D:\Picnic-2010\503.jpg আমি যখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তাম তখন মা একদিন আমাকে ডেকে বললেন- 'এবার বার্ষিক পরীক্ষায় তুমি প্রথম স্থান পেলে তোমাকে আকর্ষণীয় একটা পুরষ্কার দেব'। আমি জিজ্ঞেস করলাম- কী পুরষ্কার? মা বললেন- 'আগে পরীক্ষায় প্রথম হও তারপর দেখবে'। পুরষ্কারের লোভেই হোক আর যে কারণেই হোক আমি মনযোগ সহকারে পড়ালেখা করে পরীক্ষা দিলাম। এদিকে ফলাফল যেদিন বের হবে এর ঠিক আগের দিন মা আমার জন্য একটা লাল ফুটফুটে জামা কিনে বাসায় লুকিয়ে রাখলেন। আমাকে দেখালেন না।
স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেই মাকে বললাম- 'মা আমি প্রথম হয়েছি'। মায়ের খুশী দেখে কে। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করলেন। আমি মাকে বললাম- তোমার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবার আমার পুরষ্কারটি দাও। ঠিক তখনই মা আমাকে লুকিয়ে রাখা ঐ নতুন জামাটি বের করে এনে পরিয়ে দিলেন।
আমি তখন খুশীতে লাফাচ্ছিলাম। কি বলব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না, আর কি বলেছিলাম তা এখন সঠিক মনেও নেই। তবে এটুকু মনে আছে আমি মাকে বলেছিলাম- 'মা আমি পঞ্চম শ্রেণীতেও প্রথম হব'। পরবর্তীতে আমি পঞ্চম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিলাম এবং বৃত্তিও পেয়েছিলাম। তৎপরবর্তীতে আমি এর ধারাবহিকতা রক্ষায় সচেষ্ট ছিলাম।
যেকোন স্বীকৃতি বা পুরষ্কার পেলে আনন্দ লাগে। যে কাজের জন্য পুরষ্কৃত করা হয় সে কাজ আরোও সুচারুভাবে করার আগ্রহ, চেষ্টা, আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ বেড়ে যায়। আর যিনি পুরষ্কৃত হন তিনিও নিজেকে সম্মানিতবোধ করেন। তাই যেকোন ভালো কাজের জন্য কেউ পুরষ্কৃত হবেন, স্বীকৃতি পাবেন এটা আশা করাটা মোটেই ভুল নয়। যেসকল ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখেন, ভালো ভালো কাজ করেন- তাঁদেরকে সমাজ তথা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদান বা পুরষ্কৃত করা হবে এটা আমরা সবাই চাই।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক সম্মাননা, স্বীকৃতি কিংবা পুরষ্কৃত করা হয়। এসব পুরষ্কার কাউকে জীবিত অবস্থায় আবার কাউকে মরণোত্তর প্রদান করা হয়ে থাকে। যারা জীবিত অবস্থায় পেয়ে থাকেন তারা খুবই সৌভাগ্যবান। অন্তত রাষ্ট্র যে তাকে সম্মানিত কিংবা পুরষ্কৃত করল, সেটি তিনি বুঝতে ও উপলব্দি করতে পারলেন। তিনি নিজের দায়িত্ববোধ থেকে রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্যে আরোও বেশী কাজ করার আগ্রহ ও উদ্দীপনা পান।
রাষ্ট্রও তখন তাঁর কাছ থেকে সৃষ্টিশীল আরোও অনেক কিছু পায়। এতে রাষ্ট্র অনেক উপকৃত হয়।
আর যারা মরণোত্তর পুরষ্কার পান, তারা অবশ্যই রাষ্ট্রের জন্যে তাঁদের অবদানের স্বীকৃতিসরূপ পুরষ্কৃত হন। যদিও রাষ্ট্রের কাছ থেকে জীবিত অবস্থায় এ পুরষ্কারটি পাওয়া তাঁদের একরকম প্রাপ্যই ছিল। জীবিত অবস্থায় এ পুরষ্কার বা স্বীকৃতি পেলে তারা নিজেদেরকে আরোও বেশী সম্মানিতবোধ করতে পারতেন এবং হয়তো রাষ্ট্রের কল্যাণে আরো বেশী অবদান রাখতে পারতেন।
রাষ্ট্র হয়তো আরোও উপকৃত হত। এ দায়টা কার?
তাই কারো কাজের স্বীকৃতিসরূপ রাষ্ট্র কর্তৃক যেকোন পুরষ্কার জীবিত অবস্থায় দেয়াটাই উত্তম। আমাদের সকলের অবহেলায় হোক আর যেকারণেই হোক জীবিত অবস্থায় যাদেরকে পুরষ্কৃত বা সম্মানিত করা যায়নি, তাঁদেরকে অবশ্যই পুরষ্কৃত করতে হবে। সম্মানিত করতে হবে। আর জীবিত যাদেরকে রাষ্ট্র কর্তৃক এখনো পুরষ্কৃত বা সম্মানিত করা হয়নি তাঁদেরকে যেন যথাসময়ে রাষ্ট্র কর্তৃক পুরষ্কৃত করা হয়।
এটা সবাই প্রত্যাশা করে।
এবার যারা একুশে পদকে ভূষিত হলেন তাঁদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, তারা যে রাষ্ট্রের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গকে তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদানের জন্যে একুশে পদকে পুরষ্কৃত করেছেন। সম্মানিত করেছেন। সেইসাথে রাষ্ট্রের মাননীয় দায়িত্বপ্রাপ্তদেরকে আহবান জানাচ্ছি, এখনও যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি (একুশে পদক বা রাষ্ট্রীয় অন্যান্য পদক) পাননি তাঁদেরকে যেন জীবিত অবস্থায়ই পুরষ্কৃত করা হয়।
পরিশেষে বলতে পারি- যারা সমাজ তথা রাষ্ট্রের কল্যাণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তরিকভাবে কাজ করেন তাঁরা নিজেদের বিবেকের তাড়নায় করেন। দায়িত্ববোধ থেকে করেন। রাষ্ট্র কর্তৃক পুরষ্কৃত হলে তাঁরা খুশী হন আর না পেলেও তাঁদের কাজ থেমে থাকেনা। এটা আমার বিশ্বাস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।