আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। স্টার উড গ্রুপের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড শেরাটনের ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার সাড়ে ৯ মাস পর রূপসী বাংলা হোটেল পরিচালনার দায়িত্ব নিতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপের সাথে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড। গতকাল সকালে এ চুক্তি সই হয়েছে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো হোটেলটির পরিচালনার দায়িত্ব নিচ্ছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল।
বিএসএলের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন সংস'ার চেয়ারম্যান বিমান ও পর্যটন সচিব মো: আতাহারুল ইসলাম ও ব্যবস'াপনা পরিচালক এয়ার কমোডর (অব লুৎফুর রহমান এবং ইন্টারকনের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সংস'ার দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার প্রধান পরিচালক ক্রিস্টোফার জেমস কলোনি। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য ভূমিকার জন্য স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে হোটেলটিকে বীর উত্তম খেতাব দেয়া হয়। বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগকারী ও পর্যটকদের পছন্দের দেশের তালিকায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। সরকার তাই পর্যটনের উন্নয়নে প্রাসঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বিনিয়োগকারী ও পর্যটকদের আন-র্জাতিক মানের আতিথেয়তা নিশ্চিত করার সব পদক্ষেপ সরকার বাস-বায়ন করবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হোটেলের সংস্কারকাজ হাতে নেয়া হয়েছে ও এ কাজ শেষ করতে দুই বছর লাগবে। সংস্কার শেষে এ চুক্তির আওতায় ইন্টারকন্টিনেন্টালের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ৩০ বছরের জন্য হোটেলটি হস-ান-র করা হবে। চুক্তির শর্তানুযায়ী উভয়পক্ষ সম্মত থাকলে পাঁচ বছর করে আরো দুইবার সময় বাড়ানো যাবে। চুক্তি অনুযায়ী ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্রথম তিন বছর মোট আয়ের শতকরা দুই ভাগ, চতুর্থ ও পঞ্চম বছরে আড়াই ভাগ এবং পরবর্তী সময়ে তিন ভাগ হিসেবে ব্যবস'াপনা ফি লাভ করবে। হোটেলের নিট লাভের ওপর সংস'াটি শতকরা ৮ থেকে ১০ ভাগ প্রণোদনা ফি পাবে।
২০১০ সালে রূপসী বাংলা হোটেল ৯৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা আয় করে। নিজস্ব ব্যবস'াপনা খরচ ও কর বাদ দিয়ে হোটেলটি ১৬ কোটি টাকা নিট লাভ করে। গত বছরের ১ মে স্টার উড গ্রুপ বাংলাদেশ থেকে চলে যায়। ২৭ বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজারের অভিজাত হোটেল ব্র্যান্ড শেরাটন বাংলাদেশে ব্যবসায় শুরু করেছিল। ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর সরকারের বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের সাথে শেরাটনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
এরপর সরকারের সাথে আলাপ হচ্ছিল তাদের থাকার ব্যাপারে। তবে শেষ পর্যন্ত সংস্কারকাজের কমিশন ভাগাভাগিতে রাজি না হয়ে গত ৩০ এপ্রিল তারা চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ছাড়ে। ৩০ এপ্রিল তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তারা ঢাকা ছেড়েছেন। ভারতের কর্নাটকে তারা নতুন একটি হোটেলের অপারেশন শুরু করছেন। চলতি বছর পাকিস্তানে তাদের ব্যবসায় বৃদ্ধি করা হবে।
সূত্র মতে, সরকারের ভেতরকার রাজনৈতিক ও আমলাদের একটি অংশ শেরাটনের কাছে আর্থিক সুবিধা চেয়েছিল। হোটেলের সংস্কারকাজের জন্য মোট বরাদ্দ অর্থের ১০ শতাংশ দাবি করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। এ অর্থ দিতে রাজি হয়নি শেরাটন কর্তৃপক্ষ, তাই এ বিষয়ে বরাদ্দ করা হবে কি না তা ঝুলে যায়। সর্বশেষ সংস্কারকাজের জন্য ৩০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা জানায় সরকার। সূত্র মতে, শেরাটনে তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চুক্তি নবায়ন করার বিষয়ে কথা বলেছিল।
সরকারের তরফে এ বিষয়ে আগ্রহ দেখানো হলেও এর পেছনে আর্থিক দাবি ছিল। এটি মেটাতে অপারগতা জানালে তাদের বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন সরকারের কিছু আমলা ও বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের কর্মকর্তারা। পরে টিউলিপ নামে একটি বিদেশী হোটেল চেইনের সাথে কথা বলা হয়। এতে সরকারের সায় নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা চালান সরকারের ভেতরের একটি অংশ। অবশ্য শেষ পর্যন্ত এটাকে আনা সম্ভব হয়নি।
এরপর শেরাটনের সাথে কথা বলার পাশাপাশি সরকার একটি আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করে। এতে শেরাটনের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। এমনকি শেরাটনের এশিয়ার প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধানকে ঢাকা শেরাটন হোটেলে আমন্ত্রণ জানিয়েও আনা যায়নি বলে জানিয়েছেন বর্তমান রূপসী বাংলা হোটেলের মহাব্যবস'াপক মাহফুজুর রহমান। তিনি বলছেন, মূলত স্টার উড তাদের শেরাটন ব্র্যান্ডের ব্যবসায় গুটিয়ে নিতে চাচ্ছেন। এ কারণে তারা এখানে থাকছেন না।
মাহফুজের এ দাবির সত্যতা মেলেনি। স্টার উড তাদের শেরাটন ব্র্যান্ডে ৬৩টি হোটেল অপারেট করছে বা করবে। তাদের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা একাধিক হোটেল অপারেট করছেন। সামনে আরো কিছু হোটেল উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। ভারত, চীন, আমেরিকায় তারা নতুন নতুন হোটেলের সাথে যুক্ত হচ্ছেন।
পাকিস্তানে তারা দুটো হোটেল খুলছেন। আগামী বছরের শেষ দিকে একটি এবং তার দুই বছরের মধ্যে চালু করা হবে অন্যটি। সংশ্ল্লিষ্ট সূত্র মতে, শেরাটন বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে চায়নি; বরং তারা বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডকে প্রস্তাব করেছিল হোটেলটির ব্যাপকভিত্তিক সংস্কারকাজ করার। সে জন্য তারা প্রথমে ১৫ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিলেন। পরে এটি বাড়িয়ে ৩০ মিলিয়ন ডলার প্রস্তাব করা হয়।
কিন' সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ কাজটির জন্য কমিশন দাবি করে। এ নিয়ে তারা স্টার উডের সাথে কথা বলেন। এতে স্টার উড রাজি না হলে তারা একটি সম্ভাবত্য যাচাই করে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ৩০ মিলিয়ন ডলারের সংস্কারকাজের যে কথা বলছে তা করার জন্য এত অর্থের দরকার নেই। আরো কম খরচে এ কাজ করা সম্ভব। এ বিষয়ে স্টার উডকে অবহিত করা হলে তারা বাংলাদেশে ব্যবসায় গুটানোর পক্ষে মত দেন।
পরে অবশ্য সরকারের তরফে বলা হয়েছিল যে তাদের পুরো ৩০ মিলিয়ন ডলারই সংস্কারকাজের জন্য দেয়া হবে। কিন' স্টার উড এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি। রূপসী বাংলা হোটেলের মহাব্যবস'াপক মাহফুজ বলছেন, সংস্কারকাজের বরাদ্দ হয়েছে ঠিকই। তবে এর পেছনে আর্থিক সুবিধা দাবির সত্যতা নেই বলে মনে করেন তিনি। সূত্র মতে, সে সময় সরকার নতুন কোনো চেইন হোটেল অপারেটরের সাথে চুক্তি করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিল।
ওই কমিটি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ম্যারিয়ট হোটেল ও সুইস হোটেলের সাথে কথা বলে এবং তাদের শর্তগুলো খতিয়ে দেখে। তারপর তারা এ বিষয়ে একটি সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠায়। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর নতুন করে চুক্তি হয়। বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল শেরাটন স্বাধীনতা উত্তরকালে কাজ শুরু করেছিল। বর্তমানে হোটেলের ২৭২টি রুম রয়েছে।
পাঁচটি স্যুট, ইনডোর গেমস, সুইমিং পুল, কনফারেন্স সেন্টারসহ বহুবিধ সুবিধা রয়েছে এখানে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা বাংলাদেশে সফরে এসে এখানে অবস'ান করেছেন। এ হোটেলটি এখানে সার্ক সম্মেলন, বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ডি এইটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ভেনু এবং অতিথিদের আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশের হোটেল-পর্যটন শিল্পের পরিচিতির ক্ষেত্রেও এটি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।