২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। প্রতি বছর সারা বিশ্বে এই দিনটি পালন করা হয় শ্রদ্ধাভরে । বাঙ্গালী হিসেবে আমি অনেক গর্ব বোধ করি এই ভেবে যে আমরাই একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষার মান রক্ষার জন্য জীবন দিতে পেরেছি। প্রথিবীর আর কারো গর্ব করার মত এমন কোন ঘটনা নেই যা আমাদের রয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই প্রতি বছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম কখন এই দিনটি আসবে, কখন শহীদ মিনারে খালি পায়ে ভাষা শহীদদের স্মরণে ফুল দিতে যাবো ।
আমার মনে পড়ে ফুল দেবার সময় আমি ভাষা শহীদদের কথা ভেবে পূলকিত হতাম,অন্য রকম শিহরণ দোলা দিয়ে যেত আমার সারা শরীরে।
আজ বারবার মনে হচ্ছে আমার সন্তান বোধ হয় এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করবে না, ভাষা শহীদদের কথা ভেবে তাদের মন পূলকিত হবে না । আমার এই মনে হবার একটি যুক্তি যুক্ত কারনও আছে।
গত কয়েক বছর ধরে দেখছি রাজনৈতিক দলগুলো ২১শে ফেব্রুয়ারীকে উপলক্ষ করে তাদের দলীয় শক্তি প্রদর্শনের ঘৃন্য চেষ্টায় লিপ্ত । প্রতি বছর এই দিনে দুটি বড় রাজনৈতিক দল ফুল দিতে গিয়ে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয় ।
তাদের মনে যদি শীহদদের প্রতি শ্রদ্ধার বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা থাকতো তবে আমারে এ ব্যপারে কোন আপত্তি ছিল না। কিন্তু তাতো নয়!!! তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আগে ফুল দিয়ে জানান দেয়া যে আমরাই সবচেয়ে শক্তিশালী।
আমার একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি- কাল রাত ১১টায় গিয়েছিলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্দেশ্য ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া। গেট দিয়ে ঢুকেই ভয় পেয়ে গেলাম, দেখি একটা জনশ্রোত আমার দিকে এগিয়ে আসছে আমি রাস্তার পাশে দাড়িয়ে গেলাম। আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
আমি দেখলাম তাদের চোখ থেকে এক ধরনের শক্তি হুঙ্কার দিচ্ছে আর বলছে দেখ আমরাই ক্যাম্পাসের রাজা।
রাত ১২ টা ১ মিনিট... হঠাৎ ক্যম্পাসের পূর্ব কোন থেকে স্লোগান ওঠলো “জয়.....বাংলা.....জয়.......বঙ্গবন্ধু্”। মিছিলটি মিনারের যত কাছে আসতে লাগলো গর্জন ততোই বাড়তে লাগলো। কেউ বলছে না রফিক জব্বার তোমাদের সালাম অথবা আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি ....... কারো চোকে মুখে শ্রদ্ধার লেশ টুকুও নেই। এক পর্যায়ে মনে হল আজ বঙ্গবন্ধুর জন্ম অথবা মৃত্যুবার্ষিকী ।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে এ থেকে আমরা কি শিক্ষা পাচ্ছি????? তরুন সমাজ কি দিক নির্দেশনা পাচেছ????? নিশ্চয়ই ভাল কোন কিছু নয়। এভাবে চলতে থকলে হয়তো এক দিন ২১শে ফেব্রুয়ুরী থাকবে না যদিও থকে তবে সেটা ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মনের দিন হিসেবে নয়, অন্য কোন রাজেনৈতিক কারনে।
তাই মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আপনাকে বলছি আপনার সোনার ছেলেদের বলে দিন সব দিন বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করার জন্য বরাদ্দকৃত নয় । তিনি নিঃসন্দেহে বাঙ্গালীর শ্রেষ্ঠ সন্তান কিন্তু বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষার পেছনে আরো অনেকের অবদান রয়েছে যাদেরকে অস্বীকার করলে আমাদের নিজেদেরই অস্বীকার করা হবে । আপনার বাছাদের কর্মকান্ডের কারনে ভাষা শহীদরা ঢুকরে কাঁদছে ।
তাদের কান্না থামান....... ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে বাঙ্গালীকে বাঁচান ।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী আপনাদের দু’জনকেই বলছি- আমরা চাই ভাষা শহীদরা আমাদের মাঝে বেঁচে থাক আজীবন। আপনাদের রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় কিংবা বঙ্গবন্ধুর আড়ালে আমরা তাদের হারাতে চাই না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।