আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৮দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পলিটেকনিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালন, আসছে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী

বিপর্যস্ত পলিটেকনিক শিক্ষাকে রক্ষার্থে ৮ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচীতে নেমেছে পলিটেকনিক শিক্ষকেরা। গত ৮ জানুয়ারি ২০১২ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্দোলনের প্রাথমিক কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেছে পলিটেকনিক শিক্ষকেরা। কেন এই আন্দোলন? দেশের মধ্যম স্তরের কারিগর তৈরির সূতিকাগার হল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। প্রতি বছর বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে হাজার হাজার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পাশ করে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সুনাম ও দক্ষতার সাথে কাজ করছে।

এদের দক্ষ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যে শিক্ষক সমাজ নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা আজ সমাজে বিভিন্ন দিক থেকে অবহেলিত। একই পদে বছরের পর বছর চাকুরী করলেও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতির কোন ব্যবস্থা নেই। সামাজিক ভাবে পদ মর্যাদা নাই । তবে বর্তমানের সবচেয়ে বড় সমস্যা দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিুউট গুলোতে ৭০% শিক্ষক পদ খালি। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম।

এক কথায় বলা চলে কারিগরি শিক্ষার নামে প্রহসন চলছে। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে শিক্ষার্থীরা যে শিক্ষা নিয়ে বের হচ্ছে এতে করে কারিগরি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে না। অবিলম্বে মুখ খুবড়ে পড়বে পলিটেকনিক শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষকদের ৮দফা দাবিতে কী আছে? ১। বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক পরিষদ এর প্রস্তাবের আলোকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পেশকৃত ও আইডিইবি'র নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে সৌজন্য সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে এবং আইইবি'র ৫২তম কনভেনশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত "জুনিয়র লেকচারার-লেকচারার-প্রফেসর" প্যাটার্নের চাকুরি কাঠামো আমালাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন পূর্বক অবিলম্বে বাস্তবায়ন করে পলিটেকনিক শিক্ষার মর্যাদা বৃদ্ধি ও শিক্ষকদের দীর্ঘ দিনের হতাশা দূর করার পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।

২। শিক্ষক স্বল্পতায় (৫০%-৭০% পদ শূন্য) বিপর্যস্ত পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক কর্মচারীর সকল শূন্যপদ প্রচলিত নিয়োগবিধি অনুযায়ী জরুরীভাবে পদোন্নতি ও নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দ্বারা পূরণ করতে হবে। ৩। দ্বিতীয় শিফট প্রোগ্রামের সম্মানী মূল বেতনের ১০০% এ উন্নীত করতে হবে। এছাড়া অব্যাহতভাবে দ্বিতীয় শিফট প্রোগ্রাম চালাতে হলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করতে হবে।

৪। বিসিএস কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারের ৫০ বছর উর্ধ্ব শিক্ষক কর্মকর্তাদের চাকুরী কারিগরি শিক্ষার স্বার্থে অবিলম্বে স্থায়ীকরণ করে দ্রুত শূন্যপদে পদোন্নতি ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান করতে হবে। ৫। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পভূক্ত সকল শিক্ষক কর্মচারীর পদ জনবলসহ অবিলম্বে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে এবং ইতিমধ্যে যে সকল প্রকল্পের শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়মিত করা হয়েছে তাদের স্থায়ী করাসহ পদোন্নতি, টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান করতে হবে। ৬।

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বৃত্তির কোটা ৬৫% থেকে ১০০% এ উন্নীত করে অর্ধমতাধিক বছর পূর্বে নির্ধারিত বৃত্তির হার বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এ্যাটাচমেন্ট ভাতা ইন্টার্নিশিপ ডাক্তারদের ন্যায় উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের চাকুরির মূল বেতন এর সমপরিমাণ দিতে হবে। ৭। কারিগরি শিক্ষা ও শিক্ষকদের মান উন্নয়নকল্পে শিক্ষকদের দেশ বিদেশে আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষকতার সকল শূন্য পদ অবিলম্বে পূরণ করে সর্বস্তরের শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষনের পাশাপাশি শর্ট কোর্স এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণে মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। ৮।

কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে কারিকুলাম রিভিউশনের মাধ্যমে আধুনিকীকরণ করতে হবে এবং এ ধরনের রিভিউশন প্রয়োজন অনুযায়ী ঘন ঘন করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ১৯৯৯ সাল থেকে প্রবর্তিত পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের সম্মানী বর্তমান অবস্থার নিরিখে বৃদ্ধি করতে হবে। এই লেখাটি লেখার সময় পর্যন্ত ২য় শিফটের সম্মানী (যা মূল বেতনের ৩০% মাত্র) ১৫ মাস ধরে বন্ধ আছে। ২য শিফটের সম্মানী নাই, শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা নাই, শিক্ষক নাই, চাকুরির স্থায়ীকরনের নিশ্চয়তা নাই, পদোন্নতি নাই, এত নাই এর মাঝে কিভাবে কারিগরি শিক্ষার প্রসার লাভ করবে। আর কারিগরি শিক্ষার নামে যে প্রহসন চলছে এর দ্বারা দেশ কতটুকু এগিয়ে যেতে পারবে।

শিক্ষক বিহীন কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার নামে প্রহসন ছাড়া আর কি? শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেলে শিক্ষা ও শিক্ষার্থী উভয়েরই মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে? ৮দফা দাবি শুধু মাত্র শিক্ষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয়, এর সাথে কারিগরি শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের জীবন, দেশের ভবিষ্যত উন্নয়ন প্রভৃতি জড়িত। আমরা কারিগরি শিক্ষার গুরুত্বের কথা সভা সেমিনারে বলে থাকি। কিন্তু বাস্তবে যে এর বেহাল অবস্থা তা অনেকেই জানি না। শিক্ষক সংকটের তীব্রতা কারিগরি শিক্ষাকে গ্রাস করে ফেলেছে। নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত পলিটেকনিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে রক্ষার্থে বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষকেরা আজ একত্রে মাঠে নেমেছে।

দ্রুত সমস্যার সমাধান করা না হলে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবে পলিটেকনিক শিক্ষকেরা। এক শিক্ষকের দিনে ১০ ক্লাস! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।