আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

র্যাবের অস্ত্র মামলায় লিমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

র্যাবের গুলিতে পা হারানো কলেজছাত্র লিমনের বিরুদ্ধে র্যাবের করা অস্ত্র মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। একই সঙ্গে এ মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে লিমনের করা আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়।
গতকাল সোমবার ঝালকাঠি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক কিরণ শংকর হালদার শুনানি শেষে অভিযোগ গঠন করে মামলার বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন। আগামী ২৬ আগস্ট মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য তারিখ ধার্য করা হয়।
অভিযোগ গঠন আদেশের পর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লিমন ও আদালতের বারান্দায় থাকা লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন।


লিমনের আইনজীবী নাসির উদ্দিন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য উচ্চ আদালতে যাব। আশা করি, উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাব। ’
তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ২২২ ধারা অনুযায়ী একজন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে হলে যে উপাদান থাকা প্রয়োজন, তা লিমনের বিরুদ্ধে ছিল না। অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে হলে সংশ্লিষ্ট আসামির কাছ থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার থাকতে হবে। এ মামলায় লিমনের কাছ থেকে কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়নি।


গতকাল আদালতে লিমনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী নাসির উদ্দিন কবির, নাসিমুল হাসান, আক্কাস সিকদার ও মানিক আচার্য। শুনানিতে তাঁরা বলেন, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ বিকেলে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে নিজ বাড়ির কাছে মাঠে গরু আনতে যায় একাদশ শ্রেণীর ছাত্র লিমন। তখন স্থানীয় সন্ত্রাসী মোর্শেদ জমাদ্দার মনে করে লিমনকে ধরে র্যাব এবং তার পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। সে অজ্ঞান অবস্থায় ঘটনাস্থলে পড়েছিল। একজন অজ্ঞান কিশোরের কাছ থেকে র্যাব কীভাবে একটি পিস্তল উদ্ধার করল?
আইনজীবীরা বলেন, পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে র্যাব ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে ১৫ মিনিটের বন্দুকযুদ্ধে ১৫টি গুলিবর্ষণের কথা বলা হয়েছে।

অথচ আলামত হিসেবে মাত্র একটি গুলির খোসা দেখানো হয়েছে।
এ মামলায় লিমনকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য করা আবেদনের বিরোধিতা করেন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি এম আলম খান। তিনি লিমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান।
দুই বছর তিন মাস আগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাবের সদস্যদের গুলিতে আহত হয় লিমন হোসেন (১৬)। এরপর ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা লিমনের জীবন বাঁচাতে তার বাম পা কেটে ফেলেন।

দরিদ্র পরিবারের এই কিশোরের প্রতি র্যাবের নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদে সরব হয় দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় চিকিৎসা শেষে লিমন আবার লেখাপড়ায় ফিরে যায় এবং চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
গুলি করার পর ওই দিনই লিমনসহ আটজনের বিরুদ্ধে রাজাপুর থানায় দুটি মামলা করেন র্যাব-৮-এর তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) লুৎফর রহমান। এর মধ্যে একটি অস্ত্র মামলা এবং অপরটি র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ করে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে মামলা। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায়ও লিমনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

সেটি এখন অভিযোগ গঠনের অপেক্ষায় রয়েছে।
অপর দিকে লিমনকে অন্যায়ভাবে গুলি করার ঘটনায় মা হেনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে ডিএডি লুৎফুর রহমানসহ র্যাবের ছয় সদস্যর বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল একটি মামলা করেন। এ মামলায় র্যাব সদস্যদের অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে হেনোয়ারা বেগম নারাজি আবেদন করলে তা-ও খারিজ করে দেন আদালত। এর বিরুদ্ধে ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন হেনোয়ারা বেগম।

এ বিষয়ে আগামী ১৩ আগস্ট শুনানির দিন ধার্য আছে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।