হট নিউজ
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন `কুরআন শরিফকে বিশ্ববাসীর জন্য আরোগ্য ও রহমত স্বরুপ অবতীর্ণ করেছি। '
:হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তৎকালীন ফিরআউন দ্বিতীয় রেমসীর-এর পুত্র মিনফাতাহ যার রাজত্ব খৃস্টপূর্ব ১২১৫ থেকে ১২৩০-এর নিকট দ্বীনের দাওয়াত পেশ করলে, সে হযরত মূসা (আ.)-এর নিকট তাঁর দাবীর স্বপক্ষে প্রমাণ দেখাতে বলল। হযরত মূসা (আ.) আপন লাঠি মাটিতে ফেললেন। সঙ্গে সঙ্গে তা এক অজগরে পরিণত হল। ফিরআউনের পরিষদবর্গ বলল, এ তো এক সুদক্ষ যাদুকর।
একে প্রতিহত করার জন্য সারা দেশ থেকে বড় বড় যাদুকরদের একত্র করা হোক। মিসরীয় কিবতীদের বিশেষ এক উৎসবের দিন আলোকদীপ্ত পূর্বাহ্নে প্রায় পনের হাজার বিখ্যাত যাদুকর একত্র করা হল। যাদুকরেরা তাদের রজ্জু ও লাঠি নিক্ষেপ করে এক বিশাল ময়দান ভরে ফেলল। যাদুকরগণ দর্শকদের দৃষ্টি বিভ্রম ঘটিয়ে দেয়ায় সকলের মনে হতে লাগল। , এগুলো ঘন ঘন কাঁপছে।
এ অবস্থা দেখে সকলেই আতংকিত হয়ে গেল।
হযরত মূসা (আ.) আল্লাহ তা'আলার হুকুমে তাঁর লাঠি নিক্ষেপ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে তা যাদুকরদের লাঠি ও রজ্জুগুলি গ্রাস করে ফেলল। এ দৃশ্য দেখে যাদুকরদের নিশ্চত বিশ্বাস হল যে, হযরত মূসা (আ.) কোনো যাদুকর নন; তিনি আল্লাহ পাকের প্রেরিত রসূল। তারা তখন সিজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং বলল আমরা মূসা ও হারুনের প্রতিপালক আল্লাহ রাববুল আলামীনের প্রতি ঈমান আনলাম।
ফিরআউন বলল, এতো এক চক্রান্ত; আমি তোমাদের হস্তপদ বিপরীত দিক থেকে কর্তন করব এবং তোমাদের সকলকে শূলীতে চড়াব। তারা বললেন, আমাদের নিকট আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শন আসার পর আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। ফিরআউন তাদের সকলকে শূলীতে চড়িয়ে শহীদ করে দিল। পূর্বাহ্নে যারা যাদুকর ছিলেন অপরাহ্নে তারা শহাদত লাভ করলেন। তারা শাহাদতের অমিয় সুধা পান করার পূর্বে আল্লাহ পাকের মহান দরবারে বিনয়াবনত হয়ে প্রার্থনা করেছিলেন, ‘‘ হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং আপনার নিকট আত্মসমর্পণকারীরূপে আমাদের মৃত্যু দিন।
’’-আরাফ:১২৬
হযরত মূসা (আ.)-এর কওমের দুআ : হযরত মূসা (আ.)-এর যুগের ফিরআউন ছিল একজন উদ্ধত ও স্বৈরাচারী বাদশাহ। তার ও তার পরিষদবর্গের নির্যাতনের ভয়ে অনেকেই হযরত মূসা (আ.)- এর প্রতি ঈমান আনেনি। বনী ঈসরাইলের যারা হযরত মূসা (আ.)- এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তিনি তাদের সকলকে বললেন, হে আমার কওম, তোমরা যদি মুসলিম হয়ে থাক তবে তোমরা শুধু আল্লাহরই উপর নির্ভর কর। তখন তারা আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করলেন। ‘‘আমরা সকলে একমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভর করলাম।
হে আমাদের প্রাতিপালক, আমাদেরকে অপরাধী সম্প্রদায়ের উৎপীড়নের পাত্র করবেন না এবং আমাদেরকে আপনার অনুগ্রহে কাফির সম্প্রদায় থেকে রক্ষা করুন। ’’ -ইউনুস ৮৫-৮৬
আল্লাহ পাক তাদের দুআ কবুল করেছিলেন এবং তাদেরকে ফিরআউনের নির্যাতন থেকে রক্ষা করেছিলেন। তারা সদলবলে মিসর থেকে লোহিত সাগর অতিক্রম করে পূর্ব পার্শ্বস্থ গিণাই উপত্যকায় চলে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফিরআউনের গোষ্ঠীর একজন মুমিনের সর্বশেষ দুআ : ফিরআউনের এক চাচাতো ভাই হযরত মূসা (আ.)-এর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। তিনি তাঁর ঈমান গ্রহণের বিষয়টি গোপন রাখেন।
ফিরআউন একদিন দম্ভভরে বলল, আমি মূসাকে হত্যা করব। কারণ সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। ফিরআউনের এই জ্ঞাতি ভাই তাকে বললেন, তোমরা কি একজন ব্যক্তিকে শুধু এ জন্য হত্যা করবে যে, সে বলে, আমার প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহ। সে তো প্রতিপালকের নিকট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তোমাদের কাছে এসেছে।
আজ কর্তৃত্ব তোমাদের; দেশে তোমরাই প্রবল, কিন্তু আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি এসে পড়লে কে আমাদেরকে সাহায্য করবে? হে আমার সম্প্রদায়, আমি তোমাদের জন্য কওমে নূহ, কওমে আদ, সামূদ ও তাদের পরবর্তীদের শাস্তির অনুরূপ দুর্দিনের আশা করছি।
মুমিন ব্যক্তিটি আরও বললেন, হে আমার সম্প্রদায়, এই পার্থিব জীবন তো অস্থায়ী উপভোগের বস্তু এবং পরকালই চিরস্থায়ী আবাস। অবশেষে এ মুমিন কিবতী তাঁর ঈমান গ্রহণের কথা প্রকাশ করে বললেন, তোমরা আমাকে বলছ, আল্লাহকে অস্বীকার করতে এবং তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাতে। পক্ষান্তরে আমি তোমাদের আহবান করছি ক্ষমাশীল, পরাক্রমশালী আল্লাহর দিকে। বস্তুত আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহরই নিকট এবং সীমালঙ্ঘনকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী। আর আমি তোমাদেরকে যা বলছি, তোমরা তা অচিরেই স্মরণ করবে।
তিনি সর্বশেষ দুআ করেন, ‘আমি আমার যাবতীয় বিষয় আল্লাহর নিকট অর্পণ করছি। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখেন। '-মুমিন ৪৪
তালুত ও তাঁর সঙ্গীদের প্রার্থনা : হযরত মূসা (আ.)-এর প্রায় সহস্রাধিক বৎসর পর জালুত নামক জনৈক অত্যাচারী শাসক বনী ইসরাঈলের উপর নিপীড়ন চালিয়ে তাদেরকে আপন আবাসভূমি থেকে বহিষ্কার করেছিল। সে সময় বনী ইসরাঈল তৎকালীন নবী হযরত শামবীল (আ.)-এর নিকট আবেদন করেছিল যে, তাদের জন্য যেন একজন রাজা নিযুক্ত করা হয়, যার নেতৃত্ব তারা জালূতের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। আল্লাহ পাকের হুকুমে তাদের জন্য তালুত নামক একজন শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাবান মহান ব্যক্তিকে রাজা নিযুক্ত করা হল।
নির্ধারিত সময়ে তালূত সৈন্যবাহিনী নিয়ে বের হলেন। বললেন, আল্লাহ তোমাদেরকে একটি নদী দ্বারা পরীক্ষা করবেন। তোমরা এ নদী থেকে পানি পান করবে না।
একান্তভাবে কারও পানি পান করতে হলে স্বল্প পরিমাণে করবে। মাত্র তিনশ তের জন ছাড়া সকলেই অধিক পরিমাণে পান করল।
যারা অধিক পরিমাণে পান করল, তারা আর সম্মুখে অগ্রসর হতে পারল না। কিন্তু খাঁটি ঈমানদারগণ এতে সাহস হারালেন না। তারা বললেন, আল্লাহর হুকুমে অনেক ক্ষুদ্র দল বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে। সুতরাং আমরা আল্লাহ পাকের উপর নির্ভর করে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবই। তাঁরা প্রবল প্রতাপশালী জালুত ত তার বিশাল সৈন্য বাহিনীর সম্মুখীন হয়ে আল্লাহ পাকের নিকট দুআ করলেন, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে ধৈর্য দান করুন, আমাদের পা অবিচল রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।
''- বাকারা (২৫০) আল্লাহ পাকের সাহায্যে তাঁরা শক্তিধর জালুত বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়ী হন।
পূর্বযুগের একজন মুমিনের দুআ : পূর্ববর্তী কোনো যুগে এক ব্যক্তির দুটি আঙ্গুর বাগান ছিল। এ বাগান দুটি প্রচুর পরিমাণ ফল প্রদান করত। উদ্যানের চতুর্দিকে খেজুর গাছ, দুই বাগানের মধ্যখানে শস্যক্ষেত এবং ফাঁকে ফাঁকে নহর প্রবাহিত ছিল। সে একদিন তার এক দরিদ্র বন্ধুর সঙ্গে অহঙ্কার করে বলল, আমি তোমার থেকে শ্রেষ্ঠ।
সে তার উদ্যান প্রবেশ করে আরও বলল, আমি মনে করি না যে, কখনও কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং এ উদ্যানে কোনো দিন ধ্বংস হবে। তার দরিদ্র বন্ধু ছিলেন মুমিন। তিনি বললেন, তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি্ করেছেন? কিন্তু আমি বলি-। আল্লাহই আমার প্রতিপালক। আমি কাহাকেও আমার প্রতিপালকের সঙ্গে শরীক করি না।
’’ তুমি যখন তোমার উদ্যানে প্রবেশ করলে তখন কেন এ দুআ পড়লে না- এইসব আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোনো শক্তি নেই। ' সূরা কাহ্ফ ৩৯ অবশেষে তার ফল সম্পদ বিপর্যয়ে পর্যবসিত হল। গোটা দ্রাক্ষা উদ্যান মাচানসহ ভূমিস্যাৎ হয়ে গেল। সে তাতে যা ব্যয় করেছিল তার জন্য আক্ষেপ করতে লাগল।
তাকে সাহায্য করবার কেউ ছিল না এবং সে নিজেও প্রতিকারে সমর্থ হল না।
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাক কোনো বান্দার সম্পদে, সন্তানে বা পরিবার পরিজনের মধ্যে কোনো নেয়ামত দান করার পর সে যদি আল্লাহর কাছে সে সম্পদ রক্ষার জন্য দোয়া পাঠ করে তবে আল্লাহ পাক এ নেয়ামত থেকে সর্বপ্রকার বিপদ আপদ সরিয়ে দেন। ৮. হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, আবু হুরায়রা, আমি কি তোমাকে জান্নাতের এক ধন-ভান্ডারের দিকে পথ প্রদর্শন করবে সূরা কাহাফের উল্লেখিত দোয়া। না? তা হল, তুমি পাঠ করবে- হযরত ওহাব ইবনে মুনাবিবহ রহ, তাঁর ঘরের দরজার উপর লিখে রেখেছিলেন। কেউ তাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি সূরায়ে কাহাফের বর্ণিত আয়াতখানি পাঠ করেন।
রানী বিলকীসের দুআ : হযরত সুলাইমান (আ.)-এর সাবা বংশীয় রানী বিলকীস বিনতে শারাহীল ইয়ামানের শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি প্রভূত বিত্তবৈভবের মালিক ছিলেন। রানীর একটি বিশাল সিংহাসন ছিল, যা স্বর্ণ, রৌপ্য ও বিভিন্ন প্রকার মূল্যবান পাথর দ্বারা সুসজ্জিত ছিল। রানী ও তার সপ্রদায় ছিল সূর্যপূজারী। হযরত সুলাইমান (আ.) রানীর নিকট এই মর্মে পত্র প্রেরণ করেছিলেন যে, সে যেন কুফর ও শিরক বর্জন করে ‘আল্লাহ এক' বলে বিশ্বাস করে এবং ক্ষমতার অহমিকা পরিত্যাগ করে তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে তাঁর নিকট উপস্থিত হয়।
এদিকে হযরত সুলাইমান (আ.) দরবারের লোকদেরকে বলেন, হে পারিষদ বর্গ, ইয়ামানের রানী আত্মসমর্পণ করে আমার নিকট আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার নিকট আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার নিকট নিয়ে আসতে পারবে? এক শক্তিশালী জ্বীন বলল, আপনার মজলিস শেষ হওয়ার পূর্বেই আমি তা আপনার নিকট এনে দিতে পারব।
হযরত সুলাইমান (আ.)-এর একজন নিকটতম সাহাবী ও লেখক বললেন, আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনার নিকট নিয়ে আসতে পারব। ইনি আসমানী কিতাবের জ্ঞানসম্পন্ন ছিলেন এবং তাঁর ইসমে আযমও জানা ছিল। মুহূর্তের মধ্যে সে সিংহাসন নিয়ে আসল। রানী বিলকীস হযরত সুলাইমান (আ.)-এর দরবারে উপস্থিত হলেন।
তিনি এখানে তাঁর নিজ সিংহাসন দেখে বিস্মিত হলেন এবং এক আল্লাহর প্রতি নিজের ঈমান প্রকাশ করলেন। রানী হযরত সুলাইমানের আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ঐশ্বর্য ও অভূতপূর্ব ক্ষমতার প্রতাপ লক্ষ্য করে পাঠ করেছিলেন- ‘‘হে আমার প্রতিপালক, আমি তো নিজের প্রতি জুলুম করেছিলাম। আমি সুলাইমানের সঙ্গে বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহার নিকট আত্মসমর্পণ করছি। ’’ -সূরা নামল : ৪৪
হযরত ঈসা (আ.)-এর হাওয়ারীদের দুআ : হযরত ঈসা (আ.) বনী ইসরাঈলের নিকট নবী হিসেবে আগমন করেন। তাদের অধিকাংশ তাঁর দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে।
উপরন্ত তারা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করল। তিনি তা উপলব্ধি করতে পেরে বললেন, আল্লাহর দিকে গমনে কে আমার সাহায্যকারী হবে? হযতর ঈসা আ-এর একান্ত অনুগত হাওয়ারীগণ বললেন, আমরাই আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আমরা আত্মসমর্পণকারী, আপনি এর সাক্ষী থাকুন। অতঃপর তারা কথাটিকে আরও সুদৃঢ় করার জন্য আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করে বললেন, হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি যা অবতীর্ণ করেছেন তাতে আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা এই রাসূলের অনুসরণ করেছি।
সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্য প্রদানকারীদের তালিকাভুক্ত করুন। -সূরা আল-ইমরান ৫৩ আসহাবে কাহ্ফের দুআ : হযরত ঈসা (আ.)-এর কিছুকাল পর রোম সম্রাজ্যের অন্তর্গত তারাসূস শহরে এক স্বৈরাচারী শাসকের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
এই অত্যাচারী বাদশা সকল মানুষকে মূর্তিপূজার প্রতি আহবান করত এবং যে সকল মুমিন তার এহেন দুস্কর্মে সাড়া দিত না তাদেরকে সে হত্যা করতো। ঈমানদার সমাজের জন্য এটি এক গুরুতর সঙ্কটরূপে দেখা দিল। এ পরিস্থিতি দেখে একদল যুবক অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
তাদের সংবাদ বাদশাহের সম্মুখে উপস্থিত হলে বাদশাহ তাদেরকে মূর্তিপূজা না করলে হত্যার হুমকি দিল। ঈমানদীপ্ত যুবকেরা বাদশাহর মুখোমুখি দন্ডায়মান হয়ে নিজেদের ঈমান প্রকাশ করে বলল, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অধিপতিই আমাদের রব। আমরা তাঁকে ছাড়া অন্যকে কক্ষনো প্রভু হিসাবে গ্রহণ করব না। অত্যাচারী শাসক তাদেরকে বললো, তোমরা অল্প বয়স্ক যুবক তোমাদেরকে নিজেদের সিদ্ধান্ত প্রকাশের জন্য আগামীকাল পর্যন্ত সুযোগ দেয়া হলো। ঈমানদার যুবকরা ভয়ে রাতে আত্মগোপন ভোরের আলো ফুটতে আরম্ভ করলে তারা পাহাড়ের একটি গুহায় আত্মগোপন করল।
তাদেরকেই আসহাবে কাহ্ফ বা গুহাবাসী বলা হয়।
বাদশাহ ও তার সেনাবাহিনী তাদের পশ্চাব্ধাবন করেছিল, কিন্তু অত্যাচারী গোষ্ঠি গুহামুখে পৌঁছামাত্র ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল এবং গুহায় প্রবেশ করতে পারল না। বাদশাহ বলল, গুহার দরজা বন্ধ করে দাও। তাহলে তরা ক্ষুৎ পিপাসায় মারা যাবে। মুহাম্মদ আলী আসসাবূনী, সাফওয়াতুত তাফাসীর, সূরা কাহ্ফ, পৃ.৩ মুমিন যুবকেরা গুহায় প্রবেশ করে আল্লাহ রাববুল আলামীনের মহান দরবারে প্রার্থনা করেছিলেন-‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি নিজের কাছ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন এবং আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনা ব্যবস্থা করুন।
’’ -
সূরা কাহ্ফ ১০ আল্লাহ তায়ালা তখন তাদেরকে গুহায় শান্তির নিদ্রা দান করেছিলেন। ফেরেশতাদের দুআ : ফেরেশতা আল্লাহ পাকের এক প্রকার সম্মানিত মাখলূক বা সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালা কোটি কোটি ফেরশতা সৃষ্টি করেছন। তন্ডধ্যে চারজনের একটি দল আল্লাহ পাকের আরশ বহন করে আছেন। আল বিদায়া, খ১, পৃ:৫৪ আর একদল ফেরেশতা আরশের চতুর্দিকে আরশ ঘিরে আছেন।
এ উভয় দল আল্লাহ পাকের অত্যন্ত নৈকট্য প্রাপ্ত ফেরেশতা। তাঁরা সর্বদা আল্লাহ পাকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করেন। তাঁরা মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী।
অতএব, যারা তওবা করে ও আপনার পথ অবলম্বন করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। ’’ ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি তাদেরকে দাখিল করুন স্থায়ী জান্নাতে, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের পিতামাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তাদেরকেও।
নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আপনি তাদেরকে শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। সেইদিন আপনি যাকে শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন তাকে তো অনুগ্রহই করলেন। এ-ই তো মহাসাফল্য। ' সূরা মুমিন ৭-৯ আ'রাফে অবস্থানকারীদের দুআ : পরকালের হিসাব নিকাশের পর জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করা হবে।
জান্নাত ও জাহান্নাম ভিন্ন তৃতীয় একটি স্থান হল আ'রাফ। যাদের নেক আমল ও বদ আমল সমান সমান হবে তাদেরকে প্রাথমিকভাবে আ'রাফে রাখা হবে। আ'রাফের অধিবাসীগণ নিজেদের স্থান থেকে জান্নাতী ও জাহান্নামী উভয় দলকে দেখতে পাবে। তারা জান্নাত লাভের আকাক্মখায় থাকবে। এক পর্যায়ে তাদেরকে জান্নাতে পৌছানো হবে।
আ'রাফ থেকে তাদের দৃষ্টি যখন জাহান্নামীদের উপর পতিত হবে তখর তারা বীত সন্ত্রস্ত হয়ে বলবে, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে জালিম সপ্রদায়ের সঙ্গী করবেন না। ’’ (সূরা- আ'রাফ: ৪৭) হযরত লুত (আঃ)-এর দুআ : হযরত লুত (আঃ) হযরত ইবরাহিম (আঃ)- এর পরামর্শে দাওয়াত ও হেদায়েতের উদ্দেশ্যে মৃতসাগরের দক্ষিণ পাশের অঞ্চলে এসে অবস্থান গ্রহণ করেন। এখানে সাদূম ও আমূরা গোত্রদ্বয়ের বসতি ছিল।
‘‘ডক্টর শাওকী আবু খলিল, আতলাসুল কুরআন ৬১;’’ তিনি এখানে এসে দেখলেন, এখানকার লোকেরা এক প্রকার অতি কুৎসিৎ কুকর্মে লিপ্ত। তিনি সকলকে এ ধরনের অপকর্ম থেকে বিরত থাকতে কঠোরভাবে সতর্ক করলেন।
কিন্তু তারা তাঁর কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করলো না : বরং তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে লাগলো। হযরত লূত (আঃ) এই সংকটকালে দুটি দুআ করেন। তিনি মুমিনদের জন্য প্রার্থনা করলেন, ‘‘হে আমার রব, আমাকে ও আমার পরিবার-পরিজনকে এহেন দুস্কর্ম থেকে রক্ষা করুন’’ (সূরা-শুআরা-১৬৯)। তাঁর অপর দুআটি হলো, ‘‘হে আমার প্রতিপালক, বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন’’ (সূরা-আনকাবুত-৩০)।
আল্লাহপাক তাঁর দুআ কবুল করলেন।
তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদেরকে রক্ষা করলেন এবং অপরাধীদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন। হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর মুনাজাত : মিসর-অধিপতির স্ত্রী হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। অল্পদিনের মধ্যেই একথা রাষ্ট্র হয়ে যায় যে, আযীযের স্ত্রী তাঁর ক্রীতদাসের প্রতি প্রেমাসক্ত হয়ে পড়েছে। আযীযের স্ত্রী এ দুর্নাম অপনোদনের জন্য মিসরের নারীদেরকে দাওয়াত করলেন মিসরের নারীগণ হযরত ইউসুফের রূপ-গরিমা দেখে অভিভূত হয়ে গেল। সকলেই হযরত ইউসুফের প্রতি অনুরাগী হয়ে পড়লো এবং তাঁকে বললো, তুমি আযীযের স্ত্রীর আনুগত্য কর।
ঈমানের এরূপ কঠিন পরীক্ষার মুহূর্তে হযরত ইউসুফ (আঃ) আল্লাহপাকের মহান দরবারে দুআ করলেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক, এই নারীরা আমাকে যার প্রতি আহবান করেছে তা অপেক্ষা কারাগার আমার নিকট অধিক প্রিয়’’ (সূরা-ইউসুফ-৩৩)। আল্লাহপাক হযরত ইউসুফের এই বিনীত প্রার্থনা কবুল করেছেন। হযরত ইউসুফকে তাঁর ভাইয়েরা কেনআনের কূপে ফেলে দিয়েছিল। আল্লাহপাক তাঁকে কূপ থেকে উদ্ধার করে মিসর নিয়ে গেলেন। মিসরে এক মিথ্যা অপবাদে তাঁকে কারাগারে যেতে হয়।
আল্লাহ তাআলা তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে মিসরের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করে দিলেন। পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন পর তাঁর সাক্ষাৎ হল। তিনি ইহকালীন জীবনে সর্বাদিক থেকে আল্লাহপাকের রহমত ও নেয়ামত লাভ করার পর জীবনসায়াহ্নে এসে আল্লাহপাকের নিকট নিবেদন করলেন, ‘‘কাসাসুল কুরআন ১/২৯৫;’’ ‘‘হে আমার রব, আপনি আমাকে রাজ্য দান করেছেন এবং স্বপ্ন ও অন্যান্য কথার ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছেন। হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা, আপনিই ইহলোক ও পরলোকে আমার অভিভাবক। আপনি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দিন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন’’ (সূরা-ইউসূফ-১০১)।
হযরত শুয়াইব (আঃ)-এর প্রার্থনা : মাদাইয়ানবাসীর নিকট হযরত শুয়াইব আলাইহিস সালাম নবীরূপে প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর কওমকে বললেন, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর। তোমরা পরিমাপ ও ওজন ঠিকভাবে দিও। আল্লাহর প্রতি যারা ঈমান আনে, তাদেরকে আল্লাহর পথে বাধা দিও না। তখন তাঁর সম্প্রদায়ের দাম্ভিক ও অতি দুরাচার নেতৃবর্গ বললো, হে শুয়াইব, তোমরা আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে না আসলে আমরা তোমাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে অবশ্যই বহিষ্কার করে দেব।
তখন হযরত শুয়াইব আল্লাহপাকের সাহায্য প্রার্থনা করে বললেন, ‘‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের অপরাধীদের মধ্যে ন্যায্যভাবে মীমাংসা করে দিন এবং আপনিই মীমাংসাকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ’’ (সূরা- আরাফ-৮৯)। আল্লাহপাক তাঁর দুআ কবুল করে অপরাধীদের ধ্বংস করে দিলেন।
হযরত মূসা (আঃ)-এর দুআ : হযরত মূসা (আঃ)- একবার মিসরের এক পথ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দেখতে পেলেন, জৈনিক স্থানীয় ব্যক্তি একজন ইসরাঈলীর উপর জুলুম করছে। তিনি সে স্থানীয় ব্যক্তিকে প্রথমত জুলুম থেকে বিরত থাকতে বললেন, কিন্তু সে তাঁর কথা অমান্য করল।
তিনি তৎক্ষাণাৎ এই অপরাধীকে হাত দিয়ে আঘাত করলেন। তাতে সে মারা গেল। হযরত মূসা (আঃ)-এর তাকে হত্যা করার ইচ্ছা ছিলনা। তিনি সঙ্গে সঙ্গে লজ্জিত হলেন এবং বললেন, নিশ্চয় এটি শয়তানের কাজ। তারপর তিনি ,আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, ‘‘হে প্রভু আমি নিজের উপর জুলুম করেছি।
অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন’’ (সূরা- কাসাস ১৬)। আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দিলেন। তিনি তখন তওবা করে বললেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক, যেহেতু আপনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আমি কখনো অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না’’ (সূরা- কাসাস ১৭)। হযরত মূসা (আঃ) কর্তৃক জনৈক মিসরী কিবতীকে হত্যার সংবাদ দ্রুতবেগে জানাজানি হয়ে গেল।
ফেরাউনের পরিষদবর্গ হযরত মূসা (আঃ)কে হত্যা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে তাঁকে খুঁজতে শুরু করলো।
তিন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সেখান থেকে বের হয়ে পড়লেন এবং আল্লাহর কাছে দুআ করলেন, ‘‘হে আমার রব, আপনি জালেম সম্প্রদায় থেকে আমাকে রক্ষা করুন’’ (সূরা-কাসাস ২১)। হযরত মূসা (আঃ) মিসর থেকে পালায়ন করে লোহিত সাগরের পূর্ববর্তী অঞ্চল মাদাইয়ানে চলে আসলেন। তাঁর জন্য মাদাইয়ান সম্পূর্ণ নতুন জায়গা। পথ-ঘাট ও মানুষজন একেবারে অপরিচিত। তিনি মুসাফির, কপর্দকহীন।
এমন অসহায় অবস্থায় তিনি আল্লাহ পাকের মহান দরবারে বিনয়াবনত হয়ে প্রার্থনা করেন। ‘‘হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবেন, আমি তারই কাঙ্গাল। আল্লাহপাক তাঁর দুআ কবুল করলেন।
আল্লাহ পাকের নবী হযরত শুয়াইবের গৃহে স্থায়ীভাবে তাঁর থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। আলাহ তাআলা হযরত মূসা (আঃ)কে নবুওয়াত দান করে সর্বাগ্রে ফেরাউনের নিকট দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার জন্য বললেন।
কারন সে সীমাহীন উদ্ধত নাফরমান ও স্বৈরাচারী। সে চরম পর্যায়ের দাম্ভিকতাবশত বনী ইসরাঈলকে গোলাম বানিয়ে রেখেছে। এত বড় জালেম ও অহংকারী বাদশাহর নিকট দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার মতো কঠিন দায়িত্ব পেয়ে হযরত মূসা (আ.) আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করলেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক, আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন। আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে ’’ (সূরা-ত্বহা ২৫-২৮)। হযরত মূসা (আঃ)-এর ভাষায় জড়তা ছিল।
ফেরাউনের নিকট স্পষ্ট ভাষায় দাওয়াত পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে তখন তিনি তাঁর মনের ও কথার শক্তি বৃদ্ধির জন্য একজন সহযোগী প্রার্থনা করে আল্লাহপাকের নিকট দুআ করলেন, ‘‘আমার জন্য আমার স্বজনবর্গের মধ্যে থেকে একজন সাহায্যকারী স্থির করুন, আমার ভ্রাতা হারুনকে, তাঁর দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন এবং তাকে আমার কর্মে অংশীদার করুন। যাতে আমরা প্রচুর পরিমাণে আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি এবং আপনাকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করতে পারি। আপনি তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা’’ (সূরা-ত্বহা-২৯-৩৫)। আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা (আঃ)-এর উভয় দুআই কবুল করেন। হযরত মূসা (আঃ) যখন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়তের গ্রন্থ হিসেবে তাওরাত গ্রহণ করতে তুর পাহাড়ে গমন করলেন, তখন বনী ইসরাঈল গোষ্ঠী সামেরী নামক মুনাফিকের পরমর্শে বাছুরপূজা শুরু করল।
হযরত মূসা (আঃ) তাওরাত নিয়ে তাদের নিকট পৌঁছার আগেই আল্লাহ পাক তাকে একথা জানিয়ে দেন। তিনি ক্রদ্ধ ক্ষুব্ধ হয়ে এসে প্রথমেই তাঁর স্থলাভিষিক্ত আপন ভাই হযরত হারুন (আঃ) এর কেশাগ্র স্পর্শ করে টানতে শুরু করলেন। হযরত হারুন আলাইহিস সালাম বললেন, তাদেরকে আমি বাধা দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে। সে কঠিন মুহূর্তে আমি খুব অসহায়ত্ব বোধ করেছি।
সুতরাং আমার সঙ্গে এমন কোন আচরণ করো না যার ফলে শত্রুরা খুশি হয়। আর আমাকে জালেমদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করো না। হযরত মূসার ক্রোধ প্রশমিত হলে তিনি আল্লাহ পাকের নিকট দুআ করলেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ও আমার ভ্রাতাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে আপনার রহমতের মধ্যে দাখিল করুন। আর আপনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু’’ (সূরা-আরাফ-১৫১)।
আল্লাহতাআলা হযরত মূসা (আঃ)কে শরীয়াত হিসেবে তাওরাত দেয়ার জন্য প্রথমে ত্রিশ দিন পরে আরও দশ দিন বৃদ্ধি করে মোট চল্লিশ দিন সিয়ামসহ ই'তেকাফের মতো একই স্থানে ধ্যানমগ্ন থাকতে বললেন।
হযরত মূসা (আ.) শর্তসহ মেয়াদ পূর্ণ করে যখন নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেন, তখন আল্লাহপাক নূরের পর্দার অন্তরাল থেকে তাঁর সঙ্গে কথা বললেন। হযরত মূসা (আ.) তখন আল্লাহ পাককে সরাসরি দেখার প্রার্থনা করে বলেছিলেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে দর্শন দিন, আমি আপনাকে দেখবো’’ (সূরা- আরাফ-১৪৩)।
আল্লাহপাক হযরত মূসাকে বললেন, তুমি আমাকে ইহকালে কখনই দেখতে পাবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য কর। তা স্বস্থানে স্থির থাকলে আমাকে দেখতে পাবে।
যখন আল্লাহতাআলা পাহাড়ের ওপর তাঁর নূর প্রকাশ করলেন, তখন পাহাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল, আর মূসা (আঃ) সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন। মূসা (আঃ) জ্ঞান ফিরে পেয়ে আল্লাহপাকের নিকট তওবা করে প্রার্থনা করলেন- ‘‘হে আল্লাহ, আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আমি অনুতপ্ত হয়ে আপনার নিকট প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম’’ (সূরা- আরাফ-১৪৩) বনী ইসরাঈল যখন হযরত মূসা (আঃ)-এর নিকট আল্লাহপাকের বাণী সরাসরি শোনার আবেদন করলো, তখন হযরত মূসা (আঃ) তাদের সত্তর জন নেতা নিয়ে তুর পাহাড়ে গমন করেন।
আল্লাহপাক হযরত মূসার সঙ্গে কথা বললেন এবং তারা তা শুনতে পেলো। তৎসত্ত্বেও তারা বললো, আমরা নিজেদের চোখে আল্লাহকে না দেখলে শুধু কথা শুনে বিশ্বাস করবো না।
তখন প্রচন্ড ভূকম্পনে তারা মুত্যুমুখে পতিত হলো। এ মুহূর্তে মূসা (আঃ) আল্লাহপাকের নিকট নিবেদন করেন আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ তাদের কৃতকর্মের কারণে কি আপনি আমাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন? তারপর তিনি প্রার্থনা করেন, ‘‘আপনিই তো আমাদের অভিভাবক সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদের প্রতি দয়া করুন। ক্ষমাশীলদের মধ্যে আপনিই শ্রেষ্ঠ’’ (সূরা- আরাফ-১৫৫)।
তখন হযরত মূসা (আঃ)- এর দুআয় তারা সকলে পুনরায় জীবিত হলো। হযরত মূসা (আঃ) বনী ইসরাঈলদের নিয়ে সিনাই মরুভূমিতে অবস্থানকালে তাদেরকে বললেন, পার্শ্ববর্তী আরীহা জনপদে তোমরা প্রবেশ কর।
সেখানে অত্যাচারী শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হও। আল্লাহপাকের ওয়াদা রয়েছে- তোমাদের পিতৃভূমি পুনরায় তোমাদের অধিকারে আসবে। বনী ইসরাঈল অভদ্রোচিত ভাষায় বললো, হে মূসা (আঃ) তুমি তোমার প্রভুকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়ে যুদ্ধ কর। আমরা এখানেই রইলাম। হযরত মূসা (আঃ) তখন আল্লাহপাকের নিকট আরজ করেন- ‘‘হে আমার রব, আমার ও আমার ভ্রাতা ব্যতীত অপর কারও ওপর আমার আধিপত্য নেই, সুতরাং আপনি আমাদের ও সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফায়সালা করে দিন’’ (সূরা-মায়িদা-২৫)।
হযরত দাউদ (আঃ)-এর প্রার্থনা : আল্লাহতাআলা হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম-এর প্রশংসায় বলেনে, দাউদ (আঃ) অতিশয় আল্লাহ অভিমুখী ছিলেন। পর্বতমালা ও বিহঙ্গকুল হযরত দাউদ (আঃ)-এর সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহপাকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। আল্লাহতাআলা হযরত দাউদ (আঃ)-এর রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলেন এবং তাঁকে অনেক প্রজ্ঞা ও মীমাংসাকারী বাগ্মিতা দান করেছিলেন। হযরত দাউদ (আঃ) ও তাঁর পুত্র সুলাইমান আলাইহিস সালামকে আল্লাহপাক বিভিন্ন বিষয়ে প্রভূত জ্ঞান দান করেছিলেন। তারা উভয়ে আল্লাহপাকের নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে দুআ করেন, ‘‘সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদেরকে তাঁর বহু মুমিন বান্দার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন’’ (সূরা-নাম্ল-১৫)।
হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর দুআ : হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ছিলেন বিশাল রাজ্যের অধিপতি। তাঁর রাজত্ব শুধু মানুষের উপরই সীমিত ছিল না; বরং জিন, পশু, পাখি, ও বাতাসের উপরও তাঁর আধিপত্য ছিল। এই সব কিছু আল্লাহ পাকের হুকুমে হযরত সুলাইমানের নির্দেশের আনুগত ছিল। তাঁর এত ব্যাপক ক্ষমতার কারণ ছিল, তিনি একবার আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করেছিলেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য, যা আমার পর আর কারো হাসিল হবে না। নিশ্চয় আপনি পরম দাতা’’ (সূরা- সাদ-৩৫)।
আল্লাহতাআলা তাঁর এ দুআ কবুল করেছেন। তাঁকে এমন বিস্ময়কর রাজত্ব দান করা হয় যা তাঁর আগে বা পরে দ্বিতীয় কাউকে দেয়া হয়নি। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বলেছেন, গত রাত্রে জনৈক অবাধ্য জিন আমার নামাজ নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। তখন আল্লাহতাআলা তাঁর উপর আমাকে ক্ষমতা প্রদান করলেন। আমি তাকে পাকড়াও করে ইচ্ছা করলাম, তাকে মসজিদের খুঁটির সঙ্গে আবদ্ধ করে রাখি।
যাতে তোমরা সকালে তাকে দেখতে পাও। কিন্তু তখনই আমার ভাই সুলাইমান (আঃ)-এর দুআ তিনি আল্লাহ পাকের নিকট আরজ করেছিলাম হে আল্লাহ, আমাকে এমন এক রাজত্ব দান করুন যার অধিকারী আমি ছাড়া আর কেউ হবে না। একথা স্মরণ হওয়া মাত্র আমি তাকে ছেড়ে দেই।
হযরত সুলাইমান (আঃ) দীর্ঘদিন যাবত বিশাল রাজ্য পরিচালনা করেন। মানুষ, জিন, পশু, পাখি সকলেই তাঁর হুকুমের অনুগত ছিল।
তিনি সকল পশু পাখির ভাষা বুঝতেন। তিান সুষ্ঠু বিচারকার্য পরিচালনায় অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ প্রদত্ত এই চতুর্মুখী ও সর্বব্যাপী অনুগ্রহ লাভ করে তিনি আল্লাহ পাকের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা আদায় করে মোনাজাত করেন, ‘‘হে আমার প্রাতিপালক, আমাকে সামর্থ্য দিন যাতে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তাঁর জন্য এবং যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আপনি পসন্দ করেন এবং আপনার অনুগ্রহে আমাকে আপনার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের শ্রেণীভুক্ত করুন। -সুরা নামল-১৯। ’’
হযরত আইয়ুব (আঃ)-এর দুআ : হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম ঐশ্বর্য, প্রচুর্য ও সন্তান-সন্ততির দিক থেকে অত্যন্ত সফল ও ভাগ্যবান ছিলেন।
হঠাৎ করে শুরু হল তাঁর ঈমানী পরীক্ষা। তাঁর সহায়-সম্পদ, পরিবার-পরিজন, শরীর ও প্রাণ মহাসংকটের আবেষ্টনীতে পতিত হলো। অর্থবিত্ত ধ্বংস হলো, স্বজন-পরিজনের মৃত্যু ঘটলো এবং দেহ কঠিন রোগে আক্রান্ত হলো এ ধরনের মহাদুর্দশায় আপতিত হয়েও তাঁর কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই; বরং তিনি সবর ও ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহপাকের নিকট শুধু অবস্থা পেশ করে বললেন, ‘‘শয়তান তো আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্টে ফেলেছে। ’’-সূরা সাদ-৪১ যেহেতু মন্দ কাজ কোনো না কোনোভাবে শয়তানের প্ররোচনার প্রতিফলন, তাই আইয়ুব (আঃ) তাঁর কষ্ট ও যন্ত্রণার জন্য শয়তানকে দায়ী করেছেন অথবা অসুস্থতার সময় শয়তান তাঁর ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চেষ্টা করলে তিনি মানসিক কষ্ট পান এবং আল্লাহতাআলার নিকট এই দুআ করেন। তারপর হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম নিজের অবস্থা প্রকাশের জন্য অতি উচ্চাঙ্গের ও অলঙ্কারমন্ডিত বর্ণনাভঙ্গি গ্রহণ করে প্রর্থনা করেন, ‘‘আমি দুঃখকষ্টে পড়েছি, আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।
’’ সূরা আম্বিয়া-৮৩।
আল্লাহপাক হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালামের দুআ কবুল করেন। তাঁর যে বিত্তবৈভব ও সন্তান-সন্তনি ধ্বংস হয়েছিল, আল্লাহপাক তাঁর দ্বিগুণ তাকে দান করেন। আর তাঁর সুস্থতার জন্য একটি প্রসবণ প্রবাহিত করেন, যার সুশীতল পানিতে গোসল করে এবং পানি পান করে তিনি সুস্থ হন। হযরত ইউনুস (আঃ)-এর প্রার্থনা : হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দীর্ঘদিন মানুষকে তাওহীদের দাওয়াত দিতে থাকেন।
তাঁর সম্প্রদায় সত্যের আহবানে কোনোরূপ কর্ণপাত করেনি; বরং অহমিকা ও ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে আল্লাহ পাকের নাফরমানীতে লিপ্ত থাকে। আর অতীত যুগের সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের মত সত্য দ্বীনের আহবানকারী পয়গম্বরের সঙ্গে ঠাট্টাতামাশা করতে থাকে।
হযরত ইউনুস (আঃ) আপন সম্প্রদায়ের লাগাতার শত্রুতা ও বিরোধিতায় খুবই দুঃখিত হন। এক পর্যায়ে তিনি তাদের প্রতি বদ দুআ করে তাদের কাছ থেকে অন্যত্র রওয়ানা হন। তিনি নিজ অঞ্চল ইরাকের নিনাব থেকে বের হয়ে ফুরাত নদীর তীরে পৌঁছেন।
এখানে এসে তিনি লোক বোঝাই জাহাজে আরোহণ করেন। নদীতে কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ ঝঞ্ঝায় জাহাজ নিমজ্জিত হওয়ার উপক্রম হয়। জাহাজের চালকগণ বললেন, মনে হয় নৌযানে কোনো পলাতক গোলাম রয়েছে। তাকে আমাদের পৃথক না করা হলে আমাদের থেকে পৃথক না করা হলে আমাদের রক্ষা পাওয়া মুশকিল হবে।
হযরত ইউনুস (আ.) ভাবলেন, ওহীর অপেক্ষা ব্যতীত নিনাব থেকে আমার চলে আসা আল্লাহ পাক পছন্দ করেননি।
তিনি সকলকে বললেন, আমিই আমার মনিবের কাছ থেকে অনুমতি ব্যতীত পলায়ন করে চলে এসেছি। সুতরাং আমাকে নদীতে নিক্ষেপ করে দিন। কিন্তু কেউ তাঁকে ফেলতে সাহস করল না। শেষে লটারী দেয়ার সিদ্ধান্ত হল। লটারিতে তাঁর নামই আসল।
সঙ্গে সঙ্গে হযরত ইউনুস (আঃ) নদীতে ঝাঁপ দিলেন। তখনই তাঁকে এক বিরাট মাছ গলাধঃকরণ করলো। আল্লাহ পাক মাছকে হুকুম দিলেন, ইউনুস তোমার খাদ্।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।