অধীনে, কি পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে সে বিষয়ে সংসদে আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব। এ বিষয়ে বাইরে আলোচনার প্রয়োজন নেই।
আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাব্লু, কেন্দ্রীয় সদস্য সুজিত রায় নন্দী ও নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ।
সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।
সভাপতির বক্তব্যে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, খালেদা জিয়া একটার পর এক ঘটনা ঘটিয়েই চলেছেন। চট্টগ্রামে জনসভায় উস্কানি দিয়ে বললেন, ‘সামরিক বাহিনীতে গুম’ চলছে। এর ক’দিন পরই ঘটল সেনাবাহিনীতে একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থান। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, জঙ্গী-সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর শিখ-ী হয়ে কাজ করছেন এই খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, দেশ দু’ভাগে বিভক্ত।
এক পক্ষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যারা গণতন্ত্রের বিকাশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে চায়; অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষ যারা দেশকে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত করতে চায়। এই শক্তির শিখণ্ডী হিসেবে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া কাজ করছেন।
বিএনপিকে সংসদে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি অবমাননা। এ ব্যবস্থা আর ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই।
একমাত্র বিকল্প পদ্ধতি হচ্ছে সংসদে আলোচনা করে সমাঝোতার মাধ্যমে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। তাই সংসদে যোগ দিয়ে বিরোধী দলকে এ বিষয়ে আলোচনার আহ্বান জানান তিনি। এ আওয়ামী লীগ নেতা খালেদা জিয়ার ডাকনাম পুতুল উল্লেখ করে বলেন, তাঁকে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা পুতুলের মতো নাচাচ্ছে।
আগামী নির্বাচনের এখনও দুই বছর বাকি উল্লেখ করে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে আলোচনার সুযোগ নেই কিন্তু নিরপেক্ষ নির্দলীয় নির্বাচনের স্বার্থে যে কোন আলোচনা হতে পারে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষের ২/৩ মাস আগে এ আলোচনা হতে পারে।
এখন এ নিয়ে কোন আলোচনার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। বিরোধী দল বিএনপিকে সংসদে এসে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজপথে আন্দোলন, হুমকি-ধমকি দিয়ে কোন লাভ হবে না।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার সময় কেন বিরোধীদলীয় নেত্রী আত্মগোপনে গিয়েছিলেন সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে হানিফ বলেন, সরকারের মাত্র ৫০ দিনের মাথায় এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। ওই দুর্যোগময় মুহূর্তে সবাই ছুটে এলেও বিরোধীদলীয় নেত্রী পালিয়ে একটি দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন কেন? সবাই উদ্বিগ্ন থাকলেও একমাত্র বিএনপি-জামায়াত নেতারা নির্লিপ্ত ছিলেন কেন? তিনি বলেন, দেশের মানুষ জানে যে বিরোধীদলীয় নেতার ঘুম ভাঙ্গে দুপুর ১২টায়। কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের দিন অত সকালে উঠে অন্যের গাড়ি নিয়ে পালালেন কেন?
বিএনপি নেতা এমকে আনোয়ারের কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নেতাদের লাগামহীন বক্তব্যে তাঁদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৫৭ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ৪২ জনই আওয়ামী পরিবারের সন্তান। সরকার উৎখাতের জন্যই এ ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু নীলনক্সা ব্যর্থ হওয়ার ফলে এখন বিএনপির নেতারা আবোল-তাবোল বলে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা আড়াল করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, কেন ওইদিন সকালে খালেদা জিয়া পালিয়ে গিয়েছিলেন তার জবাব পাওয়া গেলে প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হবে। দেশের জনগণ একদিন ঠিকই তাঁর কাছ থেকে এর জবাব চাইবেন।
আহমদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বিডিআর বিদ্রোহের সব তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে। এ ঘটনার সঙ্গে খালেদা জিয়ার কালো হাত রয়েছে। বিদ্রোহের আগে কেন খালেদা জিয়া আত্মগোপনে গিয়েছিলেন সে ব্যাপারে তদন্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, নির্বাচিত মহাজোট সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যেই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। বর্তমান সরকারের মেয়াদেই এ বিদ্রোহের বিচার শেষ হবে, জড়িতরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে।
বিএনপি-জামায়াত ঘাতকের দলÑ নাসিম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ধৈর্য, বিচক্ষণতা ও দুরদর্শিতার সঙ্গে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করেছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ওই সময় সব রাজনৈতিক দল সরকারকে সহযোগিতা করলেও বিএনপি-জামায়াত অসহযোগিতা করেছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী ভোরে বাসভবন ত্যাগ করে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। একজন দায়িত্ববান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন, বিডিআরকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা সদস্যদের স্মরণে শনিবার বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচী উদ্বোধন করে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত ‘শিখা চিরন্তন’-এর সামনে এ প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচী পালিত হয়।
এ সময় মোহাম্মদ নাসিম নিহত সেনা সদস্যদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যদি ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা না করতেন তবে আরও সামরিক-বেসামরিক মানুষের রক্ত ঝরত। ঢাকা শহর মৃত্যুকূপে পরিণত হতো।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি-জামায়াত হলো ঘাতকদের দল।
জিয়াউর রহমান বিনাবিচারে কারাগারে অনেক সৈনিক হত্যা করেছিল। বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে কর্নেল তাহেরসহ অনেক সেনা সদস্যকে হত্যা করেছিল। আসলে বিএনপি-জামায়াতের কাজই হলো খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া; খুনীদের লালন-পালন করা। তারা খুনীদের সমর্থক। তারা একাত্তর ও পঁচাত্তরের ঘাতকদের লালন-পালন করেছে।
আর আওয়ামী লীগের কাজ হলো খুনীদের বিচার করা। আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার করে শাস্তি দিয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও শুরু হয়েছে। ইনশাল্লাহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। কেউ ঠেকাতে পারবে না।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।