অপ্রিয় এবং অবাঞ্ছিত...
শুরুতেই কুফা!!!
পরীর মা, আমার সবচেয়ে খাতিরের বান্ধুবী, আমাকে সকালে যখন ডেকে দিল, তখন বাজে ৭টা। বিশ মিনিটের মাঝে বের না হলে ভার্সিটির বাসের আশা নেই, ভাবতেই ক্যোঁৎ করে ঢোক গিললাম। ফ্রেশ হয়ে শার্ট-প্যান্ট পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে টাই বাঁধতেছি, ভঙ্গীটা এমন, যেন আমি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর এইচআর ম্যানেজার। আব্বু কম্বলের তলা দিয়ে উঁকি মেরে আমার ব্যস্ততা লক্ষ্য করছে... নাহ, আইজকা পকেট মারার চান্স নাই!! পকেট মারলেও লাভ নাই, প্রেমিকার পিছনে খরচ করার জন্য আগে প্রেমিকা দরকার, আমার সেইটাই নাই। যাই হোক, ফরমাল শার্ট প্যান্টের লগে টাই ঝুলাইয়া, মাইকেল জ্যাকসন হ্যাট দিয়া মাথার কাউয়ার অ্যাপার্টমেন্ট ঢাইকা বাইর হইলাম।
চারসিটের অটোরিকশা আমারে দেইখা আগাইয়া আইল। ভেতরে একজন যাত্রী, অবশ্যই রমণী, যে আমার মতই অভাগা স্টুডেন্ট যাদের ক্লাস থাকে সকাল সাড়ে আটটায়। পার্ট দেখাইয়া অটোতে উঠতে যাব, হাত থেকে আমার সাধের ঘড়িটা চামড়ার বেল্ট ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে গেল। আমার মনে হইল রমণীর সামনে কেউ আমার লুঙ্গি ধইরা টান দিছে!!
ভার্সিটির বাসে উঠলাম। দূরপাল্লার দশাসই বাস।
সামনে ফ্যাকাল্টিরা বসেন, তাই হৈচৈ সব পেছনেই হয়। আমি পিছনে গিয়া আমার দুস্তের লগে বইলাম। আশেপাশের পুলাপান "চলে গেছ তাতে কী" কোরাসের সুরে গাইতেছে। এয়ারপোর্টের একটু আগে আমগোর বাসের পাশে আইলো বলাকা চিটিং সার্ভিস। ওই বাসের ভিতরে আবার দুইটা কলেজপড়ুয়া মাইয়া।
ইউনিফর্ম দেইখা বুঝলাম, মাইলস্টোন কলেজের ছাত্রী। ব্যাস, পুলাপাইনরে আর পায় কে!! ..."হৈ হৈ...আফু... আইলাবিউ..." । সামনে এয়ারপোর্ট ছাড়াইয়া জসিমউদ্দিন রোডের একটু আগে পড়ল জ্যাম। পুলাপান আশায় বুক বাঁধল, যদি ওই সুন্দরীদ্বয়কে আবার দেখা যায়! কিন্তু না, বলাকার ড্রাইভার আর গাড়ি টানল না। জ্যামে আমগো বাসের বাম পাশের রাস্তা পুরা খালি রাইখা পিছনে ওই বাস দাঁড় করাইলো।
জ্যাম ছাড়তেই বলাকা আমগো ওভারটেক কইরা দৌড় দিবার চাইল, পুলাপান হৈ হৈ কইরা উঠল, সুন্দরীদ্বয় পুলাপানগো দিকে চাইয়া ভেটকি মাইরা প্রশ্রয়ের হাসি দিল। উইউই!! পুলাপান কাইত!! চশমা পড়া সুন্দরীর হাসিডা আমার দিলে গিয়া লাগল, তয় আমি সিনিয়রের মত পার্ট লইলাম। ওইসব বাচ্চাপুলাপানদের কাজ, এমন ভঙ্গী।
জসীমউদ্দিনে ভাসাবি শাড়ির বিলবোর্ডে স্বল্পবসনা মডেলরে দেইখা একটা দীর্ঘশ্বাস ফালাইলাম... এই পরীগুলান আহে কইত্তুন?
যাই হোক, ওই স্টপেজ থেকে আমার দুই জিগারি দোস, কটকডি আরিফ আর টুনটুনির জামাই বাসে উঠল। এখন আবার কিসের পার্ট!! শুরু হইল আমগো শয়তানী, আইজকার দিনে শয়তানি করন জায়েজ!!!
-"ওই তোরে না কইসিলাম আইজকা টিশার্ট পইড়া আবি?" কটকডি জিগাইল আমারে।
-"দুস, আমার টিশার্ট নাই। " ভালো মানুষের মত মুখ কইরা কইলাম।
-
অ্যাকচুয়ালি, টিশার্ট পইড়লে আমার ভুঁড়িখানা আরও বেশি কইরা তার অস্তিত্ব জানান দেয়, হেইডা আর কইলাম না।
কেলাসে ঢুইকা কটকডি কইল, "কমলারে দ্যাখ, বেচারি একলা একলা বইছে, বয়ফ্রেন্ড আইনাইক্কা। চল হ্যাতারে টাইম দেই।
" কুমলা হইতেছে আমগোর সিনিয়র আফা। তায় হেব্বি মেজাজি, কাঁচা মরিচ। আমরা তিন লুল গিয়া বইলাম একদম হ্যাঁতের পাশে। তার ভ্রূ শেয়ারমার্কেটের সূচকের ন্যায় উঠানামা করছে। আমি তাকাইলাম পাশের সারির দিকে।
আহ! অসাম চৌধুরি! এই মেয়েটা আমার জন্য পারফেক্ট আছিল, কিন্তু হায়, সে বিবাহিতা, একটা পিচ্চি মাইয়াও আছে। কুমলা ভাবল আমি তার দিকে চাইয়া আছি, সে চোখ গরম কইরা তাকাইল। আমি তৎক্ষণাৎ স্যারের দিকে তাকাইয়া জান বাঁচাইলাম।
ক্লাসের আধাখান শ্যাষ। এমন সময় আমগো ছুন্দরী ক্লাসমেট অপু বিশ্বাস ঢুকল।
উইউই! লাল জামা পইড়া আইছে, ছাকিব খানের লগে ডেটিং আচে! কেলাচরুমে পা রাখার সাথে সাথে সবার অগোচরে আমি টুইট কইরা শিষ দিয়া উঠলাম। মনে মনে নিজের পিঠ চাপড়াইতেছি, শিষ দিছি কেউ দ্যাখেনাই। আক্তা পিছে দিয়া আরেক সিনিওর আফু, তোশিবা বোম্বা কইয়া উঠলঃ "ছিঃ হিমু! খারাপ হয়ে যাচ্ছ, না?"
কিরামডা লাগে?
যাই হোক, স্যার ইয়াং মানুষ, আমাদের দুঃখু বুঝেন, তাই উনি কিছু কইলেন না। উনি অপু বিশ্বাসের সম্মানে ৫মিনিট বিরতি দিয়া ভালোবাসার আলাপ-আলোচনা কইরলেন। (বুঝছেন?)
ক্লাস শেষে রোল কল।
অপু বিশ্বাসের নাম ডাকতেই "মিঁআও" কইরা ডাক পারলাম। মজাই মজা।
ক্লাস শেষ কইরা ক্যাম্পাসে আইতেই সেই রূপবতীর দেখা পাইলাম। লাল জামা পড়ে বান্ধুবীদের লগে ক্যাচরক্যাচর করায় ব্যস্ত। আমার বুকের বাম পাশের হাড্ডিটা কটকট কইরা উঠল।
ইরাম রোমান্টিক মোমেন্ট সহ্য করতে না পেরে দুই হিংসুটে বন্ধু আমারে হিড়হিড় কইরা টাইনা নিয়া গেল। এরপর সারাদিন আর রূপবতীর দেখা পাইনি।
।
।
।
দিনশেষে পার্টিইইই!!!!!
ভ্যালেন্টাইন কি শুধু পুলা-মাইয়াগো? দোস্তগো না?
তিন গোয়েন্দা গেলাম রাজলক্ষ্মীর পেছনে, যা কাবাব-পরটার জন্য আমগো কাছে ফেমাস!! কিন্তু ব্যাড লাক! অস্থায়ী দোকানগুলো সব বন্ধ। বুঝলাম, কাবাব-পরটা আইজকা ভাগ্যে নাই।
আপাতত ফুচকা খাইলাম।
মিষ্টি পান খাইতে গেলাম যখন, সন্ধ্যা ৭টার কাছকাছি। আমারে টাশকি খাওয়াইয়া রাস্তার ওপার থেকে পরী নেমে এলো এপারে।
ও এম জি! সেই রূপবতী!!!
বুকটা কটকটাইয়া উঠল।
রূপবতী আমারে না দেখিয়া গটগটায়া হাঁইটা চলে গেল।
তার দিক থিকা নজর ফেরাতেই দেখি টুনটুনির জামাই আমার দিকে সন্দেহ সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। ব্যাপার হচ্ছে, তার এক দুঃসম্পরকের ভাগ্নিকে আমি ভীষণ-ভীষণ-ভীষণ লাইক করি।
।
।
।
আপডেটঃ ইয়ে... ভাসাভি ওইটা শাড়ি না, জুয়েলার্স! মানে মডেলের পড়নের শাড়িটা বিলবোর্ডে কানের দুলের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে; কানের দুলটাই একমাত্র গয়না।
...
কালো হিমুর নোটবুক
... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।