বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ... মাহতাব হোসেন, কারমাইকেল কলেজ
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছোটবেলায় ঘুম থেকে উঠেই খাবার খুঁজতে চলে যেতাম বাসার নির্দিষ্ট জায়গায়। কোনদিন যদি খাবার না পেতাম তখন আকাশ-বাতাস ফাটিয়ে কাঁদতে বসে যেতাম। সেই সময় আব্বা মাথায় হাত বুলিয়ে হোটেলে নিয়ে গিয়ে পেট পুরে নাস্তা খাওয়াতো। ঈদে বাবা নিজের কাপড় না কিনে কষ্টের সংসারে আমাদের ভাইবোনদের জামা কাপড়ের ব্যবস্থা করতেন। বাবা বাসা থেকে কোথাও গেলে আমি পিছু ছাড়তাম না, একদিন খালি গায়ে বাবার পিছু পিছু গিয়ে ট্রেনে উঠে গিয়েছিলাম।
পরে বাবা আমাকে দেখতে পেয়ে পরের স্টপেজে নেমে গিয়ে আমাকে শার্ট, স্যান্ডেল কিনে দেয়।
অভাবের সংসার হলেও বাবা শত কষ্টেও আমার বায়না পূরণ করার চেষ্টা করতেন। আজ ভেজা চোখে তার অনেক স্মৃতিই মনে পড়ছে। প্রচণ্ড কষ্টে বিছানায় কাতরাচ্ছে বাবা, আর আমি চোখের জল ফেলছি। বাবার মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া আমার করার কিছুই নেই।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাবার ফুসফুস ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর আমার পৃথিবীতে নেমে আসে ঘন অন্ধকার। কারণ সাত ভাই বোনের মধ্যে আমি শুধু পড়াশোনা করছি। এখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র আমি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা অসুস্থ হওয়ায় আমার পড়াশোনার পথ রুদ্ধ হওয়ার পথে।
বাবার চিকিৎসার জন্য উঠে পড়ে লাগলাম। রংপুর থেকে ঢাকায় নিলাম। ডা. আহমেদ মোর্শেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলে। ইতোমধ্যে আমাদের জায়গা-জমি বিক্রি করে ফেলতে হয়েছে। ডা. আহমেদ মোর্শেদের পরামর্শে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাইশটি রেডিও থেরাপি দেওয়া হয়।
কিছু দিন পর আবার বাবা সেই আগের মতোই। এ সময় আমি বন্ধুদের সাহায্য নিতে বাধ্য হয়েছি। ওদিকে আমার মেঝো বোনের জমানো অর্থ সবই শেষ। এর মধ্যে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অনকোলজিস্ট রকিব উদ্দিন স্যার।
বাবার চিকিৎসা থেমে নেই।
চালিয়ে যেতে হচ্ছে দীর্ঘ এক বছর থেকে। এর মধ্যে একবার কেমো থেরাপি দেওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। দ্বিতীয় কেমো নির্দিষ্ট সময়ে না দিতে পারায় ডাক্তাররা সাজেস্ট করেন ওরাল থেরাপির। এরই মধ্যে আমাদের পরিবার প্রায়ই পথে বসে গেছে। ইমিডিয়েট দরকার ২৫ হাজার টাকা, এরপর আরো ৫০ হাজার টাকা।
অথচ সিকি পয়সাও আমাদের পকেটে নেই। যা আছে তা শুধুই চোখের জল। যা ক্রমাগত চোখকে সিক্ত করছে। সর্বোপরি বাবার সব কয়টি থেরাপি কমপ্লিট করতে প্রায় দু’লাখ টাকার প্রয়োজন। অথচ আমাদের সংসারের আহার এবং আমার পড়াশোনার পথ রুদ্ধ।
আমি আমার বাবার ব্যাপারে কারো কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতিনি। তবে আশরাফুল আংকেল, আমাদের প্রতিবেশী, তার ফার্মেসি থেকে ওষুধের ব্যাপারে অনেক সহযোগিতা করেছেন। সর্বশেষ ডাক্তার দুই এক দিনের মধ্যে ওরাল থেরাপি শুরু করতে বলেছেন, দেরি হলে সর্বনাশ। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টের কারণে বাবাকে নেবুলাইজ করতে হচ্ছে। এই টাকাটাও আজ ধার করে নেবুলাইজ করলাম।
আমার বাবা আমার মাঝে স্বপ্ন দেখতেন, পড়াশোনা শেষ করেই একটা ভালো চাকরি নিয়ে সংসারের হাল ধরবো। বাবার স্বপ্ন বিচ্যুত হতে চলেছে। বাবার চিকিৎসার টাকা ম্যানেজের চিন্তায় আমি মানসিক, শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছি। বারবার চোখে ভাসছে বাবার মুখ। মনে প্রশ্ন জাগছে, আমার বাবা কি মারা যাবে? বাবাকে জড়িয়ে ধরে আজ অনেক কাঁদলাম।
নিজেকে অনেক বেশি অপরাধী মনে হচ্ছিলো। কিন্তু আমার করার আর কিছুই নেই বাবা, আমার করার কিছুই নেই! বন্ধুদের কাছে ধার করেছি প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা। তারা আমাকে চাপ দেবে না জানি। কিন্তু এই মুহূর্তে অল্প কিছু টাকার জন্য কি বাবাকে আমি বাঁচাতে পারবো না? আমি পারিশ্রমিক ছাড়া কারো কাছ থেকে একটি টাকাও দান নেইনি।
বাবা এখন পার্বতীপুরে আমাদের বাড়িতে।
ডাক্তাররা কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছেন সেগুলো কিনতে এই মুহূর্তে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা প্রয়োজন।
আজ আমি দেশের মানুষের কাছে বাধ্য হয়ে হাত পেতেছি। আমার চোখের সামনে কিছুতেই বাবাকে মরে যেতে দিতে পারছি না। আমি বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছি। দেশের এত বিত্তবান মানুষ কেউ কি আমার বাবাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবেন না?
যদি কোনো হৃদয়বান মানুষ আমার আকুতি শুনতে পান, সে আশায় বসে আছি।
যোগাযোগ:
মাহতাব হোসেন, মাজেদুল ইসলাম
01717768328, 01727214909
Md. Mazedul Islam Prodhan
Account no. 162.101.5806
Dutch-Bangla Bangla Bank, Rangpur Branch. ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।