আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

র্যাবের পিকআপ, পেপসি স্টাফ ও পাগল

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

র্যাবের টহল গাড়ীর একটা পিক-আপ যাচ্ছে। গাড়িটির পেছনের অংশে আলগা একটা ছাউনি আর লম্বালম্বি বিপরীতমূখী বেঞ্চি যেখানে র্যাব সদস্যরা বসেন। আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে তারা আতংক তৈরীর চেষ্টা চালায় সন্ত্রাসীদের। পেছনের ঐ জায়গায় কয়েকটা প্লাস্টিকের রাস্তা সেপারেটর রাখা আছে সাথে সহজে প্রতিস্থাপনযোগ্য একটা সাইনবোর্ড, সেখানে লেখা থামুন! চেকপোস্ট। আমি যেখানে দাড়িয়ে অফিসের গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করি সেটা একটা T সিরিজ রাস্তা।

আমি টি টির মাথার বামপাশের ফুটপথে দাড়িয়ে যেতে দেখি র্যাবের গাড়িটিকে। পেছনের বেঞ্চিতে দুজন কালোর্যাব বসে আছে দুইদিকে অস্র উঁচিয়ে। স্বাস্থ্য রুগ্ন মনে হলো তাদের, তারচেয়েও বড় কথা আমি যতক্ষণ খুঁটিয়ে দেখছিলাম তাদের গাড়ী, মনুষ্যচেহারা, অস্র ততক্ষণ তারাও বেশ সন্দেহজণক দৃষ্টিতে আমাকে দেখছিলেন। হঠাৎ টনক নড়ল আমার, খোচাখোচা দাড়ীতে আমাকে গুন্ডা গুন্ডা লাগছে বোধহয়! চোখ ঘুরিয়ে একজন কমপ্লিট সু্যট পরিহিতকে দেখতে থাকি। ভদ্রলোক উসখুশ করছেন যে সেটা স্পষ্ট টের পাওয়া যায়।

দৃষ্টি আরেকটু গভীর হলে দেখতে পাই তার কোটপ্যান্ট জরাজীর্ণ। কোর্টের বামপাশে হাতার কাছে পেপসির লোগো। পুরানো জুতোটা ঘসেমেঝে চাকচিক্য করার চেষ্টা হয়েছে। হাতে একটা ঠাউস সাইজের চামড়ার কালো ব্যাগ। টিসিরিজ রাস্তার মাঝখানের আইল্যান্ড একটা রুটের বাসের টিকিট কাউন্টার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সেখানে লম্বা লাইন। লোকটা ইতস্তত করছেন তার গন্তব্যে তিনি বাসে চড়ে যাবেন নাকি অন্যকিছুতে। কিছুক্ষণ পরে একটা রিকশাকে জিজ্ঞেস করলেন ন্যাম সম্মেলন কেন্দ্রে যাবে কিনা। রিকশাআলা 30 টাকা চাইলো। ভদ্রলোক বোধহয় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না।

আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে বাসের কাউন্টারের দিকে হাঁটা শুরু করলেন। আমার মনে হলো তিনি এমন ভাবছেন কোট, টাই পরে তিনি বাসে গেলে অনেক মানুষের মধ্যে সহজ বোধ নাও করতে পারেন। হয়তো তিনি তার মলিন কোট, টাই, প্যান্ট আর জুতোটা নিয়েও কিঞ্চিত লজ্জিত। অফিস থেকে পাওয়া এ সু্যট হয়তো বছরে অল্পকয়েকদিনই পড়া হয়। হয়তো তার এই একটামাত্রই সু্যট যা তিনি ব্যক্তিগত সমস্ত অনুষ্ঠানগুলোতে পড়ে থাকেন।

বয়সও নিশ্চয়ই অনেক হয়েছে। হতে পারে অনেক কিছু। সিগনালে গাড়ী দাড়ানো। চওড়া ফুটপথে উঠে পড়েছে কয়েকটা রিকশা। একজন উসকোখুশকো চুল, পেটমোটা, কয়েকপলেস্তার পোষাক পরিহিতা পাগলী একটা রিকশাকে ফুটপথে আটকে দিয়েছে।

রিকশাআলাকে সে অবোধ্য ভাষায় কিছু বলছেন, কিন্তু রিকশাআলা তাকে গালি দিচ্ছেন উচ্চস্বরে। আমার পাশে বসা কলিগ বললেন, দেখলেন, পাগলের কাজ! আমি ভাবছি, পাগল আসলে কে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।